Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
৯২ তম সংখ্যা । ১২ জুন, ২০২৩
এই সংখ্যায় থাকছে:
“বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ ‘অখণ্ড ভারতের’ মানচিত্র দিল্লির সংসদ ভবনে”
“আইএমএফের শর্ত বাজেটে পরিলক্ষিত হবে”
“সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান: ‘ন্যূনতম কর দিয়ে উন্নয়নে অংশীদার হওয়া গর্বের বিষয়’”
“আইএমএফের পরামর্শ শুনলে সফল হবো: অর্থমন্ত্রী”
“বাংলাদেশ, পাকিস্তানসহ ‘অখণ্ড ভারতের’ মানচিত্র দিল্লির সংসদ ভবনে”
খবরঃ
ভারতের নতুন সংসদ ভবনে একটি ‘অখণ্ড ভারত’ এর মানচিত্র রাখা হয়েছে, যেখানে আফগানিস্তান থেকে শুরু করে পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং শ্রীলঙ্কা – সব দেশগুলিকেই দেখানো হয়েছে। ‘অখণ্ড ভারত’-এর ধারণাটি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএসের মূল মতাদর্শগত চিন্তার অন্যতম। ওই ধারণায় বলা হয়ে থাকে, প্রাচীন কালে ইরান থেকে বর্তমানের মিয়ানমার, উত্তরে তিব্বত, নেপাল, ভূটান আর দক্ষিণে বর্তমানের শ্রীলঙ্কা – সবই ছিল অখণ্ড ভারতের অন্তর্ভুক্ত। (www.bbc.com/bengali/articles/c723xm6ggn3o)
মন্তব্যঃ
সাহসের দিক থেকে পৃথিবীর অন্যতম দুর্বল মুশরিক জাতির এই ‘অখন্ড ভারত’-এর স্বপ্ন দেখার স্পর্ধার প্রদর্শনের কারণ হচ্ছে তার আশেপাশের শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের শাসকশ্রেণীর দালালী এবং আমাদের মুসলিম সেনাবাহিনীকে দুর্বল ও অক্ষম বাহিনী হিসেবে উপস্থাপন করা। ১৯৭১ এর যুদ্ধের পর থেকেই মূলত ভারত বাংলাদেশের উপর তার আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী-বিএনপি সকল শাসকগোষ্ঠীই ভারতের স্বার্থ রক্ষায় এদেশে রাজনীতি করে গেছে। কিছুদিন আগে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া ৬ষ্ঠ ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনে (আইওসি) বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, “বাংলাদেশের কোনো সামরিক উচ্চাভিলাষ নেই কিংবা আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার আকাঙ্ক্ষাও নেই।” এই শাসকগোষ্ঠী আজ এতটাই মানসিক দুর্বলতার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে যে মুসলিম সেনাবাহিনীর কোন সামরিক উচ্চাভিলাষ নাই এই কথা বলতেও লজ্জিত হচ্ছে না। অপরদিকে ভারতকে দিয়ে যাতে চীনকে মোকাবেলা করা যায় সেজন্যে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানী শাসকদেরকে বাধ্য করেছে যাতে তারা এই মুশরিক রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তোলে। ফলে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীও এখন কাশ্মীরকে মুক্ত করার মিশন ত্যাগ করে ব্যারাকে অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে আফগানিস্তানের শাসকগণ যারা কিনা একসময় সমগ্র ভারতবর্ষে তাদের কর্তৃত্ব স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিল তারা এখন জাতীয়তাবাদী রোগে আক্রান্ত হয়ে ভারতের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করছে।
দেউলিয়া এই মুসলিম শাসকেরা এটা প্রমাণ করতে চায় যে মুসলিম সেনাবাহিনী খুবই দুর্বল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে শাসকদের ইচ্ছাশক্তি না থাকা সত্ত্বেও মুসলিম সেনাবাহিনী বারবার নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছে। যেমন, ২০০১ সালের ১৮ই এপ্রিল বড়াইবাড়ি সীমান্তে বাংলাদেশ রাইফেলস (বর্তমানে বিজিবি) অফিসিয়ালি বিএসএফের অন্তত ১৬ জন জওয়ানকে নিহত করে এবং দুজনকে বন্দি করে, যার বিপরীতে বিডিআর এর মাত্র তিনজন সৈনিক শাহাদাত লাভ করেন। বিএসএফের সাবেক মহাপরিচালক প্রকাশ সিংয়ের মতে, “ভারতের ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ারে বিএসএফের জন্য সবচেয়ে অগৌরবের দিন হল বড়াইবাড়ি। একটি হামলায় বিএসএফের ষোলোজন সদস্য একসঙ্গে প্রাণ হারিয়েছেন, এমন ঘটনা কিন্তু কাশ্মীর সীমান্ত বা এলওসি-তেও কখনও ঘটেনি।” ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেয়। ৫০০ জনের বেশী ভারতীয় জওয়ান নিহত হয়। এই যুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী সাহসিকতার জন্য ভারতীয়দেরও বাহবা পেয়েছিল। 'কার্গিল: আনটোল্ড স্টোরিজ ফ্রম দা ওয়ার' বইয়ে ভারতীয় ব্রিগেডিয়ার এম এস বাজওয়া পাকিস্তানী ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খান এর বীরত্ব নিয়ে বলতে গিয়ে বলেন, “সেদিন যখন টাইগার হিলের লড়াই শেষ হয়েছিল, ওই পাকিস্তানি অফিসারের অসীম সাহসকে স্যালুট না করে উপায় ছিল না। আমি ৭১-এর যুদ্ধেও লড়াই করেছি। কিন্তু কখনও পাকিস্তানি বাহিনীর কোনও অফিসারকে একেবারে সামনে থেকে লড়তে দেখিনি। অন্য পাকিস্তানি সৈনিকরা কুর্তা-পাজামা পরে ছিলেন, কিন্তু এই অফিসার একাই ট্র্যাক-সুট পরে লড়ছিলেন।” ক্যাপ্টেন শের খানের মরদেহ যখন পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হল, তখন তার জামার পকেটে একটা ছোট্ট চিরকুট লিখে দিয়েছিলেন ব্রিগেডিয়ার বাজওয়া। তাতে লেখা ছিল, “১২ নম্বর নর্দার্ন লাইট ইনফ্যান্ট্রির ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খাঁ অসীম সাহসের সঙ্গে লড়াই করেছেন। তাকে সম্মান জানানো উচিত।” কিন্তু আমরা দেখেছি মুসলিম শাসকগণ মুসলিম সেনাবাহিনীর এই সাহসিকতাকে সম্মান না জানিয়ে বরং শাস্তির মুখোমুখি করেছেন। যেমন, হাসিনা সরকার ক্ষমতায় এসেই বড়াইবাড়ি যুদ্ধের শাস্তি হিসেবে তথাকথিত বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন দক্ষ সামরিক অফিসারকে হত্যায় সহযোগীতা করে।
সুতরাং একথা বলার কোন সুযোগ নেই যে, মুসলিম সেনাবাহিনী দুর্বল কিংবা অক্ষম। তারা ভারতের আধিপত্যবাদকে চূর্ণ করে ভারতবর্ষসহ সারা মুসলিম বিশ্বকেই একত্রিত করতে সক্ষম। শুধুমাত্র প্রয়োজন শাসকের সদিচ্ছা ও পরিকল্পনা যা আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্রের শাসকদের মাধ্যমেই কেবল সম্ভব। কাফির-মুশরিকদের সকল স্বপ্ন আর পরিকল্পনাই তখন ভেস্তে যাবে, ইনশা’আল্লাহ্। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “নিশ্চয় তারা ভীষণ চক্রান্ত করে। এবং আমিও ভীষণ কৌশল করি। অতএব কাফিরদেরকে অবকাশ দিন; তাদেরকে অবকাশ দিন কিছু কালের জন্য” (সুরা-আত-তারিকঃ ১৫-১৭)।
- মো: হাফিজুর রহমান
“আইএমএফের শর্ত বাজেটে পরিলক্ষিত হবে”
খবরঃ
আইএমএফের শর্ত এবারের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রাসহ সবক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) রাজস্ব আদায় ব্যবস্থাপনা সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা এ বছর আরো বাড়ানোর ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। আইএমএফের শর্তে জিডিপির অতিরিক্ত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। আইএমএফের চাওয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাজস্ব আয় বাড়ানো। জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জিডিপির আকার ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে জিডিপির আকার দাঁড়াবে ৫০ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে আগামী অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হচ্ছে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা, তার থেকে এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার সুদের ব্যয় আছে। এটা বাদ দিলে বাজেট ঘাটতি এক লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। (https://www.bhorerkagoj.com/2023/05/31/আইএমএফের-শর্ত-বাজেটে-পরি/)
মন্তব্যঃ
বাংলাদেশের পুঁজিবাদী সরকার জাতীয় বাজেটকে নিজেদের বাজেট দাবি করলেও নব্য উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান এইএমএফ-ই এই বাজেটের মূল নিয়ন্ত্রক। একদিকে হাসিনা সরকারের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আইএমএফের পরামর্শ মেনে বাজেট করা হয়নি বলে মন্তব্য করছে, আবার অন্যদিকে “আমি আইএমফের শর্তে কোন সমস্যা দেখছি না কারণ আইএমএফ আমাদেরকে আরও ভালো প্রকল্প ব্যবস্থাপনার জন্য পরামর্শ দেয়, এবং এটি উপকারী” এই বক্তব্য দিয়ে জনগণকে ধোঁকা দিচ্ছে। প্রকৃত বাস্তবতা হল আইএমএফের মত নব্য উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠানই আমাদের অর্থনীতির নিত্যনতুন লক্ষ্য এবং অগ্রাধিকারসমূহ স্থির করে দেয়, নতুন চ্যালেঞ্জ ও সমস্যার দিকে ধাবিত করে এবং সেসব সমস্যার সমাধানে তাদের নীতিসমূহ বাস্তবায়নে চাপ প্রয়োগ করে। তথাকথিত দক্ষ রাজস্ব সংগ্রহের জন্য IMF দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ সরকারকে ট্যাক্স ও ভ্যাটের উপর নির্ভর করার জন্য প্ররোচিত করছে। কর আরোপ ও করজাল বৃদ্ধির আইএমএফের প্রেস্ক্রিপশন অনুসরণ করেই সরকার গতছরের চেয়ে প্রায় ৭০ হাজার কোটি বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ইতিমধ্যে নিম্নবিত্ত এমনকি আয়হীন জনগোষ্ঠীর উপরেও করারোপ করার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সরকার জনগণকে ধোঁকা দেয়ার জন্য একদিকে করমুক্ত আয় সীমা ৩ লাখ থেকে ৩.৫ লাখে উন্নীত করেছে কিন্তু আবার অন্যদিকে কর দেয়ার ক্ষমতাবিহীন জনগোষ্ঠীর উপরেও ন্যুনতম ২০০০ টাকা বাধ্যতামূলক কর আরোপ করেছে যা ইতিমধ্যে মূল্যস্ফীতিতে নিষ্পেষিত জনগণকে পাহাড়সম দুর্দশায় নিমজ্জিত করবে। এমনকি নূনতম ২০০০ টাকা কর না দিলে ৪৪ ধরনের সরকারি-বেসরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত করবে বলে সরকার জনগণকে হুমকি দিয়েছে। হাসিনা সরকার জনগণের উপর নিপীড়নমূলক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর (ভ্যাট, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার উপর আরোপিত সম্পূরক শুল্ক ইত্যাদি) চাপিয়েই ক্ষান্ত হতে রাজি নয় বরং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিশাল ঋণ ও সুদের বোঝা চাপিয়ে দিতেও বদ্ধপরিকর। ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘাটতি (সামগ্রিক ঘাটতির ৫০%) মোকাবেলার জন্য হাসিনা সরকার আইএমএফের মত নব্য উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণের দ্বারস্থ হবে যারা মূলত উন্নয়ন বিরোধী ও জনবিরোধী কঠিন শর্তে ঋণ প্রদান করে থাকে। তাছাড়া সুদ ভিত্তিক এসব বৈদেশিক ঋণ আমাদেরকে দশকের পর দশক ধরে উপনিবেশবাদীদের ঋণের ফাঁদে আবদ্ধ করে রাখবে। ঔপনিবেশিক দেশগুলোর কাছে আত্মসমর্পণ এবং আইএমএফের নীতির কাছে নতি স্বীকার করা দেশকে সত্যিকারের ধ্বংস এবং বড় বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে।
এমতাবস্থায় সীমাহীন অর্থনৈতিক দুর্দশা এবং পশ্চিমা ঔপনিবেশিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর হুকুমের গোলামী থেকে নিজেদের মুক্ত করার জন্য পশ্চিমা পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে উপড়ে ফেলার সাথে সাথে নব্যুয়তের আদলে প্রতিশ্রুত দ্বিতীয় খিলাফতে রাশিদাহ্ রাষ্ট্রের ছায়াতলে একটি আদর্শিক ইসলামী অর্থনৈতিক মডেল বাস্তবায়ন করা জরুরি। খিলাফত রাষ্ট্রের পাবলিক ফাইন্যান্সের নীতি অনুসারে, রাজস্ব আদায়ে জনগণের ঘাড়ে ট্যাক্স ও ঋণের বোঝা চাপিয়ে জনজীবন দুর্বিষহ করে তোলা হয় না৷ ইসলাম মানুষকে ভ্যাট বা পণ্য ও পরিষেবা কর এবং আয়করের মতো নিষ্ঠুর কর থেকে মুক্ত করবে। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “কর আদায়কারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না” (আহমদ)। বরং ইসলাম রাজস্ব আদায়ের নিজস্ব একটি অনন্য ব্যবস্থা চালু করবে। গণমালিকানাধীন সম্পত্তি যেমন গ্যাস, তেল, বিদ্যুৎ ও পানি ইত্যাদি থেকে রাজস্ব, ভূমি কর-খারাজ, সক্ষম অমুসলিম পুরুষদের উপর জিজিয়া কর, রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির রাজস্ব, গুপ্তধন ও খনিজ সম্পদের পঞ্চমাংশ (রিকাজ), সাদাকাহ্ থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব (উৎপাদিত ফসলের উশর, নগদ টাকা, গবাদি পশু, ব্যবসায়িক পণ্য) এবং শুধুমাত্র নির্দিষ্ট প্রয়োজন মেটাতে ধনীদের উদ্বৃত্ত সম্পদের উপর কর আরোপ করে খিলাফত রাষ্ট্র অর্থনৈতিক জীবনীশক্তিকে শ্বাসরোধ না করে বিপুল রাজস্ব আয় করবে। এছাড়াও অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার করার জন্য আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্র আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের মতো ঔপনিবেশিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করবে এবং সব ধরনের সুদ (রিবা) হারাম করার সাথে সাথে তাদের সকল সুদভিত্তিক ঋণ ব্যবস্থার অবসান ঘটাবে।
- সিফাত নেওয়াজ
“সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান: ‘ন্যূনতম কর দিয়ে উন্নয়নে অংশীদার হওয়া গর্বের বিষয়’”
খবরঃ
ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়ে দেশের উন্নয়নে অংশীদার হওয়া গর্বের বিষয় বলে মনে করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, গরীব মানুষের জন্য কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন বাধ্যতামূলক নয়। এটি কমিশন এজেন্সি, পিস্তলের লাইসেন্সের জন্য। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন এলাকায় যাদের বাড়ি-গাড়ি আছে এবং যাদের ট্রেড লাইসেন্স আছে তাদের জন্য। এই ক্যাটাগরির মানুষের জন্য বছরে দুই হাজার টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়ে উন্নয়নে অংশীদার হওয়া একটি গর্বের বিষয় হওয়ার কথা, বোঝা মনে করার কথা নয়। উল্লেখ্য, টিআইএনধারীদের রিটার্ন জমা দিলেই দুই হাজার টাকা কর প্রদান করার বিধান করছে সরকার। কোনো ব্যক্তির যদি করযোগ্য আয় নাও থাকে, তবু তাকে এই টাকা দিতেই হবে।
মন্তব্যঃ
জনগণের একটি বড় অংশকেই কোনো না কোনো কারণে সরকারি সেবা নিতে যেতে হয়। আর সেজন্য আয়কর (Income Tax) দেওয়ার নম্বর (TIN) লাগবে এবং এই নম্বরের জন্য তাদের ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর (Tax) দিতে হবে, যদিও তার করযোগ্য আয় না থাকে। সরকারি সেবা নিতে গেলে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা করের বিধান রাষ্ট্র কর্তৃক আইনি প্রক্রিয়ায় বৈধ চাঁদাবাজি। সাধারণ জনগণের নিকট থেকে প্রতিদিন ভ্যাট ও শুল্ক (পরোক্ষ কর) এর মাধ্যমে সরকার বিপুল পরিমান কর (Tax) আদায় করছে। সরকারি কোষাগারে এই অর্থ প্রদান করেও যেন গর্বের সুযোগ হচ্ছে না নাগরিকদের! এনবিআরের চেয়ারম্যান জনগণকে নির্বোধ ভাবেন! সবার জন্য বাধ্যতামূলক ‘আয়কর (Income Tax)’ মূল্যস্ফীতিতে জর্জরিত মানুষের উপর নির্দয় জুলুম। দফায় দফায় পানি, বিদ্যুৎ, তেল, গ্যাস, দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ানোর পর নতুন করে ন্যূনতম করের নামে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মত প্রথা চালু করতে যাচ্ছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দালাল মীর জাফরের নব্য বংশধর এই শাসকরা। ব্রিটিশ উপনিবেশিকরা ভারতীয় উপমহাদেশের জনগণের উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা দ্বারা করারোপ করে বৈধভাবে জনগণের সম্পদ 'লুট' করার এক ব্যবস্থার প্রণয়ন করে, যাকে 'Drain of Wealth' নামে অভিহিত করা হয়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের অর্থনৈতিক শোষণের যাঁতাকলে কৃষক-প্রজাদের ত্রাহি অবস্থা হলেও জমিদারদের এবং কোম্পানির রাজস্ব প্রাপ্তির অবাধ সুযোগ তৈরি হয়ে যায়। তারা বাধ্যতামূলকভাবে সবার উপর কর (Tax) আরোপ করে, বাড়তি রাজস্ব দিতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যায় জনগণ, যার ফলে ভারতীয় উপমহাদেশে দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ-খরা। তথাপিও এই অর্থ লুটেরারা জনগণের প্রতি কোনো দয়ামায়া দেখায়নি। ব্রিটিশরা তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য জমিদার নামের অনেক ভৃত্য নিয়োগ করেছিল। ব্রিটিশদের লুটপাটের একটা ভাগ এদের ঘরে যেতো। তাই এ ভৃত্যরা আনন্দের সাথে সাধারণ মানুষের রক্ত শুষে কর (Tax) আদায়ে নিজেদের সর্বশক্তি নিয়োজিত করতো। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মূলেই ছিল সর্বাগ্রে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অর্থনৈতিক শোষণ-লুণ্ঠনকে নিরঙ্কুশ করা, পাশাপাশি জমিদার শ্রেণির একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা, যা কৃষক-প্রজার শোষণের স্থায়ী ব্যবস্থা দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছিল। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নব্য বংশধর বর্তমান এই শাসকরাও যেকোনো উপায়ে জনগণকে শোষনের মাধ্যমে তাদের নিজেদের পকেট ভারী করতে ও তাদের প্রভুদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে সর্বদা উন্মুখ হয়ে থাকে। বর্তমানে ব্যক্তি কর শনাক্তকরণ নম্বর (TIN) সংখ্যা প্রায় ৮৬ লাখ। এর মধ্যে মাত্র ৩২ লাখ ব্যক্তি আয়কর রিটার্ন জমা দেন, যার মধ্যে প্রায় ৮ লাখের করযোগ্য আয় নেই। এই ৮ লাখ ব্যক্তির উপর ন্যূনতম কর ধার্য করা হলে সরকারের বাড়তি ১৬০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে এবং ন্যূনতম করের নিয়মটি যদি সব টিআইএনধারীর উপর প্রয়োগ করা হয়, তবে ১,২৪০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হবে। এর ফলে সুরক্ষিত থাকবে তাদের পশ্চিমা প্রভুদের অর্থনৈতিক হাতিয়ার IMF, World Bank কর্তৃক প্রদত্ত সুদসমেত ঋণ পরিশোধের নিরাপত্তা, এর পাশাপাশি নিশ্চিত হবে এদের পকেট ও ক্ষমতার মসনদ।
এই শোষণ ও নিয়মতান্ত্রিক নৈরাজ্য থেকে মুক্তি এবং অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন কেবল তখনই সম্ভব হবে, যখন আমরা নব্যুয়তের আদলে খিলাফত রাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবো এবং অবশ্যই এটি কেবল মুসলিমদের জন্য নয়, এর অধীনে বসবাসকারী অমুসলিমদের জন্যও স্বস্তিদায়ক হবে। খিলাফত এমন একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা যা রাষ্ট্রের কোন নির্দিষ্ট শ্রেণীর স্বার্থের চিন্তার ভিত্তিতে পরিচালিত হয় না, বরং রাষ্ট্রের সকল জনগণের প্রয়োজন পূরণই এর মুখ্য বিষয়। খিলাফত রাষ্ট্রে রাষ্ট্রনীতির মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে তাকওয়া (আল্লাহ্ ভীতি), যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই শাসক নিজের পকেট ভারী করা কিংবা ক্ষমতার মসনদে টিকে থাকার প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয় না; বরং সে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আহ্কাম শারী‘আহ্ অনুযায়ী রাষ্ট্রের অধীনে বসবাসকারী নাগরিকদের বিষয়গুলোর যথাযথ যত্ন নেয়। খিলাফতের শাসনে রাজস্ব বৃদ্ধিই একমাত্র লক্ষ্য নয়; বরং রাজস্ব সংগ্রহ ও ব্যয়ে রয়েছে সুনির্দিষ্ট শারী‘আহ্ নীতি। শাসক কর্তৃক রাজস্ব আদায়ের নামে নতুন নতুন অর্থনৈতিক নীতি চালু করা কিংবা চাপিয়ে দেয়ার সুযোগ নাই। ইসলামে সকল প্রকার আয়কর (Income Tax) এবং মূল্য সংযোজন কর (VAT) নিষিদ্ধ। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেনঃ “কর (Tax) আদায়কারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”
- সুজন হোসেন
“আইএমএফের পরামর্শ শুনলে সফল হবো: অর্থমন্ত্রী”
খবরঃ
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) শুধু লোন দেয় না, তারা সার্বিক পরামর্শ দেয়। তাদের পরামর্শ নিলে সফল হবেন বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, আইএমএফের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের সবার সার্বিক বিষয়ে তারা দেখে। তারা শুধু লোন দিয়েই সাহায্য করে না, কিছু প্রজেক্টও সাজেস্ট করে। কোন কোন বিষয় বাস্তবায়ন করা যাবে সেগুলোও তারা পরামর্শ দেয়। আমি মনে করি তাদের পরামর্শ শুনলে সফল হবো। শুক্রবার (২ জুন) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। বাজেটে আইএমএফের প্রভাব প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা সবাই এখন অ্যালায়েন। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আমরা কোনো পণ্য না পেলে খুঁজি বিকল্প কোন দেশে সেটি পাওয়া যাবে। সার্বিক বিষয়ে আইএমএফের ওভারঅল প্রেসক্রিপশন থাকে। তবে সেখান থেকে যেটুকু গ্রহণ করা যায় করবো। বাকিসব আমরা আমাদের মতো করবো। (https://www.jagonews24.com/economy/news/859017)
মন্তব্যঃ
বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিয়ে গিয়ে অর্থমন্ত্রী নব্য-উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান আইএমএফের ব্যাপক প্রশংসা করে আইএমএফের প্রতি তার বুদ্ধিবৃত্তিক আনুগত্য প্রকাশ করে দিলেন। পশ্চিমাদের অনুগত এই রাজনীতিবিদ পাকিস্তান, শ্রীলংকা, লেবানন, আর্জেন্টিনাসহ বিভিন্ন দেশ আইএমএফের পরামর্শ মানতে গিয়ে সেই দেশের জনগণকে যে অর্থনৈতিক দুর্দশায় ফেলে দিয়েছে তা একেবারে উপেক্ষা করছে। ঐতিহাসিকভাবে এটা সর্বজনবিদিত যে, আইএমএফ-এর মত উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান কখনোই কোন উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা কিংবা অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য ঋণ প্রদান করে না। আইএমএফ-এর ঋণের উদ্দেশ্য হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিতে পশ্চিমা পুঁজিবাদী রাষ্ট্রসমূহের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে জনগণকে সীমাহীন অর্থনৈতিক দুরাবস্থার মধ্যে নিক্ষেপ করা; যেমনঃ আইএমএফের পরামর্শে পাকিস্তান প্রাকৃতিক গ্যাসসহ অনান্য জ্বালানীর মূল্য বৃদ্ধি করে। যার ফলে দেশটির নাগরিকদের প্রধান খাবার নানরুটির দাম জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায় এবং ব্যাপক সংখ্যক মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে। পাকিস্তান পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৯-২০ এর এক জরিপে দেখা যায় সে দেশের ১৬.৪% বা সাড়ে তিন কোটি মানুষ সহনীয় থেকে তীব্র মাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) ১৯৭০ সালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ঋণ সহায়তা নিয়ে সর্বপ্রথম প্রবেশ করে। শ্রীলঙ্কার মুদ্রার মান ৩৬% অবমূল্যায়িত হয়ে তাদের রিজার্ভ ২ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসায় দেশটি এখন দেউলিয়া। ১৯৮০-এর দশকে, IMF ঋণের কঠোর শর্ত আফ্রিকান দেশ সিয়েরা লিওনের অর্থনীতির আরও অবনতি ঘটায় এবং গণবিক্ষোভ সৃস্টি করে। এছাড়া আইএমেফের পরামর্শ ও ঋণসহায়তা নিয়ে ল্যাটিন আমেরিকা ও আফ্রিকান দেশগুলোর করুণ পরিণতির ঘটনা সবারই জানা। তাহলে অর্থমন্ত্রী কেন আইএমএফের পরামর্শের এই ভয়াবহ পরিণতির বিষয়ে বে-খবর? কারণ পশ্চিমাদের অনুগত এই দালাল শ্রেণীর পক্ষে তাদের পশ্চিমা প্রভুদের প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারীতা নিয়ে প্রশ্ন করার মত বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা নাই। তাই তারা পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরামর্শ বিনা বাক্যে মেনে নেয় এবং এগুলোকে ইতিবাচক হিসাবে উপস্থাপন করে জনগণকে বিভ্রান্ত করে। তাদের পুঁজিবাদী প্রেসক্রিপসন বাস্তবায়নের পুরস্কারস্বরুপ এসকল নব্য উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান এসব দালালদেরকে ভাল চারিত্রিক সনদও প্রদান করে। উম্মাহর উপর যদি এই সকল পুঁজিবাদী রাজনীতিবিদরা জগদ্দল পাথরের মত চেপে না থাকতো তা হলে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের মত নব্য উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠানগুলো কখনও আমাদের উপর তাদের অবৈধ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার সুযোগ পেত না।
এই সকল ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিবাদরা এতটাই বিভ্রান্ত যে তারা কোরআন এবং হাদিসের স্পষ্ট অর্থনীতির নীতিগুলো যা বাস্তবায়নের ফলে তৈরি হয়েছিল খিলাফতের সমৃদ্ধ অর্থনীতি তা উপেক্ষা করে উপনিবেশবাদী কাফিরদের প্রতিষ্ঠানগুলোর পরামর্শের মুখাপেক্ষী হয়। আইএমএফের পরামর্শের প্রধান দুইটি দিক হচ্ছে প্রতিনিয়ত ট্যাক্স (কর) বৃদ্ধির মাধ্যমে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি যা সাধারণ মানুষের জীবনকে চাপে ফেলে। অন্যদিকে, ইসলামে বায়তুল মালের (রাষ্ট্রের রাজস্ব) আয়ের খাতসমূহ শারীয়াহ দ্বারা বিধিবদ্ধ। বায়তুল মালের আয়ের প্রধান খাতসমূহ হচ্ছে আনফাল, গনিমত, মালে ফায় এবং খুমুছ, খারাজ (ভূমি কর), জিযিয়া, গণ মালিকানাধীন সম্পত্তি থেকে উপার্জিত বিভিন্ন প্রকার আয়, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সম্পদ থেকে অর্জিত রাজস্ব ইত্যাদি। সুনির্দিষ্ট কারণ ব্যতীত এই খাতগুলোর বাহিরে জনগণের উপর কর আরোপ করা খলিফার জন্য নিষিদ্ধ। আবু উবাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেন, “অতিরিক্ত কর আরোপকারী জাহান্নামি”। খলিফা শুধুমাত্র বিশেষ প্রয়োজনে অর্থাৎ যে কাজগুলো সমস্ত মুসলিমদের দায়িত্ব যেমনঃ দুর্যোগকালীন অসহায়দের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ ইত্যাদি, শুধুমাত্র এই সকল প্রয়োজন পূরণের জন্য বায়তুল মালে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকলে খলিফা শুধুমাত্র আর্থিকভাবে সক্ষম জনগণের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদের উপর কর ধার্য করতে পারেবে। উল্লেখ্য, প্রয়োজনটি পূরণ হয়ার সাথে সাথে অতিরিক্ত করটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ইসলামের এই কর নীতির কারণে জনগণের উপর অপ্রয়োজনীয় আর্থিক বোঝা চাপানোর সুযোগ থাকে না। জনগণের জীবন-যাপন থাকে স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং তৈরি হয় শক্তিশালী অর্থনীতি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,
“আর যদি সে সব জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তবে অবশ্যই আমরা তাদের জন্য আসমান ও যমীনের বরকতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম….” [আল-আ'রাফ, ৯৬]
- মোঃ সিরাজুল ইসলাম