Weekly 

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

১১৭ তম সংখ্যা । ২৪ এপ্রিল, ২০২৪



এই সংখ্যায় থাকছে :

“কেএনএফ-এর তৎপরতা কেন বান্দরবানের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতেই?”

“ইসরাইলে ইরানের হামলা কি সাজানো নাটক?”

“মঙ্গল কামনায় শুরু মঙ্গল শোভাযাত্রা”

“প্রশিক্ষণ নিতে ভারত যাচ্ছেন ৫০ বিচারক”

“ছেলে-মেয়েকে গুলি করে ঋণগ্রস্ত বাবার আত্মহত্যা”

“যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতকে সতর্কবার্তা: বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়ায় চীনের নৌঘাঁটি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে”





“কেএনএফ-এর তৎপরতা কেন বান্দরবানের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতেই?”

খবরঃ

ঠিক দু'বছর আগে (২০২২ সালে) এই এপ্রিল মাসেই বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফ। সেসময় সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে দুই পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ও বান্দরবানের মোট নয়টি উপজেলার সমন্বয়ে ‘স্বশাসিত বা স্বায়ত্তশাসন ক্ষমতা-সহ’ পৃথক রাজ্যের দাবি তোলে তারা। কেএনএফের ঘোষণা ও বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্য অনুযায়ী বম ছাড়াও আরো পাঁচটি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বের দাবি করে কেএনএফ। তারা হলো পাংখোয়া, লুসাই, খিয়ং, ম্রো ও খুমি। (https://www.bbc.com/bengali/articles/crg6lpg420zo)

মন্তব্যঃ

দখলদার বৃটিশরা ঠিক যেভাবে বাংলা, পাঞ্জাব ও কাশ্মির অঞ্চলকে দ্বিখন্ডিত করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছিল, ঠিক যেভাবে পশতুন জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত অঞ্চলকে দ্বিখন্ডিত করে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছিল, এবং ঠিক যেভাবে ঐতিহাসিকভাবে একই অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও হিরমান্দ, সিস্তান ও বেলুচিস্তানকে টুকরো টুকরো করে ইরান, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সীমানা এঁকে ভাগ করে দিয়েছিল; ঠিক তেমনিভাবে ১৮৯২ সালে দখলদার বৃটিশরা কুকি-চিন-মিজো নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত অঞ্চলকে তিন ভাগ করে বাংলা, মায়ানমার ও ভারতের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছিল। ভারতের মণিপুর, মিজোরাম ও বার্মার চিন রাজ্যের মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর আত্মিক সম্পর্ক বিদ্যমান এবং তারা মূলত একই এথনিসিটি ভুক্ত। বৃটিশদের এই ঘৃণ্য ও চতুর উপনিবেশিক নীতির নাম হল ‘divide and rule policy’, যার মাধ্যমে তারা কোন একটি অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে বিভক্ত করে দুর্বল করে ফেলে এবং সেখানে অবস্থিত কৌশলগত সম্পদ, ভূমি, নদী কিংবা জলাধারের ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিভক্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে চিরস্থায়ী অসন্তোষ ও বিরোধ তৈরী করে রাখে। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অবস্থান ও বাংলাদেশ সরকারের সাথে তাদের বিদ্যমান বিরোধ হল বৃটিশদের রেখে যাওয়া সেই ঔপনিবেশিক লিগেসি। 

বাংলাদেশের শাসকরাও দেশের পার্বত্য অঞ্চলকে উপনিবেশিক দৃষ্টিকোন থেকেই বিবেচনা করে। শেখ মুজিব ক্ষমতায় থাকাকালে বলেছিল “বাঙ্গালী প্রবেশ করিয়ে পার্বত্য অঞ্চলকে ভাসিয়ে দিব”। এরই ধারাবাহিকতায় জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকাকালীন প্রায় ৩ লাখ বাঙ্গালীকে পার্বত্য অঞ্চলে স্থানান্তর করে সেখানকার ডেমোগ্রাফি জোরপূর্বক পরিবর্তন করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। এরপর এরশাদ ক্ষমতায় এসে একই ধারা বজায় রেখে বলেছিল, “আমি ভবিষ্যতে পাহাড়ে কোন ‘নাক-বোঁচা’ দেখতে চাই না”। শাসকদের এই দৃষ্টিভঙ্গী ও কর্মকান্ডের কারণে দেশের পার্বত্য অঞ্চলের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী নিজেদেরকে বঞ্চিত ও নিঃগৃহীত অনুভব করার কারণে সৃষ্ট ক্ষোভ থেকেই জেএসএস, ইউপিডিএফ ও কেএনএফ-এর মত সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়েছে এবং তাদের এই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে তাদেরকে নিজ নিজ দেশের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে বিভিন্ন রাষ্ট্র। যার ফলে এই অঞ্চলের শান্তি বার বার বিনষ্ট হচ্ছে এবং এই সমস্যার কোন সমাধান আজ অবধি হয়নি।

ইসলাম হলো একমাত্র জীবনব্যবস্থা যা ক্ষুদ্র কিংবা বৃহৎ সকল জাতিসত্তার মানুষকে একত্রে ও শান্তিপূর্ণভাবে তত্ত্বাবধান করতে পারে। ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থা ‘জিম্মাহ্‌’ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের সকল অমুসলিম জাতিসত্ত্বা-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠিকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে তাদের নাগরিক অধিকার প্রদানের পাশাপাশি তাদের ধর্মীয় আচার পালন ও জাতি-বর্ণ-গোষ্ঠিগত পরিচয় বজায় রাখার অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়। এবং তাদের ন্যায্য আর্থিক ও ব্যবসায়িক অধিকার সংরক্ষণ করার পাশাপাশি তাদেরকে যথাযথ নিরাপত্তা প্রদান করে। বাইতুল মাল থেকে নাগরিকদের জন্য বরাদ্দের এবং গণমালিকানাধীন সম্পদের সমান অংশ/ভাগ তাদের জন্যও নির্ধারিত রয়েছে। এই ‘জিম্মাহ্‌’ চুক্তির আওতাভুক্তদের কোন অধিকার ক্ষুন্ন করাকে রাসূলুলুল্লাহ্‌ (সাঃ) ‘আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের সাথে যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য’ বলে অভিহিত করেছেন। ফলে, খিলাফত ব্যবস্থার মধ্যে অমুসলিম ও ভিন্ন জাতিসত্তার কোন নাগরিক অনুভব করেনা যে সে বঞ্চিত বা নিঃগৃহীত হচ্ছে কিংবা তার ন্যায্য অধিকার হরণ করা হচ্ছে। বরং, এই রাষ্ট্রকে তারা তাদের নিজেদের রাষ্ট্র বলে মনে করে এবং এই রাষ্ট্রকে বহিঃশত্রুর আক্রমন থেকে রক্ষা করার জন্য তারা জানবাজী রেখে লড়াই করে; যেমনটি হয়েছিল ক্রুসেডের সময়। খিলাফত রাষ্ট্রে বসবাসরত খ্রীস্টানরা মুসলিম সেনাবাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আক্রমনকারী ইউরোপয়ীয় ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। তারা মুসলিমদের খলিফাকে ‘আমাদের খলিফা’ বলে সম্বোধন করত এবং ক্রুসেডাররা তাদের ধর্মের ভাই (খ্রীস্টান) হওয়া সত্যেও তাদেরকে সাহায্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।

ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থার এই সার্বজনীনতার কারণেই আরব, ইরাকী, সিরীয়, পার্সীয়ান, তুর্কী, বাঙালী, এশীয়, ভারতীয়, ইউরোপীয়, রাশিয়ান, লাল, সাদা, কালো, খাটো, লম্বা সকল বর্ণ ও জাতিসত্ত্বার মানুষ তাদের জাতীয় পরিচয় ও পিতৃপুরুষের ধর্ম পরিত্যাগ করে ইসলামে প্রবেশ করেছিল এবং শক্তিশালী ইসলামী উম্মাহ্‌-তে পরিণত হয়েছিল। এই অঞ্চলে হিন্দু রাজা গনেশের পুত্র যুবরাজ যদূ ১৪১৫ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে জালালুদ্দীন মুহাম্মাদ শাহ নাম ধারণ করে, যার হাত ধরে ইসলামের প্রভাব পশ্চিমের বিহার থেকে পূর্বের ত্রিপুরা ও আরাকান পর্যন্ত বিস্তৃত হয় এবং তার শাসনামলে এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে। কেবলমাত্র খিলাফত ব্যবস্থা পুন:প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই দেশের পার্বত্য অঞ্চলে বিদ্যমান সকল বিচ্ছিন্নতাবাদকে সমাধান করা সম্ভব এবং উম্মাহ্‌’র কৌশলগত ভূখন্ডকে শত্রুরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র থেকে নিরাপদ রাখা সম্ভব।

    -    রিসাত আহমেদ




“ইসরাইলে ইরানের হামলা কি সাজানো নাটক?”

খবরঃ

ইসরাইলে ইরান যে হামলা চালিয়েছে তা এক কথায় নজিরবিহীন। শুধু তাই না, গত কয়েক দশক ধরে ইহুদিবাদী রাষ্ট্রটিতে হামলা চালানো একমাত্র দেশও ইরান। এই হামলাকে অনেকেই ইসরাইলের নিষ্ঠুরতার শাস্তি হিসেবে দেখছেন। কিন্তু ইরানের হামলার ধরন এবং দেশটির নেতাদের বক্তব্যের পর অনেকেই সন্দেহ পোষণ করছেন, এই হামলা কি সাজানো নাটক? (www.somoynews.tv/news/2024-04-15/Nu6U7v01

মন্তব্যঃ

দামেস্কে ইরানি দূতাবাসে অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্রের বোমা হামলার ঘটনায় ইরানের প্রতিক্রিয়া কী হবে সেই প্রত্যাশায় মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। মুসলিমরা তাদের আকাশ সীমার উপর দিয়ে ক্ষেপণাস্ত্র চলে যাওয়ার দৃশ্য দেখে আনন্দ-উল্লাস করেছে, তারা মিসাইলের ছবি তুলেছে, আনন্দে তাকবীর দিয়েছে, তাদের চোখ দিয়ে আনন্দের কান্না বয়ে গেছে... কিন্তু হামলা শুরু হতে না হতে ইরান কর্তৃক তা সমাপ্তির আকস্মিক ঘোষণা সবাইকে বিস্মিত করেছে। সবাই বিস্মিত হয়েছে যখন জানা গেল, ইরান হামলা চালানোর আগেই দখলদার ইসরাইল এবং এটিকে সুরক্ষা প্রদানকারী আমেরিকা ও আশপাশের মুসলিম শাসকদের অবহিত করেছিল। উম্মাহ্‌ প্রত্যক্ষ করলো, ইরানের ছোড়া ড্রোন এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র-এর বেশিরভাগই লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগেই অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্রকে ঘিরে আরব দেশগুলোর আকাশসীমায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হলো! প্রকৃতপক্ষে, ‘True Promise’ নামে ইরানের এই তথাকথিত হামলা ইসরাইলের মাটিতে যতটুকু আঘাত করেছে তা ইসরাইলের সামরিক এয়ারপোর্টের রানওয়েতে কিছু গর্ত তৈরি করা ছাড়া তেমন কোনই ক্ষতি করতে পারেনি! 

তবে, আমেরিকার ইচ্ছানুসারে সংযত ও সীমাবদ্ধ ইরানের এই নাটকীয় প্রতিক্রিয়ায় বেশ কয়েকটি বিষয় উন্মোচিত হয়েছে; আবারও প্রমাণিত হলো এই অবৈধ রাষ্ট্রটির অপরাজেয় তকমা একটি মিথ ছাড়া কিছু না, বরং আমরা দেখেছি এই হামলার পর কিভাবে তীব্র আতঙ্ক দখলদার ইহুদিদেরকে গ্রাস করেছিল। ফিলিস্তিনকে ঘিরে থাকা দেশগুলোর শাসকরাই হচ্ছে মুলতঃ অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্রের প্রথম প্রতিরক্ষা লাইন। পশ্চিমারা বাহ্যিক আক্রমণ থেকে এই অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্রটিকে সুরক্ষা দেয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সর্বোপরী, মুসলিমরা ফিলিস্তিনের পবিত্র ভুমির মুক্তি এবং অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্রকে নির্মূল করতে কতটা ব্যাকুল হয়ে আছে। 

মুসলিম উম্মাহ্‌’র তীব্র আকাঙ্ক্ষা কেউ এই অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্রটির সাথে লড়াই করুক এবং তাদের সমস্ত সামরিক শক্তি দ্বারা এটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ুক। কারণ উম্মাহ্‌ বর্তমান রুয়াবিদাহ্‌ (নির্বোধ ও অজ্ঞ) শাসক, পশ্চিমাদের দালাল এবং কৃতদাসদের নীরবতা ও বিশ্বাসঘাতকতার কারণে চরম অপমান ও হতাশা অনুভব করছে। ইরানের হামলাকে তারা একটি আশার আলো হিসেবে দেখে প্রতারিত হয়েছে। মুসলিম হিসেবে আমাদের সুসংবাদ নিতে হবে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) নিকট হতে, “...অতঃপর জুলুমের শাসনের অবসান হবে, আল্লাহ্‌’র ইচ্ছায়, তারপর আবারও ফিরে আসবে খিলাফত নব্যুয়তের আদলে” (মুসনাদে আহমদ)। ইনশাআল্লাহ্‌, সেদিন দূরে নয় যেদিন অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্রটি নির্মূল হবে; এবং তা হবে মুসলিম দেশগুলোর দালাল শাসকদের অপসারণ করে দ্বিতীয় খিলাফতে রাশিদাহ্‌ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। সেদিন মুসলিম উম্মাহ্‌ সমুদ্র, স্থল ও আকাশ পথে তার সামরিক বাহিনীর সর্বাত্মক আক্রমন প্রত্যক্ষ করে তাক্ববীর দিবে, আনন্দ উৎযাপন করবে এবং প্রশান্ত হবে তাদের হৃদয়ের ক্ষতস্থানগুলো। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, তোমাদের হাত দিয়েই আল্লাহ্‌ তাদেরকে শাস্তি দিবেন, তাদেরকে অপমানিত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদেরকে সাহায্য করবেন আর প্রশান্ত করবেন মু’মিনদের অন্তর” (সূরা আত-তওবা: ১৪)।

    -    মোহাম্মদ তালহা হোসেন




“মঙ্গল কামনায় শুরু মঙ্গল শোভাযাত্রা”

খবরঃ

শুরু হলো ১৪৩১ সনের বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা। রোববার (১৪ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখে সকাল সোয়া ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামালের নেতৃত্বে মঙ্গল শোভাযাত্রাটি বের হয়।… এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য করা হয়েছে ‘আমরা তো তিমিরবিনাশী’।… ইমেরিটাস অধ্যাপক হাশেম খান বলেন, অশুভ শক্তি এখনো নানাভাবে আমাদের এগিয়ে চলায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে।… সেই ধারাবাহিকতায় মঙ্গল শোভাযাত্রাও শুরু হয়। অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করার অঙ্গীকার করা হয় এ মঙ্গল শোভাযাত্রায়।… (https://www.banglanews24.com/national/news/bd/1313770.details)

মন্তব্যঃ

মোগল সম্রাট আকবরের শাসনামলে কৃষিনির্ভর তৎকালীন বাংলায় কর আদায় সহজ করার জন্য সম্রাট আকবরের নির্দেশে জ্যোতির্বিজ্ঞানী আমির ফতুল্লাহ সিরাজী চন্দ্র বর্ষপঞ্জিকে সৌর বর্ষপঞ্জিতে রূপান্তরিত করেন। এর ভিত্তিতে সম্রাট আকবর ৯৯২ হিজরি মোতাবেক ১৫৮৪ সালে হিজরি সৌর বর্ষপঞ্জির প্রচলন করেন। বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হওয়া ৯৬৩ হিজরি সালের মহররম মাস ছিল বাংলা বৈশাখ মাস। এজন্য বৈশাখ মাস বঙ্গাব্দ বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস এবং ১ বৈশাখকে নববর্ষ ধরা হয়। ১৯৮৯ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে “মঙ্গল শোভাযাত্রা”কে নববর্ষ উৎযাপনের সাথে যুক্ত করা হয়। শোভাযাত্রাটিকে অসাম্প্রদায়িক হিসেবে বলা হলেও এখানে যেসব প্রতীক ব্যবহৃত হয়ে আসছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্যাঁচা, বাঘ, সিংহ, ময়ূর, ইঁদুর, হাতি, হাঁস, ষাঁড়, প্রজাপতি, সূর্য, বিভিন্ন ধরনের মুখোশ ও মঙ্গল প্রদীপ। এসব প্রতীকের প্রতিটি হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যেমন, হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী প্যাঁচা হলো ধনসম্পদ ও ঐশ্বর্যের দেবী লক্ষ্মীর বাহন। 

“ধর্ম যার যার উৎসব সবার” এই সেক্যুলার চিন্তার আড়ালে এই হিন্দুত্ববাদী অনুষ্ঠানকে দেশের জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। দেশীয় সেক্যুলার বুদ্ধিজীবি ও শাসকগোষ্ঠী ইসলামবিদ্বেষী পশ্চিমা ও হিন্দুত্ববাদী ভারতের অন্ধ অনুসারী। তারা এসব নষ্ট-ভ্রষ্ট চিন্তা ও সংস্কৃতি প্রচার করছে যাতে সাধারণ জনগণ এগুলোকে মেনে নেয়। মঙ্গল শোভাযাত্রার মতো উৎসবগুলোকে এদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতির পাশাপাশি বাঙালি সংস্কৃতি হিসেবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পালনে উৎসাহিত করা হয়, কারণ ইসলামী আক্বিদা থেকে উৎসারিত উৎসব কিংবা সংস্কৃতিসমূহ যেহেতু সুনির্দিষ্ট এবং এগুলোর মধ্যে নতুন কিছু অনুপ্রবেশ সম্ভব না, সেহেতু এর পাশাপাশি মানবরচিত বাঙ্গালী সংস্কৃতি চালু করলে সেগুলোতে যেকোন কিছু অনুপ্রবেশ করানো সম্ভব। যেমন, এখানে মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে পাশ্চাত্যের অনুকরণে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে; এমনকি এখানে সমকামীদেরও অংশগ্রহণের বিভিন্ন খবরাখবর ইতিপূর্বে বিভিন্ন মিডিয়াতে উঠে এসেছে।

মুলতঃ যেকোন সভ্যতায় (হাদারা) বস্তুগত দিক এবং সংস্কৃতিগত (চিন্তা, বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান) দিক থাকে। সাধারণত, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি হতে প্রাপ্ত যেকোন বস্তুগত উন্নতি সার্বজনীন (সেটা যে ধর্মের মানুষের দ্বারাই আবিষ্কৃত হোক না কেন), এর সাথে কোন নির্দিষ্ট ধর্মবিশ্বাসের সম্পর্ক নাই। যেমন, কৃষিকাজের জন্য সুবিধাজনক ‘বাংলা বর্ষপঞ্জি’। তাই ইসলাম বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিতে স্থান দিয়েছে এবং গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে  নিয়ে গেছে। কিন্তু, বিভিন্ন চিন্তা ও সংস্কৃতির চর্চা সাধারণত কোন না কোন নির্দিষ্ট ধর্মবিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত। তাই উৎসব কখনো সবার হতে পারে না, কারণ উৎসবটি কোন না কোন বিশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত। থার্টি ফার্স্ট নাইট, ভ্যালেন্টাইনস কিংবা ফ্রি মিক্সিং সংস্কৃতি ধর্মনিরপেক্ষ বিশ্বাস তথা আল্লাহ্‌কে রাষ্ট্র ও জীবন থেকে পৃথকীকরণ নামক অন্ধবিশ্বাস থেকে উৎসারিত। এ কারণে মুসলিমরা পশ্চিমা কিংবা হিন্দু সভ্যতার মত অন্যকোন সভ্যতা থেকে উদ্ভূত যেকোন কিছু গ্রহন বা চর্চা করতে পারবে না, শুধুমাত্র শিল্প ও বিজ্ঞান থেকে উদ্ভূত উপকরণসমূহ ব্যতীত। 

তাই পূর্ব থেকে চালু থাকা বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক সমাজে ‘বাংলা বর্ষপঞ্জি’র শুরুর দিনে ‘হালখাতা’ কিংবা অন্যান্য সার্বজনীন চর্চাগুলোর উপর ভর করে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ প্রচার ও প্রতিষ্ঠার যে পঁয়তারা চলছে, কিংবা এই দিনকে কেন্দ্র করে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ কিংবা বটমূলে নাচ-গান আয়োজন করে বিজাতীয় সংস্কৃতির যে চর্চাসমূহ আয়োজন করা হচ্ছে, সেগুলো অবশ্যই বর্জনীয়। কারণ, যেকোনো উৎসবই কোনো না কোনো ‘দ্বীন’ বা ‘বিশ্বাস’ থেকে উৎসারিত হয় এবং বাংলা নববর্ষকে উৎসবে পরিণত করা হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতার উপর ভিত্তি করে, যেটাতে মুসলিমগনের অংশগ্রহণের কোন সুযোগ নেই। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ঈদ হয়ে রয়েছে, আর এটা আমাদের ঈদ (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা)”। [বুখারী ও মুসলিম]

    -    মোঃ জহিরুল ইসলাম




“প্রশিক্ষণ নিতে ভারত যাচ্ছেন ৫০ বিচারক”

খবরঃ

ভারতের ভূপালে অবস্থিত ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি ও একটি স্টেট একাডেমিতে প্রশিক্ষণের জন্য জুডিসিয়াল সার্ভিসের ৫০ বিচারককে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে এ অনুমতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের বিচার শাখা-৩ একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। প্রশিক্ষণের জন্য সহকারী জজ, সিনিয়র সহকারী জজ, যুগ্ম জেলা ও জজ, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, জেলা ও দায়রা জজ এবং সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ সব বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা আগামী ৬ মে থেকে ১৬ মে পর্যন্ত প্রশিক্ষণে অংশ নেবেন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৬ থেকে ১৬ মে পর্যন্ত ভারতের ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি, ভূপাল ও একটি স্টেট জুডিসিয়াল একাডেমিতে অনুষ্ঠিতব্য প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের ৫০ বিচারককে অনুমতি দেওয়া হলো। প্রশিক্ষণের যাবতীয় ব্যয় ভারত সরকার বহন করবে। (https://dainikamadershomoy.com/details/018ee6c97e74)

মন্তব্যঃ

ভারতের ন্যাশনাল জুডিসিয়াল একাডেমি থেকে বাংলদেশের বিচারকরা কি শিখবে? ভারতের বিচার ব্যবস্থাইতো পক্ষপাতদুষ্ট অপেশাদার আচরণের জন্য সমালোচিত। ভারতের বিচার ব্যবস্থা সকল প্রকার ন্যায়-নীতি এবং বিচারিকী পদ্ধতির নীতি লঙ্ঘন করে ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসকগোষ্ঠীর মুসলিম নিধনের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বৈধতা প্রদানের রাবার ষ্ট্যাম্প হিসাবে কাজ করছে। এই বিচার ব্যবস্থার উপর ভর করেই ভারত মুসলিমদের উপর এনআরসি চাপিয়ে বাস্তুচ্যুত করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের স্থানে রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বাবরি মসজিদের স্থানে রাম মন্দির স্থাপনের রায় প্রদান করার সময় ভারতের উচ্চ আদালত পুরাতাত্বিক তথ্যের মত অনির্ভরযোগ্য তথ্যের উপর ভিত্তি করে রায় প্রদানের নজির স্থাপন করে। যদিও প্রাপ্ত পুরাতাত্বিক নির্দেশনসমূহ থেকেও এই স্থানে মন্দির থাকার বিষয়টি অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়নি। অকাট্য প্রমাণবিহীন শুধুমাত্র অনুমাননির্ভর আদালতের রায় বিস্ময়কর নয়, বরং নজিরবিহীনও বটে। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ কেন মন্দির বানানোর পক্ষে রায় দিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট?, নভেম্বর ৯, ২০১৯, বিবিসি বাংলা)। খটকা লাগার মত আর একটি বিষয় হচ্ছে, এই প্রশিক্ষণের ব্যায় ভারত সরকার বহন করবে। যদিও ভারত সরকারের সাধারণ নীতি হচ্ছে যেকোন মূল্যে বাংলাদেশ থেকে অর্থনৈতিক এবং ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ আদায় করা। সেই ভারত বাংলাদেশের বিচারকদের নিজ খরচে প্রশিক্ষণ প্রদান করছে? মূলত ভারতের এই প্রশিক্ষণ আয়োজন ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ যার উদ্দেশ্য বাংলাদেশের প্রশাসনের ভিতরে ভারতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল অনুগত দালাল শ্রেণী তৈরি করা। পূর্বে আমরা দেখেছি, ভারতকে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর নবীন ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণের প্রদনের মত স্পর্শকাতর কাজেও সম্পৃক্ত করা হয়। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ ভারতের আইএমএ থেকে কমিশন পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি সেনা অফিসার আবির হাসান,  ডিসেম্বর ১১, ২০২৩, প্রতিদিনের বাংলাদেশ)। প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অনুগত দালালশ্রেণী তৈরির একটি প্রচলিত প্রক্রিয়া। এই ধরণের কার্যক্রম কতটা ভয়াবহ তা বর্তমান আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর প্রতি তাকালে দেখা যায়। তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় আওয়ামী লীগকে আশ্রয়, প্রশ্রয়, সামরিক প্রশিক্ষণ, সহায়তা প্রদান তাদেরকে ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতায় অন্ধে পরিণত করেছে যে তারা ভারত কর্তৃক ক্রমাগত এই দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত এবং মুসলিম বিদ্বেষের মত ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রগুলো দেখতে পাচ্ছে না। এমনকি সীমান্তে নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যার মত ঘটনার পরেও সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, “বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক রক্তের অক্ষরে লেখা, এ সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য”। 

আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদেরকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন যেন আমরা অমুসলিমদের আমাদের অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ না করি; এমনকি যদি সে আমাদের পিতা কিংবা এবং ভাইও হয়। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন: হে ঈমানদারগণ ! তোমরা স্বীয় পিতা ও ভাইদের অভিভাবকরুপে গ্রহন করোনা, যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরকে ভালোবাসে। আর তোমাদের মধ্য থেকে যারা তাদের অভিভাবকরুপে গ্রহন করে তারা সীমালংঘনকারী ( সুরা আত-তাওবা, আয়াত ২৩)।

    -    মো: সিরাজুল ইসলাম




“ছেলে-মেয়েকে গুলি করে ঋণগ্রস্ত বাবার আত্মহত্যা”

খবরঃ

চাকরি ছেড়ে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করেন প্রকৌশলী মশিউর রহমান। কিন্তু সেখান লস-প্রতারিত হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন। উল্টো ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এভাবে কেটে যায় দীর্ঘদিন। ২ সন্তান বড় হয়েছে, অর্থনৈতিক কষ্টে সংসার চলছিল না। অভাব-অনটনের কষ্ট, অন্যদিকে মানুষের চরম অবহেলার শিকার হয়ে আত্মঘাতি হলেন তিনি। কলেজ ও স্কুল পড়ুয়া ২ সন্তানকে করেন গুলি। গুলিতে ছেলে মারা যায়। মেয়ের অবস্থাও সংকটাপন্ন। (www.jaijaidinbd.com/national/454857)

মন্তব্যঃ

হতাশা ও বিষণ্নতা থেকে আত্মহত্যা এখন আর কোন অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যার সংবাদ চোখে পড়ে। পারিবারিক কলহ, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, প্রেমে ব্যর্থ হওয়া ইত্যাদি কারণে মানুষদের মধ্যে হতাশা ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ধরণের ঘটনা যে শুধুমাত্র বাংলাদেশেই ঘটছে ব্যাপারটি কিন্তু তা নয়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিবছর প্রায় ৮ লাখ নারী-পুরুষ আত্মহত্যা করেন। অর্থাৎ প্রতি ৪০ সেকেন্ডে ১জন নারী বা পুরুষ আত্মহত্যা করছেন। তথাকথিত উন্নত বিশ্বের দেশেগুলোর মধ্যে জাপানে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ৫০ হাজার, যা এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা বৃহত্তম সংখ্যা। আত্মহত্যা এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যা কোন স্থানীয় বা আঞ্চলিক সমস্যা না। 

হতাশা ও বিষন্নতা আত্মহত্যার জন্য অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ মানসিক রোগ। গবেষকরা বলছেন, গুরুতর বিষণ্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ১৫ শতাংশই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বর্তমান বিশ্বে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডিপ্রেশনের রোগী রয়েছেন। গবেষণায় দেখা গেছে বিশ্বে প্রতি ৫ জনের ১জন কোন না কোন ধরণের ডিপ্রেশনে ভুগছেন। কেন এই ধরণের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা একটি বৈশ্বিক মহামারিতে রুপ নিয়েছে তা বুঝতে হলে আমাদেরকে সেক্যুলার জীবনাদর্শের চরিত্রকে অনুধাবন করতে হবে, যা দ্বারা বিশ্ব এখন পরিচালিত হচ্ছে। সেক্যুলারিজম (দ্বীন বা স্রষ্টার বিধানকে রাষ্ট্র হতে বিচ্ছিন্ন করা) মানুষকে তার জীবন সম্পর্কে সঠিক চিন্তা প্রদান করতে অপারগ। সেক্যুলারিজম দাবী করে যে, স্রষ্টা থাকলেও মানুষের জীবন পরিচালনায় স্রষ্টার কোন প্রয়োজন নেই। মানুষ তার জীবনে কী করবে এবং জীবন সম্পর্কে কি দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করবে তার সিদ্ধান্ত মানুষ নিজেই গ্রহণ করবে। ফলে, স্বাভাবিকভাবে ইন্দ্রিয়গত পরিতুষ্টিই জীবনের উদ্দেশ্য হিসেবে দাড়িয়েছে। ফলে, যখন সেই উদ্দেশ্য পূরণে নূন্যতম বিচ্যুতি ঘটে কিংবা অনিশ্চয়তা দেখা দেয় তখনই ব্যক্তি তার জীবনের প্রতি আগ্রহ হারায়। অপরদিকে ইন্দ্রিয়গত পরিতুষ্টি ভিত্তিক ভোগবাদী জীবনও একজন মানুষকে খুব দ্রুতই হতাশাগ্রস্ত করে তোলে, যখন সে Sense of Purpose খুজে পায় না তখন জীবনের প্রতি ইন্টারেস্ট হারিয়ে ফেলে।

একমাত্র বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ইসলাম মানুষদেরকে একটি Sense of Purpose দেয়। ইসলাম মানুষদেরকে জানায় যে, এই পৃথিবীতে আসার পূর্বে তারা এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র কাছে ছিল এবং মৃত্যুর পর তারা আল্লাহ্‌’র কাছেই ফেরত যাবে। এবং এই পৃথিবীতে মানুষের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ্‌ তাকে যেই জীবন ব্যবস্থা দিয়েছেন সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করা। এবং এই জীবনের কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করেই আল্লাহ্‌ পুরষ্কৃত কিংবা শাস্তি প্রদান করবেন। ইসলাম ইন্দ্রিয়গত পরিতুষ্টিকে জীবনের উদ্দেশ্য নয়, বরং জীবনধারণের মাধ্যম বানিয়েছে, ফলে একজন মুসলিমদের অন্তর তখনই তৃপ্ত হয় যখন সে প্রতিটি কাজ আল্লাহ্‌’র বিধান অনুযায়ী পরিচালনা করতে সক্ষম হয়। আল্লাহ্‌ বলেন, “জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণ দ্বারাই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়” (সূরা আর-রাদ: ২৮)। জীবন সম্পর্কে মুসলিমদের এই Profound চিন্তা থাকার কারণে মুসলিমরা কখনো হতাশ হয় না। ফলে, মুসলিমদের জীবনে যদি কখনো দুঃখ কষ্ট আপতিত হয় তখন তারা এটিকে আল্লাহ্‌র কাছ থেকে আসা পরীক্ষা হিসেবেই গ্রহণ করে এবং ধৈর্য ধারণ করে। আল্লাহ্‌ বলেন, “আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও” [আল-বাকারা: ১৫৫]। বর্তমানে গাজার মুসলিমদের উপর আরোপিত দুর্যোগের পরও তারা যে দৃঢ় মনোভাব দেখিয়েছেন তা মূলত জীবন সম্পর্কে ইসলামি চিন্তারই বহিঃপ্রকাশ। 

    -    মো. হাফিজুর রহমান




“যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতকে সতর্কবার্তা: বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়ায় চীনের নৌঘাঁটি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে”

খবরঃ

চীন নৌ ঘাঁটি নির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং কম্বোডিয়ায় তার প্রভাব বিস্তার করার বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে, তবে এই পদক্ষেপগুলো নয়াদিল্লি এবং ওয়াশিংটনে সতর্কতার সাথে দেখা হচ্ছে।… বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, চীনা সাবমেরিনগুলো সংস্কার ও পরিষেবার জন্য বাংলাদেশ বন্দরে  ডক করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা এটিকে চীনের ‘সাবমেরিন কূটনীতি’ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। বাংলাদেশে নির্মাণাধীন নৌ ঘাঁটির স্যাটেলাইট চিত্রের পূর্ববর্তী বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, ‘পিএলএর বঙ্গোপসাগরে পা রাখা  চীনের উপকূল থেকে আরও দূরে কাজ করার এবং ভারতের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও  তার মিত্রদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে।’… (https://mzamin.com/news.php?news=104441)

মন্তব্যঃ

আন্তর্জাতিক ‘ক্ষমতার ভারসাম্যের নিওরিয়েলিস্টিক থিংকিং’ নামক পশ্চিমা চিন্তা দ্বারা যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের শাসকগোষ্ঠী, রাজনীতিবিদগণ কিংবা সামরিক বাহিনী কলুষিত থাকবে ততদিন পর্যন্ত বন্দর, মূল্যবান খনিজ সম্পদের মত কৌশলগত সম্পদের উপর কুফর সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও আঞ্চলিক শক্তিসমূহ কর্তৃত্ব ও দ্বন্দ্ব বজায় থাকবে। দেশের শাসকগোষ্ঠী নিজেরা বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এসব কৌশলগত সম্পদসমূহ আমাদের শত্রুদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকবে। যেমন, বর্তমান হাসিনা সরকার মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর তুলে দিয়েছে মার্কিন অনুগত জাপানের হাতে এবং ট্রানজিট, করিডর তুলে দিয়েছে মার্কিন অনুগত ভারতের হাতে। আর অন্যদিকে কৌশলগত সাবমেরিন ঘাঁটি তুলে দেয়ার কথা হচ্ছে চীনের হাতে। এভাবে ক্ষমতাসীনরা পরাশক্তি ও আঞ্চলিক শক্তিকে সন্তুষ্ট করে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার ধোয়া তুলে তাদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে, যদিও তারা বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করে এবং দেশের গণতান্ত্রিক প্রধান দুই দলই নিজেদের স্বাধীনতা আনার জন্য কৃতিত্বের দাবি করে। 

প্রকৃতপক্ষে শাহজালাল (রহ.), মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী কিংবা মোহাম্মদ বিন কাসিম-এর উত্তরসূরি হিসেবে আমাদের রাষ্ট্রের এই বর্তমান অবস্থান সত্যিই আমাদের জন্য অপমানজনক। এই অবস্থার জন্য মূলত আমাদের যে চিন্তার প্রক্রিয়াটি দায়ী সেটি হচ্ছে ‘ক্ষমতার ভারসাম্য’ কিংবা ‘পাওয়ার অফ ব্যালেন্স’-এর নিওরিয়েলিস্ট চিন্তা- যেখানে বিশ্বাস করা হয়, ‘পৃথিবী একটি চিরস্থায়ী যুদ্ধের জায়গা এবং পৃথিবীর বর্তমান জাতি রাষ্ট্রগুলোকেই নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই এখানে কিছু রাষ্ট্র থাকবে শক্তিশালী এবং কিছু রাষ্ট্র থাকবে দুর্বল এবং এই অবস্থা দুর্বল রাষ্ট্রগুলো নিরাপত্তার জন্য হুমকি। রাষ্ট্রগুলো তাদের নিরাপত্তাহীনতা দূর করবে ‘ইন্টারনাল ব্যালেন্সিং’ ও ‘এক্সটার্নাল ব্যালান্সিং’য়ের মাধ্যমে’। তারা ‘ইন্টার্নাল ব্যালেন্সিং’ করবে দেশের সম্পদগুলোকে খরচ করে অস্ত্র-শস্ত্র বানানোর মাধ্যমে, যেমন- প্রাথমিকভাবে আমেরিকা কিংবা রাশিয়া যেটা করেছিল। আর ‘এক্সটার্নাল ব্যালান্সিং’ হবে কোন পরাশক্তির অনুগত থেকে, যেমন- জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া, চীনের সাথে তাদের ক্ষমতার ভারসাম্যের জন্য আমেরিকার বলয়ে ঢুকেছে। এ ‘ব্যালেন্স অব পাওয়ার’-এর চিন্তা বা দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই কোন কোন রাষ্ট্র তার অস্ত্র-শস্ত্র, সামরিক শক্তি এগুলো বাড়াতে জোর দেয় কিংবা বাংলাদেশের মত রাষ্ট্রগুলো নিজেদের মূল্যবান সম্পদ এবং আনুগত্যের বিনিময়ে পরাশক্তি কিংবা আঞ্চলিক শক্তির কাছ থেকে নিরাপত্তা লাভ করে। এবং এই চিন্তার কারণেই আমাদের রাজনীতিবিদগণ কিংবা সামরিক বাহিনী মার্কিন হুমকি বা কর্তৃত্বকে অতিক্রম করে দেশ ও ইসলামের পক্ষে অবস্থান নিতে ভয় পায়। তারা নিজেদের সামরিক সক্ষমতার সাথে পরাশক্তিগুলোর সামরিক সক্ষমতার তুলনা করে হতাশা অনুভব করে। 

অথচ ইসলামি চিন্তা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। এর বাস্তব প্রমাণ আমরা দেখতে পাই যখন বদরের যুদ্ধে মুসলিমদের সাথে কুরাইশদের যুদ্ধ হলো, সেই যুদ্ধের সৈন্যের সংখ্যার অনুপাত ছিল ১:৩। আর কুরাইশদের ১৭৫টি ঘোড়ার বিপরীতে মুসলিমদের ঘোড়ার সংখ্যা ছিল মাত্র দুটি। এবং তারও পরবর্তীতে ৬৩০ সালে যখন আল্লাহ্‌’র রাসূল (সাঃ) তাবুক অভিযানে ৩০ হাজার সৈন্য নিয়ে এগিয়ে যান পরাক্রমশালী রোমানদের বিরুদ্ধে, তখন রোমানদের সামরিক শক্তির তুলনায় মুসলিমদের সামরিক শক্তি ছিল নিতান্তই নগণ্য। তাই বলা যায় ‘ক্ষমতার ভারসাম্য’-এর এই তত্ত্বকথা ইসলাম কখনো বিশ্বাস করে না। ইসলামী চিন্তা হলো আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা প্রদত্ত শরীয়াহ বাস্তবায়ন করা এবং জিহাদের মাধ্যমে তা বিশ্ববাসীর নিকট পৌঁছে দেওয়া। এক্ষেত্রে ‘ক্ষমতার ভারসাম্য’ কিংবা ‘সামরিক শক্তির ভারসাম্য’-এর কোন প্রশ্ন আসে না। খোলাফায়ে রাশেদীনের সময় থেকে শুরু করে উমাইয়া, আব্বাসী ও উসমানী খেলাফতের অধীনে মুসলিম সামরিক বাহিনী কখনোই এই দায়িত্ব, চর্চা ও চিন্তাকে (আল্লাহর হুকুমে জিহাদ ও তাঁর সাহায্যে ভরসা করা) পরিত্যাগ করেনি। এটা শুরু হয়েছে যখন খিলাফত ধ্বংসের পর মুসলিমগণ পশ্চিমাদের দেখানো পথে চিন্তা করা শুরু করল এবং জাতি রাষ্ট্রসমূহে বিভক্ত হয়ে গেল। তাই আবারও ইসলামী ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনতে এবং তা পুরা বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিতে হলে মুসলিমদেরকে এই ‘ব্যালেন্স অব মিলিটারি’ কিংবা ‘ব্যালেন্স অফ পাওয়ার’-এর মাইন্ডসেট থেকে বের হয়ে ইসলামী মাইন্ডসেট গ্রহণ করতে হবে। শরীয়াহ অনুযায়ী যেকোন মূল্যে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা’র দেয়া লক্ষ্য পূরণ করতে হবে। তিনি বলেছেন, “হে ঈমানদারগণ। তোমরা যদি আল্লাহ্‌-কে সাহায্য কর, তিনি তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের অবস্থান দৃঢ় করবেন” (সূরা মুহাম্মদঃ ৭)।

    -    মোঃ জহিরুল ইসলাম