Weekly 

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

১১৮ তম সংখ্যা । ১৩ মে, ২০২৪



এই সংখ্যায় থাকছে :

“হুমকি দিয়ে হামলা চালাল পুলিশ, পিঠমোড়া করে বেঁধে নেওয়া হলো শিক্ষার্থীদের”

“এক বন্ধুকে খুশি করতে অন্যের বিরাগভাজন হতে পারি না: সেনাপ্রধান”

“তাপ প্রবাহ: তীব্র গরম অব্যাহত, বাংলাদেশে আরো ৩ দিনের সতর্কতা জারি”

“রাজশাহীতে বিসিএস পরীক্ষা দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি”

“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সালাতুল ইস্তিস্কার অনুমতি মেলেনি”






“হুমকি দিয়ে হামলা চালাল পুলিশ, পিঠমোড়া করে বেঁধে নেওয়া হলো শিক্ষার্থীদের”

খবরঃ

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া (ইউসিএলএ) ক্যাম্পাসে তখন উত্তেজনা চরমে। গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে শত শত দাঙ্গা পুলিশ। আটকের পর পিঠমোড়া করে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাঁদের। বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে তখন বিক্ষোভকারীদের স্লোগান, ‘আমাদের ক্যাম্পাস ছেড়ে যাও।’ ইউসিএলএ ক্যাম্পাসের এই চিত্র স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার রাতের। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলবিরোধী যে বিক্ষোভ চলছে, তারই ধারাবাহিকতায় ইউসিএলএ-ও নানা কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার রাতে তাঁদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসরায়েলপন্থী শিক্ষার্থীরা। এরপরই সেখানে পুলিশ অভিযান ও ধরপাকড় শুরু করে। পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়েও বিক্ষোভ থামাতে পারছে না। বরং ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়সহ নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচি পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে এক হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা পেরিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, ইতালি, মিসরসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। (https://www.prothomalo.com/world/usa/9wk66dnq5x)

মন্তব্যঃ 

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনে গণহত্যা পরিচালনাকারী অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন এবং যুদ্ধবিরতির দাবিতে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ কর্মসূচীতে ন্যাক্কারজনক হামলা যুক্তরাষ্ট্র এবং তার প্রচারিত সেকুলার আদর্শের হঠকারিতা নগ্নভাবে প্রকাশ করে দিল। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনে কোন প্রকার বাধা ব্যাতীত “ফ্রি স্পিচ” এর নামে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে অন্যতম নাগরিক অধিকার হিসাবে চিহ্নিত করা হয় (The American Heritage Dictionary of the English Language, জুলাই ২৮, ২০২০)  এবং বিশ্বব্যাপী লিবারেল গণতন্ত্রের প্রচার করার সময় যুক্তরাষ্ট্র বলে বাধাহীন মত প্রকাশের স্বাধীনতা হচ্ছে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার অন্যতম পদ্ধতি। যুক্তরাষ্ট্র নাগরিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর ভিত্তি করে কোন দেশকে গণতান্ত্রিক বা স্বৈরতান্ত্রিক হিসাবে চিহ্নিত করে। সে তার বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান যেমনঃ ইউএসএআইডি (USAID) এবং তার নিয়ন্ত্রণাধীন তথাকথিত আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠান যেমনঃ আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার কমিশন (IHRC) ইত্যাদির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে উৎসাহিত করে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রেই তথাকথিত মত প্রকাশের স্বাধীনতার অস্তিত্ব নাই অর্থাৎ তার সংজ্ঞা অনুযায়ি সে নিজেই একটি স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র যার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া জনগণের দায়িত্ব। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্রের চরিত্র তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র থেকে আলাদা নয়। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কাঠামোতে শুধু বহুজাতিক কোম্পানি ও ধনীদের সুবিধা প্রদানের ফলে দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র এক শতাংশ হতে সম্পদ কুক্ষিগত হওয়া সাধারণ জনগণ তীব্র বৈষম্যের  শিকার। এর প্রতিবাদে আন্দোলনকারীরা ওয়াল স্ট্রিট দখল করে সরকারের কর্পোরেট তোষণ নীতির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করছিল। সেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকেও দমন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার পুলিশকে লেলিয়ে দিয়েছিল। বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ ওয়াল স্ট্রিট আন্দোলনকারীদের হটিয়ে দিল পুলিশ, নভেম্বর ১৫, ২০১১, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। তথাকথিত ল্যান্ড অব ফ্রিডমে নাগরিকরা সরকারের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা শুধুমাত্র কঠিন নয় বরং অমার্জনীয় অপরাধ। শুধুমাত্র তখনই সরকারের নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা যায় যখন এর সাথে রাজনৈতিক এবং ক্ষুদ্র পুঁজিপতিদের স্বার্থের সম্পর্ক রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কেনেডির নির্বাচনে জেতার জন্য যখন প্রচুর ভোট প্রয়োজন ছিল শুধুমাত্র তখনই আফ্রিকান আমেরিকানরা ভোট দেয়ার সুযোগ পায়। একইভাবে, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে যখন নারী শ্রমিকদের স্বস্তা শ্রমের প্রয়োজন হয় শুধুমাত্র তখনই তাদের ভোটাধিকার দেয়া হয়। 

সুতরাং, এটা স্পষ্ট নাগরিকদের প্রতিবাদের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের বা প্রতিষ্ঠানগুলোর কোন আইন বা নীতির পরিবর্তন হয় না বরং হয় শুধুমাত্র ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠীর স্বার্থে। কিন্তু, গাজার গণহত্যায় অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রকে নিঃশর্ত সহায়তা করে সে সকল প্রকার সীমা অতিক্রম করেছে যে তার দেশের সচেতন মানুষেরা যুক্তরাষ্ট্রের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। এটা শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের সমস্যা নয় বরং পশ্চিমা লিবারেল গণতান্ত্রিক সকল দেশের চিত্র একই। যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ডসহ প্রায় ১২ টি ইউরোপের রাষ্ট্র গাজার গণহত্যা নিয়ে কোন প্রকার প্রতিবাদ কর্মসূচী নিষিদ্ধ করেছে। যে পশ্চিমা লিবারেল রাষ্ট্রসমূহ নিরীহ নারী, শিশু এবং বেসামরিক ফিলিস্তিনি মুসলিমদের গণহত্যা থেকে রক্ষা না করে খুনি সত্তাটিকে (ইসরাইল) সকল প্রকার সহায়তা করছে এবং এর বিরুদ্ধে সকল প্রকার প্রতিবাদকে নির্মমভাবে দমন করছে, তার কি বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়ার কোন নৈতিক ভিত্তি থাকে?  “তাদেরকে যখন বলা হয়, ‘পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করো না’, তারা বলে, ‘আমরা তো শান্তি স্থাপনকারীই।’ সাবধান! এরাই অশান্তি সৃষ্টিকারী, ....”। (সূরা বাকারাহ: ১১-১২) 

    -    মো: সিরাজুল ইসলাম




“এক বন্ধুকে খুশি করতে অন্যের বিরাগভাজন হতে পারি না: সেনাপ্রধান”

খবরঃ

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (BIISS) আয়োজিত ‘প্রতিরক্ষা কূটনীতি: বাংলাদেশের জন্য কৌশল’ শীর্ষক সেমিনারে সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ এক বন্ধুরাষ্ট্রকে খুশি করতে গিয়ে যেন অন্য রাষ্ট্রের বিরাগভাজন হতে না হয় সে বিষয়টিতে গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা ও যোগাযোগ আছে। কিন্তু আপনারা জানেন, মিয়ানমারের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের সঙ্গে (প্রকাশ্য) যোগাযোগ রাখাটা নিজেদেরকে ঝুঁকিতে ফেলে দেওয়ার মতো। আমরা একটি বন্ধুরাষ্ট্রকে খুশি করতে গিয়ে অন্য রাষ্ট্রের বিরাগভাজন হতে পারি না’। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/4d6g9soah4)

মন্তব্যঃ

রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর গণহত্যা চালানো সামরিক সরকারের সাথে বালাদেশের সামরিক বাহিনীর সম্পৃক্ততা ও যোগাযোগ রয়েছে বলে মন্তব্য করে এবং দেশটিকে বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করে জেনারেল শফিউদ্দিন প্রমাণ করলেন যে, হাসিনা সরকার তার উপনিবেশিক প্রভূ বৃটেনের ভূরাজনৈতিক স্বার্থকে রক্ষা করতে গিয়ে আরেক বৃটিশ দালাল মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে সহায়তা করার নীতি অবলম্বন করছে। এবং তা করতে গিয়ে এই সরকার একদিকে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর প্রাণপ্রিয় উম্মাতের একটি অংশ রোহিঙ্গা মুসলিমদেরকে পরিত্যাগ করেছে এবং অপরদিকে বাংলাদেশের সীমান্ত ও নিরাপত্তাকে অরক্ষিত করে দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর ভূরাজনৈতিক খেলার মঞ্চ বানিয়ে ফেলেছে।

শুধূ তাই নয়, মিয়ানমারের বিভিন্ন সশস্ত্রগোষ্ঠীর সাথে সংঘাতে জড়িয়ে কোনঠাঁসা হয়ে পরা জান্তা বাহিনীর জন্য বৃটিশদের পদলেহী এই সরকার বাংলাদেশকে রীতিমত নিরাপদ রুট বানিয়ে ফেলেছে। গত ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশে অবৈধ ও সশস্ত্র অনুপ্রবেশ করে মায়ানমারের বিভিন্ন বাহিনীর ৩৩০ জন সদস্য, যাদেরকে ১৫ ফেব্রুয়ারি স্থল ও জলসীমায় কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। এর পর গত ১৯ এপ্রিল ২৪ জন, ১৬ এপ্রিল ৬৪ জন, ১৪ এপ্রিল ১৪ জন, গত ৩০ মার্চ ৩ জন ও ১ মার্চ ১৭৭ জন বিজিপি ও সেনা সদস্য নতুন করে বাংলাদেশ অবৈধ অনুপ্রবেশ করেছে যাদেরকেও ইতিমধ্যেই জামাই আদরে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অথচ, গৃহযুদ্ধ ও অন্যান্য কারণে মিয়ানমারে আটকে পরা ১৭৩ জন বাংলাদেশীকে অবৈধ অনুপ্রবশের দায়ে ১-২ বছর মেয়াদে সাজা খাটিয়ে রাখাইনের সিটওয়ে কারাগার থেকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। এর পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি ও মর্টারশেল বাংলাদেশের সীমান্তের ভিতরে এসে পড়ছে, দেশের সীমান্তবর্তী মানুষের ব্যবসা, কৃষি ও জীবন-জীবীকা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। গুলি-বিস্ফোরণের শব্দে র‌্যাব-বিজিবি সীমান্ত ছেড়ে প্রাণভয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে পালাচ্ছে এমন দৃশ্য দেখে জনগণের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের জনগণের জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা প্রদানের কার্যকর ব্যবস্থা করে জনগণের আস্থার প্রতীকে পরিণত হওয়ার পরিবর্তে দেশের সামরিক নেতৃত্ব হাসিনা সরকারের দেশ ও জনবিরোধী কর্মকান্ডকে ‘জায়েজ’ করার জন্য উদ্যোগী হয়েছে; যা লজ্জাজনক তো বটেই, তা দেশের জন্য বিপদজনকও বটে।

মিয়ানমারের মুসলিম হত্যাকারী সামরিক বাহিনীর সাথে গোপন সম্পৃক্ততা ও যোগাযোগ রক্ষা করা যেমন অগ্রহণযোগ্য, ঠিক তার বিপরীতে এই যোগাযোগের কারণে অন্যকোন মোড়ল রাষ্ট্রের বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে ভীত হওয়াও কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এই দাসপ্রতীম মনোভাব কখনোই ‘মুসলিম’ পরিচয়ের সাথে মানানসই নয়। এরকম দুর্বল-চিত্তের, ভীত ও বুদ্ধিবৃত্তিক দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ ব্যক্তিরা মুসলিম সামরিক বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানের কোন অধিকার রাখে না। মুসলিম উম্মাহ্‌‘কে পরাশক্তিতে পরিণত করার অদম্য আকাঙ্খা যেসকল অফিসারদের ধমনীতে রয়েছে এবং যারা আল্লাহ্‌’র আসমানি সাহায্যের ওয়াদাতে পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখেন তারাই মুসলিম সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বের যোগ্য দাবীদার।

    -    রিসাত আহমেদ




“তাপ প্রবাহ: তীব্র গরম অব্যাহত, বাংলাদেশে আরো ৩ দিনের সতর্কতা জারি”

খবর:

বাংলাদেশের আবহাওয়া বিভাগ আবার তাপপ্রবাহ সম্পর্কিত সতর্কতা জারি করেছে। অব্যাহত তাপদাহের মধ্যে জারি করা সতর্কতায় বলা হয়, সকাল থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। এতে আরো বলা হয়, এই সময়ে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় ‘অস্বস্তি’ বাড়তে পারে। এর আগেও ১৯, ২২ ও ২৫ এপ্রিল ৭২ ঘণ্টার সতর্কতা জারি করা হয়। এদিকে, রবিবারের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। (www.voabangla.com/a/7588182.html)

মন্তব্য:

এই তাপপ্রবাহ কিংবা অন্যান্য দুর্যোগ মূলত আমাদেরই দুই হাতের অর্জন। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে।” [আর-রুম: ৪১] যেমন, দেশজুড়ে চলমান এই তাপপ্রবাহের মূলত তিনটি কারণ রয়েছে: প্রথমত, বনজসম্পদ হ্রাস পাওয়া, দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার কারণে নদী শুকিয়ে যাওয়া এবং তৃতীয়ত, অপরিকল্পিত নগরায়ন। 

প্রথমত, বাংলাদেশে বনজসম্পদ ও বনভূমির অবক্ষয় ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে বহু গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। ভূখণ্ডের মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা অপরিহার্য হলেও বাংলাদেশের বনবিভাগের প্রতিবেদন অনুসারে, দেশে বন আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ মোট ভূমির ১২.৮ শতাংশ।

দ্বিতীয়ত, নদীর উপর বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ এবং নদীশাসন ও খনন ব্যবস্থাপনার অভাবে নদীগুলোও শুকিয়ে যাচ্ছে। এভাবে উত্তপ্ততার পরিধি বাড়ছে, তাপমাত্রা সীমাহীন না হলেও তীব্র দাবদাহ অনুভূত হচ্ছে। 

তৃতীয়ত, দাবদাহ অনুভবের তীব্রতা বৃদ্ধির অন্যতম মূল কারণ হলো ‘ভুল নগর দর্শন’। নগরীতে বৃক্ষ নিধনের মাধ্যমে ভবন নির্মাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি গত ২৮ বছরে শুধু ঢাকা থেকেই প্রায় ৮৫ শতাংশ জলাভূমি হারিয়ে গেছে। পাশাপাশি এই সময়ে নির্মাণ এলাকা বা স্থাপনা বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। তাছাড়া, দেশের নগরীগুলোতে পারস্পরিক দূরত্ব না মেনে ভবন নির্মাণ করায় বাতাস চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। বাতাসের প্রবাহধারা নিশ্চিত করার জন্য যে পরিকল্পিত নগরায়নের প্রয়োজন ছিল তা বাস্তবায়ন না করে অপরিকল্পিত ভবন নির্মানের ফলে বাতাসের আনুভূমিক চলাচল সড়ক করিডোরের বাইরে নেই বললেই চলে। এভাবে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য নগরীগুলোর বিভিন্ন এলাকা ‘উত্তপ্ত দ্বীপের মতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তাপীয় দ্বীপ বা হিট আইল্যান্ড’-এ রূপান্তরিত হয়েছে।”

মূলত, পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মুনাফাকেন্দ্রীক চিন্তার কারণে এবং পরিবেশের কথা বিবেচনায় না এনে ব্যাপক ও অপরিকল্পিত শিল্পায়নের কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জলবায়ুতে অস্বাভাবিক পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি সেক্যুলার শাসকদের দায়িত্বহীনতার কারণে অপরিকল্পিত নগরায়ন ও পূজিপতিগোষ্ঠী কর্তৃক তাদের স্বার্থে বনভূমি উজারকরণ ও জলাভূমি ভরাট করে আবাসন ব্যবসার ফলেই মূলত এই বর্তমান দুরবস্থার আবির্ভাব।

সুতরাং মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত এই ভুল শিল্পায়ন ও নগরায়নের বৃত্ত থেকে বের হয়ে আমাদের আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা অর্থাৎ ইসলামি ব্যবস্থার কাছ থেকে গাইডলাইন নিতে হবে। রাসূলুলাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “যদি নিশ্চিতভাবে জানো যে কিয়ামত এসে গেছে, তখন হাতে যদি একটি গাছের চারা থাকে, যা রোপণ করা যায়, তবে সেই চারাটি রোপণ করবে” (বুখারী, মুসনাদে আহমাদ)। ইসলামি রাষ্ট্রের শাসক অর্থাৎ খলীফা অবশ্যই এই হাদীসের উপর আমল করবেন এবং জনগণকে বৃক্ষরোপনে উৎসাহিত করার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে বনায়নের পদক্ষেপ হাতে নিবেন। সেটা অবশ্য ছাত্রলীগের লুটপাটের বৃক্ষরোপন কর্মসূচীর মত হবে না। পাশাপাশি খলীফা এটিও নিশ্চিত করবেন যে, নগরগুলো যাতে যথেষ্ট পরিবেশবান্ধব হয়। খিলাফতের ইতিহাসে প্রায় সকল নগরীগুলোই ছিল পরিকল্পিত। ‘১০০১ মুসলিম আবিষ্কার’ বইয়ের ‘নগর’ অধ্যায়ে খিলাফত রাষ্ট্রের পরিকল্পিত শহরায়ন সম্পর্কে বলা হচ্ছে, “এসব শহরের অধিকাংশেরই আবহাওয়া বেশ উষ্ণ ছিল, তাই এগুলোতে প্রয়োজন ছিল পর্যাপ্ত ছায়ার। এমনটি নিশ্চিত করতে সংকীর্ন রাস্তা, অভ্যন্তরীণ উঠান, সমতল থেকে উঁচুতে অবস্থিত একই রকমের বাড়ির সারি এবং বাগানের সমন্বয়ে নগরগুলো নির্মিত হয়।” এমনকি উসমানীয় খিলাফতের সময়ে অর্থাৎ মুঘল আমলে ঢাকাতেই ছিল শতাধিক খাল যেগুলো নগরীর চারপাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষা, তুরাগ ও বালু নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। বর্তমানে পুঁজিপতিদের আবাসন ব্যবসার কারণে খালগুলো উধাও আর নদীগুলো মৃত কিংবা মৃতপ্রায়।

    -    মো. হাফিজুর রহমান




“রাজশাহীতে বিসিএস পরীক্ষা দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি”

খবর:

বিসিএস পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা সকাল ১০টায়। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে কেন্দ্রে এসে এক শিক্ষার্থী ভেতরে ঢুকতে পারেননি। পুলিশের বাধা অমান্য করে গেট টপকে ভেতরে ঢুকলেও পুলিশ তাকে পরীক্ষায় বসতে দেয়নি। বের করে দিয়েছে। এটি ছিল ওই শিক্ষার্থীর জীবনের শেষ বিসিএস। তিনি রাস্তার ওপরে মাথা ঠুকতে থাকেন,গড়াগড়ি দিতে থাকেন। তবু তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে তাঁর কেন্দ্রে ঢোকার কথা ছিল। ১০ মিনিট দেরি হওয়ার কারণে তিনি এত কিছু করেও পরীক্ষায় বসতে পারেননি। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/district/1oh941macv)

মন্তব্য:

বর্তমানে যুব সমাজের কাছে বিসিএস অতিকাঙ্খিত একটি স্বপ্নের ন্যায়। ৪৬ তম বিসিএস-এ পদসংখ্যা মাত্র ৩ হাজার ১৪০টি হলেও এর বিপরীতে প্রার্থী ছিলো ৩লাখ ৩৭ হাজারেরও বেশি! কেননা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পরও কর্মসংস্থানের চরম সংকট, জবফিল্ডে সাবজেক্ট ভিত্তিক কোনো কাজের সুযোগ না থাকা, পক্ষান্তরে বিসিএস-এ সকল বিষয় থেকেই আবেদন করার সুযোগ, আর্থিক ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার কারণে বিসিএস-এ টিকা তরুনদের জন্য জীবন-মরন ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হারে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ থেকে ভালো ফলাফল নিয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও বছরের পর বছর চাকুরীর এই যুদ্ধে পরাজিত হয়ে চরম মানসিক হতাশা, বেকারত্বের অভিশাপে শেষপর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে ঢাবির ইংরেজি বিভাগের মোমিন, দর্শন বিভাগের তারেক আজিজ, জাহাঙ্গীরনগরের সুক্তিসহ নামের হিসাব না রাখা আরো অনেকে।

আর আজকের এই ভয়াবহ অবস্থার জন্য দায়ী বর্তমান পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা। অভিভাবক হিসেবে রাষ্ট্র কর্মক্ষম সকল নাগরিকের জন্য কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে বাধ্য হলেও এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শাসকের কাছ থেকে তা আশা করা অসম্ভব ও অকল্পনীয় একটা বিষয় ছাড়া আর কিছুই নয়, কারণ এই ব্যবস্থায় শাসকেরা শাসনকার্যকে পরকালের জবাবদিহিতা সাথে সম্পৃক্ত করে না এবং তারা নিজেরাই যেহেতু আইনপ্রণেতা সেহেতু তারা থাকে রাষ্ট্রে সকল জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে। ফলে না তারা জনগণের নিকট দায়বদ্ধ থাকে, না পরকালে আল্লাহ্‌’র নিকট। তাই দায়িত্বহীন সরকার নির্লজ্জের মত একদিকে তরুণদেরকে কৃষিকাজ, হাস-মুরগী, গরু-ছাগল পালন করার মত তামাশাপূর্ণ কথা বলে। অপরদিকে ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরির পরিবর্তে কাফের মুশরিক দেশগুলোর দাসত্ব করতে গিয়ে দেশের পাটকল, চিনিকলসহ বিভিন্ন স্বয়ংসম্পূর্ণ শিল্পগুলো একে একে ধ্বংস করে তেল, গ্যাস ও অন্যান্য খনিজ সম্পদ উত্তোলন প্রজেক্টগুলো বাংলাদেশের বাপেক্স এর পরিবর্তে শেভরন, গ্যাজপ্রম, সিনোপ্যাক ইত্যাদি উপনিবেশবাদী কাফির কোম্পানির হাতে তুলে দেয়। শুধুমাত্র বাংলাদেশ না পাকিস্তান, সিরিয়া, মিশর ইত্যাদি মুসলিম দেশেগুলোকেও বেকারত্ব আজ ভয়াবহ পরিস্থিতি ধারণ করেছে।

একমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত ইসলামি খিলাফত ব্যবস্থাতেই মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের মৌলিক প্রত্যেকটা বিষয়কে দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে দেখা হয়। কারণ খলিফার মনে ক্ষমতার লোভের পরিবর্তে থাকে আল্লাহ্‌’র ভয় ও জবাবদিহিতা। কেননা রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) খলিফার ব্যাপারে বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই খলিফা, যিনি জনগণের জন্য দায়িত্বশীল এবং তিনি তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন”। ফলে খিলাফত ব্যবস্থায় খলিফা নাগরিকদের জন্য তৈরি করবে ব্যাপক কর্মসংস্থান। কুরআন-সুন্নাহ্‌’র আলোকে প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের ১৪৯ নং ধারা অনুযায়ী, “রাষ্ট্র সকল নাগরিকদের জন্য কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে।” খিলাফত ব্যবস্থা রাষ্ট্রকে বিশ্ব নেতৃত্বের দিকে এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি ব্যাপক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাষ্ট্র লৌহ-ইস্পাত ভিত্তিক বিভিন্ন ভারী শিল্প, সমর শিল্প,খনিজ শিল্প, কৃষি শিল্প, ক্ষুদ্র-কুটির শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক গবেষণা কেন্দ্রসহ আরো বহুমুখী কর্মক্ষেত্র তৈরি করবে। পাশাপাশি রাষ্ট্র তরুণদের মাঝেও বিশ্ব নেতৃত্বের বীজ বপন করবে। তরুনরা শুধুমাত্র ক্যারিয়ার বা অর্থ উপার্জনকে জীবনের একমাত্র লক্ষ্য না বানিয়ে উচ্চতর আকাঙ্খা থেকে জীবনকে দেখবে। এভাবে খিলাফত রাষ্ট্র একদিক দিয়ে ইবনে সিনা, আল বিরুনী, মুহাম্মদ বিন কাশিম, সালাহউদ্দিন আয়য়্যুবির মত উচ্চাভিলাষী মুসলিম তরুন তৈরি করবে। অপরদিকে আমরা পাব খলিফা উমার বিন আবদুল আজিজের মত দায়িত্বশীল শাসক, যার সময় ব্যাপক কর্মসংস্থানের ফলে মানুষের আর্থিক অবস্থা এতটাই সমৃদ্ধ হয়েছিল যে বেকারত্ব তো দূরের বিষয়, সেসময় যাকাত দেয়ার মানুষও খুঁজে পাওয়া যায়নি। কেননা এটাই আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদের ওয়াদা করেছেন, “আর যদি জনপদসমূহের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি অবশ্যই আসমান ও যমীন থেকে বরকতসমূহ তাদের উপর উন্মুক্ত করে দিতাম” (সুরা আরাফ-৯৬)।

    -    সাফওয়ানা আফরোজ




“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সালাতুল ইস্তিস্কার অনুমতি মেলেনি”

খবরঃ

তীব্র তাপদাহে বৃষ্টি প্রার্থনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সালাতুল ইস্তিস্কার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি না মেলায় এ কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাতে আয়োজকদের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন আয়োজকরা। জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচির আয়োজন করেছেন। বুধবার (২৪ এপ্রিল) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের মাঠে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ..আয়োজকদের পক্ষ থেকে কর্মসূচি নিয়ে জানানো হয়েছে, তীব্র তাপদাহের কষ্ট থেকে মুক্তি, কৃত গুনাহের জন্য ক্ষমা ও বৃষ্টি প্রার্থনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সর্বসাধারণকে নিয়ে সালাতুল ইস্তিস্কার আয়োজন করা হয়েছে। তবে এ কর্মসূচির অনুমতি দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ বিষয়ে প্রশাসনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়ার বিষয়টি আয়োজকদের পক্ষ থেকে ক্ষুদেবার্তার মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনুমতি না পাওয়ার বিষয়ে আয়োজকরা জানান, সালাতুল ইস্তিস্কার আদায় সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকালের অনুষ্ঠিতব্য সালাতুল ইস্তিস্কার ব্যাপারে কথা বলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের ডেকেছে। তীব্র তাপবদাহ চলমান থাকায় এই মুহুর্তে প্রশাসন আমাদের খোলা মাঠে সালাতুল ইস্তিস্কার আদায়ের অনুমতি দেয়নি। পরবর্তী সময়সূচি জানিয়ে দেয়া হবে। সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত। (Thedailycampus.com/universities/140798/ঢাকা-বিশ্ববিদ্যালয়ে-সালাতুল-ইস্তিস্কার-অনুমতি-মেলেনি)

মন্তব্যঃ 

পূর্ব ঘোষিত সালাতুল ইস্তিস্কার (বৃষ্টির জন্য আল্লাহ্‌’র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা) নামায আয়োজনে বাধা সৃষ্টি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে তার সেক্যুলার আইডেন্টটিটি আবারও প্রকাশ করে দিল। যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকে কিছু সংখ্যক মুসলিম একটি বড় অর্জন হিসাবে চিহ্নিত করে সুখানুভূতি ভোগ করে। কিন্তু, বাস্তবতা হচ্ছে উপনিবেশবাদী বৃটিশ সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে শুরু থেকে একটি সেকুলার প্রতিষ্ঠান হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে যার মূল উদ্দেশ্য ছিল মুসলিমদের সন্তানদের মধ্য থেকে সেক্যুলারিজমে আকৃষ্ট অনুগত বৃটিশ দালাল শ্রেণী তৈরি করা। বাংলাদেশে সেকুলারিজম এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের অন্যমত প্রচারক আবদুল গাফফার চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে এক আলোচনা সভার প্রধান বক্তা হিসেবে বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে যে, মুসলমানদের খুশি করার জন্যে এই বিশ্ববিদ্যালয় আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রকৃতপক্ষে সমসাময়িককালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রদায়িকতা ছিল, কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল না।” বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ ঢাবিই উপমহাদেশের প্রথম অসাম্প্রদায়িক বিশ্ববিদ্যালয়: গাফফার, জুলাই ১, ২০২১, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদর্শিকভাবে সেক্যুলার হতে পারে নাই। সেক্যুলার প্রতিষ্ঠান হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন বিশেষ ধর্মকে তোষণ বা দমন করা উচিত নয়। কিন্তু, আমরা দেখতে পাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হিন্দুদের একান্ত ধর্মীয় উৎসব “দোল উৎসব”, “সরস্বতী পুজা” এমনকি শিখদের ধর্মীয় উৎসব পালনে বিশেষ ব্যবস্থা করলেও মুসলিমদের সাংস্কৃতিক উদ্যোগ যেমনঃ কুর‘আন তিলাওয়াত, সালাতুল ইস্তিস্কার মত বিষয়গুলো পালনে জন্য কোন সহায়তা তো দিচ্ছেই না বরং প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা ব্যবহার করে বাধা সৃষ্টি করছে। এমনকি দাপ্তরিক নোটিশ দিয়ে মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের জন্য শারীয়াহ বাধ্যবাধকতা হিজাব পরিধান বাধা প্রদান করছে। বিস্তরিত জানতে দেখুনঃ ঢাবিতে নিকাব নিষিদ্ধ করলো।, আগস্ট ২৯, ২০২৩, সত্যমনা। সেকুলা বুদ্ধিজীবি এবং রাজনৈতিক নেতারা দাবি করে যে ধর্ম যার যার রাষ্ট্র/প্রতিষ্ঠান সবার বলে তা একটি মিথ্যা স্লোগান। বাস্তবতা হচ্ছে সেক্যুলারিজম ইসলাম ছাড়া অন্যান্য ধর্মকে প্রশ্রয় দেয়, কিন্তু ইসলামকে দমন করার জন্য আদাজল খেয়ে লাগে, কারণ ইসলাম অনান্য ধর্মের মত শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়ে কথা বলে না বরং ইসলাম মানুষের সার্বিক (অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, এবং আধ্যাত্মিক) মুক্তির বিষয়ে সমাধান দেয় যাতে মানুষ সৃষ্টাবিবর্জিত শাসনের যুলুমের অন্ধকার থেকে মুক্তি পায়। “আলিফ লাম রা। এই কিতাব আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি যাতে তুমি মানবজাতিকে বের করে আনতে পার অন্ধকার হতে আলোর দিকে; তাঁর পথে, যিনি পরাক্রমশালী” (সূরা ইব্রাহীম: ১)। তাই সেক্যুলাররা ইসলামের সংস্কৃতির বিন্দুমাত্র ছিটা-ফোঁটা দেখলেই তা দমন করার জন্য উন্মাদ হয়ে যায়। সেকুলারিজমের তা হোক নাস্তিক সেকুলারিজম বা ধার্মিক সেকুলারিজম, এর মধ্যে মুসলিমদের কোন কল্যাণ নাই। শুধুমাত্র ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের মধ্যেই রয়েছে মুসলিমদের কল্যাণ এবং মুক্তি। উমরা (রা.) একটি উক্তি এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে, “আল্লাহ্‌ আমাদের ইসলামের মাধ্যমে সম্মান দিয়েছেন। আমরা যদি ইসলামকে ছেড়ে অন্য কোনো কিছুর মাধ্যমে সম্মান পেতে চাই তাহলে আল্লাহ আমাদের আবার লাঞ্ছিত করবেন।”

    -    মো: সিরাজুল ইসলাম