Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 120


 Weekly 

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

১২০ তম সংখ্যা । ২৯ মে, ২০২৪





এই সংখ্যায় থাকছে :

“বাইডেন প্রশাসন বলছে, ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা করছে না”

“সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা”

“আজীম কী ছিলেন বড় কথা নয়, জনপ্রিয়তা দেখে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল: কাদের”

“তাঁরা বিদেশে বসে ‘বোতাম টেপেন’, আর ঘটনা ঘটে ঢাকায়”

“সুযোগ সন্ধানী কিছু লোকের কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী”

“কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই’: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অগ্নিসংযোগের শিকার রোহিঙ্গারা”

“ভারতবিরোধী ‘কঠোর অবস্থান’ থেকে সরতে চায় বিএনপি”




“বাইডেন প্রশাসন বলছে, ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা করছে না”

খবরঃ

হোয়াইট হাউস বলেছে, বাইডেন প্রশাসন বিশ্বাস করে যে ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা করছে না। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আমরা মনে করি না যে গাজায় যা ঘটছে তা গণহত্যা। আমরা যে বরাবরই গণহত্যার এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করে এসেছি, তার প্রমাণ আছে।’ জ্যাক সুলিভান এ কথাও বলেন, ‘নিরীহ সাধারণ মানুষের (ইসলায়েলীদের) সুরক্ষা এবং মঙ্গলের জন্য ইসরায়েলের আরও কিছু করার আছে। আর তা তাদের করাও উচিত।’ (https://www.prothomalo.com/world/usa/b8ln3mbrd0)

মন্তব্যঃ

আফগানিস্তানে ৫ লাখেরও অধিক, ইরাকে ১৩ লাখেরও অধিক মুসলিমকে ঠান্ডা মাথায় হত্যাকারী এবং সিরিয়ার কসাই বাশার আল আসাদকে রক্ষায় ৭ লাখের অধিক মুসলিমকে হত্যার মাস্টারমাইন্ড আমেরিকার কাছে ফিলিস্তিনে মাত্র (!) হাজার চল্লিশেক মুসলিম হত্যাকে ‘গণহত্যা’ বা ‘জাতিগত নিধন’ মনে না হওয়াটাই স্বাভাবিক। বিগত দুই যুগে ২৫ লক্ষাধিক মুসলিমকে বোমা মেরে, আগুনে ঝলসে, গুলি করে হত্যা করা ও কোটি কোটি মুসলিমকে ঘরবাড়ি ও সহায়সম্বলহীন করার মত নিকৃষ্ট, জঘণ্য ও ক্ষমার অযোগ্য অপরাধকে যেই রাষ্ট্রের কাছে একটি মহান (!) কাজ বলে মনে হয়, সেই আমেরিকা ফিলিস্তিনের মুসলিমদের রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে তা মনে করার মত নির্বুদ্ধিতা আর কিছু হতে পারে না। 

বাস্তবতা হচ্ছে, ইসলামের সাথে কুফরের, হক্বের সাথে বাতিলের চিরস্থায়ী সংঘাত ও যুদ্ধে কাফিররা মুসলিম উম্মাহ্‌’র কাছে তাদের চরম পরাজয় ও অপদস্ত হওয়ার অতীত ইতিহাস কখনোই ভুলতে পারেনি। ১২৯১ সালে ক্রুসেডারদের শেষ সৈন্যটিকেও মুসলিম ভূখন্ড থেকে বিতারণের ৬০০ বছরের অধিক সময় পরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ জেনারেল এডমন্ড এলেনবি ১৯১৭ সালে জেরুজালেম দখলে নেওয়ার পর বলেছিল, “Today the crusade has finally ended”. মুসলিমদের কাছে পরাজিত ও অপদস্ত ইউরোপের কাফির ক্রুসেডাররা বিশ্বাস করে তাদের final king বা মেসাইয়্যা (দাজ্জাল) বাহনে (গাধার পিঠে) চড়ে জেরুজালেমে প্রবেশ করবে; তাই তার সম্মানার্থে ক্রুসেডারদের বংশধর এই এলেনবি জাফা গেইট দিয়ে সেদিন তার বাহন থেকে নেমে পায়ে হেটে আল-আক্বসায় প্রবেশ করেছিল। এরপর ১৯২০ সালে ফ্রান্সের বাহিনী সিরিয়া দখলে নেওয়ার পর ফ্রেঞ্চ জেনারেল হেনরি গোরাঁ সালাউদ্দীন আইয়্যুবির কবরে লাথি মেরে কবরকে লক্ষ্য করে চিত্কার করে বলেছিল, “কবর থেকে উঠো সালাউদ্দীন, আমরা আবার ফিরে এসেছি”।

১৯৬৯ সালের ২১ আগষ্ট জায়নবাদী মাইকেল রোহান আল-আক্বসা মসজিদের ভিতরে সালাইদ্দীন আইয়্যুবির স্থাপন করা মিম্বরটিতে (যা সালাউদ্দীনের মিম্বর নামে পরিচিত) গানপাউডার ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে মসজিদটিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। সেদিনের স্মৃতিচারণ করে ইসরায়েলের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী গোলডামায়ের পরবর্তী সময়ে বলেছিল, “আমরা ভেবেছিলাম সেই দিনটিই হবে ইসরায়েল রাষ্ট্রের শেষ দিন। সেদিন রাতে আমরা কেউ (ইসরায়েলের প্রশাসন ও সেনাবাহিনী) ঘুমাইনি এই ভয়ে যে মুসলিমরা আল-আক্বসা মসজিদের অপমানে ক্ষুব্ধ হয়ে আমাদেরকে শেষ করে দিতে তেড়ে আসবে। কিন্তু আমরা দেখলাম, আমরা না ঘুমালেও মুসলিমরা সেদিন ঘুমিয়ে পরেছিল। সেদিন আমরা উপলব্ধি করেছিলাম মুসলিমরা আমাদের দিকে আর কখনো তেড়ে আসবে না, আমরা নিরাপদ”। 

প্রকৃত বাস্তবতা হলো, মুসলিমরা সেদিন ঘুমিয়ে পরেনি, তাদেরকে জোরপূর্বক চোখ বন্ধ রাখতে বাধ্য করেছিল এই আমেরিকা ও মুসলিম ভূখন্ডে তার দালাল শাসকেরা। উম্মাহ্‌’র গলাটিপে ধরে রাখা এই শাসকেরা মুসলিম সামরিকবাহিনীগুলোকে ব্যারাকে বন্দি এবং মুসলিমদের জাতিরাষ্ট্র নামক বৃহৎ কারাগারে বন্দি রেখেছে। কিন্তু, দুনিয়ায় হক্বের পক্ষের একমাত্র শক্তি মুসলিম উম্মাহ্‌‘কেও তার গৌরবময় অতীত ইতিহাস এবং আল্লাহ্‌’র সাথে তাদের কৃত অঙ্গীকার ভুলে গেলে চলবে না। কবর থেকে উঠে সালাউদ্দীন সেদিন জেনারেল গোরাঁ-র সেই চরম ঔদ্ধত্যের জবাব দেননি। সালাউদ্দীন কবর থেকে উঠবেনও না! এর জবাব দেয়ার দায়িত্ব সালাউদ্দীনের উত্তরসূরী মুসলিম সামরিক বাহিনীগুলোর। পরাজিত ক্রুসেডারদের বংশধর জেনারেল এলেনবির সেই ঘোষণার জবাবও তাদেরকেই দিতে হবে। মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, সামরিক বাহিনীগুলোর কানে এই কথা পৌঁছে দেয়া; যাতে তারা পশ্চিমা ক্রুসেডারদের সহযোগী এসব দালাল শাসকদের অপসারণ করে সত্যনিষ্ট ও ন্যায়পরায়ন খলিফার হাতে খিলাফতের নেতৃত্বের ঝাণ্ডা তুলে দেন। সেদিন খলিফা গোলডামায়ের-এর শঙ্কাকে সত্যে পরিণত করে মুসলিম উম্মাহ্‌’র সম্মানকে পুনরুদ্ধার করতে খিলাফতের কালিমাখচিত পতাকাকে আবারো গণনবিদারী তাক্ববীর ধ্বনীতে প্যারেড-রত মুসলিম সামরিক বাহিনীর সামনে দৃঢ়ভাবে গেড়ে দিবেন এবং তাদেরকে কমান্ড করবেন। ফিলিস্তিনের প্রতিটি ইঞ্চি ভূমিসহ দখলকৃত প্রতিটি মুসলিম ভূখন্ডকে মুক্ত করবেন এবং ঔদ্ধত্যকারীদের কঠোর শাস্তি দিবেন, এবং প্রশান্ত করবেন মুসলিমদের অন্তর।“তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর; আল্লাহ্‌ তোমাদের হাতে তাদেরকে শাস্তি দিবেন, তাদেরকে লাঞ্ছিত করবেন, তাদের উপর তোমাদেরকে বিজয়ী করবেন, এবং প্রশান্ত করবেন মু’মিনের অন্তর” [সূরা আত-তাওবাহ্‌: ১৪]। 

    -    রিসাত আহমেদ




“সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা”

খবরঃ 

দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।... যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, আজিজ আহমেদ তার ভাইকে বাংলাদেশে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি এড়াতে সহযোগিতা করেন। এটা করতে গিয়ে তিনি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন।...আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও আইনের শাসন শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার পুনরায় নিশ্চিত করা হলো। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/xtqip02nbq)

মন্তব্যঃ 

বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ-এর এর ঘৃণ্য কর্মকান্ড ও দুর্নীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তাই, আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা মাধ্যমে তা বুঝানোর প্রয়োজন নেই। যে রাষ্ট্র বিশ্ববাসীর সামনে সম্পূর্ণ নগ্নভাবে ইসরায়েলের মত সন্ত্রাসী রাষ্ট্রকে সহযোগিতার মাধ্যমে সরাসরি মুসলিম গণহত্যা চালাচ্ছে, যে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন চলমান, সেই রাষ্ট্র আরেকজন দুর্নীতিবাজকে কেন নিষেধাজ্ঞা দেয় তা বুঝার জন্য এই দেশের মানুষ যথেষ্ট সচেতন। বরঞ্চ, জেনারেল আজিজ আহমেদ-এর ঘটনা থেকে আমাদের দেশের নিষ্ঠাবান মুসলিম সামরিক কর্মকর্তাদের যে সত্য বুঝা জরুরী তা হচ্ছে, যেদিন থেকে মুসলিমরা এই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অধীনে পরিচালিত হচ্ছে, সেদিন থেকেই মুসলিম সেনাবাহিনীর গৌরবজ্জ্বল ইতিহাস ম্লান হয়ে গেছে এবং একের পর এক নানা বিতর্ক তাদের সম্মানকে কুলষিত করছে। যেখানে পৃথিবীর ইতিহাস একসময় জালেমের হাত থেকে মজুলমদের রক্ষায়, বাতিলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হক্ব প্রতিষ্ঠায় মুসলিম জেনারেলদের গৌরবজ্জ্বল পদধ্বনিতে মুখরিত ছিলো। সেখানে গত এক শতাব্দির অধিক সময় ধরেও এই গণতন্ত্র কোন সাহসী মুসলিম জেনারেলকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ দেয়নি যার বীরত্বের কাছে পুরোবিশ্ব মাথানত করবে। 

এর কারণ, ১৯২৪ সালে খিলাফত রাষ্ট্র ধ্বংসের মাধ্যমে বিশ্ব নেতৃত্ব মুসলিম সেনাবাহিনীর পরিবর্তে কাফির সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরিত হয়। শতাব্দি ধরে আমরা কোন মুসলিম জেনারেলকে দেখিনি যিনি সালাহ্‌উদ্দিন আউইয়ূবীর মত আল-আকসাকে বর্তমান ইহুদী দখলদারদের থেকে মুক্ত করার মিশনে জীবন উৎসর্গ করবে। কিংবা সাইফ-উদ্দিন কুতুজের মত বীর যিনি বর্বর মোঙ্গোলিয়ানদের মত বর্বর ইহুদীদের ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে দিতে উঠে পড়ে লেগেছেন। ইতিহাসে মুসলিম সেনাবাহিনীর যত গৌরব তার সবটুকুই ইসলামের হাত ধরে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর নেতৃত্ব বদরের যুদ্ধ থেকে শুরু করে, খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.)-এর নেতৃত্বে রোমানদের বিরুদ্ধে বিজয়, আল-কাদেসিয়ার যুদ্ধে সাদ ইবনে আবি-ওয়াক্কাসের নেতৃত্বে পারস্য বিজয়, হাত্তিনের যুদ্ধে ক্রুসেডারদের থেকে আল-আকসা মুক্ত করা, তারেক বিন জিয়াদের নেতৃত্বে আন্দালুস (বর্তমান স্পেন) বিজয়, আইন-জালুতের যুদ্ধে মোঙ্গোলিয়ানদের পরাজিত করা, মুহাম্মদ বিন কাসিমের নেতৃত্বে ভারত বিজয় কিংবা মোহাম্মাদ আল-ফাতিহ্‌’র নেতৃত্বে কন্সটান্টিনোপল বিজয়, এমন অসংখ্য গৌরবান্বিত বিজয় মুসলিমরা অর্জন করে শুধুমাত্র খিলাফত রাষ্ট্রের অধীনেই। এর বাহিরে মুসলিম সেনাবাহিনীর জাতিসংঘের ভাড়াটে সৈন্য হিসেবে খাটা কিংবা কাফিরদের স্বার্থে ব্যবহৃত হওয়ার অপমানজনক ইতিহাস ছাড়া আর কিছু নেই। মূলত, আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মুসলিম সেনাবাহিনীকে ইসলামের মাধ্যমে বিশ্ব নেতৃত্বের মুকুট দিয়েছেন। যেদিন থেকে মুসলিম সেনাবাহিনী ইসলামের পরিবর্তে কুফর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সম্মান এবং শক্তি অনুসন্ধান করছে সেদিন থেকেই তাদের কাছ থেকে বিশ্ব নেতৃত্বের মুকুট হারিয়ে গেছে। তাই এই অঞ্চলের মুসলিম সেনাবাহিনীর দায়িত্ব এই সত্য অনুধাবন করে পুনরায় ইসলামের অধীনে নিজেদের শক্তিশালী করা এবং বিশ্বব্যাপী নির্যাতিত মুসলিমদের রক্ষার দায়িত্ব কাঁধে নেওয়া। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “তিনি তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীন সহকারে প্রেরণ করেছেন যেন এই দ্বীন অন্য সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী হয়, যদিও মুশরিকগণ তা অপছন্দ করে” -(সূরা আত-তাওবাহ্‌: ৩৩)। 

    -    আসাদুল্লাহ্‌ নাঈম




“আজীম কী ছিলেন বড় কথা নয়, জনপ্রিয়তা দেখে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল: কাদের”

খবরঃ

ভারতে খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম (আনার) স্বর্ণ চোরাচালানকারী ছিলেন বলে দেশটির গণমাধ্যমে সংবাদ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তিনি কী ছিলেন, সেটা বড় কথা নয়। তাঁর জনপ্রিয়তা দেখেই দল তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে। [https://www.prothomalo.com/politics/3r1al7hjy4]

মন্তব্যঃ

সমাজে বহুদিন ধরেই একটা চিন্তা প্রচলিত আছে যে যারা প্রচলিত আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে কিংবা একটু বদলে নিজের স্বার্থ হাসিল করে নিতে পারে, সেই সফল এবং করিতকর্মা একজন মানুষ। একজন সাধারণ অপরাধীর পক্ষে হয়তো আইন বদলানো সম্ভব হয় না, তারা আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করেই খুশি থাকে। কিন্তু যারা আরও একটু এগিয়ে থাকতে চায়, তারা যোগ দেয় রাজনীতিতে। কারণ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় রাজনীতিতে চাইলেই আইন বদলে ফেলা সম্ভব। “When Money and Muscle Crime in Indian Politics Pays” শীর্ষক বইয়ে লেখক মিলন বৈষ্ণভ বলছেন যে, “২০১৭ সালে ভারতের রাজনীতিবিদদের ৩৬% (বর্তমানে ৪৬%) ক্রিমিনাল কেসে অভিযুক্ত। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, বেশীরভাগ ভারতীয় জনগণ এই ক্রিমিনালদের জেনেশুনেই ভোট দিচ্ছেন, কারণ তারা মনে করে যে পরিবর্তন আনতে চাইলে এই ক্রিমিনালদের পক্ষেই আনা সম্ভব”। একই কথা বলা যায়, মার্কিন ধনকুবের ও তুমুল জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেলায়। যে বলেছিল, “বর্তমান ব্যবস্থার পক্ষে Average Joe (সাধারণ মানুষ)-দের রক্ষা করার সক্ষমতা নেই। শুধু আমিই পারি এটাকে ঠিক করতে”। একই ঘটনা বলা যায় ইমরান খান ও এরদোগানদের বেলাতেও, যারা জনপ্রিয় এবং দাবি করে তারা ছাড়া এই সিস্টেম চলবে না। সুতরাং, এটা প্রমাণিত যে ধর্মনিরপেক্ষ জীবনব্যবস্থা ‘জীবনব্যবস্থা’ হিসেবে বৈশিষ্ট্যগতভাবেই ব্যর্থ কারণ তার ভরসা ‘সিস্টেম’ থেকে ‘ব্যক্তি’র কাছে স্থানান্তরিত হয়েছে। তাই স্বর্ণচোরাকারবারির জনপ্রিয়তাই হয়ে দাড়িয়েছে তার জনপ্রতিনিধি হওয়ার একমাত্র যোগ্যতা।

অন্যদিকে, আমরা যদি ইসলামি জীবনব্যবস্থার দিকে তাকাই তাহলে দেখব যে এখানে শাসক হওয়া জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে ছিল না, বরং ছিল তাকওয়া বা আল্লাহভীরুতার ভিত্তিতে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর ইন্তেকালের পর খলিফা হন আবু বকর (রা.)। জনপ্রিয়তার ভিত্তিতে তিনি যদি খলিফা থাকতে চাইতেন, তাহলে খুব বেশিদিন তার পক্ষে খলিফা থাকা সম্ভব হত না। কারণ তিনি খলিফা হওয়া মাত্রই অনেক গোত্র যাকাত দিতে অস্বীকার করে। ভন্ড নবী মুসাইলামা এর আবির্ভাব ঘটে। সামরিকভাবে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে ইসলাম বিস্তারের যুদ্ধও চলমান। অর্থাৎ তখন যদি ভোটের নির্বাচন হত, নিশ্চিতভাবে আবু বকর (রা.) সেই ভোটে হারতেন। কিন্তু ইসলামের নেতৃত্বের ভিত্তি জনপ্রিয়তা নয়, বরং শরীয়াহ বাস্তবায়নের প্রতি অবিচলতা। যে কারণে আবু বকর (রা.) দৃঢ়ভাবে যাকাত অস্বীকারকারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন, ভন্ড নবী মুসাইলামাকে শক্তহাতে প্রতিহত করেন এবং একই সাথে বাইজেন্টাইনদের নিকট ইসলাম প্রচারের সামরিক প্রয়াসও জারি রাখেন। আমাদের দরকার এরকম নেতা যিনি আল্লাহ্‌’র হুকুম বাস্তবায়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকবেন এবং এটাই হবে তার একমাত্র যোগ্যতা। একমাত্র ইসলামি জীবনব্যবস্থা তথা খিলাফতই পারে আমাদের এরকম নেতা উপহার দিতে।

    -    জোহান জাবির




“তাঁরা বিদেশে বসে ‘বোতাম টেপেন’, আর ঘটনা ঘটে ঢাকায়”

খবরঃ

নাম শুনলেই গা শিউরে ওঠার মতো আড়াই ডজনের বেশি শীর্ষ সন্ত্রাসীর নিয়ন্ত্রণে ছিল রাজধানী ঢাকার অপরাধজগৎ। ‘ক্রসফায়ারে’ পিচ্চি হান্নানের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া অভিযানের একপর্যায়ে তাঁদের প্রকাশ্য তৎপরতা কমে আসে। অনেকে গ্রেপ্তার হন। বেশির ভাগই বিদেশে পালিয়ে যান। তবে তাঁদের নির্দেশে ঢাকায় মানুষ খুন হয়, চাঁদা ওঠে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, শীর্ষ সন্ত্রাসীরা বিদেশে বসে ‘বোতাম টেপেন’, আর ঘটনা ঘটে ঢাকায়। অপরাধজগৎ ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এই শীর্ষ সন্ত্রাসীরা কোথাও মিলেমিশে, কোথাও মুখোমুখি অবস্থানে থেকে তৎপরতা চালাচ্ছেন।… (https://www.prothomalo.com/bangladesh/crime/qxkvfjz6xu)

মন্তব্যঃ

দুর্বৃত্তদের দ্বারা, দুর্বৃত্তদের জন্য, দুর্বৃত্তদের প্রণীত শাসন ব্যবস্থার নাম হল গণতন্ত্র এবং এসব দুর্বৃত্তের কাছে পুরো পৃথিবীর জনগণ আজকে অসহায়। এসকল দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন স্তরে স্তরে অবস্থান করে একে অপরের উপর নির্ভরশীল হয়ে পুরো পৃথিবীকে নরক বানিয়ে ফেলেছে। আমেরিকা নামক দুর্বৃত্তদের আন্তর্জাতিক সর্দার তার স্বার্থের জন্য নির্ভর করে বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা তার দালাল সরকার গুলোর উপর, যেমন, বাংলাদেশে সে বর্তমানে নির্ভর করছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী উপর। এ কারণে বিভিন্ন সময় আমেরিকা শেখ হাসিনাকে চাপ প্রয়োগ করতে তার দুর্বৃত্ত পুলিশবাহিনীর বিভিন্ন সদস্যদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও তাদের গডফাদার শেখ হাসিনার উপর কখনো নিষেধাজ্ঞা দেয় না। বরং বলে, ‘আমরা সামনে তাকাতে চাই পেছনে নয়’। আবার যখন প্রয়োজন ফুরাবে, তখন তাকেও বলি দিতে  তারা এক মুহূর্তও দ্বিধা করবে না। যেমনটি এই প্রধানমন্ত্রীর পিতার বেলায় ঘটেছিল। (দেখুন, বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত ছিল যুক্তরাষ্ট্র)। 

বাংলাদেশের শাসকরাও স্থানীয় দুর্বৃত্তদের সাথে একই পদ্ধতিতে কাজ করে। এসকল শাসকরা আগে নির্ভর করত আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের ওপর, যেন তারা জনমনে ত্রাস সৃষ্টি করতে পারে এবং জনগণ যেন শাসকদের কুকর্ম ও দুঃশাসনের প্রতিবাদ না করে। কালক্রমে এসব সন্ত্রাসীদের সাথে যোগ দেয় র‍্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সস্যদের ক্ষেত্রে যেমনটি আমরা দেখতে পাই চাঁদাবাজি, মাদক কারবারি, গুম, খুন, কন্ট্রাক্ট কিলিংসহ সমস্ত অপরাধ জগতের সাথে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের মতই কিংবা অনেক ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বহু গুণ বেশি সম্পৃক্ততা। যেমন, কন্ট্রাক্ট কিলিং এর ক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডারের ঘটনা এখনো তাজা রয়েছে। আবার, আমেরিকা যেমন প্রয়োজন ফুরালে তার দালাল শাসকদের বলি দিয়ে দেয়, তেমনি এদেশের শাসকরা বিভিন্ন সময় তাদের পালিত সন্ত্রাসীদের ক্ষেত্রেও এটা করে থাকে। যেমনটি আমরা দেখি যুবলীগ নেতা খালেদ, সম্রাট কিংবা হাল আমলের বেনজির কিংবা আজিজের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ বড় দুর্বৃত্ত যতদিন এসব পাতি দুর্বৃত্তদের শেল্টার দেয় ততদিন এরা যা খুশি তাই করতে পারে। জেলে থাকা কিংবা বিদেশে পালিয়ে থাকা- কোন কিছুই এদেরকে দাবায় রাখতে পারে না। এমনকি ‘ইন্টারপোল’ নামক তামাশা বাহিনীও এখানে অকার্যকর। এটা কাজ করে দুর্বৃত্ত সংশ্লিষ্ট দেশের দুর্বৃত্ত সরকারের মর্জির উপরে। যেমন, বর্তমানে ভারতে নিহত এমপি আনোয়ারুল আজীম এক সময় সন্ত্রাসী হিসেবে ‘ইন্টারপোল’ এর রেড নোটিশ খেলেও পরবর্তীতে তার চরিত্রের কোন উন্নতি না হলেও তার নামে ‘রেড নোটিশ’ তো শুধু উঠেই না বরং সে এমপিও হয়ে যায়! আর তারপর বহুগুণ উৎসাহে তার দুর্বৃত্তপনা চালিয়ে যায়, যেগুলো বর্তমানে তার মৃত্যুর পর বিভিন্ন মিডিয়াতে উঠে আসছে। 

তাই দুর্বৃত্তদের এই বর্তমান গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ‘নাম শুনলেই গা শিউরে উঠা’ এসব সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া কখনোই সম্ভব নয়। কারণ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাই মূলত একটি দুর্বৃত্তশাসন ব্যবস্থা এবং এখানে শাসকরাই এসব দুর্বৃত্তদের মূল হর্তা-কর্তা। বিপরীতে ইসলামী শাসন ব্যবস্থায় যেহেতু সার্বভৌমত্ব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার এবং কর্তৃত্ব জনগণের, সেহেতু এখানে শাসকের বা খলিফার জনগণকে দমন করার কোন সুযোগ নেই। তাই শাসকদের এখানে কোন দুর্বৃত্ত বাহিনীও পালতে হয় না। আর শাসকরাও এখানে জনগণের কঠোর জবাবদিহিতা সম্মুখীন হন। এই শাসন ব্যবস্থা সকল দুর্বৃত্ত ও জালেমদের প্রতি কঠোর কিন্তু সাধারণ জনগণের প্রতি অত্যন্ত কোমল এবং দায়িত্বশীল। যার ছায়াতলে এসে জাহেলী যুগের কুখ্যাত দস্যু গোত্র গিফার গোত্র সত্যের আহ্বানকারী গোত্রে পরিণত হয়েছিল, আর বর্তমান গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অধীনে যার উল্টো চিত্র আমরা দেখতে পাচ্ছি।

    -    মোঃ জহিরুল ইসলাম




“সুযোগ সন্ধানী কিছু লোকের কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী”

খবরঃ

পণ্যের সরবরাহ ঠিক থাকা স্বত্ত্বে কিছু সুযোগ সন্ধানী লোকের কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। সে লক্ষ্যে রোজার ঈদের আগে যেভাবে বাজার মনিটরিং করা হয়েছে, সেভাবে মনিটরিং করতে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে ভোক্তারা কোনো অসুবিধায় না পড়েন, ন্যায্যমূল্যে জিনিসপত্র পান। এটা আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হয়েছে, কাজে গতি পাবে। মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। (সুযোগ সন্ধানী কিছু লোকের কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী)

মন্তব্যঃ

সর্বজনবিদিত যে, বর্তমান পুঁজিবাদী-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কাজ করে সুযোগ সন্ধানী পুঁজিপতিদের সুযোগ করে দেয়ার জন্য। তাই শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক সুযোগ সন্ধানীদের বিরুদ্ধে তথাকথিত এই বিষোদগার এক ধরনের প্রতারণা মাত্র। তারা  মূলত পুঁজিপতিদের স্বার্থরক্ষায় নিয়ম-কানুন বানায় কিন্তু কাগজে, কলমে ও মৌখিক বক্তব্যে জনগণের প্রতি দায়িত্বশীলতার বুলি আওড়ায়। ২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবরে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্যমতে জানা যায়, বাংলাদেশ ভাত, মাছ, মাংস এবং সবজিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ, সেখানে সাধারণ মানুষ তার নাগালে এগুলোকে পাচ্ছে না। অর্থাৎ, কখনো কৃত্রিম সংকট অথবা কখনো শুধুমাত্র পুঁজিপতিদের জবাবদিহিতা বিহীন মাস্তানি দেখানোর মাধ্যমেই জনগণকে শোষণ করা হচ্ছে। মূলতঃ এখানে শাসক এবং পুঁজিপতি গোষ্ঠী একটা শিকারী জোট যার শিকার হচ্ছে জনগণ। আমরা দেখেছি সয়াবিন তেল ব্যবসায়ীদের শিকার, পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের শিকার, ফার্মের মুরগি আর ডিম ব্যবসায়ীদের শিকার, খেজুর ব্যবসায়ীদের শিকার। যেন একেকটা শিকারী কখনো পালা করে শিকার করে, আবার কখনো একসাথে সবাই মিলে জনগণকে ছিড়ে খুড়ে খায়। অভিভাবকহীন জনগণের অসহায় আত্মসমর্পণ করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদী জীবনব্যবস্থায় শাসক-পুঁজিপতি জোটের সাথে জনগণের সম্পর্ক শিকারী এবং শিকারের।

মূলতঃ ষোড়শ শতকে ইউরোপে চার্চ-রাজা জোটের হাত থেকে জনগণকে মুক্তি দিতেই এই ধর্মনিরপেক্ষ জীবনব্যবস্থার আবির্ভাব হয়েছিল। কিন্তু জনগণ এক জোটের খপ্পর থেকে মুক্তি পেয়ে আরেক জোটের খপ্পরে পড়ে। সে আগেও শিকার ছিল, এখনো শিকার আছে। কারণ চার্চ-রাজা জোটও নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে নিজেদের বানানো নিয়ম স্রষ্টার নামে চালাত। বর্তমানে শাসক-পুঁজিপতি জোটও নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে নিজেদের বানানো নিয়ম গণতন্ত্রের নামে চালায়। নিজের ভালো-মন্দ বুঝতে অক্ষম মানুষের পক্ষে স্রষ্টাকে বাদ দিয়ে মানুষের মধ্যে শিকার-শিকারীর সম্পর্ক ছাড়া আর কিছু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

কিন্তু ১০০ বছর আগেও এরকম একটা জীবনব্যবস্থা ছিল যেখানে শাসক-জনগণ এর একটা জোট ছিল। যেখানে শাসক ছিলেন জনগণের অভিভাবক। স্রষ্টার দেয়া বিধি-বিধান দিয়ে চালানোই ছিল শাসকের একমাত্র দায়িত্ব। জনগণ শাসককে স্রষ্টার হুকুম অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য দায়বদ্ধ রাখত, যা ছিল জনগণের দায়িত্ব। পুঁজিপতিদের কোন ভূমিকা ছিল না রাষ্ট্রের নীতিমালা নির্ধারণে। সেই জীবনব্যবস্থা হল ইসলামী জীবনব্যবস্থা তথা খিলাফত। খলিফার দায়িত্ব হল জনগণের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন করা। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং নিরাপত্তা সকল ক্ষেত্রে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “ইমাম (খলিফা) হলেন অভিভাবক এবং তিনি তার নাগরিকদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল” (বুখারী)। 

    -    জোহান জাবির




 “কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই’: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অগ্নিসংযোগের শিকার রোহিঙ্গারা”

খবরঃ

পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং আরাকান আর্মির মধ্যে লড়াই বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে ওই অঞ্চলে বসবাসকারী হাজার হাজার মুসলিম রোহিঙ্গারা আবার বাস্তুচ্ছুত হচ্ছে। গত কয়েকদিনে বুথিডাং জুড়ে ব্যাপক দাবানল হয়েছে। তারা অগ্নিসংযোগ অভিযানের পিছনে আরাকান আর্মিকে অভিযুক্ত করেছে, তবে আরাকান আর্মি এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী বিমান হামলা চালিয়ে আগুন শুরু করেছে। (www.aljazeera.com/news/2024/5/21/nowhere-to-go-rohingya-face-arson-attacks-in-myanmars-rakhine-state)

মন্তব্যঃ

আল জাজিরা, বিবিসিসহ বেশকিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উঠে এসেছে মিয়ানমারে বর্তমানে যে ৬ লাখের মত রোহিঙ্গা মুসলিমরা আছে তারা নতুন করে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সেনাবাহিনী থেকে দ্বিমুখী হামলার শিকার হচ্ছে। এই হামলার পর মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের স্পেশাল রেপোর্টিয়ার থমাস অ্যান্ডুস জেনেভা থেকে এক বিবৃতিতে বলে, রাখাইনে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তিনি নিপীড়নের শিকার হয়ে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দিতে ‘বন্ধ সীমান্ত’ নীতি থেকে সরে আসতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যাকারী মিয়নামার সামরিক বাহিনীর জন্য বর্ডার খুলে রাখলেও নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের জন্য কঠোরভাবে বন্ধ রেখেছে।

ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের টিনের চশমা পড়া বাংলাদেশের সরকার, মিডিয়া ও তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা বেমালুম ভুলে যায় ১৯৭১-এর যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মানুষরাও রোহিঙ্গাদের মতো পরিত্যাক্ত ছিল। ইসলামের চশমা না পরেও যদি তারা শুধু সৎ-নিষ্ঠার দৃষ্টি দিয়ে দেখতো তাহলেও তারা বুঝতে পারতো কেন এমন বঞ্চিত জাতিসত্ত্বা তৈরি হচ্ছে, তাদের উপর কেন সবার চোখের সামনে গণহত্যা চলছে এবং কেন কেউ তাদের নিরাপত্তা দিচ্ছেনা, দায়িত্ব নিচ্ছেনা। এটা পরিস্কার যে, মানবজাতিকে এরকম একটি অমানবিক বাস্তবতায় নিয়ে এসেছে জাতীয়তাবাদ। বিশ্বের মানুষরা যখন উপনিবেশবাদের বিশ্বব্যবস্থার জাঁতাকলে পিষ্ট ছিল তখন Sykes-picot চুক্তি পরবর্তি এই Post-Colonial জাতীয়তাবাদী বিশ্বব্যবস্থার জন্ম হয়। একেকটি জাতির জন্য একেকটি ভুমিতে একেকটি তথাকথিত স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হতে থাকে। জাতিসংঘের সদস্য সংখ্যা দেখলে এটি স্পষ্ট হয় যে জাতি ভিত্তিক রাষ্ট্রগুলো স্থায়ী ও বিভক্তি মুক্ত নয়। ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘের সদস্য দেশ ছিল ৫১টি, ১৯৫৫ তে ৭৬টি, ১৯৬৫ তে ১১৭টি, ১৯৭৫ সালে ১৪৪টি, ১৯৮৫ সালে ১৫৯টি, ১৯৯৫ সালে ১৮৫টি, ২০০৫ সালে ১৯১টি; আর এখন আছে ১৯৩টি। এত রাষ্ট্র এত জাতির জন্মও সকল মানুষের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। কারণ জাতিরাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যেমন পারস্পারিক দ্বন্দ্ব আগ্রাসন বন্ধ হয়নি, রাষ্ট্রগুলোর ভিতরে থাকা সকলকেও একেকটা জাতিরাষ্ট্র পরিপূর্ণভাবে আপন করে নিতে পারেনি। ফলে বর্ডারে কিংবা বর্ডারের ভিতরে তৈরি হলো অনেক অধিকার বঞ্চিত পরিত্যাক্ত জাতিগোষ্ঠী। এদেরকে মাইনরিটি, ইথনিক, অর্থনৈতিক, রেসিয়াল, রাজনৈতিক কিংবা জলবায়ুগত বঞ্চিত বা মার্জিনালাইজড জাতিগোষ্ঠী বলা হয়। UNHCR এর তথ্যমতে বর্তমানে বিশ্বে বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ হয়েছে এমন মানুষ আছে ১১ কোটির বেশি, উদ্বাস্তু আছে ৩.৭ কোটির বাশি। প্রকৃত মার্জিনালাইজড বা অধিকার বঞ্চিত পরিত্যাক্ত জাতিগোষ্ঠী যাদের দায়িত্ব কেউ নেয় না এমন মানুষের সংখ্যা আরও অনেক বেশী।

রোহিঙ্গা ও ফিলিস্তিনের মুসলিমদের উপর দীর্ঘদিন ধরে চলমান গণহত্যা শুধু বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার ব্যর্থতাই স্পষ্ট করেনি বরং এটাও স্পষ্ট করেছে যে মুসলিমদেরকেই এখন বিশ্বের সকল জাতির নেতৃত্ব নিতে হবে। কারণ আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এই জাতিকে সর্বোত্তম (খায়ের) ও নেতৃত্বশীল জাতি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। মদিনাতে মুহাজির মুসলিম ও আনসার মুসলিমদের ভাতৃত্ববোধের উপরেই ইসলামের ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক সত্ত্বা ইসলামি রাষ্ট্র তথা খিলাফত রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয় তা অতঃপর এমন এক বিশ্বব্যবস্থার জন্ম দেয় যা পুরো মানবজাতির ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ, সমৃদ্ধ বিশ্বব্যবস্থার নজির স্থাপন করেছে। সেখানে কোন জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বঞ্চিত হওয়ার তো প্রশ্নই আসেনা, এমনকি একজন ব্যক্তিও অধিকার ও অভিভাবকত্ব থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল না। আল্লাহ্‌ সুবাহানাহু অতাআলা বলেন, “আর তোমরা সকলে আল্লাহ্‌’র রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না। আর তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহ্‌’র নিয়ামতকে স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে” (সুরা আলি-ইমরান ১০৩)। ঐক্যবদ্ধ মুসলিমদের সেই রজ্জু যা পৃথিবীতে প্রকাশিত হয় তা হচ্ছে খিলাফত রাষ্ট্র, আর খলিফা হচ্ছেন মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে তার সকল নাগরিকের অভিভাবক: “খলীফা হচ্ছেন অভিভাবক এবং তিনি তার নাগরিকদের জন্য দায়িত্বশীল” [সহীহ্ বুখারী]।

    -    মোহাম্মদ তালহা হোসেন




“ভারতবিরোধী ‘কঠোর অবস্থান’ থেকে সরতে চায় বিএনপি”

খবরঃ

নেতাকর্মীর হতাশা, ক্ষোভ প্রশমিত করে আবারও রাজপথের আন্দোলনে ফিরতে চায় বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোট। এজন্য দফায় দফায় বৈঠক করছেন জোট নেতারা। … বিএনপি নেতারা জানান, দলের হাইকমান্ড আবারও রাজপথের আন্দোলনে ফিরতে চান। এ জন্য আবার আটঘাট বেঁধে মাঠে নামার প্রস্তুতিও শুরু করেছেন। সেজন্য একদিকে কৌশলগত কারণে ভারতবিরোধী ‘কঠোর অবস্থান’ থেকে সরে এসে মধ্যপন্থা অবলম্বনের ইঙ্গিত রয়েছে। ... জোটের কয়েকজন নেতা জানান, জাতীয় নির্বাচনের পর ভারতের বিরুদ্ধে বিএনপির যে মনোভাব সৃষ্টি হয়েছিল, কৌশলগত কারণে সেখান থেকে বিএনপি অনেকটা পিছুটান দিয়েছে বলে তারা মনে করছেন। ভারতবিরোধী কর্মসূচি পালনে জোট নেতাদের ধীরে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলেও তারা জানান।  (https://samakal.com/politics/article/237738/ভারতবিরোধী-‘কঠোর-অবস্থান’-থেকে-সরতে-চায়-বিএনপি

মন্তব্যঃ 

বিএনপিগোষ্ঠী ধারণা করেছিল, আমেরিকা তাদের সাথে থাকলে ভারত তাদের সাথে সমঝোতা করতে বাধ্য হবে। কিন্তু, বাস্তবে দেখা গেল আমেরিকা ভারতকে তার ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্র্যাটিজি বাস্তবায়নের জন্য এই অঞ্চলের কৌশলগত অংশীদার হিসাবে চিহ্নিত করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন ভারতকে কৌশলগত মিত্র হিসাবে চিহ্নিত করে তখন মার্কিন দালাল বিএনপির আর ভারত বিরোধীতা করার কোন সুযোগ থাকে কি? নিশ্চয় না! তাই তো বিএনপি এখন ভারত বিরোধী কঠোর অবস্থান থেকে বাস্তববাদী (pragmatism) রাজনীতির নামে ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থানের রাস্তা খুঁজছে।

প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে, বিএনপি কখনোই ভারতবিরোধী কঠোর অবস্থানে ছিল না। জনগণ কখনও বিএনপিকে পলিটিক্যাল ষ্ট্যান্ডবাজি ছাড়া প্রকৃত ভারতবিরোধী কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখে নাই। বিএনপিগোষ্ঠী কখনও সীমান্ত হত্যাকান্ড, ট্রানজিটসহ (স্থল-নৌ-বিদ্যুৎ) অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত বিষয় নিয়ে সরকারকে যথাযথভাবে জবাবদিহিতার সম্মুখীন করা কিংবা ভারতের উপর চাপ প্রয়োগ করে নাই। বরং প্রকাশ্যে ভারত বিরোধীতা করলেও গোপনে ভারতের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখেছে। ২০১৮ নির্বাচনের পূর্বে বিএনপি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল প্রেরণ করে। প্রতিনিধি দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা হুমায়ুন কবিরকে উদ্ধৃত করে দি হিন্দু লিখেছে, 'তারেক রহমান ভারতের সাথে দলের যোগাযোগ বাড়াতে চান।'  বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে বিএনপি প্রতিনিধিদল ভারতে, ৯ জুন ২০১৮, বিবিসি বাংলা। কিন্তু, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (৭ জানুয়ারি ২০২৪) পর বিএনপিসহ গোটা জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীর মধ্যে চরম হতাশা কাজ করছিল। এর প্রেক্ষিতে, অনলাইন এক্টিভিস্টরা ভারতীয় পণ্য বয়কটের ঢাক “ইন্ডিয়া আউট” কর্মসূচীর ঢাক দেয়, যা নিয়ে বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা ব্যাপক উজ্জীবিত হলেও বিএনপি দল হিসাবে কর্মসূচীটিকে সমর্থন দেয় নাই। 

একমাত্র খিলাফত রাষ্ট্রই জনগণকে মার্কিন-ভারতের দুষ্ট বলয় থেকে বের করবে, কারণ খিলাফতের রাজনীতি ধর্মনিরেপেক্ষ রাজনীতির মত উপনিবেশবাদী শক্তি নির্ভর বাস্তববাদী (pragmatism) রাজনীতি নয়। উপনিবেশবাদী শক্তির বিষয়ে ইসলামের অবস্থান সুস্পষ্ট। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “হে মু‘মিনগণ, তোমরা তোমাদের নিকটবর্তী কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর। এবং তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়। আর জেনে রাখ, আল্লাহ্‌ মুত্তাকীদের সাথে আছেন”  (আত-তাওবা, আয়াত ১২৩)। সুতরাং, মুসলিমরা উপনিবেশবাদী মার্কিন-ভারতের সাথে কঠোর আচরণ থেকে বিরত থাকতে পারে না। এটা খিলাফত থাকুক বা না থাকুক। খিলাফত থাকা কালীনসময় জনগণের প্রতিনিধি হিসাবে খলিফা রাষ্ট্রীয় শক্তিকে ব্যবহার করে মুশরিকসহ সকল উপনিবেশবাদী শক্তিকে তটস্থ রাখবে। আর খিলাফত না থাকা কালীন জনগণের দায়িত্ব হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা এবং যে দল ইসলামের নীতি অনুযায়ী রাজনীতি করছে তাদের নিকট শাসন ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য সামরিক বাহিনীর নিকট দাবি জানানো। 

    -    মো: সিরাজুল ইসলাম





Previous Post Next Post