Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 121

 

Weekly 

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

১২১ তম সংখ্যা । ৯ জুন, ২০২৪



এই সংখ্যায় থাকছে :

“হাইকোর্টের রায়ে সরকারি চাকরিতে আবার ফিরল মুক্তিযোদ্ধা কোটা”

“ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিলো ইউরোপের তিন দেশ”

“এত জমির মালিক হতে সংবিধান ও আইন কেন বেনজীরকে বাধা দিলো না?”

“মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো; কেন বাদ পড়ল, সেটা অনুসন্ধান করা হচ্ছে: সংসদে প্রধানমন্ত্রী”

“সাত বছরে দ্বিগুণ হয়েছে বাংলাদেশের ঋণ, কার কাছে কত দেনা?”

“কাঙ্ক্ষিত চাকরি না পেয়ে দেশ ছাড়ছেন গ্র্যাজুয়েটরা: বুয়েট ভিসি”

“আবাসিক হলের আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হবে: ঢাবি উপাচার্য”





“হাইকোর্টের রায়ে সরকারি চাকরিতে আবার ফিরল মুক্তিযোদ্ধা কোটা”

খবরঃ

বাংলাদেশে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করার রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। সরকারি নিয়োগের দুই শ্রেণিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল, সেটি অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছে উচ্চ আদালত। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ সাইফুজ্জামান বিবিসি বাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। তবে, ওইবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক কোটা বিরোধী আন্দোলন হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড পর্যন্ত চাকরির ক্ষেত্রে কোটা সুবিধা পুরোপুরি বাতিল করে দেয় সরকার। তার আগে এসব পদে চালু থাকা কোটার ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং তাদের নাতি-নাতনিদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। (https://www.bbc.com/bengali/articles/cqvvjjn28pqo

মন্তব্যঃ 

বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা (কোর্ট) যে সরকারের ইচ্ছার দাস এটা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নাই। প্রশ্ন হচ্ছে, ব্যাপক ছাত্র আন্দোলনের পর সরকারী চাকুরীতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সকল প্রকার কোটা বাতিল করে সরকার এখন আবার কেন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছে? সরকার শিক্ষিত তরুণদের জন্য সম্মানজনক জীবিকার ব্যবস্থা করার ব্যাপারে উদাসীন হলেও, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য সরকারী চাকুরীতে কোটা বহাল রাখার ব্যাপারে খুবই তৎপর, কারণ তারা এই সুযোগের অপব্যবহার করে প্রশাসনে বেনজিরদের মত একটি বিশেষ শ্রেণী তৈরি করতে চায়, যাতে তাদের দুঃশাসনের খুটি মজবুত হয়। মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ বিভিন্ন কোটার পক্ষে যুক্তি হিসেবে দেয়া হয়, এসকল পরিবার অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে রয়েছে, তাই তাদেরকে সরকারী চাকুরীতে কোটা প্রদানের মাধ্যমে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন করা উচিত, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও রাষ্ট্র কেন তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি নিশ্চিত করতে পারে নাই? তাই বলে কি কোটার বোঝা চাপিয়ে দিয়ে যোগ্যতা সম্পন্নদের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হবে! বিশেষ রাজনৈতিকগোষ্ঠীর নিকট থেকে অনৈতিক সুবিধা লাভ করা প্রশাসনিক কর্মকতারা কখনোই ঐ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর স্বার্থের ঊর্ধ্বে গিয়ে জনগণের স্বার্থকে প্রধান্য দিতে পারবে না, এটাই স্বাভাবিক। 

কুর’আন-সুন্নাহ্‌’র আলোকে হিযবুত তাহ্‌রীর কর্তৃক প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রের প্রশাসনের বিষয়ে বলা হয়েছে, “প্রশাসনিক ব্যবস্থার নীতি হবে সহজ, দ্রুত কর্মসম্পাদন এবং দক্ষ কর্মী”। এছাড়াও অনুচ্ছেদ ৯৮-তে বলা হয়েছে, “খিলাফত রাষ্ট্রের যেকোন নাগরিক মুসলিম-অমুসলিম, পুরুষ-নারী দক্ষতার ভিত্তিতে খিলাফত রাষ্ট্রের প্রশাসনে চাকুরী লাভ করবে। এই ক্ষেত্রে চাকুরী প্রার্থীর দক্ষতা ছাড়া আর কিছুই বিবেচনা করা হবে না, কারণ দক্ষতার মাধ্যমেই মানসম্মত সেবা দ্রুত সময়ে প্রদান করা সম্ভব”। ইসলামে কোটার নামে কোন বিশেষ শ্রেণীকে সরকারী চাকুরীতে বিশেষ সুবিধা প্রদানের কোন সুযোগ নাই। রাষ্ট্র সমাজের পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীর দায়িত্ব নিবে এবং তাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা এবং চিকিৎসার দায়িত্ব নিবে যেন তারা তাদের দুর্দশা থেকে উঠে আসতে পারে। যার ফলে খিলাফত রাষ্ট্রে বছরের পর বছর ধরে দুর্দশাগ্রস্ত কোন জনগোষ্ঠী থাকবে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, খলিফা উমর বিন আব্দুল আযীয-এর সময় রাষ্ট্র এত বেশী সমৃদ্ধ ছিল যে যাকাত গ্রহণ করার মত কোন নাগরিক খিলাফত রাষ্ট্রে ছিল না। খিলাফতের ১৩০০ বছরের ইতিহাসে এই রকম আরও অসংখ্য ঘটনা দেখা যায়। 

    -    সিরাজুল ইসলাম




“ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিলো ইউরোপের তিন দেশ”

খবরঃ

ফিলিস্তিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউরোপের তিন দেশ- স্পেন, আয়ারল্যান্ড ও নরওয়ে। দেশগুলো বলেছে, তাদের এই স্বীকৃতি দেয়ার মানে হলো মধ্যপ্রাচ্যের চলমান যুদ্ধের একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করার প্রতি সবার মনোযোগ আকর্ষণ করা। দেশ তিনটি আশা করছে, যৌথভাবে এই পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে তারা অন্য ইউরোপীয় দেশগুলোকে অনুপ্রাণিত করতে পারবে, যাতে তারাও এধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এভাবে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হলে গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা ও হামাসের হাতে জিম্মিদের উদ্ধার করে আনা সম্ভব হতে পারে। আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সিমন হ্যারিস এটিকে একটি ‘ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ’ মুহূর্ত বলে উল্লেখ করেছেন। “আমি মনে করি, এর মাধ্যমে বিশ্বের কাছে এই বার্তা যাচ্ছে যে, আপনি এমন বাস্তব পদক্ষেপ নিতে পারেন, যার মাধ্যমে দ্বি-রাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধান এখনো সম্ভব, যখন অনেকেই সেই সম্ভাবনা ধ্বংস করে দিতে চাইছেন,’’ বলেছেন তিনি। (www.bbc.com/bengali/articles/c888pz5pgg4o)

মন্তব্যঃ

বাস্তবতা হচ্ছে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে ফিলিস্তিনকে আগেই স্বীকৃতি দিয়েছে ১৪৩টি। নতুন করে তিনটি দেশ যুক্ত হওয়ায় এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৪৬। প্রশ্ন হচ্ছে, সংখ্যাটি ১৪৩ কিংবা ১৪৬ যাই হোক না কেন, এ ধরণের স্বীকৃতির মাধ্যমে ফিলিস্তিনের মুসলিমদের প্রতি চলমান গণহত্যা বন্ধ হবে কি? কিংবা ফিলিস্তিনের মুসলিমরা কি তাদের হারানো বসতভিটায় ফিরে যেতে পারবে? অথবা আল-আকসা মসজিদ কি অভিশপ্তদের হাত থেকে মুক্তি লাভ করবে? এর সবগুলোরই উত্তর হচ্ছে ‘না’।

তাহলে ইউরোপীয়দের এই স্বীকৃতির উদ্দেশ্য কি? এটা তারা পরিষ্কার করেছে তাদের বক্তব্যে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা’ আর হামাসের হাতে বন্দী জিম্মিদের মুক্ত করা। মূলত, যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে ক্লান্ত খুনীকে বিশ্রাম নেওয়ার কিছুটা সময় দেয়া হয়। আর ইসরায়েলি যুদ্ধবন্দীদের মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমেও পশ্চিমাদেরই বিজয় ঘোষিত হবে। এসকল নাটকের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘Two-State Solution’-কে এগিয়ে যাওয়া যা মূলত ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক দর্শন। এর মাধ্যমে অবৈধ ও দখলদার ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্বকে মেনে নেয়া হবে, পূর্বে যার কোন অস্তিত্বই এখানে ছিল না। বিগত ৭৫ বছর ধরে চলমান এর অপরাধসমূহকেও দায়মুক্তি প্রদান করা হবে। এর পাশাপাশি, পশ্চিমা দেশগুলোতে ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলন এবং আসন্ন নির্বাচন সমূহকে কেন্দ্র করেও তাদের এসকল সিদ্ধান্ত তাদের নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। অন্যদিকে, এই সমাধান মধ্যপ্রাচ্যের দালাল শাসকদেরকেও হাঁপ ছেড়ে বাঁচার সুযোগ করে দিবে। তাদের অক্ষমতা সেসকল দেশের মুসলিমদেরকে তাদের বিরুদ্ধে ফুসে তুলছে প্রতিনিয়ত। ফলে, যেকোন মুহুর্তে যদি আরবে নতুন কোন এক বসন্তের সূচনা হয় তখন এসকল দালালদের গদি ধরে রাখাই কঠিন হয়ে যাবে। তাদের দৃষ্টিতে, এর চেয়ে বরং ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়ে পূর্ব-পশ্চিমের সবার স্বার্থ উদ্ধারই সুবিধাজনক! 

সুতরাং পশ্চিমাদের দেয়া এসকল ভাওতাবাজি সমাধানে কোন লাভ হবে না। আল-আকসা ও ফিলিস্তিনসহ প্রতি ইঞ্চি মুসলিম ভূমি মুসলিমদের শাসনে অর্থাৎ খিলাফত ব্যবস্থার অধীনে আনতে হবে। কেবলমাত্র তখনই প্রকৃত মুক্তি সম্ভব। খিলাফতের সামরিক বাহিনী যখন আল-আকসা দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করবে তখনই কেবলমাত্র মুসলিমদের আনন্দের দিনের আগমন ঘটবে। আর এর জন্য অবশ্যই আমাদেরকে খিলাফত প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনে সক্রিয় হতে হবে। একমাত্র খলিফাই তার বাহিনীকে আল-আকসার অভিমূখে মার্চ করাবেন। সুতরাং আমাদের উচিত খিলাফত প্রতিষ্ঠার এই প্রকল্পে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা চালানো। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের ডাকে সাড়া দাও; যখন তোমাদেরকে এমনকিছুর দিকে আহবান করা হয়, যা তোমাদের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করে” [আল-আনফাল: ২৪]

    -    মো. হাফিজুর রহমান




“এত জমির মালিক হতে সংবিধান ও আইন কেন বেনজীরকে বাধা দিলো না?”

খবরঃ

একাই ৪৬৮ বিঘা জমির মালিক সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীরের স্ত্রী জিসান মির্জা। প্রশ্ন হলো, সংবিধান ও আইন অনুসারে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ কী পরিমাণ জমির মালিক হতে পারেন? ‘ভূমি সংস্কার আইন-২০২৩’ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি একক নামে ৬০ বিঘার (১ বিঘা= ৩৩ শতাংশ) বেশি জমির মালিক হতে পারবে না। তবে ব্যতিক্রম হল চা, কফি ও রাবার বাগানমালিক; শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনকারী; এবং রপ্তানিমুখী ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত জমির মালিক। (https://bangla.thedailystar.net/opinion/views/news-587711)

মন্তব্যঃ

বিদ্যমান শাসন ব্যবস্থা যে শুধুমাত্র গুটিকয়েক পুঁজিপতির স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য তৈরী করা হয়েছে এই ভূমি আইনও তার প্রমাণ বহণ করে। চা, কফি, রাবার বাগানের মালিকরা এই গোষ্ঠীর অংশ। এই গোষ্ঠী নিজের নামে নয় বরং লিমিটেড কোম্পানির নামে জমি কিনে, যে সকল কোম্পানিতে তাদের দায় তাদের শেয়ারের অভিহিত মূল্য দ্বারা সীমাবদ্ধ, কিন্তু সেখানে তাদের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা সীমাহীন! ফলে, দেশের প্রচলিত আইন অনুসরণ করে শুধুমাত্র এই গোষ্ঠীই ৬০ বিঘার উপর জমির মালিকানা ও সুবিধা (জমিদারি) ভোগ করতে পারে। শুধু তাই নয়, দেশের ব্যাংকিং খাতও তাদের দখলে, ফলে সাধারণ মানুষ সামান্য টাকা লোন নিতে গেলেও হাজার রকমের ঝক্কি-ঝামেলা, বাড়িঘর-ভিটামাটি বন্ধকের মধ্যে পরতে হয়; অথচ এই গোষ্ঠী কোন মর্টগেজ বা পরিশোধ-নিশ্চয়তা ছাড়াই হাজার-হাজার কোটি টাকা লোন বাগিয়ে নিচ্ছে। আমদানি-রফতানির অনুমোদন বা লাইসেন্সও তাদের দখলে। সরকারি প্রশাসনের ‘সফ্ট পাওয়ার’ ও ‘পেশিশক্তি’ দুটোই তাদের নিয়ন্ত্রনে। ফলে, কোন সাধারণ মানুষ এই গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রনের বাইরে গিয়ে নিজ পরিশ্রম ও যোগ্যতায় সত্ভাবে ব্যবসা করে সম্পদশালী হবে সেই বাস্তবতা যেমন নেই, তেমনি আইনও সাধারণ মানুষের পক্ষে নেই। এই পুরো শাসন ব্যবস্থাটাই এই গুটিকয়েক পুঁজিপতির অবাধ ও নিরবচ্ছিন্ন মুনাফার নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য। এর মধ্যে বেনজিররা হল এই পুঁজিপতিদের সামান্য ভাড়াটে গুন্ডা ও জল্লাদ মাত্র। বেনজির তার জল্লাদ-কর্ম শেষে পেটি-বুর্জোয়া হওয়ার খায়েশ থেকে এই শাসন-ব্যবস্থার সুবিধা কাজে লাগিয়েই জমিজমা কিনেছিল। কিন্তু, সে তার পুঁজিপতি প্রভুদের মধ্যে কারো উপর উল্টো প্রভুত্ব করার প্রচেষ্টা করতে গিয়ে ভুল ক্যালকুলেশনের মাশুল গুনছে এখন।

বাস্তবতা হল ধনী বা সম্পদশালীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নয়, বরং যারা দরিদ্র ও দুর্বল তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করার জন্যই মূলত শাসন ব্যবস্থার পক্ষ থেকে পদক্ষেপ প্রয়োজন। শাসন ক্ষমতার অংশ না হলেও অর্থবিত্তের প্রভাবে সমাজে ধনীরা স্বভাবতই শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান হয়, ফলে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে তার প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা ব্যবহার করে ধনীদের এই ক্ষমতাকে ব্যালেন্স করে দরিদ্র ও দুর্বলদেরকে জীবনসংগ্রাম থেকে পরিত্রানের ব্যবস্থা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরী করে দিবে এটিইতো প্রয়োজন। পৃথিবীর ইতিহাসে কেবলমাত্র ইসলামী শাসন-ব্যবস্থা তথা খিলাফত ব্যবস্থার মধ্যেই এর নজির মিলে। হযরত আবু বকর (রা.) খলিফা হিসেবে বাইয়াত নেওয়ার পরপরই ঘোষণা দিয়েছিলেন: “তোমাদের মধ্যে যারা সবল, আজ থেকে তারা আমার নিকট দুর্বল হিসেবে গণ্য হবে। আর তোমাদের মধ্যে যারা দুর্বল তারা আমার নিকট সবল হিসেবে গণ্য হবে, যতক্ষন পর্যন্ত আমি তাদের হক্ব আদায় না করি” (ইবনে হিশাম)।

আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) পবিত্র কুর‘আনে বলেন: “সম্পদ যেন তোমাদের বিত্তশালীদের মধ্যে আবর্তন না করে” (হাশর:৭)। ফলে, আসন্ন খিলাফত শাসন-ব্যবস্থা দরিদ্রের হক যাকাত রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের নিকট পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য কমিয়ে অর্থনৈতিক ভারসাম্য (economic equilibrium) নিশ্চিতের জন্য দরিদ্রদেরকে স্থাবর সম্পত্তি (বসতবাড়ি ও চাষাবাদের জমি) প্রদান করবে এবং বাইতুল মালের বিশেষ ফান্ড থেকে শুধুমাত্র দরিদ্রদেরকে অর্থ বরাদ্দ করবে। এর পাশাপাশি তেল, গ্যাস, কয়লা, বিদ্যুৎ ইত্যাদি গণমালিকানধীন সম্পদকে এই গুটিকয়েক দেশী-বিদেশ পুঁজিপতির নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত করে এই সম্পদে সকল নাগরিকের ন্যায্য অংশ তাদেরকে বুঝিয়ে দিবে। এবং পুঁজিপতি গোষ্ঠীর হাতে কুক্ষিগত হয়ে পরা আমদানি-রাফতানির লাইসেন্সকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার মাধ্যমে বাজারের উপর এই গোষ্ঠীর একচেটিয়া আধিপত্যকে নিশ্চিহ্ন করে সাধারণ মানুষের জন্য ব্যবসায়ের দরজা উন্মুক্ত করে তাদেরকে সম্পদশালী হওয়ার সুযোগ করে দিবে, ইনশা’আল্লাহ্‌। “তারা (অবিশ্বাস ও তাচ্ছিল্যের সাথে) গর্দান ঝাঁকিয়ে প্রশ্ন করে, ‘এটা কখন হবে’? (হে রাসূল) আপনি বলে দিন, ‘সম্ভবত খুব দ্রুতই হবে’।” (সূরা আল বনী-ইসরাঈল: ৫১)। 

    -    রিসাত আহমেদ




“মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো; কেন বাদ পড়ল, সেটা অনুসন্ধান করা হচ্ছে: সংসদে প্রধানমন্ত্রী”

খবরঃ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে কী সমস্যা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় কেউ দায়ী থাকলে, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।… নিয়ম মেনে বিদেশ গেলে সমস্যা হয় না উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘তারপরও আমাদের দেশে কিছু মানুষ আছে, কে আগে যাবে, সেই দৌড় দিতে যেয়ে হাতা-খাতা, বাড়ি-ঘর সববিক্রি করে, তারপরে পথে বসে। অথবা সেখানে যদি চলেও যায় বিপদে পড়ে।’… (https://www.prothomalo.com/politics/9zmlo4cayz)

মন্তব্যঃ

খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান মানুষের মৌলিক চাহিদা, মানুষ মাত্রই তার নিজের ও পরিবারের এসকল প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আর এক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা হচ্ছে মানুষকে দক্ষ হওয়ার সুযোগ করে দেয়া, ব্যাপক শিল্পায়ন করা, পর্যাপ্ত গবেষণার ব্যবস্থা করা, ইত্যাদি। কিন্তু বর্তমান পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থায় দেশের জনগণের একটা বড় অংশ বেকার হয়ে থাকলে কিংবা না খেয়ে মরে গেলেও সরকার দায় নেয় না। উর্বর ভূমি, মূল্যবান খনিজ সম্পদ, সমুদ্রসীমায় অগণিত সম্পদ সমূহ, ভূরাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের কারণে ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বর্তমান পুঁজিবাদী শাসকগোষ্ঠী এগুলোকে জনগণের কল্যাণে কিংবা কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কাজে না লাগিয়ে, বরং বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী ও উপনিবেশবাদী শক্তির হাতে তুলে দিয়েছে। সমগ্র অর্থনীতিকে তারা আমদানি নির্ভর বানিয়ে ফেলতে দেশীয় কৃষি ও শিল্পকে বিকাশের পরিবর্তে উল্টো সংকুচিত করেছে, এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে বন্ধ করে দিয়েছে। 

এভাবে কৃত্রিমভাবে কর্মসংস্থানের সংকটে সাধারণ জনগণ যখন পরিবারের ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য দেশ থেকে দেশান্তরে ছুটে বেড়াচ্ছে। এখানেও তৈরি করা হয়েছে তীব্র সংকট। একটু স্বচ্ছলতার জন্য প্রবাসে যাওয়া এবং সেখানে একটা কাজ পাওয়াকে তাই আজ সোনার হরিনের সাথে তুলনা করা হচ্ছে। আর ক্ষমতাসীন পুঁজিপতিরা এই সংকটকেই কাজে লাগাচ্ছে। (পড়ুন মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার: ‘চক্রে’ ঢুকে চার সংসদ সদস্যের ব্যবসা রমরমা)। তারা শাসন ক্ষমতাকে ব্যবহার করে জমিজমা, সম্পদ এমনকি সর্বশেষ সম্বল বিক্রি করে বিদেশে যাওয়ার জন্য টাকা জোগাড় করা মানুষের টাকাগুলোও হাতিয়ে নিচ্ছে। যেমনটি ঘটেছে মালয়েশিয়ার এই ঘটনার ক্ষেত্রে। প্রায় চার বছর বন্ধ থাকার পর ২০২২ সালের জুলাইয়ে যখন মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলে তখন বাংলাদেশের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ঘুষ কিংবা প্রভাবের বিনিময়ে ২৫ টি এজেন্সিকে নির্ধারণ করে দিল। পরে এতে যোগ দেয় আরো ১০০ এজেন্সি। এসকল এজেন্সিগুলো সহায়-সম্বলহীন এসব মানুষদের কাছ থেকে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা ইতিমধ্যে হাতিয়ে নিয়েছে। তারপরও তাদের অনেককে মালয়েশিয়া যাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেনি কিংবা সেখানে কাজের ব্যবস্থা করে দিতে পারেনি। এখন সরকার ও এজেন্সিগুলো একে অপরকে দোষারোপের খেলা খেলছে। আর প্রধানমন্ত্রীকেও আমরা দেখছি এই সকল এজেন্সি মালিক তথা পুঁজিপতিদেরকে তদন্ত করার হুমকি দিয়ে প্রকৃতপক্ষে তাদের পক্ষই অবলম্বন করেছে এবং সমস্ত দায় চাপিয়ে দিয়েছে প্রবাসে গমনেচ্ছু ব্যক্তিদের উপরে। আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম, যেখানে তার জনগণের দেখাশোনা করার কথা! এটা না করে মানুষ যখন তার নিজের ব্যবস্থা নিজেই করল, তখন সে সেটার উপরে ভাগ বসানোর জন্য তার দলীয় লোকদেরকে লেলিয়ে দিলো! তারপর তার আশীর্বাদপুষ্ট লোকদের দ্বারা তাদের সম্পদসমূহ লোপাট হয়ে গেলে সে ভুক্তভোগীদের উপরই সমস্ত দায় চাপিয়ে দিলো! তাই এটা বলা যায় যে, এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থা্য় শাসকেরা তাদের আশীর্বাদপুষ্ট পুঁজিপতি শ্রেণী ও উপনিবেশবাদী শক্তিসমূহকে সমস্ত সুবিধা দিতেই ক্ষমতায় আরোহন করে, জনগণকে নয়। 

অন্যদিকে, ইসলামী খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থায় প্রত্যেকটি মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রপ্রধান (খলিফা) বাধ্য। আল্লাহ্‌’র রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “কোন জনপদে যদি এমন অবস্থায় একটি মানুষও ঘুম থেকে উঠে, যে ক্ষুধার্ত, তাহলে ঐ জনপদের জন্য আল্লাহ্‌ তার চুক্তিসমূহ বাতিল করে দেন”। এই ব্যবস্থায় খলিফা হচ্ছেন অভিভাবক এবং তিনি তার জনগণের উপর দায়িত্বশীল। এই কারণে, এই ব্যবস্থায় খলিফা ব্যাপক শিল্পায়নের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং সেই সাথে একটা যথাযথ শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষদেরকে শুধুমাত্র কর্মসংস্থানের জন্যই নয়, বরং বিশ্বে নেতৃত্ব দানের জন্য যোগ্যভাবে গড়ে তুলবে। এ রাষ্ট্র কুফর উপনিবেশবাদী শক্তিসমূহের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করবে এবং ক্রমান্বয়ে সেসব রাষ্ট্র সমূহকে ইসলামী শাসনব্যবস্থার ছায়াতলে নিয়ে আসবে। এখানে সংকট তৈরি করে সিন্ডিকেট করে টাকা হাতানোর মতো কোন পুঁজিপতি গোষ্ঠীর অস্তিত্ব থাকবে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “…যাতে ধন-সম্পদ তোমাদের মধ্যকার বিত্তশালীদের মাঝেই কেবল আবর্তিত না থাকে…” (হাশরঃ৭)।

    -    মোঃ জহিরুল ইসলাম




“সাত বছরে দ্বিগুণ হয়েছে বাংলাদেশের ঋণ, কার কাছে কত দেনা?”

খবরঃ

বড় অবকাঠামো নির্মাণ, বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য বাংলাদেশ যে ঋণ নিচ্ছে তার পরিমাণ মাত্র সাত বছরের মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। বাংলাদেশ এখন যে ঋণ করছে, তার একটি বড় অংশও যাচ্ছে সেই ঋণ পরিশোধের পেছনেই। বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ শত বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করার পর পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে অর্থনীতিবিদরা বারবার বাংলাদেশকে বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করছেন। আন্তর্জাতিক সংস্থার পাশাপাশি বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বাজেট সহায়তার জন্য বিভিন্ন দেশের কাছ থেকে ঋণ নেয়। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের তথ্যে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় জাপান, চীন, রাশিয়া ও ভারতের কাছ থেকেই সবচে বেশি ঋণ নিয়েছে এবং নিচ্ছে। পাবলিক ও প্রাইভেট মিলিয়ে ২০১৭ সালের শেষে বাংলাদেশের সার্বিক মোট ঋণ ছিল ৫১.১৪ বিলিয়ন ডলার ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে এটি ১০০.৬৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।  (https://www.bbc.com/bengali/articles/c299xp0074zo

মন্তব্যঃ 

উপনিবেশবাদীদের পোস্ট-ওয়াশিংটন ঐক্যমত এটা নিশ্চিত করেছে যে, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো কখনোই যাতে আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি হিসেবে না দাড়াতে পারে। এটি নিশ্চিত করতে তারা ব্যাপক বেসরকারীকরণের উপর জোর দেয়। নব্য-উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান যেমনঃ বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, উপনিবেশবাদীদের প্রক্সি হিসেবে কাজ করছে। ১৯৮০ সাল থেকে ‘কাঠামোগত সমন্বয়’ নীতি বাস্তবায়ন করছে বিশ্বব্যাংক। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ভর্তুকি কমিয়ে আনা ও সরকারের বিভিন্ন পরিসেবা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া। উদাহরণস্বরূপ, তাদের শর্ত মানতে গিয়েই বাংলাদেশের পাট খাতকে সংকুচিত করা হয়েছে। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ পাট শিল্প ধ্বংসের জন্য বিশ্বব্যাংকই দায়ী, ০৬, মার্চ ২০১৭, চ্যানেল আই অনলাইন)। ফলে রাষ্ট্রের কোষাগার সবসময় প্রয়োজনীয় ফান্ড প্রাপ্তিতে বঞ্চিত হয়েছে, আর উল্টো দিকে বেসরকারীকরণের সুবিধা নিয়ে বিদ্যুৎ-জ্বালানীসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো কতিপয় দেশী-বিদেশী পুঁজিপতিদের পকেটে চলে গেছে। ফলে রাষ্ট্রীয় কোষাগার আরও সুদভিত্তিক ঋণ নির্ভর হয়ে পড়েছে। জাতীয় ঋণের সাথে সাথে সুদ পেমেন্টের পরিমানও বেড়েছে, আর বাড়তি সুদ পেমেন্ট বজায় রাখতে জনগণের উপর করের বোঝাও বাড়ছে। 

পশ্চিমাদের ঋণনির্ভর তথাকথিত সংস্কার বাস্তবায়ন করার পরেও দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন না হলেও, জনগণ তাদের ঋণের জালে আটকে গিয়েছে। বাংলাদেশ যদি এখন নতুন করে আর কোনো বিদেশি ঋণ নাও নেয়, তাহলে যা নিয়েছে তা সুদ ও আসলে শোধ করতে ২০৬২ সাল পর্যন্ত লেগে যাবে। (বিদেশি ঋণ শোধের কতটা চাপ আসছে, ৬ আগষ্ট ২০২৩, DW.com)। এখন সরকারকে প্রতিবছর নতুন করে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে শুধুমাত্র পূর্ববর্তী গৃহীত ঋণের সুদ ও আসল ফেরত দেয়ার জন্য। এসকল ঋণ সরকারকে এতটাই ঋণনির্ভর করেছে যে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি বরাদ্ধ রাখতে হচ্ছে শুধুমাত্র ঋণের সুদ দেয়ার জন্য, যা নিকট অতীতে জাতীয় বাজেটের চেয়েও অনেক বেশী। (দেশি–বিদেশি ঋণের সুদই দিতে হবে সোয়া লাখ কোটি টাকা, ০১ জুন ২০২৪, প্রথম আলো)।

আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মুসলিমদের উপর কাফিরদের যেকোন ধরণের কর্তৃত্ব নিষিদ্ধ করেছেন। “… এবং কিছুতেই আল্লাহ্‌ মু‘মিনদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্বের কোন পথ রাখবেন না” (আন-নিসাঃ ১৪১)। ইসলামে গণমালিকানাধীন ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের বেসরকারীকরণ নিষিদ্ধ। তাই খিলাফত রাষ্ট্র কোনভাবেই পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক প্রেসক্রিপশন গ্রহন করবে না, যা ঋণনির্ভর করে তোলে। কারণ ইসলামের রয়েছে অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধোনের সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি বা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যা দিয়ে মুসলিমরা সুদীর্ঘ ১৪০০ বছরের সমৃদ্ধ শাসনব্যবস্থা উপহার দিয়েছিল। সুতরাং, শুধুমাত্র খিলাফত রাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার মধ্যমে মুসলিমরা উপনিবেশবাদীদের ঋণের ফাঁদ থেকে মুক্তি পাবে এবং পূর্ববর্তী খিলাফতের সোনালী সময় আবার ফিরে আসবে। ইনশা’আল্লাহ্‌।

    -    সিরাজুল ইসলাম




“কাঙ্ক্ষিত চাকরি না পেয়ে দেশ ছাড়ছেন গ্র্যাজুয়েটরা: বুয়েট ভিসি”

খবরঃ

দেশের গ্র্যাজুয়েটরা কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাচ্ছেন না। তারা বিভিন্ন দেশে চলে যাচ্ছেন। এই মন্তব্য করে দেশে প্রযুক্তিনির্ভর আরও কর্মক্ষেত্র তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার। [https://www.kalbela.com/dainikshiksha/campus/93773]

মন্তব্যঃ

একটি নেতৃত্বশীল রাষ্ট্র সবসময় জ্ঞানের অন্বেষণ এবং এর প্রয়োগে এগিয়ে থাকে। সারাবিশ্ব থেকে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা এই সকল নেতৃত্বশীল রাষ্ট্রে জ্ঞানের অন্বেষণ ও নিত্যনতুন প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ব্যবহারিক দিক শেখার জন্য পাড়ি জমায়। বাংলাদেশের মত রাষ্ট্রগুলোও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী পাচারে পিছিয়ে নেই। সম্প্রতি প্রকাশিত ইউনেসকোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন মোট ৫২ হাজার ৭৯৯ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, যা এ দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ! তাদের বেশির ভাগই পাড়ি জমিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। ইউনেস্কোর ২০২২ সালের রিপোর্টে বলা হচ্ছে বুয়েটের প্রত্যেক ব্যাচ থেকে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমায়। বাকিরা অস্ট্রেলিয়া আর ইউরোপে। 

বাংলাদেশের মেধাবীরা কেন দেশ ছাড়ছেন, এই প্রশ্নের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কেন তাদের মেধার সঠিক প্রয়োগের মত কর্মসংস্থানের সুযোগ শাসকগোষ্ঠী করছে না? প্রকৃত উত্তর হল মুসলিম উম্মাহ্‌’র নেতৃত্বশীল রাষ্ট্র খিলাফত ধ্বংস করার পর পশ্চিমারা এটা নিশ্চিত করেছে যাতে আমরা মুসলিমরা আর আত্মনির্ভরশীল জাতিতে পরিণত হতে না পারি এবং তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করতে সক্ষম না হই। আর এই কাজটি নিশ্চিত করেছে মুসলিম দেশগুলোর দালাল শাসকেরা। তারা দেশে মেধাবীর জন্য কোন ক্ষেত্র তৈরি করে না, যার ফলে তারা বাধ্য হয়ে বিদেশ পাড়ি জমায়। তারা বাংলাদেশকে শুধুমাত্র গার্মেন্টসের দর্জিগিরি আর রেমিট্যান্স নির্ভর রাষ্ট্র বানিয়েছে। মুসলিমদের স্বার্থের কথা ভাবলে তারা এখানে পাট ও চামড়া শিল্পের পাশাপাশি ভারী শিল্পের ব্যাপক বিকাশ ঘটাতো। তেল ও গ্যাস উৎপাদনে বিদেশী কোম্পানিগুলোকে বিতাড়িত করে রাষ্ট্রীয়ভাবে তেল ও গ্যাস উত্তোলনের কাজে নিয়োজিত হত। মেশিন পার্টস, গাড়ি ইত্যাদি শিল্পেও অগ্রনী ভূমিকা পালন করত। এতে করে প্রচুর মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হত। কিন্তু বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর সেই রাজনৈতিক উচ্চাকাংখা না থাকার কারণে এবং তারা নিজেদেরকে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের একনিষ্ট সেবক প্রমাণের জন্য বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ  আমাদের মেধাবী সন্তানদের পাঁচারকারীর ভূমিকা পালন করে।

অন্যদিকে, যখন আমাদের খিলাফত রাষ্ট্র ছিল, তখন সারা দুনিয়া হতে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অন্বেষণ এবং তার ব্যবহারের প্রায়োগিক দিক শিখতে সেখানে আসত। খলিফা মামুনের সময় প্রথম ডিপ্লোমা প্রদানকারী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বিমারিস্তান। সারা দুনিয়ার জ্ঞান খিলাফত ফ রাষ্ট্র মুসলিমদের কাছে এনে হাজির করত। আব্বাসীয় খলিফা আল মনসুর বইয়ের প্রতি বিশেষ আকৃষ্ট ছিলেন এবং বই সংগ্রহ করতেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হারুন-অর-রশিদ বই সংগ্রহ করে সেটিকে একটি লাইব্রেরি হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। তখন এর নাম ছিল ‘খিজানাতুল হিকমাহ। পরে মামুনের সময় এটির সংগ্রহশালা এতই বৃদ্ধি পায় যে তিনি এই ভবন বিশাল আকারে সম্প্রসারণ এবং বিষয়ভিত্তিক গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করেন। সেখান থেকেই এর নাম হয় বায়তুল হিকমাহ। বায়তুল হিকমাহ এর সাথে জড়িত ছিলেন বীজগণিতের জনক মুসা ইবন আল খারিজমি, দার্শনিক আল কিন্দি, অনুবাদক এবং চিকিৎসক হুনায়ন ইবন ইসহাক, চিকিৎসক আল রাজি – ইবন সিনার মত ব্যক্তিত্বরা। এমনকি অমুসলিম বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, গণিতবিদদেরও বই দ্রুততার সাথে অনুবাদ করা হত। খলিফা মামুন অনুবাদকদের উত্সাহিত করার জন্য অনুবাদের বিনিময়ে অনুবাদকর্মের ওজনের সমান স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করতেন। মুসলিম খলিফাদের এই জ্ঞানের প্রতি ক্ষুধা ছিল কারণ তারা খিলাফত রাষ্ট্রকে সবসময়ই একটা নেতৃত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবেই দেখতে চাইতেন। খিলাফত তার জ্ঞানের অন্বেষণ ও এর ব্যবহার কুক্ষিগত করে না রেখে সমগ্র মানবজাতির কল্যাণের জন্য উন্মুক্ত করে দিত। যার ফলশ্রুতিতে, আমরা যেখানেই খিলাফত রাষ্ট্রের পরিবর্ধন দেখেছি, সেখানেই একটা স্বনির্ভর সমাজব্যবস্থা দেখেছি। কারণ তারা বিশ্বাস করতেন আল্লাহ্‌ যা বলেছেন, “তোমরাই সর্বোত্তম উম্মাত, মানব জাতির কল্যাণের জন্য তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে”। [সূরা আল-ইমরান ১১০]

    -    জোহান জাবির




“আবাসিক হলের আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হবে: ঢাবি উপাচার্য”

খবরঃ

প্রতিদিন উৎপন্ন হওয়া হলের নানা ধরনের আবর্জনা ও বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে “অষ্টম আর্বান ডায়লগ” অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ‘উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার দিক থেকে এশীয়দের মধ্যে একেবারে তলানিতে বাংলাদেশের অবস্থান। দেশের সেরা বিদ্যাপীঠ ঢাবিতেই যে গবেষণা হয় তা অপ্রতুল’। (https://www.bd-pratidin.com/campus-online/2024/05/29/996983)

মন্তব্যঃ

গত ৩০-৪০ বছরে দেশের জ্বালানী ও বিদ্যুৎ খাত নিয়ে নয়-ছয়, হরিলুট ও বিদেশী কোম্পানীগুলোর অন্যায্য ‘উত্পাদন-বন্টন’ চুক্তি দেখার পরও এই ‘বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবি’ উপাধিধারীদের একবারের জন্যও মুখ ফুঁটে বলার সাহস হয়নি যে, ‘এই বিদেশি কোম্পানীগুলোকে বের করে দেয়া হোক; আমাদের খনিজ সম্পদ আমরাই উত্তোলনের ব্যবস্থা করব, আমাদের বিদ্যুৎ আমরাই উত্পাদন করব, এবং এর জন্য যত যোগ্য ও দক্ষ পেশাজীবী প্রয়োজন তা তৈরীর ব্যবস্থা আমার বিশ্ববিদ্যালয় করবে’। হাসিনা সরকার তেল-গ্যাসে ভরপুর বঙ্গোপসাগরের কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের হাইড্রোকার্বন ব্লকগুলোকে গোপন ‘দানচুক্তির’ মাধ্যমে আমেরিকান এক্সনমবিলকে দিয়ে দিলেও এই তথাকথিত ‘দেশ-দরদীরা’ টু-শব্দটি করেনি; আর এখন নির্লজ্জের মত হলের ময়লা-আবর্জনা আর টয়লেটের পয়ো:বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মত হাস্যকর সমাধানের কথা বলছে!

বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার দৈন্যদশার প্রসঙ্গ আসলেই এই লোকগুলো সীমিত বাজেট বা অর্থের অভাবকে ঢাল হিসেবে সামনে নিয়ে আসে; অথচ এই ডক্টর অব ফিলোসোফি টাইটেল-ধারীরা গবেষণা কী, কেন ও কিভাবে করতে হয় তাই এখনো শিখে উঠতে পারেনি। যৌক্তিকতা বা প্রাসঙ্গিকতা হল যেকোন গবেষণার ভিত্তিমূল। গবেষণা করতে হয় জনগণের কোন বাস্তব সমস্যা বা প্রয়োজনকে সামনে রেখে। এতদিন ধরে যে হাজারে হাজার তথাকথিত ‘গবেষণাপত্র’-কে ঢাবি সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনুমোদন দিয়েছে এবং সেগুলোর পিছনে শতশত কোটি টাকা খরচ করেছে তার মধ্যে কয়টি গবেষণাপত্র রয়েছে যার বিষয়বস্তুর সাথে জনগণের সমস্যা ও প্রয়োজনের কোন সংযোগ রয়েছে? উম্মাহ্‌’র দুর্দশা নিয়ে তামাশা করা এবং উম্মাহ্‌’র দৃষ্টিকে তার মূল সমস্যা থেকে সরিয়ে উম্মাহ্‘কে বিভ্রান্ত করার দায়িত্ব পালন করা এই ক্ষতিকর লোকদের হাত থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য অতিদ্রুত খিলাফত শাসন-ব্যবস্থা পুন:প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।

    -    রিসাত আহমেদ

Previous Post Next Post