Weekly ISLAMIC VIEWPOINT 122

 


Weekly 

ISLAMIC VIEWPOINT

….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা 

১২২ তম সংখ্যা । ২১ জুন, ২০২৪




এই সংখ্যায় থাকছে :

“মিয়ানমার থেকে গুলি এলে পাল্টা গুলি চালাবে বাংলাদেশ’ এ বার্তার অর্থ কী”

“ছাগল–কাণ্ডের সেই তরুণ এনবিআর কর্মকর্তার ছেলে”

“কমেন্ট-বক্স বন্ধ রেখে ফিরল কোকাকোলার সেই বিজ্ঞাপন”

“কোকাকোলার বিজ্ঞাপন নিয়ে নেটদুনিয়া উত্তাল, অভিনেতাদের বয়কটের হুমকি”

“আরও বাড়ছে করের বোঝা, আরও দুঃসহ হতে পারে জীবনযাপন”

“বাজেট প্রণয়নে অলিগার্ক গোষ্ঠীর কথা শোনা হয়েছে: হোসেন জিল্লুর রহমান”

“ম্যাজিক নেই বাজেটে আরও চাপে মানিব্যাগ”

“এভাবে ক্ষোভ থেকে কিল-ঘুষি মেরে একজনকে হত্যা করবেন, তা কেউ ‘বিশ্বাস করতে পারছে না”






“মিয়ানমার থেকে গুলি এলে পাল্টা গুলি চালাবে বাংলাদেশ’ এ বার্তার অর্থ কী”

খবরঃ

মিয়ানমার সীমান্তের বিবাদমান পক্ষগুলো যদি নাফ নদে চলাচলকারী কোনো বাংলাদেশী নৌযানে আর গুলি চালায় তাহলে বাংলাদেশ থেকেও পাল্টা গুলি করা হবে। মিয়ানমার বাহিনী ও আরাকান আর্মি দুই দলকেই এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।… (https://www.dailynayadiganta.com/diplomacy/843693/মিয়ানমার-থেকে-গুলি-এলে-পাল্টা-গুলি-চালাবে-বাংলাদেশ-এ-বার্তার-অর্থ-কী)

মন্তব্যঃ

মায়ানমারে যুদ্ধরত বিদ্রোহী আরাকান আর্মি কিংবা মায়ানমার সামরিক জান্তা ভালোভাবেই জানে যে, তারা যতই বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করুক না কেন, বাংলাদেশের সরকার কখনোই তাদের বিরুদ্ধে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিবেনা। এরা বড়জোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো পাল্টা গুলি চালানোর নামমাত্র হুমকি দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। এ কারণে মায়ানমারের যুদ্ধরত বাহিনীগুলো ক্রমাগত সীমালংঘন করেই যাচ্ছে। এর আগেও তারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে দেশের অভ্যন্তরে ক্রমাগত মর্টার শেল নিক্ষেপ করে দুইজনকে হত্যা করেছিল এবং বাংলাদেশের মানুষকে সীমান্ত থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছিল। আর বাংলাদেশ সরকার এর জবাব দিয়েছিল মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা সেনা সদস্যদের জামাই আদর করে ফিরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে, যারা আমাদের রোহিঙ্গা মুসলিম ভাই-বোনদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল। এছাড়া, উপনিবেশবাদী আমেরিকার আঞ্চলিক চৌকিদার ভারতও যখন আমাদের সীমান্তে প্রতিনিয়ত গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করছে, তখনো তারা এর কোন প্রতিকার কিংবা জবাব দেওয়া তো দূরে থাক, বরং বিভিন্ন সময়ে ভারতেরই পক্ষ নিয়েছে। এখানে তাদের জবাব দেওয়ার দাঁত ভোতা হয়ে গেছে। অথচ দেশের মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনগুলো দমনে এই দাঁত কেমন তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে, তা আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি। আমরা দেখেছি শাপলা চত্বরে গুলি চালিয়ে এই সরকার নিরীহ মানুষদের হত্যা করেছিলো কিংবা মুসলিম হত্যাকারী গুজরাটের কসাই নরেন্দ্র মোদীর আগমনের বিরুদ্ধে জনতা যখন ফুঁসে উঠেছিল, তখন এই সরকার গুলি চালিয়ে তাদেরকে কিভাবে নৃসংসভাবে হত্যা করেছিল। এ থেকে বোঝা যায় এসব শাসকশ্রেণীর দাঁতের উপর তাদের কোন নিজেদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। বরং এরা তাদের উপনিবেশবাদী প্রভুদের নির্দেশেই কামড় দেয়। আবার আমরা এটাও বুঝি যে, বাংলাদেশ তথা সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াকে ঘিরে উপনিবেশিক আমেরিকা, ব্রিটেন কিংবা আঞ্চলিকভাবে চীনের নানাবিধ স্বার্থসংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। একদিকে ব্রিটেন তার প্রাক্তন ঔপনিবেশ এই ভারতীয় উপমহাদেশকে ছাড়তে নারাজ এবং বাংলাদেশের বর্তমান হাসিনা সরকার কিংবা মায়ানমারের সামরিক জান্তা উভয়েই তাদের প্রতি আনুগত্যশীল, অন্যদিকে বর্তমান বিশ্ব মোড়ল নব্য উপনিবেশিক শক্তি আমেরিকার চীনকে নিয়ন্ত্রণে মায়ানমারকে নিয়ে নিজস্ব পরিকল্পনা রয়েছে এবং মায়ানমারের সামরিক জান্তা ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যকার বর্তমান যুদ্ধ পরাশক্তিগুলো রাজনৈতিক পরিকল্পনা ও স্বার্থের অংশ। আর এ সকল খেলায় বাংলাদেশের সরকার সামান্য একটি গুটি মাত্র, যেই গুটির নিজস্ব কোন নড়ার শক্তি নেই। 

তাই কাফির উপনিবেশবাদী গোষ্ঠীর দালাল এবং মুসলিমদের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন এই নগণ্য গুটির কাছ থেকে আমাদের নিজেদের জান-মাল রক্ষা পাওয়া কিংবা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা পাওয়া- কোনটাই সম্ভব নয়। বরং এরা নৌকায় বাংলাদেশের পতাকা তুলে চলার কিংবা ভিটেমাটি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার মত অদ্ভুত পরামর্শ দিয়ে যাবে। তাই শাসনব্যবস্থা থেকে কুফর ঔপনিবেশিক শক্তির এই দালালদেরকে অপসারণ করতে হবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা বলেন, “আল্লাহ তোমাদের জন্য যে ধন-সম্পত্তি নির্ধারণ করেছেন তা নির্বোধদেরকে প্রদান করনা…” (সুরা নিসাঃ ৫)। সেই সাথে আমাদেরকে শাসনের দায়িত্ব দিতে হবে উম্মতের প্রকৃত অভিভাবক খলিফার (খিলাফত ব্যবস্থার রাষ্ট্রপ্রধান) হাতে এবং তার জন্য নবুয়্যতের আদলে সেই খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে হবে যা অতীতের ন্যায় নিজেদের ভূমিতেতো বটেই, অন্য ভূখণ্ডেও যদি খিলাফত রাষ্ট্রের কোন নাগরিক আক্রান্ত হয়, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। যেমন ইতিপূর্বে খিলাফতকালীন সময়ে যখন সিন্দুর রাজা দাহির মুসলিম বণিকদের বাণিজ্য কাফেলা জলদস্যু কর্তৃক লুন্ঠনের বিরুদ্ধে কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারেনি, তখন খিলাফত রাষ্ট্রের ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ রাজা দাহিরের সাথে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য একজন দূত পাঠান। কিন্তু দাহির তাকে হত্যা করে। খবর পেয়ে  তিনি দাহিরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং তার সবচেয়ে চৌকস সেনাপতি মোহাম্মদ বিন কাসিমের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী প্রেরন করে রাজা দাহিরকে পরাজিত ও হত্যা করে সিন্ধু অঞ্চলকে ইসলামী শাসনের অধীনে নিয়ে আসেন এবং যার মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম প্রবেশের দ্বার উন্মুক্ত হয়।

    -    মোঃ জহিরুল ইসলাম




“ছাগল–কাণ্ডের সেই তরুণ এনবিআর কর্মকর্তার ছেলে”

খবরঃ 

ঈদুল আজহার আগে ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনতে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হন মুশফিকুর রহমান (ইফাত) নামের সেই তরুণ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমানেরই ছেলে। তার একাধিক নিকটাত্মীয় ও জনপ্রতিনিধি গতকাল বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করেছেন, ইফাত মতিউর রহমানের দ্বিতীয় সংসারের প্রথম সন্তান। (www.amadershomoy.com/national/article/114859/ছাগলকাণ্ডের-সেই-তরুণ-এনব)

মন্তব্যঃ

ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী জীবনব্যবস্থায় প্রায় যেকোন পদমর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তি যে দুর্নীতিবাজ হবে, এটা কোন নতুন তথ্য নয়। এই তথ্য জানার জন্য আমাদেরকে বেনজির-আজিজ-আছাদুজ্জামান মিয়া কিংবা হালের ছাগল-কান্ডের হোতা মতিউর রহমানদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। বর্তমান সময়ে এটি এতটাই প্রতিষ্ঠিত যে আজকে যে নাবালক সাবালক হয়েছে সেও বিষয়টি জানে। তাহলে প্রশ্ন আসে, কেন একই ধরনের ঘটনা নতুন নতুন মোড়কে আমাদের সামনে আনা হচ্ছে? কেন এই সিরিজ অফ ড্রামা? মুলত, বেনজির-আজিজ কিংবা মতিউর এর মত দুর্নীতিগ্রস্ত আমলা ও কর্মকর্তারা হচ্ছে সরকারের দুঃশাসনের হাতিয়ার, সরকার এদেরকে তার দুঃশাসনে ব্যবহার করেছে আর এরা সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বিত্ত-বৈভব তৈরি করেছে। এদের মধ্যে থেকে সময়ে সময়ে কাউকে বলি দিয়ে সরকার নিজের অবস্থানকে ‘শুদ্ধ’ করে নিতে চায় এবং জনসমক্ষে নিজেকে “ন্যায়বিচারকারীর” হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়। মূলতঃ শাসক তার অত্যাচারী ও নিপীড়নমূলক দুঃশাসনকে আড়াল করতেই এই ‘সিরিজ ড্রামা’র প্রযোজনা করে।

প্রকৃতপক্ষে, বর্তমান স্রষ্টাবিবর্জিত পুঁজিবাদী ব্যবস্থা হচ্ছে দুর্নীতিগ্রস্থ শাসক, আমলা কিংবা প্রশাসনিক কর্মকর্তা তৈরির কারখানা, যেখানে শাসনক্ষমতা এবং রাষ্ট্রীয় পদসমূহকে আমানত কিংবা পবিত্র দায়িত্ব হিসেবে নয়, বরং সম্পদের পাহাড় বানানোর সুযোগ হিসেবে দেখা হয়। কারণ সৃষ্টিকর্তা থেকে বিচ্ছিন্ন এই জীবনাদর্শ মানুষকে সর্বোচ্চ পার্থিব সুবিধা অর্জনের প্রতি মোহাচ্ছন্ন করে এবং পরকালের বিচার দিবসকে তার চিন্তা থেকে বিতারিত করে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন,  “প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন রাখে, যতক্ষণ না তোমরা কবর পর্যন্ত পৌঁছে যাও” [আত-তাকাসুরঃ ১-২]।

অন্যদিকে, আল্লাহ্‌ প্রদত্ত ইসলামী জীবনব্যবস্থা তথা খিলাফত ব্যবস্থার অধীনে আল্লাহ্‌ভীরু (তাক্বওয়া) ও ন্যায়পরায়ণ শাসক ও জনগোষ্ঠী তৈরি হবে। স্রষ্টা ও পরকার বিবর্জিত পুঁজিবাদী চিন্তার বিপরীতে, ইসলাম অব্যাহতভাবে মানুষকে এই শিক্ষা দেয় যে, আমরা আল্লাহ্‌’র কাছ থেকে এসেছি এবং তাই, দুনিয়ার জীবনে তাঁর সকল হুকুম মানতে আমরা বাধ্য, নতুবা পরকারে এর জন্য আমাদেরকে ভয়াবহ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে; অর্থাৎ একজন মুসলিম সে যেই অবস্থানেরই হোক না কেন, তার দায়িত্ব পালনের সময় আল্লাহ্‌’র সন্তুষ্টি ও পরকালের শাস্তিকে মাথায় রাখবে। যে কারণে আমরা যেমন খলিফা উমর (রা.)-এর মত শাসক দেখেছি, যিনি ব্যক্তিগত আলাপের জন্য ব্যক্তিগত বাতি ব্যবহার করতেন আর রাষ্ট্রীয় আলাপের জন্য রাষ্ট্রীয় বাতি ব্যবহার করতেন; ঠিক তেমনি উন্নত চরিত্রের সাধারণ নাগরিকও দেখেছি, যিনি (দুধবিক্রেতা সাধারণ নারী) দুধে পানি মিশানোর প্রস্তাবে আল্লাহ্‌-কে ভয় করতেন। অর্থাৎ, রাষ্ট্রের উচ্চ থেকে নিম্নপর্যায়ের প্রত্যেক ব্যক্তি দুদকের ভয়ে না, বরং আল্লাহ্‌’র ভয়ে সৎকাজে অংশগ্রহণ করবে। মতিউর রহমানের মত দুর্নীতিগ্রস্ত কর্তাব্যক্তিদের চিন্তা করা উচিত, দুনিয়ার এই সামান্য মান-সম্মানের জন্য যদি জন্মদাতা পিতা নিজের ঔরসজাত সন্তানকে অস্বীকার করতে পারে, তাহলে সেই ভয়াবহ দিন কিভাবে উনারা পাড়ি দিবেন, “সেদিন মানুষ পালিয়ে যাবে তার ভাই থেকে, তার মাতা, তার পিতা থেকে, তার স্ত্রী ও তার সন্তান থেকে, সেদিন তাদের প্রত্যেকেই নিজেকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকবে” (সূরা আবাসা: ৩৪-৩৭);  “যদিও তাদেরকে রাখা হবে পরস্পরের দৃষ্টির সামনে, অপরাধী সেদিনের আযাব থেকে বাঁচার জন্য বিনিময়ে দিতে চাইবে তার সন্তানাদিকে (সূরা আল-মা‘আরিজ: ১১)।

সুতরাং, বর্তমান এই দুর্নীতির মহামারি থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া এবং নবুয়্যতের আদলে খিলাফত প্রতিষ্ঠার কাজে অংশগ্রহন করা। 

    -    জোহান জাবির




“কমেন্ট-বক্স বন্ধ রেখে ফিরল কোকাকোলার সেই বিজ্ঞাপন”

খবরঃ

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা ইস্যুতে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের বয়কটের মুখে নতুন বিজ্ঞাপন বানিয়ে তীব্র সমালোচনার শিকার হয়েছে পানীয় ব্র্যান্ড কোকাকোলা। এরপর নিজেদের ইউটিউব চ্যানেল থেকে এটি সরিয়ে নেয় কোকাকোলা। কিন্তু মঙ্গলবার (১১ জুন) রাত থেকে আবারও এটি প্রকাশ্যে আনে তারা। সমালোচনার ঝড় উঠলে প্রথমে বিজ্ঞাপনের ভিডিওটি তারা ‘প্রাইভেট’ করে রেখেছিল, এবার সেটি আবারও প্রকাশ্যে এনেছে। (www.itvbd.com/entertainment/television-stage/152864/মন্তব্যঘর-বন্ধ-রেখে-ফিরল-কোকাকোলার-সেই-বিজ্ঞাপন)

মন্তব্যঃ

কোকাকোলা কোম্পানী ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিতে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য ইসরায়েল কর্তৃক দখলকৃত ভূমিতে ফ্যাক্টরী স্থাপনের মত ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছে। মুসলিমদের বয়কটের মুখে পড়ে, সম্প্রতি তারা প্রতারণাপূর্ণ বিজ্ঞাপনচিত্রটি নিয়ে আবারো মুসলিম উম্মাহ্‌’র সাথে ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করল। মুসলিমদের প্রবল প্রতিবাদের মুখে বিজ্ঞাপনচিত্র সরিয়ে নিয়ে সেটি পুনরায় প্রকাশ্যে এনে আরেকবার ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করল। প্রশ্ন হচ্ছে, কোকাকোলার এই অতিমাত্রার সাহসের কারণ কী?

কোকাকোলা মূলত একটি সাম্রাজ্যবাদী হাতিয়ার। পুঁজিবাদী জীবনাদর্শের ব্যক্তিস্বাধীনতা ও ভোগবাদী-ইন্দ্রীয়সুখ কেন্দ্রীক চিন্তাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে কোকাকোলা বিগত ৬০-৭০ বছর ধরে পশ্চিমাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এমনকি, সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত রাশিয়ার সাথে শীতলযুদ্ধের সময়েও কোকাকোলাকে অন্যমত কালচারাল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিল পশ্চিমারা, যা সোভিয়েত রাশিয়ার পতনে জোড়ালো ভূমিকা রেখেছিল। বর্তমানে মুসলিম তরুণদেরকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে তাদের মধ্যে পশ্চিমাদের নিকৃষ্ট ইন্দ্রীয়সুখ-কেন্দ্রীক ভোগবাদকে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছে এই কোকাকোলা কোম্পানী। মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্বশীল ও সম্ভাবনাময় তরুণ-তরুণীদেরকে কুফর সংস্কৃতিতে আকৃষ্ট করা এবং দেশীয় সংস্কৃতির সাথে আধুনিক মানসিকতার সংযোগ ঘটানোর ছদ্দাবরণে তাদেরকে ইসলাম বিমুখ করা এমনই ভবিষ্যতের জন্য পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘কোক স্টুডিও’-র মত বিভিন্ন প্লাটফর্ম তৈরি হয়েছে। কোকাকোলার এই অতিমাত্রার সাহসের মূল কারণ হল তাদের এই সাম্রাজ্যবাদী শিকড়। তাছাড়া, বাংলাদেশের দালাল শাসকগোষ্ঠীও কোকাকোলার পক্ষে। কোকাকোলা বাংলাদেশে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে ব্যবসা পরিচালনা করে এবং পশ্চিমারা এদেশে তাদের দালাল শাসকগোষ্ঠী ও পুঁজিবাদী জীবনব্যবস্থার আইনী কাঠামোর বৈধতাকে ব্যবহার করে এই মুসলিম বিদ্বেষী কোম্পানীটিকে এদেশে ব্যবসা করা ও কুফর সংস্কৃতি প্রচার-প্রসারে নিয়োজিত রেখেছে।

কুর‘আন-সুন্নাহ্‌’র আলোকে হিযবুত তাহ্‌রীর কর্তৃক প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের অনুচ্ছেদ-১৬৫ অনুযায়ী: “কোন বিদেশি কোম্পানীকে ফ্র্যাঞ্চাইজির মাধ্যমে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ব্যবসা করার অনুমতি প্রদান আইনত: নিষিদ্ধ”। ফলে, নবুয়্যতের আদলে খিলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর শুধু কোকাকোলা কেন, কাফিরদের মালিকানাধীন কোন বিদেশি কোম্পানী বা ব্র্যান্ডই মুসলিমদের আবেগ-অনুভূতি নিয়ে তামাশা করার মত দু:সাহস দেখানোর কোন সুযোগ পাবে না। অর্থাৎ, খিলাফত শাসনব্যবস্থার মধ্যে মুসলিমদেরকে ব্যক্তি-উদ্যোগে বয়কটের মাধ্যমে কোকাকোলার মত ক্রুসেডীয় ব্র্যান্ডকে মোকাবেলা করতে হবে না, বরং শাসনব্যবস্থার পক্ষ থেকে রাষ্ট্রই সেখানে বলবৎ থাকবে: ইসলামী আইন অনুসরণ করে রাষ্ট্রের মধ্য থেকে তাদেরকে বিতারিত করা হবে এবং শত্রুরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষক ও আর্থিক সহায়তাকারী হিসেবে রাষ্ট্রের মধ্যে তাদের সকল স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তিকে বাইতুল মালের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হবে।

    -    রিসাত আহমেদ




“কোকাকোলার বিজ্ঞাপন নিয়ে নেটদুনিয়া উত্তাল, অভিনেতাদের বয়কটের হুমকি”

খবরঃ 

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল ইস্যু নিয়ে সারাবিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও কোমলপানীয় ব্র্যান্ড কোকাকোলা বয়কটের ডাক দিয়েছে সাধারণ জনগণ। সম্প্রতি এই কোমলপানীয়র বাংলাদেশের একটি বিজ্ঞাপন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। সেই বিজ্ঞাপনটিতে মডেল হিসেবে ছিলেন অভিনেতা শরাফ আহমেদ জীবন, শিমুল শর্মা, আব্দুল্লাহ আল সেন্টু প্রমুখ। এই বিজ্ঞাপনের জেরে কোকাকোলা বয়কটের পাশাপাশি অভিনয়শিল্পীদের বয়কটের হুমকি দিয়েছেন নেটিজেনরা। (https://dailyinqilab.com/bangladesh/news/664607

মন্তব্যঃ 

কোকাকোলার বিজ্ঞাপনের বিপরীতে মুসলিম উম্মাহ্‌’র ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ যেন নুমান ইবনে বশির (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর হাদিসের প্রতিফলন: “মুমিনদের পরস্পরের ভালোবাসা, অনুগ্রহ, হৃদ্যতা ও আন্তরিকতার উদাহরণ হচ্ছে একটি দেহ বা শরীরের মতো। যখন দেহের কোনো একটি অঙ্গ আহত বা আঘাতপ্রাপ্ত হয়, তখন সারা দেহের সবগুলো অঙ্গই নিদ্রাহীন হয়ে পড়ে এবং কষ্ট-যন্ত্রণায় জরাগ্রস্ত ও কাতর হয়ে পড়ে” (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)। পণ্য-বয়কট করে তাদেরকে আর্থিকভাবে দূর্বল করে দেওয়ার যে চমৎকার প্রচেষ্টা মুসলিম উম্মাহ্‌ দেখিয়েছে, তা অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েল ও তার মদদদাতা পশ্চিমা গোষ্ঠীকে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সা)-এর উম্মাহ্‌’র সম্মিলিত আঘাত কতটা শক্তিশালী।

পণ্যবয়কট কর্মসূচি প্রশংসার দাবিদার এবং এর বাস্তবিক কিছু প্রভাব পশ্চিমা ও ইহুদী গোষ্ঠীর উপর থাকলেও আমাদের বিষয়টিকে আরও গভীরভাবে অনুধাবন করা জরুরী। তাই, আমাদের সবার আগে অনুধাবন করা জরুরী- তাদের শক্তির মূল উৎস কি? এবং কোথায় আঘাত করলে তাদের মেরুদণ্ড ভেঙে পড়বে? মূলত, বর্তমানে পশ্চিমা কাফির ও ইহুদী গোষ্ঠীর শক্তির মূল উৎস আমরা মুসলিমরা আমাদের ইসলামী জীবনাদর্শের পরিবর্তে পশ্চিমাদের প্রধান পণ্য “পুঁজিবাদী-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা” দ্বারা নিজেদের বিষয়াদি পরিচালিত করছি। যার ফলে, তারা আমাদেরকে শাসন করার, নিয়ন্ত্রণ করার, আগ্রাসন চালানোর সুযোগ পাচ্ছে। ইরাক ও আফগানিস্তানে তারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে হামলা করেছে। তথাকথিত মানবাধিকার ও সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে তারা ইসরায়েলী হত্যাযজ্ঞের মদদ জোগাচ্ছে। মুসলিম বিশ্বের দালাল শাসকেরা পশ্চিমা সংস্থা জাতিসংঘের দোহাই দিয়ে, জাতীয়তাবাদের বর্ডারের দোহাই দিয়ে ফিলিস্তিনের মুসলিমদের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। একদা গোলদা মেয়ার, অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী (শাসনকাল: ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৪) বলেছিল, “যখন আমরা আল আকসা মসজিদে আগুন দিলাম, আমি সেই রাতে সারারাত ঘুমাতে পারিনি এই ভয়ে যে, আরব সেনাবাহিনী চতুর্দিক থেকে আমাদেরকে হামলা করবে! কিন্তু সকালে সূর্য উদয়ের পর আমি শিখলাম যে, আমরা যা খুশি তাই করতে পারি, কারণ আমরা এমন এক জাতিকে মোকাবেলা করছি যারা ঘুমন্ত”। ইহুদী গোষ্ঠী জানে যতক্ষণ আমরা পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার অধীনে আছি ততক্ষন আমরা ঘুমন্ত জাতি এবং তারা নিশ্চিন্ত। 

সুতরাং, কাফির গোষ্ঠীকে যদি প্রকৃতপক্ষে দূর্বল করতে হয় তাহলে আমাদেরকে পণ্যবয়কটের পাশাপাশি তাদের জীবনাদর্শকেও সমানতালে বয়কট করতে হবে। এবং এই জীবনাদর্শকে মুসলিম ভূমি থেকে সমূলে উৎখাত করে ইসলামের দিকে ফিরে আসার ডাক দিতে হবে। না হয়, শুধুমাত্র পণ্যবয়কটের মাধ্যমে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে কিন্তু, আমাদের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ হারাবে না, যেমনভাবে বৃটিশদের আমরা ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে বিদায় করলেও এখনও তারা আমাদের নিয়ন্ত্রন করে তাদের ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক আইন-কানুন, চিন্তা-ধারা, তাদের দালাল শাসকগোষ্ঠী ও বুদ্ধিজীবিদের মাধ্যমে।  

তাই, বয়কট হতে হবে সার্বিক, আংশিক নয়; অর্থ্যাৎ, পশ্চিমা পণ্য থেকে শুরু করে তাদের জীবন-ব্যবস্থা, লাইফস্টাইল সবকিছুকেই বয়কট করতে হবে। পাশাপাশি, আমাদেরকে এই সত্যও বুঝতে হবে কাদের পৃষ্ঠপোষকতায় পশ্চিমারা মুসলিম ভূমিগুলোতে তাদের জীবনব্যবস্থা আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে পারছে। যেসব দালাল শাসকেরা আমাদের বাধ্য করছে ইসলামকে ত্যাগ করে পশ্চিমা জীবনবিধান দ্বারা জীবন পরিচালিত করতে এরা হচ্ছে এই কাফের গোষ্ঠীর ব্লাড লাইন। এরা পশ্চিমা আদর্শ দ্বারা আমাদের জোরপূর্বক শাসন করে আমেরিকা, ব্রিটেন, ইসরায়েলের মত পশ্চিমা শক্তির শরীরে রক্তসঞ্চালন টিকিয়ে রাখছে। যার উপর ভর করে এই কাফের সন্ত্রাসীগোষ্ঠী আমাদের উপর ধ্বংসলীলা চালানোর শক্তি অর্জন করে। সুতরাং, চূড়ান্ত বয়কট পশ্চিমা কাফের শক্তির এসব রক্ত সঞ্চালন লাইন (দালাল শাসকগোষ্ঠী) থেকে শুরু হওয়া জরুরী। 

    -    আসাদুল্লাহ্‌ নাঈম




“আরও বাড়ছে করের বোঝা, আরও দুঃসহ হতে পারে জীবনযাপন”

খবরঃ

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বাজেটে নতুন করে কর আরোপের যেসব প্রস্তাব এসেছে, তাতে জনসাধারণের জীবন আরও দুঃসহ হয়ে উঠতে পারে। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর পেশ করা বাজেটে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও শুল্কের প্রস্তাবনায় এটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ... বাজেট প্রস্তাবনা অনুযায়ী, মোবাইল ফোনে প্রতিবার ১০০ টাকা রিচার্জে উচ্চ কর আদায় করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে ফোন কল ও ডেটা ব্যবহারের খরচ বেড়ে যাবে। শুধু এই দম্পতি নন, দেশের সবার জন্য মোবাইল ফোন বিল বাবদ খরচ বেড়ে যাবে। এসব উচ্চ করের বোঝা এমন সময়ে চাপানো হচ্ছে, যখন মূল্যস্ফীতির কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাব থেকে বাঁচতে প্রাণপণ লড়াই করে যাচ্ছে মানুষ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল নয় দশমিক ৮৯ শতাংশ, এক মাস আগেই তা ছিল নয় দশমিক ৭৪ শতাংশ। (https://bangla.thedailystar.net/business/budget-2024-25/news-588406)

মন্তব্যঃ 

প্রতিবছর বাজেটে করের (ট্যাক্স, ভ্যাট, আমদানি শুল্ক, ইত্যাদি) কলেবর ও মাত্রা বৃদ্ধি করে জনগণের উপর নতুন করে চাপ তৈরি করা হচ্ছে। এই বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করের পরিমাণ (৪৯৫,০০০ কোটি টাকা) যা দশ বছর আগের (২০১৪-১৫) অর্থ বছরের মোট বাজেট (২৫০, ৫৬০ কোটি টাকা)-এর চেয়েও প্রায় দ্বিগুণ। উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংক-আই.এম.এফ-এডিবি এর পরামর্শে সরকার ইতিমধ্যে জনগণের সম্পদ (তেল, গ্যাস, এবং অন্যান্য খনিজ সম্পদ) এবং সরকারী খাতের লাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোকে (পাট, টেক্সটাইল, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি) বেসরকারীকরণের নামে দেশী-বিদেশী পুঁজিপতি গোষ্ঠীদের হাতে ছেড়ে দিয়েছে। নতুন করে Public Private Partnership (PPP) এর নামে সরকারী খাতে আয় অর্জনকারী অবশিষ্ট খাতগুলোকেও প্রাইভেট খাতে ছেড়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করছে। ফলে সরকারের কাছে আয়ের খাত হিসাবে জনগণের উপর করারোপ করা ছাড়া আর কোন বিকল্প নাই। সরকারী বিভিন্ন খাত ও প্রতিষ্ঠান বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়ার ফলে সরকারের দায়িত্ব কমে গেলেও সরকার রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারী কর্মচারীদের দফায় দফায় নানা কৌশলে বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করে প্রশাসনিক ব্যায় বাড়িয়ে যাচ্ছে। এই বছরের বাজেটের ২২%-এর উপরে ব্যায় হচ্ছে শুধুমাত্র সরকারী কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ। সরকারি ব্যায় এতটাই লাগাম ছেড়েছে যে সরকারের রেগুলার আয় দিয়ে এই ব্যায় নির্বাহ করা যাচ্ছে না। ফলে দেশী-বিদেশী উৎস থেকে ঋণ নেয়াই সরকারের একমাত্র বিকল্প। সরকারি ঋণ এতটাই ভয়াবহ মাত্রায় চলে গিয়েছে যে এই বছর শুধুমাত্র ঋণের সুদ পরিশোধ করার জন্য বরাদ্ধ রাখতে হচ্ছে ১৭৫,৭৭৪ কোটি টাকা। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ এক নজরে এবারের বাজেট,  জুন ৭, ২০২৪, ডেইলি স্টার বাংলা)। সরকারের লাগামহীন অপ্রয়োজনীয় ব্যায় বৃদ্ধি, অপরিণামদর্শী সুদভিত্তিক ঋণ গ্রহণ সরকারকে ঋণের দুষ্ট চক্রে ঠেলে দিচ্ছে। উপনিবেশিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান (বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ) তাদের ঋণের সুদ-আসল পরিশোধ নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে কর-জিডিপি হার বৃদ্ধির চাপ দিচ্ছে। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ যেসব পরামর্শ দিয়ে বাংলাদেশকে ১.১৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে রাজি হলো আইএমএফ, ৮ মে ২০২৪, বিবিসি বাংলা)। সরকারও এসকল প্রতিষ্ঠানের পরামর্শে নানা কৌশলে জনগণের আয় এবং ব্যায়ের উপর করের বোঝা চাপাচ্ছে। সরকার জনগণের ঐসকল খরচের খাতগুলোকে বিশেষভাবে টার্গেট করছে যেগুলো সংখ্যায় বেশী এবং unavoidable। যেমনঃ ফোন কল, রেফ্রিজারেটর এমন কি সাধারণ শুকনো পাউরুটির উপর ভ্যাট আরোপ করছে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় করের বোঝা থেকে জনগণের মুক্তির কোন পথ নাই কারণ এই ব্যবস্থায় সরকারী আয়ের একমাত্র উৎস হচ্ছে জনগণের উপর কর চাপানো।

পুঁজিবাদী ব্যবস্থার আয় ও ব্যায়ের উপর করের বিপরীতে ইসলামের কর ব্যবস্থা উৎপাদন এবং উদ্বৃত্ত সম্পদ ভিত্তিক। যেমন উশর এবং খারাজ, যা উৎপাদিত কৃষি পণ্যের উপর ধার্য করা হয়। আবার কোন ব্যক্তির আয় থেকে ব্যয় বাদ দেয়ার পর যে উদ্বৃত্ত সম্পদ, তা যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের বেশী হয়, শুধুমাত্র তখনই তার উপর যাকাত প্রযোজ্য হয়। তাই ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় জনগণের উপর করের বোঝা চাপানোর কোন সুযোগ নাই। এছাড়াও, ইসলামে রাষ্ট্রের আয়ের আরও অনেকগুলো খাত রয়েছে, উদাহরণস্বরূপ: গণমালিকানাধীন সম্পদ থেকে আয়, রাষ্ট্রের মালিকানাধীন ভারী শিল্পগুলো থেকে আয় যা রাষ্ট্র জনকল্যাণমূলক খাত যেমনঃ সেতু, মহাসড়কসহ ইত্যাদি অবকাঠামো নির্মাণ, অক্ষম জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন পূরণসহ ইত্যাদি প্রয়োজনে খরচ করতে পারবে। কিন্তু, যদি এমন অবস্থা তৈরি হয় যে, রাষ্ট্রের কাছে পর্যাপ্ত অর্থ নাই, অথচ এমনকিছু আবশ্যিক খরচ রয়ে গেছে যা সকল মুসলিমের উপর দায়িত্ব, যেমনঃ জিহাদ পরিচালনা করা কিংবা অভাবগ্রস্ত নাগরিকদের ভরণ-পোষণ করা, সেই সময় রাষ্ট্র সাময়িক সময়ের জন্য করারোপ করতে পারে। তবে শর্ত হচ্ছে এই কর থেকে শুধুমাত্র এমন সব খরচ করা যাবে যা রাষ্ট্রের সকল নাগরিকদের জন্য বাধ্যতামূলক। উল্লেখ্য, এই কর শুধুমাত্র ধনীদের উদ্বৃত্ত সম্পদের উপর প্রযোয্য হবে। রাষ্ট্র কখনও শাসকদের ভোগ-বিলাস করার জন্য জনগণের উপর করারোপ করতে পারবে না। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “… আর যে আমার পথনির্দেশ অনুসরণ করবে সে [দুনিয়াতে] বিপথগামী হবে না এবং [আখিরাতে] কষ্টে পতিত হবে না” [সূরা ত্বাহাঃ ১২৩]।

    -    মো: সিরাজুল ইসলাম




“বাজেট প্রণয়নে অলিগার্ক গোষ্ঠীর কথা শোনা হয়েছে: হোসেন জিল্লুর রহমান”

খবরঃ

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, এবারের বাজেট প্রণয়নে অলিগার্ক বা লুটেরা গোষ্ঠীর কথা শুনেছেন অর্থমন্ত্রী, যারা ক্ষমতার প্রশ্রয়ে ফুলেফেঁপে উঠেছে। এই শ্রেণিগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করেই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আবার এই বিশেষ শ্রেণির কথা চিন্তা করে অর্থনীতিতে সংস্কার ও ব্যাংক খাত নিয়ে তেমন আলোচনা করা হয়নি। (https://www.banginews.com/web-news?id=67928bb953ce3dad9b7fd55f6e53e6bb01c65bf0

মন্তব্যঃ

ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বরাবরই যেখানে অলিগার্ক গোষ্ঠীর স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়, সেখানে বিষয়টিকে শুধুমাত্র অর্থমন্ত্রীর উপর চাপিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা মুলতঃ এই ব্যবস্থার ব্যর্থতাকে আড়াল করতে চেয়েছেন। আমেরিকায় ইলন মাস্ক, কিংবা ডোনাল্ড ট্রাম্পরা নিয়মতান্ত্রিকভাবেই ট্যাক্স দেয় না। এই অলিগার্কদের রক্ষার জন্যই অর্থনৈতিক মন্দার সময় বেইলআউট প্যাকেজ, কোভিডের সময় প্রণোদনা ইত্যাদি নানা স্কিম সময়ে সময়ে দেয়া হয়েছে। এমনকি এই কালো টাকা সাদা করার নীতিও নতুন নয়। বাংলাদেশের মত ইউরোপ, আমেরিকাতেও Voluntary Disclosure Program এর মত কালো টাকা সাদা করার নানা স্কীম চালু আছে। তাহলে হোসেন জিল্লুর রহমান সাহেবরা কেন এমনভাবে কথা বলছেন যেন বর্তমান সরকারই প্রথম অলিগার্কদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন! বরং তিনিই যখন ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে উপদেষ্টা ছিলেন, তখনও তো আইএমএফ-এর পরামর্শে বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে অলিগার্ক গোষ্ঠীকে সুবিধা দেয়া হয়েছিল। মূলতঃ এই হোসেন জিল্লুর রহমান, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মত তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগত ব্যর্থতাকে আড়াল করতে একটি সরকার বা রাজনৈতিক দলকে দোষারোপ করে। 

নাগরিক সমাজ কিংবা সমাজের বুদ্ধিজীবিরা হচ্ছে সমাজের গুরুত্ব স্তম্ভ; তাদের মনে রাখা উচিৎ, সত্যিকারের চিন্তাশীল মানুষ তারাই যারা সত্যকে মানে এবং সত্যের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করে। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “নিশ্চয়ই আসমান ও জমিনের সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের পরিবর্তনে চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। তারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহ্‌‘কে স্মরণ করে এবং আসমান ও জমিনের সৃজন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে (এবং বলে), ‘হে আমাদের প্রভু! আপনি এগুলো অনর্থক সৃষ্টি করেননি। আপনি পবিত্র, সুতরাং আমাদের রক্ষা করুন জাহান্নামের শাস্তি থেকে” [সূরা আলি-ইমরানঃ১৯০-১৯১]। কিন্তু বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবিরা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মালিক আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র হুকুমকে বাস্তবায়ন না করে, পুঁজিবাদের মত কুফর চিন্তাকে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে। তাদের অবস্থা যেন কুরাইশ নেতা নযর ইবন হারিস-এর মত, যিনি আল্লাহ্‌’র রাসূল (সাঃ)-এর বাণী শোনা থেকে নিজেকে বিরত থাকার জন্য কানে তুলে গুজে থাকতেন। কিন্তু আমাদের দরকার তাইমিয়া ইবন উবাইদ-এর মত চিন্তাশীল বুদ্ধিজীবিদের যিনি প্রথমে কুরাইশদের পরামর্শে কানে তুলা দিয়েছিলেন। কিন্তু নিজের কাপুরুষোচিত এই চিন্তাকে ধিক্কার দিয়ে কানের তূলা ফেলে দিয়ে তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর কথা শোনেন এবং ইসলাম গ্রহণ করেন। আমাদের দরকার তাইমিয়া ইবন উবায়েদের মত বুদ্ধিজীবি যারা ধর্মনিরপেক্ষ পুঁজিবাদীদের দেয়া কানের তুলা ফেলে, নিজের বুদ্ধিবৃত্তিক মনকে আশ্বস্ত করে ইসলাম তথা আল্লাহ্‌’র বাণীকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রয়াস করে যাবে।

    -    জোহান জাবির




“ম্যাজিক নেই বাজেটে আরও চাপে মানিব্যাগ”

খবরঃ

লাল ব্রিফকেস থেকে নতুন কোনো ম্যাজিক বের করতে পারেননি অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। গতানুগতিক অতি সাধারণ এক বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছেন তিনি। টাকার অঙ্কে যা ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি। অর্থনীতির নানামুখী চ্যালেঞ্জ সামনে দেয়া প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণের জন্য বড় কোনো সুখবর নেই। (https://mzamin.com/news.php?news=113300

মন্তব্যঃ

সাধারণভাবে বাজেট একটি সরকারের বাৎসরিক আয়ব্যয়ের পরিকল্পনা। মানবরচিত পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় যেহেতু মানুষই ঠিক করে কোন কোন খাতে ব্যয় হবে এবং কোন কোন খাত থেকে আয় আসবে, সেহেতু এগুলো কোন স্থির বিষয় নয়। ফলে এখানে সরকার তার ইচ্ছামত আয়-ব্যয়ের খাত, পরিমাণ নির্ধারণ করে ফেলতে পারে। যার ফলে জনগণের কাছে বাজেট এক আতংকের নাম, কারণ এতে নতুন নতুন করের খাত ও পরিমাণ বৃদ্ধি এবং নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির মানিব্যাগে চাপ ছাড়া আর কোন ম্যাজিক নেই। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, ব্যবসায়িক গোষ্ঠী, দেশী-বিদেশী প্রভাবশালী গোষ্ঠী তাদের দর-কষাকষি ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিবছর বাজেটের আগে জোর ততবির ও প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। নানাভাবে মানবরচিত ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের আয়-ব্যয়ের পরিকল্পনার উপর সরকার, তার আশপাশের দেশি-বিদেশী প্রভাবশালী মহল, ক্ষুদ্র পুঁজিপতি গোষ্ঠী প্রভাব বিস্তার করে।

বাজেটের রুপ দেখলেও এটি স্পষ্ট হয়। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বাজেটের ‘অনুন্নয়ন ব্যয়’ কিংবা ‘উন্নয়ন ব্যয়’ সবই মূলত ক্ষমতাধর গোষ্ঠীর জন্য ব্যয় হয়। জনগণের সেবা প্রদানের জন্য প্রণীত অনুন্নয়ন বাজেটের সংহভাগ ব্যয় হয় দামি-দামি গাড়ি কেনা ও পরিচালনা খরচে, অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণে, অকার্যকর প্রশিক্ষণ, অকল্পনীয় রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়, লুটেরা ক্রয় ইত্যাদিতে, যা এখন ওপেন সিক্রেট। ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাজেটকে আপাত দৃষ্টিতে সাধারণ মানুষের সরাসরি উপকারার্থে মনে হলেও এটাও মূলত রাখা হয় তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ, কৃষি-রেলওয়ে ইত্যাদি ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশী কোম্পানী ও প্রভাবশালী গোষ্ঠীকে দেয়া সীমাহীন লুটের সুযোগ চালু রাখার জন্য। সর্বোপরী ‘অনুন্নয়ন বাজেট’ এতটাই অকল্পনীয় অপচয় ও লুটের পর্যায়ে এসেছে যে মোট বাজেটের ৫৯%ই ব্যয় হয় অনুন্নয়ন ব্যয়ে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সেবা দেয়ার জন্য প্রতিটি নাগরিকের জন্য ২৭,৩৯৪ টাকা করে ব্যয় করবে। বলাবাহুল্য এর কত অংশ সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় এসে পৌছুবে! আর বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট কিভাবে দেশী-বিদেশী প্রভাবশালী গোষ্ঠীর প্রেসক্রিপশনের মেগা প্রজেক্টগুলোর পেছনে যায় এবং সেই বাজেট থেকে কিভাবে মেগা দুর্নীতি হয় তা ওপেন সিক্রেট। এসবের বাইরেও মানবরচিত বাজেট এমনকি যে সম্পদ কোথাও নেই তাও ব্যয় করে ফেলার সুযোগ করে দেয়। পুরো বাজেটের একতৃতীয়াংশই (৩২%) এরকম ব্যয় যার নাম ঘাটতি বাজেট। তারা কৃত্রিম সম্পদ তৈরি করে ফেলতে পারে যেমন মূদ্রা ছাপানো ও ব্যাংক থেকে সূদের বিনিময়ে তা ঋণ হিসেবে নিয়ে খরচ করে ফেলা। দেশি-বিদেশী এমন সূদের ঋণ এমন আকার ধারণ করেছে যে এখন মোট বাজেটের ১৪.৪% চলে যায় শুধু ঋণের সূদ পরিশোধ করতে।

এছাড়া, পুঁজিবাদী সরকার তার এই ব্যাপক ব্যয় নিবারণের জন্য ইচ্ছামত জনগণের কাছ থেকে নানাবিধ ট্যাক্স নেয়। মানুষ তার চাহিদা পূরণ করতে পারবে কি পারবেনা এটি এই ব্যবস্থা চিন্তা করেনা। Global Living Wage Coalition এর হিসাব অনুযায়ী ঢাকা শহরের প্রতিজন মানুষের নূন্যতম বেঁচে থাকার জন্য বছরে ৩০৫,৯৬৪ টাকা লাগে। অথচ সরকার কোন একজন ব্যক্তি যার উপর স্বাভাবিকভাবেই পরিবারের আরও অনেকেই নির্ভরশীল তার আয় ৩৫০,০০০ টাকা এর বেশী হলেই আয়কর কেটে নেয়। আর ভ্যাটতো ফকির-মিসকিন ও কোটিপতি সবার জন্য সমান। সরকারের আয়ের ৮৭% শতাংশই আসে আয়কর ও ভ্যাটের মত অন্যায্য এসব খাত থেকে। 

ইসলামে রাষ্ট্রের আয় এবং ব্যয়ের মূল খাতগুলো আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কর্তৃক নির্ধারিত। খলিফা জনগণের অভিভাবক হিসেবে শুধুমাত্র খাতগুলোর অন্তর্ভুক্ত উপখাতগুলো এবং বরাদ্দসমূহ ইজতিহাদ অনুযায়ী নির্ধারণ করেন। খিলাফত ব্যবস্থায় শোষণমূলক কর ব্যবস্থা বিলুপ্ত হবে, কারণ ইসলামে কর আরোপ করা হয় সম্পদ ও উৎপাদনের উপর জনগণের আয়-ব্যয়ের উপর নয়। এই ব্যবস্থায় নাগরিকদের (মুসলিম ও অমুসলিম) ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবসায়-বাণিজ্য ও আমদানী-রপ্তানীর উপর ভ্যাট-ট্যাক্স আরোপ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ; ওকবা ইবনে আমির থেকে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-কে বলতে শুনেছি, “যে মাক্স (শুল্ক) আরোপ করে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না”। ফলে দ্রব্যমুল্যের উপর করের কোন প্রভাব থাকবেনা। যেসব ব্যয়ের জন্য একই সাথে রাষ্ট্র ও মুসলিমরা দায়বদ্ধ সেসব ব্যয়ের জন্য প্রয়োজনে খলিফা সম্পদশালীদের উপর বিশেষ কর ধার্য করতে পারবেন। তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎসহ গণমালিকানাধীন সম্পদকে বেসরকারীকরণ করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন, “তিন জিনিষের মাঝে সকল মানুষ শরীক। এগুলো হচ্ছে পানি, ঘাস (চারণ ভূমি) এবং আগুন”। গণমালিকানাধীন সম্পদ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করে প্রাপ্ত রাজস্ব জনকল্যাণে ব্যবহার করা। 

    -    মোহাম্মদ তালহা হোসেন




“এভাবে ক্ষোভ থেকে কিল-ঘুষি মেরে একজনকে হত্যা করবেন, তা কেউ ‘বিশ্বাস করতে পারছে না”

খবরঃ

ট্রেনের জানালার পাশে দাঁড়ানো বা সিটে বসাকে কেন্দ্র করে ট্রেনের যাত্রী মঞ্জুর কাদেরের এলোপাতাড়ি লাথি, কিল, ঘুষিতে মারা গেছেন ট্রেনের আরেক যাত্রী ঝুমুর কান্তি বাউল।… চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ঢাকা মেইল ট্রেনের পেছন থেকে দ্বিতীয় বগিতে উঠেছিলেন। ট্রেনে অনেক ভিড় ছিল। নরসিংদী স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার আগেই ট্রেনের যাত্রী চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের মঞ্জুর কাদেরের সঙ্গে তার কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে মঞ্জুর কাদের কিল, ঘুষি মারতে থাকেন। এতে ঝুমুর কান্তি বাউল অজ্ঞান হয়ে ট্রেনের মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। পরে ট্রেন থেকে ধরাধরি করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।   (https://www.prothomalo.com/bangladesh/oawoerkodv)

মন্তব্যঃ

সামান্য ঘটনায় পিটিয়ে হত্যা, কুপিয়ে জখম করা, গোলাগুলি, হামলা, এমনকি ধর্ষণের মত সংঘটিত অপরাধগুলো আমাদেরকে ইসলাম পূর্ব জাহেলি সমাজব্যবস্থাকেই আবার নতুন করে চিনিয়ে দেয়। জাহেলী সমাজ হচ্ছে সেই সমাজ যা সর্ব নিকৃষ্ট স্তরে পৌঁছে গিয়েছে। এরকম সমাজের মানুষগুলো স্বভাবতই অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে এবং মানুষের মাঝে নৈতিকতা বা শিষ্টাচারের আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ সমাজে মানুষ পরিচালিত হয় তার স্বার্থের বা উপযোগবাদের ভিত্তিতে। উপযোগবাদ (Utilitarianism) অনুসারে, কোন নির্দিষ্ট কাজ (বা কাজের প্রকারভেদগুলো) সঠিক, যদি তা সুখ বা আনন্দের দেয়; আর ভুল, যদি তা বেদনা বা কষ্ট উৎপন্ন করে। ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ যেহেতু ‘জীবন থেকে স্রষ্টার প্রভাব বিচ্ছিন্নকরণ’ এর আক্বীদা বা বিশ্বাস থেকে তৈরি হয়েছে, ফলে স্রষ্টার সন্তুষ্টি কিংবা তার প্রদত্ত হারাম-হালাল এর বদলে স্বার্থ বা উপযোগবাদ হয়ে উঠেছে সমাজের মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কের অন্যতম ভিত্তি। ফলে সমাজে বসবাসকারী মানুষগুলোর চিন্তা ও আবেগগুলো স্বার্থকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে। তখন ‘সবার উপরে স্বার্থ সত্য, তাহার উপরে নাই’- কেন্দ্রিক চিন্তা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সমাজে ন্যায্য হোক কিংবা অন্যায্য হোক, সুবিধা ভোগ করতে পারাটাই সাফল্যের আসল মাপকাঠি হয়ে ওঠে। তখন মানুষ গণপরিবহনে সামান্য সিটে বসার মতো সুবিধা কিংবা সুবিধাজনক স্থানে দাঁড়ানোর মতো সামান্য স্বার্থকেও ছাড় দিতে নারাজ থাকে এবং এর জন্য খুনাখুনিও পর্যন্ত হয়ে যায়, আলোচ্য ঘটনাটিতে যেটা হয়েছে।

তাই সমাজে যেখানে মানুষ স্বার্থকেন্দ্রিক জীবন-যাপন করে সেখানে নৈতিকতার অস্তিত্ব থাকবে না সেটাই স্বাভাবিক! আর যদি কিছু ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টি নৈতিক আচরণও করে, তবে সেটাও তার স্বার্থের সাথে সমন্বয় করেই হয়। এই জাহেল অসহিষ্ণু সমাজকে নীতিবান ও সহিষ্ণু সমাজে পরিণত করার জন্য সমাজকে স্বার্থকেন্দ্রিকতা কিংবা ‘উপযোগবাদ’ এর ফাঁদ থেকে বের করতে হবে এবং সেটা অবশ্যই স্রষ্টা বিবর্জিত ধর্মনিরপেক্ষ এই সমাজে সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার এমন একটি শাসনব্যবস্থা বা সরকার ব্যবস্থা যা স্রষ্টা বিবর্জিত নয়, বরং স্রষ্টার হুকুমে পরিচালিত। যে শাসন ব্যবস্থা তার বিচার, শিক্ষা, সমাজসহ সকল ক্ষেত্রে স্রষ্টার হুকুম মেনে চলবে এবং মানুষের মধ্যে সকল কর্মকান্ডের ক্ষেত্রে স্বার্থকেন্দ্রিকতার পরিবর্তে ‘স্রষ্টার সন্তুষ্টি’ অর্জন কেন্দ্রিক আবেগ তৈরি করবে। এবং এটা অবশ্যই হবে একমাত্র ইসলামী সমাজব্যবস্থায়, যা খিলাফত শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। যেটা অতীতেও হয়েছিল রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর পবিত্র হাত ধরে। যে শাসন ব্যবস্থা বর্বর আরবদেরকে (যারা সামান্য উটের জখম হওয়াকে কেন্দ্র করে ৪০ বছর ধরে যুদ্ধ করেছিল এবং সে যুদ্ধে ৭০ হাজার লোক নিহত হয়েছিল, যেটা ‘জঙ্গে বাসুস’ নামে পরিচিত) ইসলামের ছায়াতলে এনে এমন এক অভূতপূর্ব জাতি তৈরি করেছিল, যারা সততা, নিষ্ঠা, সহিষ্ণুতা, বিনয়, সহমর্মিতা ইত্যাদি সকল নৈতিক গুণাবলী অর্জনে অগ্রগামী হিসেবে নিজেরাতো বটেই, বরং সমস্ত মানবজাতিকেই পথ দেখিয়েছিল। তাই বর্তমান জাহেল বা নিকৃষ্ট সমাজ পরিবর্তনে খিলাফত শাসন ব্যবস্থার বিকল্প নেই। আল্লাহ্‌’র রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে যার কাঁধে একজন খলিফার আনুগত্যের শপথ নেই (খিলাফত শাসন ব্যবস্থা), তার মৃত্যু হবে জাহেলিয়াতের মৃত্যু” (সহীহ্‌ মুসলিম)।

    -    মোঃ জহিরুল ইসলাম





Previous Post Next Post