Weekly
ISLAMIC VIEWPOINT
….সপ্তাহের সংবাদ পর্যালোচনা
১২৩ তম সংখ্যা । ০৪ জুলাই, ২০২৪
এই সংখ্যায় থাকছে :
“১০ সমঝোতা স্মারক ও নথি সই। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে চলবে ভারতের ট্রেন”
“কর্মবিরতিতে অচল ঢাবি, অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি”
“সরকারে ‘রাসেলস ভাইপার’ আছে, ধরার মতো বেজি নাই: সায়েদুল হক”
“বছরে ৯৩ হাজার কোটি টাকা পাচারেই চরম ডলার সংকট”
“বিশ্বব্যাংক টাকা দেয়, তাদের কথা শুনতে হবে॥ অর্থমন্ত্রী”
“এবার পাঠ্য বইয়ে ‘অন্তর্বাস বিক্রির ওয়েবসাইট”
“১০ সমঝোতা স্মারক ও নথি সই। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে চলবে ভারতের ট্রেন”
খবরঃ
পশ্চিমবঙ্গের গেদে থেকে ভুটান সীমান্তবর্তী ডালগাঁও পর্যন্ত বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ট্রেন চালাতে চায় ভারত। এ বিষয়ে আগে প্রস্তাব দেয়া হলেও গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। আলোচনা হয়েছে তিস্তা প্রকল্প নিয়েও। সেই সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সুসংহত করার পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারে ১০টি সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) সই করেছে বাংলাদেশ ও ভারত। ... বর্তমানে পাঁচটি রুটে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ট্রেন চলে। তিনটি যাত্রীবাহী ইন্টারচেঞ্জ, বাকি দুটি পণ্যবাহী।... এখন ভারত পশ্চিমবঙ্গের গেদে থেকে ভুটান সীমান্তবর্তী ডালগাঁও পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রেন চালু করতে চায়। এক্ষেত্রে সময় ও দূরত্ব কমাতে ব্যবহার করতে চায় বাংলাদেশের রেলপথ। অর্থাৎ দর্শনা দিয়ে ঢুকে ঈশ্বরদী-আব্দুলপুর-পার্বতীপুর হয়ে চিলাহাটি পর্যন্ত বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতীয় ট্রেনটি আবার ভারতে প্রবেশ করবে। (bonikbarta.net/home/news_description/388643/বাংলাদেশের-ভেতর-দিয়ে-চলবে-ভারতের-ট্রেন)
মন্তব্যঃ
ভারতকে রেল ট্রানজিট সুবিধা প্রদান করে শেখ হাসিনা সরকার ভারতের প্রতি তার নিঃশর্ত আনুগত্য আবারও প্রমাণ করলো। কানেকটিভিটি এবং বাণিজ্যের নামে ভারতকে ট্রানজিট প্রদান করা হলেও এর মূল উদ্দেশ্য কৌশলগত এবং সামরিক। দেশের জনগণের মতামত উপেক্ষা করে ২০১৬ সাল আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতকে আশুগঞ্জ নৌবন্দর দিয়ে বহুমাত্রিক ট্রানজিট সুবিধা দেয়া হয়। কিন্তু ২০১৯ সাল পর্যন্ত মাত্র গুটিকয়েকবার এই নৌবন্দরটি ভারতের ব্যবসায়ীরা পণ্য পরিবহনের জন্য ব্যবহার করে। ট্রানজিট বাবদ এত কম মাসুল আদায় হয় যে তা দিয়ে নৌ-পথটির ড্রেজিং ব্যয়ও মিটানো সম্ভব নয়। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ বাংলাদেশ ট্রানজিট মাশুল: তিন বছরে বাংলাদেশের আয় মাত্র ২৮ লাখ টাকা, ০৫ অক্টোবর ২০১৯, প্রথম আলো)। চট্রগ্রাম এবং মংলা ব্যবহারসহ অন্যান্য ট্রানজিট প্রকল্পের চিত্রও এর থেকে ভিন্ন নয়। রেল ট্রানজিটেও এর ব্যাতিক্রম হবে না। সুতরাং, ভারতের বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে ট্রানজিট বা করিডোর যে নামেই ডাকা হোক না কেন এর মূল উদ্দেশ্য কৌশলগত এবং সামরিক, তা নূন্যতম বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি মাত্র বুঝতে সক্ষম। ভারতের এই কৌশলগত সক্ষমতা বৃদ্ধি উপনিবেশবাদী আমেরিকার এই অঞ্চল নিয়ে প্রস্তুত করা ইন্দো প্যাসেফিক ষ্ট্র্যাটেজির (আইপিএস) একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। আমেরিকা তার আইপিএস বাস্তবায়নের কৌশলগত অংশীদার ভারতের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে দুর্বল করে ভারতকে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা আমেরিকার দক্ষিন এশিয়ার একটি এজেন্ডা। (বিস্তরিত জানতে দেখুনঃ United States-India Relations, Nov 9, 2023, US Department of State)।
নিরাপত্তা ঝুঁকি ছাড়াও রেল ট্রানজিট থেকে এই দেশের মানুষ আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ না থাকলেও, দেশের নাগরিকদেরই ট্রানজিটের অর্থনৈতিক মূল্য বহন করতে হবে। ভারত যে ১২ রুট দিয়ে রেল ট্রানজিট নিতে যাচ্ছে এর একটি হচ্ছে দর্শনা থেকে চিলাহাটি যার প্রায় অর্ধেক অংশেই বর্তমানে সক্ষমতার চেয়ে বেশি ট্রেন চলাচল করছে। আবার রেলপথটির একটি বড় অংশ পুরনো, যার ভার বহন (এক্সেল লোড) ক্ষমতা কম। ভারতীয় রেল চালাচলের জন্য বিদ্যমান পথগুলোর উন্নয়ন এবং নতুন নতুন রেল পথ স্থাপন করার প্রয়োজন হবে। কিন্তু, রেলপথ সংস্কার এবং নতুন রেলপথ স্থাপনের খরচ কে বহন করবে এবং কিভাবে করা হবে তা নিয়ে এখন পর্যন্ত ভারতের থেকে কোন স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায় নাই। একটি বিষয় উল্লেখ করা উচিত, ২০১০ সালের আগস্ট মাসে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম ঋণচুক্তি হয়, যা প্রথম লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) নামে পরিচিত, এর আওতায় বাংলাদেশ রেলওয়ে ১২ টি প্রকল্প গ্রহণ করে যার উদ্দেশ্য ছিল বর্তমানে প্রস্তাবিত ১২ টি রেলরুটের সক্ষমতা বৃদ্ধি। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ ভারতীয় ঋণে রেলের ৬ প্রকল্প শেষ, বাকি কাজ শিগগিরই, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দ্যা রিপোর্ট)। অর্থাৎ, বাংলাদেশের জনগণ ঋণ নিয়ে আমেরিকা-ভারতের কৌশলগত ট্রানজিট প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু, পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এটিকে কানেকটিভিটি এবং বাণিজ্যের ছদ্মাবারনে উপনিবেশবাদী আমেরিকা-ভারতের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে জনগণকে অন্ধকারে রাখার অপচেষ্টা করা হচ্ছে, যে বিষয়টিতে আওয়ামী কিংবা বিএনপি উভয় গোষ্ঠীই জড়িত। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এদেরকে রুয়াইবিদা হিসাবে চিহ্নিত করে আমাদের সতর্ক করে বলেন, “কেয়ামতের পূর্বে প্রতারণার বছরসমূহ আসবে। … তখন রুয়াইবিদারা সরব হবে। সাহাবাগণ (রা.) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্, “রুয়াইবিদা কি?” তিনি বললেন, সে সকল নির্বোধ ও অযোগ্য শাসক যারা জনগণের ব্যাপারে কথা বলবে” (সুনান ইবনে মাজাহ্)।
মুসলিমদের অর্থে মুসলিম ভূমির উপর দিয়ে মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণ করার উপনিবেশবাদীদের কৌশলগত প্রকল্প বাস্তবায়ন চরম দৃষ্টতা এবং আল্লাহ্দ্রোহীতা। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “…এবং আল্লাহ্ কখনই মুমিনদের বিরুদ্ধে কাফেরদের (কর্তৃত্বের) কোন পথ রাখবেন না (আন-নিসাঃ ১৪১)। তাহলে কে মুসলিমদের উপর কাফির উপনিবেশবাদীদের কর্তৃত্বের পথ বন্ধ করবে? নিশ্চয়ই আল্লাহ্ এই দায়িত্ব পালনের জন্য আসমান থেকে ফেরেস্তা পাঠাবেন না। বরং এটা মুসলিমদের দায়িত্ব। খলিফার নেতৃত্বে মুসলিমরা এই দায়িত্ব পালন করবে, যেভাবে তারা অতীতের করেছিল। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই ইমাম বা খলিফা হচ্ছে ঢালস্বরুপ যার পিছনে মুসলিমরা যুদ্ধ করে এবং নিজেদের রক্ষা করে” (মুসলিম)। সুতরাং, শেখ হাসিনা সরকারের নির্বোধ রেল ট্রানজিট কূটনীতি নিয়ে শুধুমাত্র সমালোচনা না করে নবুয়্যতের আদলে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সমাজে শক্তিশালী জনমত তৈরি এবং নিষ্ঠাবান সামরিক অফিসারদের নিকট নুসরাহ্ প্রদানের দাবি জানানো আমাদের ঈমানী দায়িত্ব।
- মো: সিরাজুল ইসলাম।
“কর্মবিরতিতে অচল ঢাবি, অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি”
খবরঃ
কোটা বাতিলের দাবিতে একদিকে শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলন চলছে। অন্যদিকে চলছে পেনশন সংক্রান্ত ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিলে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টানা কর্মবিরতি। চলমান এ আন্দোলন ও কর্মবিরতিতে স্থবির হয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম। একই পথে হেঁটেছে দেশের অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও। বন্ধ রয়েছে একাডেমিক ক্লাস-পরীক্ষা, স্থবির হয়ে পড়েছে প্রশাসনিক কার্যক্রম। সেবা মিলছে না বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার ও কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে। সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে চলমান এ কর্মবিরতির মধ্যেই অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর পদত্যাগের দাবিও উঠেছে। ...... প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন। একইসঙ্গে তাদের দাবি, জুলুম হিসেবে তাদের উপর ‘প্রত্যয় স্কিম’ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। অবিলম্বে এই নীতি বাতিল করতে হবে।... গত ৩০ জুন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণ-কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। ওই দিন প্রশাসনিক ভবনের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। এছাড়া একাডেমিক কার্যক্রম থেকেও বিরত ছিলেন শিক্ষকরা। (https://www.dhakapost.com/campus/290300)
মন্তব্যঃ
শিক্ষক তথা সমাজের জ্ঞানী মানুষ সমাজের বিভিন্ন বৈষম্য এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলবে এটাই কাম্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা জোটবদ্ধ হয়ে পেনশন বৈষম্য নিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তা কোন অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু তাদের চিন্তা এবং কাজ উভয়ই যদি নিজেদের পেনশন ও বেতনভাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তবে তা আমাদের সবাইকে ভাবিয়ে তোলে। কারণ এই বেতন ভাতা বা অর্থনৈতিক বৈষম্য নিয়ে আমরা প্রতিবাদ করতে দেখছি গার্মেন্টস শ্রমিকদের, পরিবহণ শ্রমিকদের, বিসিএস চাকরিপ্রার্থীদের। তাহলে মহান শিক্ষক আর সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? সমাজের জ্ঞানীদের কাজ হচ্ছে, বিদ্যমান সমস্যাটির মূল কারণ অনুসন্ধান করা এবং তা নির্মূলে সাধারণ জনগণকে দিকনির্দেশনা দেয়া। যুগে যুগে শিক্ষক তথা স্কলাররা সমাজের নানা অসংগতি এবং বৈষম্যের আলাদা আলাদা ইস্যুতে আটকে না থেকে সেই ইস্যুগুলোর মূল কারণ নিয়ে চিন্তা করেছেন, গবেষণা করেছেন এবং সমাজকে সঠিক রূপ দানের জন্য সমাজ পরিবর্তনের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
চিন্তাশীল ব্যক্তি মাত্রই অবগত যে, পেনশন স্কীমটি সরকার এবং তার আশপাশের কতিপয় পুঁজিপতিদের হাতে জনগণের বিপুল অংকের টাকা তুলে দেয়ার একটি পঞ্জি স্কীম। এই বিপুল অর্থ সরকারের সহযোগী ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠীকে বিনিয়োগের নামে হস্তগত করার সুযোগ দিবে এবং অন্যদিকে এটা উন্নয়নের নামে সরকারকে দূর্নীতি ও লুটতরাজের সুযোগ করে দিবে। এইধরণের পঞ্জি স্কীম পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শুধুমাত্র স্বাভাবিকই নয়, বরং ব্যাপক প্রশংসিতও হয়। উদাহরণস্বরূপ, ডঃ ইউনুস ‘দারিদ্র’কে পুঁজি করে ক্ষুদ্রঋণের পঞ্জি স্কীম চালু করে ব্যাপক অর্থশালী হন এবং নোবেলও জিতে নেন কিন্তু দারিদ্রতা আরও বৃহদাকার ধারণ করেছে। তাই বিষয়টিকে নেহায়েই শুধু অর্থমন্ত্রনালয় কিংবা হাসিনা সরকারের যুলুমের সাথে সম্পৃক্ত করলে হবে না, বরং এর সাথে বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থা সম্পৃক্ত, যার উপস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী-বিএনপি সরকারগুলো জনগণের রক্ত শোষন করে যাচ্ছে। এমতাবস্থায়, আমাদের চিন্তাশীল স্কলারদের করণীয় হচ্ছে, ক্যান্সারের উপসর্গ তথা ইস্যুভিত্তিক দাবী-দাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে, মূল ক্যান্সার তথা বর্তমান মানবরচিত ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থা যা শাসকগোষ্ঠীকে স্বেচ্ছাচারী ও যালিমে পরিণত করেছে সেটাকে অপসারণের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা এবং জনগণকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো।
সঠিক সমাধানকে জাতির সামনে উপস্থাপন করা এবং এক্ষেত্রে অনড় অবস্থান গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কোন অজুহাত কাম্য নয়। নিষ্ঠাবান স্কলারদের জন্য আলোচ্য ঘটনাটি ব্যাপক শিক্ষা রয়েছে: ইসলামের ইতিহাসে যখন তাতাররা মিশর দখল করতে চেয়েছিল। মুসলিম স্কলারগণ প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত ছিলেন। একটি ভাগ বলছিলেন যে, তাতাররা অনেক শক্তিশালী ও ক্ষমতাসম্পন্ন, আমরা তাদের পরাজিত করতে পারবো না এবং তাদেরকে প্রতিরোধের চেষ্টা হবে আত্মঘাতী। অন্য ভাগের মুসলিম স্কলাররা বলছিলেন, হ্যাঁ, তাদের সাথে আমাদের লড়াই করার কথা, কিন্তু উম্মাহ্ খুবই দুর্বল, তারা প্রস্তুত নয়। আমাদের মনোনিবেশ করতে হবে দাওয়াহ্’র দিকে, দ্বীনের দিকে এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে ইসলামের ভিত্তিতে তৈরি হওয়ার শিক্ষা দিতে হবে, যাতে তারা ভবিষ্যতে তাদের পরাজিত করতে পারে। শুধুমাত্র একজন আলেম ছিলেন যিনি সংখ্যাগরিষ্ঠদের এসব মতামতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন, যার নাম ছিল আল-ইজ ইবনে আব্দুস সালাম, তিনি বলেছিলেন, যদি কোন আলেম তাদের হালাকায় (ইসলামী আলোচনা), জ্ঞান দানের সময় বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে তাতারদের প্রতিরোধ ব্যতীত অন্যকিছুর শিক্ষা দেয় তবে তাকে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে গণ্য করা হবে।
- জোহান জাবির
“সরকারে ‘রাসেলস ভাইপার’ আছে, ধরার মতো বেজি নাই: সায়েদুল হক”
খবরঃ
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক (ব্যারিস্টার সুমন) বলেছেন, ‘রাসেলস ভাইপার সাপ’ এ সরকারে চলে এসেছে। যখন সাপ আসে প্রকৃতিতে বেজিও থাকে। এই বেজি সাপকে নিয়ন্ত্রণ করে। সরকারে বিভিন্ন জায়গায় রাসেলস ভাইপার আছে, কিন্তু বেজি ওই পরিমাণ নেই যে সাপ ধরবে।… সায়েদুল হক বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে গেছে। একজন ভদ্রলোককে দুদক ধরতে পারেনি। এনবিআর ধরতে পারেনি। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিট ধরতে পারেনি। আর এনবিআরের মতিউর রহমানকে ধরল একটা ছাগল। ছাগল না এলে এই লোককে আর জানতে পারতেন না।’… (https://www.prothomalo.com/politics/9j3ybw34r5)
মন্তব্যঃ
বাংলাদেশে বর্তমানে কথিত রাসেল’স ভাইপার তথা দুর্নীতিবাজদের দূর্নীতির খবর গণমাধ্যমে চাউর হওয়া কিংবা দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগ ওঠার বিষয়টি কোন সিস্টেমেটিক সাধারন প্রক্রিয়া নয়। কারণ, আমরা সকলেই জানি, এই সরকার ও প্রশাসনের ‘টপ টু বটম’ দুর্নীতিগ্রস্ত। দূর্নীতির প্রকাশ্য সমর্থনদানকারী ও উৎসাহদাতা সরকার নিজেই এই কথিত রাসেল’স ভাইপার। যেমন, ‘ঘুষ অবৈধ নয়, এটা হল স্পিড মানি’ কিংবা ‘সহনীয় মাত্রায় দুর্নীতি করা যায়’- এসব কথা এই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী বিভিন্ন সময় বলে এসেছে। তাই এখানে বর্তমানে দুই-একটা রাসেল’স ভাইপার বা দুর্নীতিবাজদেরকে (যাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত) ব্যাপক ঢাক ঢোল পিটিয়ে ধরার বিষয়টি উপনিবেশবাদী মার্কিনীদের ‘নিষেধাজ্ঞার রাজনৈতিক চাপ’ মোকাবেলার সরকারী কৌশল মাত্র- যেন তারা মার্কিনীদের সামনে এটা প্রমাণ করতে পারে যে, তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং দুর্নীতির দায়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্তসহ বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। এজন্য আমরা দেখি, একদিকে তারা বেনজিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে ও ব্যাপক প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে তার কুকর্মগুলো মিডিয়ার সামনে নিয়ে এসেছে, এবং একই সাথে বেনজিরকে পালিয়ে থাকতে সাহায্য করছে এবং তার (বেনজিরের) সম্পদ রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রটেকশন দিচ্ছে। দেখুন, বেনজীরের রিসোর্টের সামনে পুলিশের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের লাঠিপেটার অভিযোগ। আবার আমেরিকাও আগাগোড়া দুর্নীতিগ্রস্ত এদেশের সরকার কিংবা প্রশাসনকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে যখন শুধুমাত্র দুই-একজন ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়, তখন আর যাই হোক এটা প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার কোন খায়েশ আমেরিকার নেই। বরং এটা শুধুমাত্র সরকারকে সহনীয় মাত্রায় চাপে ফেলে মার্কিন ‘ওঝা’ কর্তৃক ‘রাসেল’স ভাইপার’ রূপী হাসিনা সরকারকে বশে আনার কৌশল মাত্র। এর প্রমাণ হল, ‘মার্কিন নিষেধাজ্ঞাঃ অতঃপর ব্যাপক আয়োজনের মাধ্যমে বেনজির-আজিজ ধরার অভিযান’ শীর্ষক নাটক দেখে মার্কিনীরা খুশি হয়ে বলেছে, ‘…দুর্নীতি রোধে বাংলাদেশে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সেগুলোকে সমর্থন করে পেন্টাগন।… বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সম্পর্ক রয়েছে…’।
তাই যতদিন এই ‘ওঝা’ রূপী মার্কিনী এবং কথিত ‘রাসেল’স ভাইপার’ রূপী দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার ও প্রশাসনের হাতে আমাদের শাসনকর্তৃত্ব থাকবে, ততদিন আমরা দুর্নীতিমুক্ত হতে পারবো না। কারণ এই শাসন ব্যবস্থায় যাদের দায়িত্ব ছিল দুর্নীতি নির্মূল করার, তারাই দুর্নীতির উৎসাহদাতা, দুর্নীতিগ্রস্ত ও দুর্নীতিবাজদের রক্ষাকর্তা। তাই দুর্নীতিগ্রস্ত এই শাসন ব্যবস্থা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আমাদের দরকার এমন একটি শাসন ব্যবস্থা যা দুর্নীতিগ্রস্ত বিশ্ব মোড়ল মার্কিনীদের স্বার্থের দাসত্ব করবে না এবং একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মাধ্যমে দুর্নীতি বন্ধ করবে। এই শাসন ব্যবস্থাটির নাম হচ্ছে ‘খিলাফত’ ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা একদিকে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তাসহ সকল মৌলিক চাহিদা পূরণ করে এবং ব্যাপক শিল্পায়নসহ পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে জনগণের মধ্যে স্বচ্ছলতা আনবে, তারপরও কেউ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে গেলে কঠোর শাস্তির বিধান করবে (যে বিচার ব্যবস্থার সামনে খলিফাও (শাসক) পর্যন্ত দায়বদ্ধ থাকেন)। অন্যদিকে সমাজে এমন ব্যক্তিত্ব তৈরি করবে যারা রাতের আঁধারে নিজ গৃহের অভ্যন্তরেও পর্যন্ত দুর্নীতি করতে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা-কে ভয় পাবে। খলিফা ওমর (রা.)-এর শাসনকালীন সময়ে দুধে পানি মেশানো প্রসঙ্গে একজন সাধারণ মুসলিম নারী কর্তৃক আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা-কে ভয় করার ঘটনাটি আমাদের সবারই জানা।
- মোঃ জহিরুল ইসলাম
“বছরে ৯৩ হাজার কোটি টাকা পাচারেই চরম ডলার সংকট”
খবরঃ
“প্রতি বছর ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৯৩ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়। এ কারণে দেশে ডলার সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। এই সমস্যা সমাধানে ব্যাংক কমিশন গঠন করতে পারলে ভালো। সেটি করা না গেলে জ্ঞানীদের দিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা জরুরি। ‘বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতি : প্রবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় জাতীয় বাজেট’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। (www.jugantor.com/index.php/economics/818486/বছরে-৯৩-হাজার-কোটি-টাকা-পাচারেই-চরম-ডলার-সংকট)
মন্তব্যঃ
বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের সিংহভাগই যাচ্ছে বৈদেশিক-বাণিজ্য কারসাজির মাধ্যমে। গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেগ্রিটি জিএফআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কারসাজির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাচার হয় (প্রথম আলো, ২৪ মার্চ ২০২১)। এই কারসাজিতে, যখন কোন পণ্য আমদানি করা হয় তখন কম দামের পণ্যকে বেশি দাম দেখানো হয়, ফলে অতিরিক্ত অর্থ দেশের বাইরে চলে যায়; যা ওভার ইনভয়েজিং নামে পরিচিত। একইভাবে রপ্তানির ক্ষেত্রে বেশি দামের পণ্যকে কম দাম দেখিয়ে অতিরিক্ত অর্থ দেশে না এনে বিদেশে হাত বদল হয়; যা আন্ডার-ইনভয়েজিং নামে পরিচিত। মূলত: বাংলাদেশের ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদ, রাজনীতি ও ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও সরকারী আমলা যারা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করে অবৈধ উপায়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তারাই অর্জিত সম্পদকে পাচার করে সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, থাইল্যান্ড, আবুধাবি, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশে সম্পত্তি ক্রয়, ব্যাংকে জমা করা কিংবা কোম্পানি গঠন করার জন্য এই বৈদেশিক-বাণিজ্য কারসাজির আশ্রয় গ্রহণ করে। বানিজ্য কারসাজির এই টাকা বিদেশের আমদানিকারক বা রফতানিকারকের কাছ থেকে মূল সুবিধাভোগীর হাতে পৌছানো ও এর আইনি দিক দেখভালের সেবা (service!) প্রদানের জন্য পুরো একটি পরিকাঠামো বিদ্যমান; যা বিশ্ব পুঁজিবাদি ব্যবস্থার একটি অন্যমত উপাদান। তাছাড়া, বাংলাদেশের মধ্যেও বৈদেশিক-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রনের জন্য এমন একটি ব্যবস্থা চালু রয়েছে যে শুধুমাত্র অল্পকিছু লোকই সেই ব্যবস্থার সুবিধা কাজে লাগিয়ে বছরে ৭-৮ বিলিয়ন ডলারের মত বিপুল পরিমান অর্থ পাচার করতে পারে।
বাংলাদেশের শুল্ক অধিদপ্তর (কাস্টমস), আমদানি ও রফতানিকারকের ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যন্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ীর যোগসাজোসে এই পুরো বাণিজ্য-কারসাজির প্রক্রিয়াটি চলে। আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়ার এই সবগুলো পক্ষের যোগসাজোস ছাড়া পোশাকের নমূনার (sample) নামে মূল অর্ডারের শত শত টন পণ্য জাহাজীকরণ (যার কোন রফতানি আয় দেশে প্রবেশ করছে না), ওভার ইনভয়েজিং কিংবা আন্ডার-ইনভয়েজিং কোনটিই সম্ভব নয়। আর এখানেই ছাগলকান্ডের এনবিআর মতিউরের গুরুত্ব প্রকাশ পায় এবং তাকে চট্টগ্রাম বন্দরের কাস্টমস অফিসে বহাল রাখার জন্য ক্ষমতাধরদের তদবিরের কারণ বোঝা যায়। এস.আলম গ্রুপ, সামিট গ্রুপ কিভাবে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দেশ থেকে পাচার করে তাও বোঝা যায়। বর্তমান পুঁজিবাদি ব্যবস্থায় আমদানি-রফতানির পুরো প্রক্রিয়াটি এমনভাবে ডিজাইন করা যে, একদিকে নিত্যপন্যের আমদানি-রফতানিকে গুটিকয়েক লোকের হাতে জিম্মি রেখে পুরো বাজারকে তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে, অপরদিকে এই প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করে জনগণের কাছ থেকে লুটের বিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার দেশের বাইরে পাচার করা হচ্ছে।
ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থায় আমদানি-রফতানি বানিজ্য হল রাষ্ট্রের জনগণের চাহিদা পূরণের একটি অন্যতম মাধ্যম; যার কারণে, এই বানিজ্যের উপর সরকার কোন নিয়ন্ত্রন (শুল্ক, ভ্যাট, নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদি) আরোপ করে না। শত্রুরাষ্ট্রের সাথে বানিজ্য, কৌশলগত ও হারাম পন্যের লেনদেন ব্যতিত রাষ্ট্র আমদানি-রফতানি বানিজ্যের অন্য কোন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। ফলে, বৈদেশিক-বাণিজ্য কোন রাঘব বোয়ালদের নিয়ন্ত্রনে থাকে না; বরং বানিজ্য তখন ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের হাতে থাকবে যারা আল্লাহ্’র আদিষ্ট হালাল পন্থায় ব্যবসা করে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যান লাভ করতে চান, যেখানে রাষ্ট্রের কাজ হল তাদের এই বানিজ্যকে অবাধ (ঘুষ-চাঁদা-বখরা মুক্ত) ও নিরবিচ্ছিন্ন করা। তাছাড়া, ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল সম্পদ অর্জন করার নূন্যতম কোন সুযোগই ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থায় থাকবে না; ফলে বৈদেশিক-বাণিজ্য কারসাজির মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার করার প্রসঙ্গটিই সেখানে নেই।
- রিসাত আহমেদ
“বিশ্বব্যাংক টাকা দেয়, তাদের কথা শুনতে হবে॥ অর্থমন্ত্রী”
খবরঃ
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, ‘বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশ ভালো আছে। বিশ্বব্যাংক যা বলছে, আমাদের শুনতে হবে, কারণ তারা আমাদের টাকা দেয়। আমাদের টাকা লাগবে। আপনি কি টাকা দেন? আপনি টাকা দেন, আপনার কথা শুনবো।’ সমালোচকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কই সরকারতো পড়ল না। দেশ তো দেউলিয়া হলো না। বিশ্বব্যাংক কিছু বোঝে না, আপনি সবকিছু বোঝেন?’ (https://www.dailyjanakantha.com/national/news/725339 )
মন্তব্যঃ
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, বিশ্বব্যাংক সরকারের উপর খুশি এটাই তাদের কাছে যথেষ্ট। অথচ, যে জনগণের ঘাম-রক্তের টাকা দিয়ে তারা বিদেশী ঋণের সুদ-আসলের কিস্তি শোধ করে বিশ্বব্যাংকের সন্তুষ্টি অর্জন করে, তাদের আকুতি-কান্না সরকারের নিকট বিরক্তি ও ক্ষোভের কারণ। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ইত্যাদি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের নিকট নিজেদেরকে ঋণ সক্ষম (Credit Worthy) প্রমাণ করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের প্রেস্ক্রিপশন অনুযায়ী সরকার বাজেট ২০২৪-২৫ এ ট্যাক্স, ভ্যাট ও এর আওতা ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে; মাসে মাসে তেল-গ্যাস-বিদ্যুত-ইন্টারনেট ইত্যাদির দাম অসহনীয়ভাবে বাড়াচ্ছে। এসব অতিরিক্ত ব্যয়ের ভার বহনে ভারাক্রান্ত মানুষ যখন প্রশ্ন করছে তখন তারা জনগণের মুখ বন্ধ রাখতে ধমক দিচ্ছে।
একটু গভীরে গেলে আমরা বুঝতে পারবো যে, এই জুলুমের জন্য দায়ী শুধুমাত্র একজন মন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী নয়। বরং পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ-সরকার-ক্ষুদ্র লুটেরা পুঁজিপতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ে যুলুমের একটি বৈশ্বিক নেক্সাস তৈরি করে। এদের কাছে অর্থনৈতিক সক্ষমতাই (Economic Competence) শেষ কথা, জনগণের দায়িত্ব অতিরিক্ত বিষয়। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ পুঁজিবাদী ব্যবস্থার নীতি ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি’ বাস্তবায়নে সরকারকে চাপ প্রয়োগ করে, ফলে নিজেদের মূল্যবান কাঁচামাল ও মানব সম্পদ থাকার পরও দিনেদিনে দেশের কৃষি ও শিল্প প্রতিযোগিতায় বৈশ্বিক বড় বড় মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানীগুলোর কাছে সক্ষমতা হারায়। দেশ তার স্বনির্ভরতা হারায় ও ব্যপকভাবে আমদানী নির্ভর হয়ে পড়ে। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের চাপেই আরেক পুঁজিবাদী নীতি ‘বেসরকারীকরণ’ বাস্তবায়নের ফলে তেল-গ্যাস-বিদ্যুত-ইন্টারনেট ইত্যাদি ক্ষুদ্র দেশী-বিদেশী কোম্পানির ব্যপক লাভের উপকরণে পরিণত হয়। ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি’, ‘বেসরকারীকরণ’ ইত্যাদি নীতির কারণে একদিকে জনগণ ও সরকার উভয়ের ব্যয় ব্যপকভাবে বাড়তে থাকে, অন্যদিকে দেশি-বিদেশী ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠীর হাতে দেশের জরুরী সম্পদগুলো কুক্ষিগত হয়ে পড়ে। এই ব্যপক ব্যয় সংকুলানের জন্য সরকার এই ক্ষুদ্র পুঁজিপতিগোষ্ঠীর কিছুই করতে পারে না, কিন্তু জনগণের উপর ট্যাক্স-ভ্যাট-মূল্যবৃদ্ধি আরোপ করে। এমনকি তাও যথেষ্ট হয় না, ফলে তারা বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ থেকে আরও ঋণ নেয়। এই প্রক্রিয়ায় সুদে-আসলে দেনা বাড়তে থাকে। এভাবে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার কারণে সরকার একটি ফাঁদে আটকে যায়, যা তাকে ভয়ংকর যুলুমকারীতে পরিণত করে।
ইসলামে জনগণের চাহিদা পূরণ হচ্ছে অর্থনীতির অন্যতম মূল লক্ষ্য। নিজের Economic Competence ধরে রাখার জন্য রাষ্ট্র এখানে জনগণের উপর কোন ট্যাক্স আরোপ করতে পারে না। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, “যে ম্যাক্স (শুল্ক) আরোপ করে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না”। ইসলামের সকল ট্যাক্স শুধুমাত্র অতিরিক্ত সম্পদ ও নির্দিষ্ট উৎপাদিত সম্পদের উপর। যদি জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং রাষ্ট্র ও জনগণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় কোন খরচ মেটানোর জন্য রাষ্ট্রের কাছে টাকা না থাকে কেবল তখন রাষ্ট্র শুধুমাত্র সম্পদশালীদের উপর অতিরিক্ত ট্যাক্স আরোপ করবে। রাষ্ট্রের কাছে যথেষ্ট টাকা থাকলে এধরনের ট্যাক্সও রাষ্ট্র আদায় করবে না, বরং রাষ্ট্র টাকা জমিয়ে না রেখে জনগণকে ভাতা হিসেবে দিয়ে দিবে। যেমনটা আমরা দেখি খলিফা উমর (রাঃ) এর ক্ষেত্রে। যখন উনার বায়তুল মালে প্রচুর অর্থ ছিল, তখন তিনি সকল নাগরিককে ভাতা প্রদান করতেন। ফলে ইসলামে অর্থনৈতিক যুলুমের কোন রাস্তা থাকেনা, বরং ব্যবস্থাগত কারণেই এটি জনগণকে যুলুমমুক্ত শান্তিপূর্ণ জীবন দেয়। এছাড়া ইসলাম রাষ্ট্রের উপর অন্যকোন দেশি-বিদেশী শক্তির নিয়ন্ত্রণ কিংবা প্রভাবকে নিষিদ্ধ করেছে। ফলে ‘মুক্তবাজার অর্থনীতি’, ‘বেসরকারীকরণ’ ইত্যাদি পুঁজিবাদী নীতির মাধ্যমে জনগণের সম্পদের উপর দেশি-বিদেশী শক্তির প্রভাব বিস্তার কিংবা রাষ্ট্রকে জিম্মি করার কোন সুযোগ তৈরি হবে না। যেকোন ধরণের বিদেশী ঋণ এবং সুদ ভিত্তিক ঋণ ইসলামি রাষ্ট্র নিতে পারবে না। রাষ্ট্রের কোন জরুরী প্রয়োজনে কোন আভ্যন্তরীণ সম্পদশালী ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্র স্বল্প সময়ের জন্য কোন ঋণ নিলেও এটাকে অপছন্দনীয় হিসেবে দেখা হয় এবং দ্রুততম সময়ে রাষ্ট্র এই ঋণ ফেরত দানে সচেষ্ট থাকে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “আর তাদের থেকে সতর্ক থাকুন তারা যেন আপনার প্রতি আল্লাহ্ যা নাযিল করেছেন তার কোন কিছু থেকে আপনাকে বিচ্যুত না করে” (সুরা মায়িদাহ্ ৪৯)।
- মোহাম্মদ তালহা হোসেন
“এবার পাঠ্য বইয়ে ‘অন্তর্বাস বিক্রির ওয়েবসাইট”
খবরঃ
নতুন কারিকুলামে সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের পর এবার নবম শ্রেণির ‘জীবন ও জীবিকা’ বইয়ের একটি বিতর্কিত কিউআর কোড নিয়ে। এ নিয়ে ফের শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা ঝড়। এ বইয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যবসা শুরু করা নিয়ে থাকা একটি অধ্যায়ে এই কোড ব্যবহার করা হয়েছে। যেটি স্ক্যান করলেই চলে আসছে অন্তর্বাস বিক্রির একটি ওয়েবসাইট। শিক্ষক ও অভিভাবকরা এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পাঠ্যবইয়ে এমন কিউআর কোড ব্যবহারে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। (https://www.jugantor.com/campus/820481/এবার-পাঠ্য-বইয়ে-অন্তর্বাস-বিক্রির-ওয়েবসাইট)
মন্তব্যঃ
ষষ্ঠ শ্রেণীর বইয়ে যৌনতার সুড়সুড়ি, সপ্তম শ্রেণীর বইয়ে ট্রান্সজেন্ডারিজমের গল্প এবং বর্তমানে নবম শ্রেণীর বইয়ে অন্তর্বাস বিক্রির ওয়েবসাইট নিয়ে ক্রমাগত ক্ষোভ ও অসন্তোষ ইসলামের প্রতি মুসলিম উম্মাহ্’র অগাধ ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ, কারণ পশ্চিমা সভ্যতা থেকে ধার করা এসব লিবারেল চিন্তাসমূহ ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। পশ্চিমাদের এবং মুসলিম হিসেবে আমাদের জীবনের ভিত্তি তথা আক্বীদা সম্পূর্ণ আলাদা। সৃষ্টিকর্তাকে জীবন থেকে সম্পূর্ণরূপে বাদ দিয়ে যে সভ্যতা গড়ে উঠেছে, সেটা থেকে LGBTQ, বিবাহবহির্ভূত যৌনতা, অশ্লীলতাসহ বিভিন্ন বিকৃত রুচির বিষয়বস্তুর লালন-পালন ও প্রচার-প্রসার ছাড়া উত্তম কি আর আশা করা যায়! কিন্তু আমাদের আক্বীদা গঠিত হয়েছে আল্লাহ্ ও আখিরাতকে দুনিয়ার জীবনের সাথে সংযুক্ত করে, অর্থাৎ ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের প্রতিটি কাজকে আল্লাহ্ প্রদত্ত জীবনব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালিত করতে হবে, নয়তো দুনিয়া ও আখিরাতে কঠোর শাস্তি রয়েছে। তাই, যখন ইসলামী সভ্যতার ধারকবাহক খিলাফত ব্যবস্থার অনুপস্থিতিতে পশ্চিমা সভ্যতা এসব নোংরা বিষয় আমাদের মধ্যে ক্রমাগতভাবে আরোপ করতে চেষ্টা করে, মুসলিম উম্মাহ্ সঙ্গত কারণেই এর জোরালো প্রতিবাদ করে। শাসকশ্রেণীর তোপের মুখেও তাই ট্রান্সজেন্ডারিজমের বিরুদ্ধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জোরালো আন্দোলন, পাঠ্যপুস্তক নিয়ে সামাজিক ও মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় সাধারণ জনগণের ক্ষোভপ্রকাশ তাদের ইসলামী আক্বীদারই বহিঃপ্রকাশ।
অন্যদিকে আমরা দেখতে পাই, বর্তমান দালাল শাসকগোষ্ঠী ও তাদের দোসর সুশীলসমাজের কতিপয় ব্যক্তিরা ক্রমাগতভাবে পশ্চিমা বিভিন্ন বিষয়বস্তু নানা উপায়ে মুসলিম উম্মাহ্’র মধ্যে অনুপ্রবেশ করাতে বদ্ধপরিকর। যেসব যুক্তি তারা উম্মাহ্’র কাছে তুলে ধরে তার একটি হল - পশ্চিমাদের ফেসবুক, টুইটার তথা তাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারলে তাদের উদারনৈতিক চিন্তা গ্রহণ করতে সমস্যা কোথায়? আরেকটি যুক্তি হল, তাদের যা কিছু ভাল তা গ্রহণ করা যায়, আর যা পছন্দ হবেনা তা আমরা ব্যক্তিগতভাবে বর্জন করতে পারি।
কিন্তু এই ব্যাপারে ইসলাম কী বলে? অন্যান্য প্রতিটি বিষয়ের মত পশ্চিমা কুফর সভ্যতা থেকে কী গ্রহণযোগ্য আর কী অগ্রহণযোগ্য এই বিষয়েও আল্লাহ্ পাক আমাদের একটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। জীবন পরিচালনার জন্য দুটি বিষয় দরকার হয় - ১. thoughts and concepts এবং ২. tools and materials। ইসলাম এই দুটির মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য করেছে। জীবন পরিচালনার জন্য যে tools and materials এর প্রয়োজন (যেমন, ফেসবুক) তার সাথে পশ্চিমা আক্বীদার সরাসরি সম্পর্ক না থাকলে তা ব্যবহারে কোন শরঈ বাধা নেই। আবার, জীবন পরিচালনার জন্য যে thoughts and concepts প্রয়োজন তা সরাসরি আক্বীদা থেকে উৎসারিত হয় বিধায় সেসব বিষয় ইসলামী আক্বীদার সাথে সাংঘর্ষিক এবং কোনভাবেই তা আমাদের জন্য গ্রহনযোগ্য নয়। তাই LGBTQ বা খোলামেলা যৌনশিক্ষা ইসলামী চিন্তার সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ায় খায়রে উম্মাহ্ এর জোরালো প্রতিবাদ করে।
১৪০০ বছরের ইসলামী সভ্যতার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসেও আমরা দেখি আল্লাহ্’র রাসূল (সাঃ) কাফেরদের কাছ থেকে অস্ত্র (tools) পরিচালনা শিখলেও কুফর চিন্তা ও প্রস্তাবের সাথে কখনোই আপোষ করেননি এবং পরবর্তীতে ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থাও এই সুনির্দিষ্ট পার্থক্য বজায় রেখেছে। এমনকি পশ্চিমা রাষ্ট্রে অশ্লীলতার প্রসার ইসলামী রাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রভাবিত করতে পারে দূরদর্শী এই ইসলামী চিন্তা থেকে উসমানী খলিফা সুলতান সুলাইমান দৃঢ় হস্তে ফ্রান্সে অশ্লীল নৃত্যপ্রদর্শনী বন্ধ করেন। আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্রও মুসলিম উম্মাহ্’র উপর পশ্চিমা আদর্শের সকল প্রভাব কঠোর হস্তে দমন করবে এবং ইসলামের আদর্শ বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত করবে।
- যায়নাব মায়সূরা