“ধর্মনিরপেক্ষতার বদলে বহুত্ববাদ, সংবিধানের মূলনীতিগুলো পরিবর্তনের প্রস্তাব কেন?”
খবরঃ
বাংলাদেশের সংবিধান সংস্কারে গঠিত কমিশনের সুপারিশগুলোর মধ্যে সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ডালপালা মেলেছে। সামাজিক মাধ্যমে এর পক্ষে বিপক্ষে কথা বলছেন অনেকে। বর্তমান সংবিধানে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে বলা হয়েছে- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। এগুলোর পরিবর্তে নতুন মূলনীতি হিসেবে 'সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ এবং গণতন্ত্র'র কথা সুপারিশ করা হয়েছে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে।... মূলনীতিগুলোর মধ্যে বিশেষ করে ধর্মনিরপেক্ষতা বাতিল এবং বহুত্ববাদ অন্তর্ভুক্তির বিষয়টির পাশাপাশি 'রাষ্ট্রধর্ম' নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে অনেকে কৌতূহল প্রকাশ করেছেন। (https://www.bbc.com/bengali/articles/cm27vg31dl8o)
মন্তব্যঃ
বাংলাদেশের সংবিধান সংস্কার কমিশন সম্প্রতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে বহুত্ববাদ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেছে। এই প্রস্তাবনার মাধ্যমে স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের সেক্যুলার শাসকগোষ্ঠী ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যর্থতাকে ঢাকতে এখন বহুত্ববাদের নামে আরেকটি পশ্চিমা মতবাদকে সামনে নিয়ে এসেছে। ধর্মনিরপেক্ষতা বাংলাদেশের জনগণের চিন্তা, আকাঙ্ক্ষা ও আবেগের সাথে কখনোই খাপ খায়নি। ধর্মপ্রাণ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশের জনগণ ধর্মনিরপেক্ষতাকে বরাবরই বিদেশি ও অপ্রাসঙ্গিক ধারণা হিসেবে দেখেছে। বাস্তবতা হলো, বহুত্ববাদ ধর্মনিরপেক্ষতারই আরেক রূপ। বহুত্ববাদের ধারণা পশ্চিমা দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদদের হাত ধরে জন্ম নিয়েছে। মার্কিন সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা জেমস ম্যাডিসন বহুত্ববাদের ধারণা প্রণয়ন করেন, যেখানে সে বিভিন্ন মতাদর্শ ও গোষ্ঠীর সংমিশ্রণে একটি পুঁজিতান্ত্রিক সমাজ গঠনের কথা বলে। তবে এই ধারণার মূল উদ্দেশ্য ছিল খ্রিস্টান ধর্মের বিভিন্ন শাখার মধ্যে সংঘাত এড়ানো। বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বে বহুত্ববাদের চর্চা মূলত একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের নামে পরিচালিত হলেও এটি কখনোই ইসলামকে রাজনৈতিক মতবাদ প্রচারের স্পেস দেয় না। সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে আয়োজিত মিছিল ও সমাবেশগুলো আমেরিকার ক্যাম্পাসে নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হয়েছে। আমেরিকার সদ্যসাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সর্বশেষ প্রেস ব্রিফিংয়ে ফিলিস্তিন নিয়ে প্রশ্ন করায় এক সাংবাদিককে অপমানজনকভাবে বের করে দেওয়া হয়েছে। এটি বহুত্ববাদের নামে ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের দ্বিচারিতার উদাহরণ।
পশ্চিমাদের তথাকথিত বহুত্ববাদ কেবল মুসলিমদের রাজনৈতিক অধিকারই নয়, বরং সামাজিক ও নৈতিক মানদণ্ডকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। বহুত্ববাদের নামে পশ্চিমা সমাজে LGBTQ এক্টিভিজমকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। এটি পশ্চিমাদের পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। এটি এমন একটি জীবনধারা, যা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। বহুত্ববাদ পশ্চিমা বিশ্বের একটি ব্যর্থ তত্ত্ব, যা বাংলাদেশের বাস্তবতায় প্রয়োগ করা অযৌক্তিক। বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। এখানকার জনগণের চিন্তা, বিশ্বাস ও আবেগ ইসলাম দ্বারা গভীরভাবে প্রথিত। বাংলাদেশের জনগণের চিন্তা ও বিশ্বাসের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ইসলামী আকীদার ভিত্তিতে সংবিধান প্রণয়নই হবে সর্বোত্তম পথ। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশে ড. কামাল গংদের মাধ্যমে ইউরোপ থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা আমদানি করে যেমন বাংলাদেশের জনগণকে সেটা খাওয়ানো যায় নি, এবারও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে আলী রীয়াজ গংদের মাধ্যমে আমেরিকা থেকে বহুত্ববাদ আমদানি করে বাংলাদেশের জনগণকে সেটা খাওয়ানো যাবে না।
- রাশিদ হাসান মাহাদি