খবরঃ
টাঙ্গাইলের মধুপুর ফল্ট বা ফাটলরেখায় ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকা শহরের ৪০ শতাংশ ভবন ধসে পড়তে পারে। এতে দুই লাখের বেশি মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা আছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) নিজেদের একটি সমীক্ষার বরাত দিয়ে এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। যদিও রাজধানীর ভবনগুলো ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী নির্মাণ নিশ্চিত করা এবং নগর পরিকল্পিত করার দায়িত্ব রাজউকের। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/environment/ls6g5lrjrx)
মন্তব্যঃ
রাজউক-এর নিজেদের করা সমীক্ষা যেমন নিজেদের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতাকে ফুটিয়ে তুলে জনগনের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে একইভাবে ভূমিকম্প-পরবর্তী ভয়াবহতার সম্ভাবনা, ক্রমাগত ঘটে যাওয়া অগ্নিকান্ড, সড়ক দুর্ঘটনা, ভবন ধস ইত্যাদি মোকাবেলায় রাষ্ট্রের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতা বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকা প্রতিটি সরকারের আমলেই প্রত্যক্ষ করা গেছে। সরকার পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু তাদের অনুসরণ করা পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ও নীতি পরিবর্তন হয়নি। যেখানে উন্নয়নের সংজ্ঞা এবং উন্নয়ন কর্মকান্ড উভয়ই আবর্তিত হয় জনবিচ্ছিন্নতাকে কেন্দ্র করে। জিডিপির ক্রমবর্ধমানতা কিংবা মাথাপিছু আয়ের বৃদ্ধিলাভ যেমন উন্নয়নকে সংজ্ঞায়িত করে একইভাবে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার, ওভারব্রীজ বা স্বপ্নের পদ্মা সেতু ইত্যাদির মাধ্যমে সেই উন্নয়নকে প্রকাশ্যে দৃশ্যমান করা হয়। একই দৃশ্য আমরা পশ্চিমা বিশ্বে দেখতে পাই, তারা বস্তুগত উন্নতির উৎকর্ষ অর্জন করলেও করোনাকালীন সময়ে সামান্য পিপিই ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। অপরদিকে, এই ব্যবস্থায় উন্নয়নের সংজ্ঞা এবং বাস্তবায়ন সমাজের পুঁজিপতি এলিট শ্রেনীকে কেন্দ্র করেই বিকাশ লাভ করে। সিংহভাগ দরিদ্র শ্রেনীর জন্যে এই ব্যবস্থাতে কোনরকম পরিকল্পনা থাকে না। তারা অগ্নিকান্ডে ভস্মীভুত হল নাকি ভুমিকম্পে ভবন চাপা পড়ল কিংবা রানা প্লাজা কিংবা তাজরীন ফ্যাশনে মারা পড়ল তা এই রাষ্ট্র কিংবা শাসকের ধর্তব্য বিষয় না। সমাজের এলিট শ্রেনী বিলাসীতা করতে পারছে কিনা, নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা পাচ্ছে কিনা, ভাল চিকিৎসা পাচ্ছে কিনা তা এই ব্যবস্থার প্রধানতম মাথাব্যাথা। ফলে, গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, পূর্বাচল ইত্যাদি উত্তম নগর পরিকল্পনা ও আধুনিক সুবিধা সম্বলিত হলেও নগরীর অন্য সকল অংশ যেন অযত্নে বেড়ে ওঠা আগাছার স্তুপ! সেখানে নেই অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা, নেই ভাল রাস্তা, নেই বিল্ডিং কোড মেনে চলা, নেই ভাল ড্রেনেজ সিস্টেম।
জনস্বার্থ অবজ্ঞাকারী এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে ইসলামী ব্যবস্থা আমাদেরকে উন্নয়নের সঠিক মাপকাঠি প্রদান করে এবং উন্নয়নকে সঠিকভাবে বন্টনের চিত্র তুলে ধরে। ইসলামি ব্যবস্থায় উন্নয়ন শুধুমাত্র দৃশ্যমান স্ট্রাকচার নির্মান আর কাল্পনিক জিডিপি আর মাথাপিছু আয়ের ক্রমবর্ধমান অহংকারের মত ফোলানো বেলুনের মত নয়। ইসলাম উন্নয়ন বলতে বোঝায় প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পূরণ। এখানে উন্নয়ন হচ্ছে দেশের সকল নাগরিকের জন্য নাগরিক সুবিধার ব্যবস্থা করা। সুতরাং ইসলামী ব্যবস্থায় রাষ্ট্র অপরিকল্পিত নগরায়ন হতে দিবে না। রাজউকের মত সমমর্যাদার প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের কার্যাবলী সঠিকভাবে পালন করছে কিনা তা শক্তভাবে মনিটর করা হবে। ফলে, পরিকল্পিত নগরায়নে বিল্ডিং কোড সঠিকভাবে মেনে চললে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি থেকে অনেকাংশেই বেচে থাকা যাবে। অপরদিকে অগ্নিকান্ড সম্পর্কিত ফায়ার সার্ভিস কর্তৃক প্রদত্ত নীতিমালা যদি সরকারীভাবে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হয় এবং প্রতিনিয়ত তা বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা চেক করা হয় তাহলে ধারণা করা যায় অনাকাংখিত অগ্নিকান্ড থেকে মুক্তি সম্ভব। আর জনবান্ধব এসকল নীতি একমাত্র খিলাফত ব্যবস্থাতে খলিফা কর্তৃক বাস্তবায়ন করা সম্ভব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “জেনে রেখো! তোমাদের প্রত্যেকেই একজন দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব ইমাম, যিনি জনগণের দায়িত্বশীল তিনি তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন।”
- মো. হাফিজুর রহমান।
