বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কুরআন সুন্নাহ বিরোধী আইন করা হবে না: সালাহউদ্দিন আহমদ

 


খবরঃ

বাংলাদেশে কুরআন ও সুন্নাহর বিপরীতে কোনো কানুন (আইন) করা হবে না বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, এমনকি যদি আগে করা হয়েও থাকে, সেটি বাতিল করা হবে। রোববার বিকেলে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে সম্মিলিত ইমাম খতিব পরিষদ আয়োজিত জাতীয় সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ যুক্ত করেছিলেন। তবে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠী সেটি সংবিধান থেকে উচ্ছেদ করে দিয়েছিল। এটি ফের পুনর্বহাল করা হবে। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ ছাড়া, প্রাথমিক তদন্ত ছাড়া রাষ্ট্রের কোনো নাগরিককে গ্রেপ্তার করা যায় না। কিন্তু বিগত সময়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী অবৈধ সরকার দাড়ি-টুপির বিরুদ্ধে ছিল, তারা যে কাউকে ধরে নিয়ে এসে জঙ্গি বানানোর নাটক করত। (https://www.kalbela.com/ajkerpatrika/khobor/243225

মন্তব্যঃ

যখন ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আল্লাহ্‌ প্রদত্ত শারীআহ্‌ বিধানকে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার এবং ইসলামকে শুধুমাত্র কিছু আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার কথা বলে, তখন এই মতাদর্শের কোন রাজনৈতিক নেতা কর্তৃক কুরআন-সুন্নাহ্‌ বিরোধী কোন আইন করা হবে না, এই বক্তব্য কোন গুরুত্ব বহন করে না। কারণ, ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিজেই কুর‘আন ও সুন্নাহ্‌ বিরোধী- যা আল্লাহ্‌‘কে বাদ মানুষকে আইনপ্রণেতা করে সামাজিক-অর্থনৈতিক-বিচারকার্য-পররাষ্ট্রনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে জীবনবিধান প্রণয়ন করে। তাই এর অনুসারীরা খুব ভালভাবেই জানে তাদের প্রকৃত চেহারা প্রকাশিত হলে জনগণ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং তারা ক্ষমতায় আরোহনের প্রয়োজনীয় জনসমর্থন হারাবে। তাই তারা সর্বদা জনগণকে দেখানোর চেষ্টা করেছে যে, ‘ইসলামের’ সাথে তাদের কোন সমস্যা নেই। এভাবে তারা “মদিনা সনদ অনুযায়ী দেশ চলবে” এবং “কুর’আন ও সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন পাস করবে না’- এসব জনতুষ্টিপূর্ণ বক্তব্যের মাধ্যমে সর্বদা মুসলিমদের ইসলামী অনুভূতিকে নিজেদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব অর্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।

এছাড়া পশ্চিমা কাফির উপনিবেশবাদীরা “গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক নয়” এবং “ইসলাম গণতান্ত্রিক ধর্ম” ইত্যাদি স্লোগাণের মাধ্যমে মুসলিম ভূখন্ডে ‘গণতন্ত্র’ এবং ‘সেকুলারিজম’কে ফেরি করেছে। আর মুসলিম বিশ্বের ধর্মনিরেপেক্ষ শাসক ও রাজনীতিবিদেরা বিশেষত অনেক ইসলামী রাজনৈতিক দল কুফর গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সাথে আপোষ কিংবা এই শাসনব্যবস্থায় অংশগ্রহণের ধারণাটি "মাসলাহা" (সাধারণ সুবিধা) অর্জনের নামে গ্রহণ করেছে। তাদের মতে আহওয়ান আশ-শাররাইন বা দুটি মন্দ/ক্ষতির মধ্যে কম মন্দ/ক্ষতিটি (Lesser of the two Evils) গ্রহন করার মূলনীতি ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক নয়! এই মূলনীতি অনুযায়ী তারা বলতে চায়, যদি অপেক্ষাকৃত ভালো লোককে ভোট না দেওয়া হয়, তাহলে খারাপ লোক নির্বাচনে জিতে যাবে। ফলে ইসলাম ও মুসলিমের ক্ষতি বেশি হবে। তাই মুসলিমদের উচিত বড় ক্ষতি এড়াতে কম খারাপ বা অপেক্ষাকৃত ভালো ব্যাক্তিকে নির্বাচনে ভোট দেওয়া। আরও যুক্তি দেয়া হয়, তারা পরিপূর্ণ ইসলাম বাস্তবায়ন করতে না পারলেও, যতটুকু বাস্তবায়ন সম্ভব ততটুকু করার চেষ্টা করবে, ইসলামের পক্ষে থাকবে এবং তা সেকুলার কাউকে ভোট দেওয়ার চাইতে ভাল।অথচ কুরআন-এর অকাট্য দলীলের মাধ্যমে কুফর শাসনব্যবস্থায় অংশগ্রহণের বিষয়টিকে নিষেধ করা করে বলা হয়েছে, “আর যারা আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তদনুসারে ফয়সালা করে না, তারাই হলো যালিম (অন্যায়কারী)” [মায়েদা ৪৭]। যখন কুফর ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের ব্যাপারে এমন চূড়ান্ত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তখন সেই ব্যবস্থাকে সুবিধার দোহাই দিয়ে সমর্থন করার জন্য ‘লঘুতর ক্ষতি’ নীতি প্রয়োগ করার কোনো সুযোগ থাকে না, কারণ সেই ব্যবস্থার মূল ভিত্তিই শরীআহ্-এর সাথে সাংঘর্ষিক। একইভাবে কুরআন-এর অকাট্য দলীলের মাধ্যমে নিষিদ্ধ মদ, জুয়া, সুদের মত জিনিসগুলোকেও “মাসলাহা" (সাধারণ সুবিধা) কিংবা ‘লঘুতর ক্ষতি’ নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে হালাল করার সুযোগ নেই। কিন্তু কুফর ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে এসব ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিবিদেরা এই ব্যবস্থার বাই প্রোডাক্ট হিসেবে মানুষের সার্বভৌমত্ব, মদ, জুয়া, সুদ ও সকল প্রকার কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী এবং অনৈসলামিক আইনকানুন বাস্তবায়ন করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে। তারা আসলে ধীরে ধীরে ইসলাম বাস্তবায়ন তো দূরে থাক বরং সম্পূর্ণরূপে কুফর আদর্শের দীর্ঘ শিকল দ্বারা শৃঙ্খলিত হয়ে পড়েছে। তাদের অনেককে ঔপনিবেশিক শক্তির সমর্থনে ক্ষমতায় আরোহণ করা সহ পশ্চিমাদের ওয়ার অন টেরর পলিসির নামে রাজনৈতিক ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে হচ্ছে।

কুর‘আন-সুন্নাহ্‌ ভিত্তিক শরীয়াহ আইন কার্যকর করার একমাত্র উপায় হচ্ছে বর্তমান কুফর শাসনব্যবস্থাকে সামগ্রিকভাবে পরিবর্তন করে খিলাফত ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে ইসলাম বাস্তবায়ন করা। একমাত্র খিলাফত ব্যবস্থাই পারবে শরীয়াহ অনুযায়ী শাসন করতে এবং খন্ডিতভাবে নয় বরং কুরআন-সুন্নাহ্‌ ভিত্তিক পরিপূর্ণ শরীয়াহ আইন কার্যকর করতে। কারণ খিলাফত রাষ্ট্রে আইন কানুনের উৎস মানুষ নয় বরং কুর‘আন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস লব্ধ শরীয়াহ আইন। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ইসলামকে মুসলিমদের জন্য পরিপূর্ণ দ্বীন হিসেবে মনোনীত করেছেন এবং খন্ডিত নয় বরং পরিপূর্ণভাবে ইসলামকে আকড়ে ধরতে বলেছেন। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “হে মুমিনগণ, তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের স্পষ্ট শত্রু” (সূরা বাকারা: ২০৮)।

    -    কাজী তাহসিন রশীদ


Previous Post Next Post