বাংলাদেশ সীমান্তে সেনাসমাবেশ বাড়াচ্ছে ভারত, ৩০ কিমির মধ্যে ৩ ঘাঁটি





খবরঃ
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে শিলিগুড়ি করিডর বা ‘চিকেনস নেক’ নামে পরিচিত অঞ্চল কৌশলগতভাবে ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি সেখানে নতুন তিনটি “সক্রিয়” সেনাঘাঁটি স্থাপন করেছে ভারত। আসাম-বাংলাদেশ সীমান্তের ধুবড়ির কাছে বামুনি, বিহারের কিশনগঞ্জ এবং পশ্চিমবঙ্গের চোপড়ায় এই তিন নতুন ঘাঁটি তৈরি করা হয়েছে। চিকেনস নেককে অনেকে ভারতের দুর্বল অংশ মনে করলেও ভারতীয় সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একে দেশের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা করিডর’ বলে আখ্যা দিয়েছে। শিলিগুড়ির কাছে সুখনায় অবস্থিত ত্রি-শক্তি কর্পস (৩৩-কর্পস) এই করিডরের প্রতিরক্ষা তদারক করে। আকাশপথে করিডরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে পশ্চিমবঙ্গের হাশিমারা বিমানঘাঁটিতে মোতায়েন রাফাল যুদ্ধবিমান। মিগ সিরিজের বিমান এবং ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র রেজিমেন্টও রয়েছে এই করিডরের নিরাপত্তায়। এছাড়া ভারত এই অঞ্চলে একটি উন্নত তিন স্তরের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা স্থাপন করেছে, যেখানে রয়েছে রাশিয়া থেকে আনা এস-৪০০ সারফেস-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র, ইসরায়েল ও ডিআরডিও-র যৌথভাবে তৈরি এমআরএসএএম আকাশ ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা। (https://www.kalbela.com/world/india/238599)

মন্তব্যঃ
সেভেন সিস্টারস নিয়ে ইউনূস সরকারের ‘ফুলেল’ হুমকির কারণে ভারত ভীত হয়ে শিলিগুড়ি করিডরে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে মনে করলে ভুল হবে। বিষয়টি এমনও নয় যে, অন্তর্বর্তী সরকার ভারত সীমান্তে সৈন্যসমাবেশ বা যুদ্ধ সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছিল যার জবাবে ভারত পাল্টা পদক্ষেপ নিয়েছে। বরং বাস্তবে ঘটেছে তার উল্টো। ভারত বাংলাদেশের ঘাড়ের কাছে সৈন্য সমাবেশ ও নতুন সেনাঘাঁটি স্থাপন (বিএসএফ এর সীমান্ত চৌকি নয়) করে উল্টো গুজব ছড়িয়েছে তারা বাংলাদেশের ৬২ কিলোমিটার অঞ্চল দখল করে নিয়েছে। আন্তর্জাতিক সীমানার এত কাছে সেনাঘাঁটি নির্মাণ ও সৈন্যসমাবেশের জবাবে অন্তর্বর্তী সরকার কোন পাল্টা সৈন্যসমাবেশ করাতো দূরে থাক, এর নূন্যতম প্রতিবাদ পর্যন্ত করেনি। সরকার ভারতীয় দূতাবাসের কাছে তাদের এই উস্কানিমূলক কাজের জন্য ব্যাখ্যা তলব করেনি কিংবা ভারতের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র দফতরে ডেকে সীমান্ত থেকে সৈন্য ও ঘাঁটি প্রত্যাহারের জন্য সতর্কও করেনি। যা প্রমাণ করে এই সরকার ভারতের প্রতি নতজানু এবং ভারতের হুমকির মোকাবেলায় দেশের নিরাপত্তা তাদের হাতে কখনোই নিরাপদ নয়।

বাংলাদেশ সীমান্তের এত কাছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৩ ঘাঁটি নির্মাণকে ভারতের “কিছু এস্টাবলিশমেন্ট রেশনালাইজ করা হচ্ছে” বলে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। বাংলাদেশের কল্পিত তিস্তা মহা-প্রকল্প বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও ভারত এতে ঘোরতর আপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে আসছে। লালমনিরহাট বিমানঘাঁটি পুনরায় চালু করা ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরের আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে একই ধরনের নীতি নিয়েছে ভারত। এই সেনাঘাঁটি নির্মাণ, সীমান্তে বিএসএফ-এর টহল ৪-৫ জন থেকে ২০ জনে বৃদ্ধি ও সীমান্তরেখা বরাবর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এলোপাথারী গুলিবর্ষণের দ্বারা ভারত মূলত বাংলাদেশের ঘাড়ের ওপর শ্বাস ফেলার চেষ্টা করছে; অর্থাৎ, বাংলাদেশকে ভারত একটা “গ্রে-জোন ব্যাটল” এর মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। ঢাকা বিমানবন্দরের কন্টেইনার ডিপোতে আগুন, পণ্যবাহী জাহাজে আগুন, সারাদেশব্যাপী বিভিন্ন বাণিজ্যিক স্থাপনায় আগুন, শিল্প খাতে অস্থিরতা ও পার্বত্য অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা, ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসলিমদেরকে ধরে এনে জোরপূর্বক বাংলাদেশে পুশ-ইন এগুলো কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং এগুলোর প্রত্যেকটির সাথে সীমান্তে ভারতের আগ্রাসী ঘাঁটি নির্মাণের যোগসূত্র রয়েছে।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ও সীমান্তে ভারতের ‍আগ্রাসী ও নাশকতামূলক কর্মকান্ডগুলো যেকোন বিবেচনায় Act of War ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার সমান। কিন্তু, ভারতের টার্গেট ইউনুস সরকার নয় (যা অনেকে ভুলভাবে মনে করে থাকেন), বরং বাংলাদেশের নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ এবং সামরিক অফিসারদের সাহসী ও পৌরুষদীপ্ত অংশ। এই অংশকে মনস্তাত্বিকভাবে চাপে ফেলা ও ভয় দেখানোর জন্য ভারত এই আগ্রাসী অপরাধগুলো করছে। কারণ, হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশে এখানো ‘প্রকৃত’ পরিবর্তনের উর্বর পরিবেশ-পরিস্থিতি বিরাজ করায় ভারত খুবই শঙ্কিত। ভারত শঙ্কিত এই কারণে যে বাংলাদেশের নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদ, নীতিবান বুদ্ধিজীবী ও পৌরুষদীপ্ত সামরিক অফিসাররা একত্রিত হয়ে যদি বাংলাদেশে নবুয়্যতের আদলে খিলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, ভারত তাহলে বাংলাদেশ ও দক্ষিন এশিয়া অঞ্চলে তার নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্যকে চিরতরে হারিয়ে ফেলবে। এটাই ভারতের ভয় ও এই ভয় থেকেই ভারত সীমান্তের দুর্বলতম স্থানে তাদের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। মুখে যাই বলুক, তারা জানে খিলাফত এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ভারত যতই তার প্রস্তুতিকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানোর ব্যর্থ চেষ্টা করুক না কেন, এর মাধ্যমে মুহাম্মাদ বিন কাসিম ও ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খিলজীর যোগ্য উত্তরসূরীরা ভারতের ‘Soft Underbelly’-র অস্তিত্ব ও অবস্থান সম্পর্কে সুনিশ্চিত হয়েছেন মাত্র!

    -    রিসাত আহমেদ

Previous Post Next Post