খবরঃ
বন্দরে বিদেশি অপারেটর নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগকে ‘ভাসা ভাসা’ ও ‘ভ্রান্ত ধারণা’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘বন্দর পরিচালনায় চলমান শুদ্ধি অভিযানের সময় বিভিন্ন পক্ষ বিভ্রান্তিমূলক যুক্তি তুলে ধরলেও বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন।’ আশিক চৌধুরী লিখেছেন, “ছোটবেলায় শোনা ‘বন্দরে চেয়ার-টেবিলও নাকি ঘুষ খায়’—এ ধরনের সংস্কৃতির মধ্যেই বহুদিন ধরে বন্দর পরিচালনা হয়েছে। এখন সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ায় যে তীব্র আলোচনা–সমালোচনা চলছে, তা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য ইতিবাচক।” ‘দেড় বছর আগেও এমন হলে ইন্টারনেট নিজে নিজে বন্ধ হয়ে যেত’, উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের বর্তমান কঠোর অবস্থান আশাব্যঞ্জক। ‘তিনি বিরোধীদের ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ ও ‘সার্বভৌমত্ব’ সংক্রান্ত শঙ্কাকে ‘সবচেয়ে হাস্যকর যুক্তি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তার দাবি, ‘বাস্তবতার সঙ্গে এসব আশঙ্কার কোনও মিল নেই।’ (https://www.banglatribune.com/business/924289/বন্দরে-বিদেশি-অপারেটর-নিয়ে-নিরাপত্তা-শঙ্কা)
মন্তব্যঃ
ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন ইন্টিরিম অস্বাভাবিক দ্রুত গতিতে চট্রগ্রাম বন্দর পরিচালনার জন্য বিদেশি অপারেটারদের সাথে গোপন চুক্তি করেছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের লাইফ লাইন বিবেচনা করে দেশের জনগণ চুক্তিগুলো জনগণের সামনে প্রকাশের দাবি করছে। কিন্তু, সরকার পিপিপি চুক্তির অজুহাত দিয়ে চুক্তির ধারাগুলো প্রকাশ করছে না। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ শর্ত প্রকাশ না করেই বিদেশিদের দেওয়া হচ্ছে টার্মিনাল, যা বললেন বিডা চেয়ারম্যান, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, বাংলা ট্রিবিউন)। অস্বচ্ছ এবং গোপনীয়তার সাথে চট্রগ্রাম বন্দর উপনিবেশবাদী আমেরিকার প্রক্সিকে প্রদান নিয়ে জনগণের উদ্বেগ্ন কি স্বাভাবিক নয়? বিশেষ করে জনগণ যখন জানে, দেশ পরিচালনার সময় শাসকরা জনগণের স্বার্থের বিপরীতে গিয়ে গোপন চুক্তি করে। ইন্টিরিমই জনগণের সামনে শেখ হাসিনা সরকার ভারতীয় আদানির সাথে করা গোপন এবং অন্যয্য চুক্তি প্রকাশ করেছিল। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ আদানির মতো অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় চুক্তি হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের? নভেম্বর ১৬, ২০২৫, বণিক বার্তা)। হাসিনা যেভাবে আদানির সাথে চুক্তি প্রকাশে টালবাহানা করেছিল ইন্টারিমও তা করছে। এছাড়াও, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বট বাহিনী এবং আমেরিকার অনুগত একশ্রেণীর রাজনৈতিক ও বুদ্ধিজীবি গোষ্ঠী নিয়োজিত হয়েছে, যারা শুধুমাত্র দুর্নীতির অযুহাত দিয়ে বন্দরের মত কৌশলগত সম্পদকে আমেরিকার প্রক্সি কোম্পানীকে তুলে দেয়ার প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। অবশ্যই দুর্নীতি একটি সমস্যা। কিন্তু, তার সমাধান এটা নয় যে, তা পরিচালনার ভার উপনিবেশবাদী কোম্পানীকে প্রদান করা। এই প্রোপাগান্ড যে পরিকল্পিত এবং ষড়যন্ত্রমূলক তা ১৪ মে ২০২৪ চট্রগ্রামে বন্দর পরিদর্শন শেষে প্রদান করা ড. ইউনুসের ভাষণ থেকে অনুমান করা যায়। তিনি বলেন, “আর কিছু শুনতে চাই না, বন্দর ব্যবস্থাপনায় পৃথিবীর সেরা যারা তাদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে, যেভাবেই হোক। মানুষ রাজি না থাকলে রাজি করাতে হবে।’( বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ ‘ব্যবস্থাপনায় পৃথিবীর সেরা যারা, তাদের হাতে চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে দিতে হবে’, ১৪ মে ২০২৫, সারা বাংলা)। জনগণের রক্তের উপর গঠিত সরকার কেন জনগণের আকাঙ্খার বিপরীতে উপনিবেশবাদী কোম্পানীর কাছে দেশ এবং জনগণের স্বার্থ বিকিয়ে দিতে এতটা উদগ্রীব? অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে আমেরিকার কি কোন গোপন চুক্তি আছে? বাণিজ্যক মুখোশে কোন দেশে প্রবেশ উপনিবেশবাদী শক্তিসমূহের একটি বহুল ব্যবহৃত একটি কৌশল। পাঠকদের বোঝার সুবিধার্থে এই অঞ্চলে বৃটিশ উপনিবেশবাদ তৈরির কৌশল এবং এখানে কিভাবে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বোকা বানানো হয়েছিল তা উল্লেখ করতে চাই। বৃটিশরা প্রথম ব্যবসা করার অনুমতি এবং নিরাপত্তার প্রার্থনা নিয়ে এদেশে আসলেও পরবর্তীতে শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতালোভী অংশ যেমনঃ মীর জাফর এবং ব্যবসায়িক সুবিধা ও প্রভাবের লোভ দেখিয়ে জগৎ শেঠ এবং রায় দুর্লভদের লোভাতুর করে এই অঞ্চলকে বৃটিশ উপনিবেশে পরিণত করেছিল। বর্তমানে আমেরিকা বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর মত অনেকগুলো প্রক্সি কোম্পানী পরিচালনা করছে। যেমনঃ Chevron/ExxonMobil, Excelerate Energy, DP World, ইত্যাদি। ভূ-রাজনীতির সাথে পরিচিতদের কাছে এই অঞ্চল নিয়ে আমেরিকার পরিকল্পনা অজনা নয়। আমেরিকা ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে অনেকটা খোলাখুলিভাবে এই অঞ্চল নিয়ে তার পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ ভূরাজনীতির কেন্দ্রে যখন বঙ্গোপসাগর, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, সমকাল)। এই রকম পরিস্থিতিতে শাসকগোষ্ঠী জনগণের নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের কার্যক্রম দেখে তাদের নব্য মীর জাফর ছাড়া আর কিছু বলা যায় কি? আমেরিকার অনুগত ইন্টিরিম সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে মীর জাফরের পরিণতি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। উপনিবেশবাদী বৃটিশদের ষড়যন্ত্রের অংশীদার হিসেবে মীর জাফর জীবিত অবস্থায় হয়েছে অপদস্থ এবং অপমানিত। এখনও, মীর জফরের নাম মানুষ ঘৃণাভরে স্মরণ করে। এসব নির্বোধ শাসকদের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ আমাদের সতর্ক করেছেন। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, “মানুষের উপর বিশ্বাসঘাতকতার এমন বছর আসবে, যখন মিথ্যাবাদীকে সৎ এবং সৎ ব্যক্তিকে মিথ্যাবাদী হিসেবে গণ্য করা হবে; বিশ্বাসঘাতককে বিশ্বস্ত এবং বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে গণ্য করা হবে; এবং ‘রুয়াইবিদা’-রা জনগণের বিষয়গুলো নির্ধারণ করবে।’ সাহাবাগণ (রা.) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্, “রুয়াইবিদা কি?” তিনি বললেন, সে সকল নির্বোধ ও অযোগ্য শাসক যারা জনগণের ব্যাপারে কথা বলবে” [ইবনে মাজাহ্]।
জনগণের উচিত নির্বোধ শাসক তৈরির কারখানা এই উপনিবেশবাদী সেকুলার-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে মুক্তির উপায় অনুসন্ধান করা। এমন শাসন ব্যবস্থা প্রয়োজন যেখানে শাসক উপনিবেশবাদীদের তাঁবেদারি না করে, সর্বশক্তিমান আল্লাহ্’র সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে জনগণের বিষয়গুলো দেখাশুনা করবে। নবুয়তের আদলে খিলাফতই হতে পারে সেকুলার-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একমাত্র বিকল্প।
- মো: সিরাজুল ইসলাম
