ধর্মনিরপেক্ষতাসহ রাষ্ট্র পরিচালনার ৩ মূলনীতি বাদের সুপারিশ

 

“ধর্মনিরপেক্ষতাসহ রাষ্ট্র পরিচালনার ৩ মূলনীতি বাদের সুপারিশ”


               


খবরঃ

বর্তমানে সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার যে চার মূলনীতি রয়েছে সেগুলো হলো জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। বর্তমানের চার মূলনীতির মধ্যে শুধু গণতন্ত্র রাখা হয়েছে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত নতুন পাঁচ মূলনীতির মধ্যে। সুপারিশ করা নতুন পাঁচটি মূলনীতি হলো সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেসব সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হবে। (https://www.prothomalo.com/politics/ie1phkufi6)

মন্তব্যঃ

বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতি বিষয়ক বিতর্কের বয়স বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বয়সের সমান। তত্কালীন সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন ইস্টার্ণ ব্লক ও আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ওয়েস্টার্ণ ব্লকের মধ্যে ব্যালেন্স করার এক স্থুলবুদ্ধির উদাহরণ হল এই চার মূলনীতি। এই সংবিধান ইতিমধ্যে ১৭ বার পরিবর্তন করা হলেও তা জনগণের আর্থিক স্বচ্ছলতা ও নূন্যতম আর্থিক নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। তদুপরী, বিগত ৫০বছর ধরে একেকটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী তাদের জনবিরোধী ও হিংস্র রাজনীতি এবং সাম্রাজ্যবাদী প্রভূদের তোষণ নীতির শাসনকে জনগণের উপর চাপিয়ে দিতে এই সংবিধানকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এসেছে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ মূলত এই আপাদমস্তক ব্যর্থ সংবিধানকে নতুন মোড়কে উপস্থাপন করে জুলুমের শাসনকে টিকিয়ে রাখার অপপ্রয়াস, যার মূল লক্ষ্য হল বাংলাদেশের উপর তাদের সাম্রাজ্যবাদী প্রভূদের নিয়ন্ত্রণকে টিকিয়ে রাখা।

এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ ও ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র ইসলামবিরোধী রূপ চিনে ফেলা এবং তাদের মধ্যে ইসলামী শাসনব্যবস্থা খিলাফতের ব্যাপারে ব্যাপক জনমত তৈরী হওয়ার কারণে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রসমূহ, বিশেষ করে আমেরিকা বেশ ভয়ের মধ্যে রয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটিকে সংবিধান থেকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাবের মাধ্যমে তাদের সেই ভয় প্রতিফলিত হয়েছে। এর মাধ্যমে আমেরিকা এবং তার এদেশীয় দালাল বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদরা মূলত মুসলিম জনসাধারণকে এটা বোঝাতে চায় যে, বাংলাদেশের সংবিধান এখন আর ধর্মনিরপেক্ষ বা সেকুলার সংবিধান নেই, সুতরাং এই সংশোধীত নতুন সংবিধান আর ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক থাকল না। এর পাশাপাশি নাস্তিক ও সেকুলার নামে পরিচিত একটি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বাদ দেওয়ার বিরোধীতা করে ‘গেল গেল’ আওয়াজ তুলবে, যার ফলে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের মধ্যে এই বিশ্বাস জন্ম নিবে যে আসলেই এই সংবিধান আর ‘সেকুলার’ সংবিধান নেই। মুসলিমদের মধ্যে এই ‘কৃত্রিম সুখানুভূতি’ দেওয়াই হল এখন আমেরিকার পরিকল্পনা, যা শুধু বাংলাদেশে নয় বরং পুরো মুসলিম বিশ্বেই আমেরিকা বাস্তবায়ন করছে। তুরস্কের এরদোগানের ইসলামী ছদ্মাবরণে সেকুলার শাসনের সফলতার পর আমেরিকা আফগানিস্তান, সিরিয়া ও বাংলাদেশে মডারেট কিন্তু ইসলামী লেবাসের দলগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতার নীতি গ্রহণ করেছে, যেন ইরাক-আফগানিস্তান-সিরিয়া-ফিলিস্তিনের কয়েক মিলিয়ন মুসলিমদের খুনি আমেরিকার ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহ্‌’র ক্ষোভ তারা ভুলে যায় এবং আমেরিকার প্রতি গোপন অনুরাগ সৃষ্টি হয়!

মূলত: ধর্মনিরপেক্ষতা হল একটি আক্বীদাহ্‌ যার মূল কথা হল রাষ্ট্রপরিচালনায় সৃষ্টিকর্তার বিধানকে বাদ দিয়ে মানুষ নিজেই আইন প্রণয়ন করবে। এই দৃষ্টিভঙ্গী থেকে উদ্ভুত ফ্রিডম হল সেকুলার রাষ্ট্রের সকল আইনকানুন ও বিধিবিধানের ভিত্তি, যা সংসদ বা আইনসভার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষ শব্দ থাকা বা না থাকা এখানে কোন বিবেচ্য বিষয় নয়। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানেও ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি অন্তর্ভুক্ত নেই, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী ধর্মনিরপেক্ষতা ও ফ্রিডম ফেরি করে বেড়ায়! অর্থাৎ, ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটি সংবধানে থাকুক আর না থাকুক, বাংলাদেশের সংবিধান একটি কুফর সংবিধান এবং এই সংবিধানকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে কুর‘আন, সুন্নাহ, ইজমা আস-সাহাবা ও শরঈ ইল্লার মাধ্যমে কৃত কিয়াসের ভিত্তিতে প্রণীত ইসলামী সংবিধানকে রাষ্ট্রপরিচালনার মানদন্ড হিসেবে গ্রহণ করা এদেশে বসবাসরত প্রতিটি মুসলিমের উপর একটি ফরয দায়িত্ব।

    -    রিসাত আহমেদ


Previous Post Next Post