গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু

 

“গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু”



খবরঃ

ফিলিস্তিনের গাজায় দীর্ঘ ১৫ মাস পর যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্য দিয়ে থামল ইসরায়েলের নৃশংসতা। উপত্যকাটির বাসিন্দাদের মধ্যে এখন কিছুটা স্বস্তির ছোঁয়া। গাজায় নিজ নিজ এলাকায় ফেরা শুরু করেছেন লোকজন। গত ১৫ মাসে ইসরায়েলের হামলায় গাজার উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন সেখানকার ২৩ লাখ বাসিন্দা। শীত, ক্ষুধা, তৃষ্ণা পরিস্থিতি আরও বিভীষিকাময় করেছে। বিদায়ের আগের দিন এক ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘আজ গাজায় বন্দুকের শব্দ থেমে গেছে। আমার অংশ নেওয়া সবচেয়ে কঠিন আলোচনাগুলোর একটি ছিল এটি।’ (https://www.prothomalo.com/world/middle-east/uxyx0uyd62)

মন্তব্যঃ

এই চুক্তির ফলে গাজায় বসবাসরত মুসলিমদের মধ্যে উচ্ছাস দেখা যাচ্ছে, যা হল আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পুরো কুফর ওয়ার্ল্ড অর্ডারের সম্মিলিত সামরিক সক্ষমতার কাছে হার না মানার উচ্ছাস, কিয়ামতসম ধ্বংসলীলার মুখে শিরদাড়া সোজা করে টিকে থাকার উচ্ছাস— পুরো বিশ্ব পরিত্যাগ করার পরও শুধুমাত্র আল্লাহ্‌’র উপর ভরসা করে কঠিন আসমানী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার উচ্ছাস। কিন্তু ‘যুদ্ধবিরতি’ শব্দটির মধ্যে লুকিয়ে আছে আমেরিকা-ইসরাইলের একপক্ষীয় গণহত্যাকে আড়াল আড়াল করার অপ্রয়াস। এমনকি আমেরিকার নির্লজ্জ প্রেসিডেন্ট বলেছে এই চুক্তিকে সে ফিলিস্তিনের মুসলিমদের কর্তৃক ‘ইসলাইল রাষ্ট্রের’ স্বীকৃতি হিসেবে গ্রহণ করেছে! এই অবৈধ রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠার ৭৭ বছর পরে এসেও এই ভূখন্ডের মুসলিমদেরকে ‘নমনীয়’ করে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য আমেরিকার এই হাহাকার সত্যিই একটি দুর্লভ মুহূর্ত। এর মাধ্যমে নিরস্ত্র-অন্নহীন-কঙ্কালসার কিন্তু প্রখর ঈমান ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন কতগুলো মানুষের সামনে আমেরিকার মত ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানকে যতটা তুচ্ছ ও ক্ষুদ্র মনে হচ্ছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে আর কখনো ঘটেনি।

দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান হলো ফিলিস্তিন ঘিরে মার্কিন ‍যুক্তরাষ্ট্রের একটি আরাধ্য বস্তু, যার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও তথাকথিক শান্তি প্রতিষ্ঠা করে আমেরিকা চীনের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারে এবং মুসলিমদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করে চীনের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ মধ্যপ্রাচ্যের জ্বালানীভান্ডারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে। কিন্তু মুসলিম উম্মাহ্‌’র মধ্যে ইসরাইল বিরোধী প্রবল জনমত ও ফিলিস্তিনের মুসলিমদের অব্যাহত প্রত্যাখানের কারণে আমেরিকা সুবিধা করে উঠতে পারেনি। বস্তুত, ইসরাইলের পাশে সামান্য কয়েক মাইল জায়গা নিয়ে ‘স্বাধীন ফিলিস্তিন’ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা কোন কালেই মুসলিম উম্মাহ্‌ মেনে নিত না, আর এখনতো সেখানে ধ্বংসস্তুপ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই! ইসরাইল-আমেরিকার যৌথ গণহত্যার প্রক্রিয়ায় গাযার ৭০% ভবন ও স্থাপনা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।

মূলত: আমেরিকা গাযাকে মুসলিম উম্মাহ্‌’র জন্য উদাহরণ হিসেবে সেট করতে চেয়েছে, যেভাবে আফিয়া সিদ্দিকীকে মুসলিম উম্মাহ্‌’র সামনে উদাহরণ হিসেবে সেট করেছিল। আমেরিকা বোঝাতে চেয়েছে, ‘দেখ আমরা যা ইচ্ছা তাই করতে পারি এরপর তা আবার হজম করে পরিস্থিতি স্বাভাবিকও করে ফেলতে পারি। কিন্তু তোমরা মুসলিমরা কোন কিছু করার ক্ষমতাই রাখো না। পরাজয় মেনে নাও। আমেরিকার কর্তৃত্ত্ব মেনে নাও।’ ফলে, গাযার মুসলিমরা এই যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে একটি বিজয় ও স্বস্তি হিসেবে দেখলেও মুসলিম উম্মাহ্‌’র জন্য একে বিজয় হিসেবে উদযাপনের কোন সুযোগ নেই, কারণ তারা তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। গাযার প্রায় অর্ধলক্ষ শহীদ ও সমান সংখ্যক আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করা মুসলিমের বদলা যদি এই উম্মাহ্‌ না নেয় তাহলে কাল কিয়ামতের ময়দানে তাদের ঈমান প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর শাফায়াত প্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পরবে। খিলাফত ধ্বংসের মাধ্যমে বৃটেন-ফ্রান্স এবং ইসরাইল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আমেরিকা-বৃটেন যে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছিল, খিলাফত পুন:প্রতিষ্ঠা এবং ফিলিস্তিন ও আল আক্বসা উদ্ধার করার মাধ্যমে তার যথাযথ জবাব দেওয়া মুসলিম উম্মাহ্‌’র ঈমানী দায়িত্ব। খিলাফতের সাহসী ও অদম্য সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ফিলিস্তিন মুক্ত করে গাযার গণহত্যাকারীদেরকে শাস্তির সম্মুখীন করার আগ পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহ্‌’র অবসর নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। তাদেরকে মনে রাখতে হবে সেই ফিলিস্তিনী পিতার হৃদয়ের রক্তক্ষরণ: “ইসলাইলী হামলায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া বাড়ির ধ্বংসাবশেষের নিচ থেকে আমার শিশুসন্তানকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে হাসপাতালের ডাক্তার বলেছিল আমার সন্তানের বাঁচার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ, তবে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। ফিরে এসে দেখি সেই হাসপাতালও নেই, ডাক্তারও নেই, আমার সন্তানও নেই!”

    -    রিসাত আহমেদ


Previous Post Next Post