পুলিশ, র্যাব, আনসারের নতুন পোশাক চূড়ান্ত
খবরঃ
সংস্কারের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও আনসারের পোশাক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নতুন পোশাক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। ...স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, পুলিশের পোশাক হবে লোহার (আয়রন) রঙের। র্যাব’র পোশাক হবে জলপাই (অলিভ) রঙের। আর আনসারের পোশাক হবে সোনালী গমের (গোল্ডেন হুইট) রঙের। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর পুলিশ বাহিনী সংস্কারের দাবি ওঠে। একই সঙ্গে পুলিশের পোশাক পরিবর্তন দাবি ওঠে। ... কেন পোশাক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়া হলো- এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, পোশাকের সঙ্গে সঙ্গে সবারই মন-মানসিকতা সবকিছু পরিবর্তন হতে হবে। সাংবাদিকরা একটি ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জোর দেবেন- সেটা হলো দুর্নীতি। দেশ থেকে যদি দুর্নীতি দূর করতে পারেন, তবে অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে যাবে। (https://mzamin.com/news.php?news=145039)
মন্তব্যঃ
বাংলাদেশের পুলিশ কেন নিপীড়ক বাহিনীতে পরিণত হলো এই বিষয়টি সমাধান না করে শুধুমাত্র পোষাক পরিবর্তন প্রকৃতপক্ষে একটি পোষাকী পরিবর্তন অর্থাৎ কসমেটিক চেঞ্জ। এই পুলিশ হঠাৎ করে নিপীড়ক হয়ে উঠেনি। উপনিবেশবাদী বৃটিশরা এই অঞ্চলে তাদের উপনিবেশকে স্থায়ী করতে বিশেষ করে সিপাহী বিদ্রোহের সাথে সংশ্লিষ্টদের দমনের উদ্দেশ্যে ১৮৬১ সালে পুলিশ অ্যাক্টের মাধ্যমে পুলিশ বাহিনী তৈরি করে। উপনিবেশিক বৃটিশরা চলে গেলেও বাংলাদেশের পুলিশ এখনও উপনিবেশবাদী বৃটিশদের তৈরি পুলিশ আইন এবং কাঠামোর মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। তাই, বৃটিশ আমলে পুলিশ যেভাবে বৃটিশ বিরোধীদের দমনে ব্যবহৃত হত আজও তা সরকার বিরোধীদের দমনে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাস্তবতা হচ্ছে, বিভিন্ন সময় পুলিশ বাহিনীকে নিয়ে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল কিন্তু পোষাকের পরিবর্তন ছাড়া কাঠামোতে তেমন কোন পরিবর্তন হয় নাই। কারণ যারাই ক্ষমতায় গিয়েছে, তারা দেখেছে তাদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে হিংস্র পুলিশ প্রয়োজন। অন্যদিকে, নতুন পোষাককে কেন্দ্র করে অর্থাৎ র্যাবকে পুলিশে, পুলিশকে আনসার এবং আনসারকে দারোয়ানের মর্যাদায় নামানো হয়েছে বলে স্যোশাল মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা চলছে। এবিষয়েও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, কারণ রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সমস্যার নিরাপত্তা প্রদানে নিয়োজিত এই সংস্থাগুলো যদি দুর্বল হয়ে যায়, তবে দেশের আইন-শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়বে এবং এই সুযোগে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সুবিধাভোগী গোষ্ঠী ফায়দা লুটবে। যেমন, ইরাক, আফগানিস্তান, সোমালিয়াসহ আফ্রিকার অনেক দেশে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষায় পিএমসি (প্রাইভেট মিলিটারী কোম্পানী) নিয়োগ করা হয়।
বর্তমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানকে কোনভাবেই শাসন বিভাগের প্রভাবমুক্ত রাখা সম্ভব নয়। কারণ সরকারে থাকা শাসকগোষ্ঠী তাদের স্বার্থে পুলিশ আইন প্রণয়ন বা সংশোধন করে এবং পুলিশ বাহিনী সেই আইন মানতে বাধ্য হয়। অন্যদিকে, ইসলামী ব্যবস্থায় অন্যসকল আইনের মত আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থাও শারীয়াহ্ আইন দ্বারা নির্ধারিত। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংক্রান্ত আইনগুলো খলিফা এবং পুলিশ বিভাগের সদস্যদের জন্য সমভাবে পালনীয়। তাই, খিলাফত ব্যবস্থায় পুলিশ রাজনৈতিক প্রভাবমূক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে। খলিফা যদি আইনের বাহিরে কোন নির্দেশ দেয় তা পুলিশ বিভাগের সদস্যদের জন্য যেমন পালনীয় নয়, তেমনি খলিফার অন্যায় আদেশ আল মুহ্কামাত আল মাযালিম আদালতে মামলা দায়ের করার মত অপরাধ।
তাছাড়া, খিলাফত ব্যবস্থা শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগের স্ট্রাকচার বাস্তবায়ন করবে। যেখানে খলিফার সরাসরি তত্ত্বাবধানে আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগ নামে একটি স্বতন্ত্র বিভাগ স্থাপন করে একজন মহাব্যবস্থাপক নিয়োগ এবং প্রত্যেক উলাইয়াহ্ (প্রদেশ)-তে একজন সাহিব আল সুরতাহ থাকবে। এবং পর্যায়ক্রমে ইমালা (জেলা), কাসাবা (মেট্রোপলিস) এবং হাই’ই (গ্রাম/ওয়ার্ড) পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর স্ট্রাকচার বাস্তবায়ন, প্রয়োজনীয় কর্মকতা ও জনবল নিয়োগের মাধ্যমে আভ্যন্তরীন নিরাপত্তা নিশ্চিত ও প্রত্যেকের দোড় গোড়ায় পৌছে দেয়া হবে। স্থায়ীভাবে আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিধান, শহর থেকে গ্রামীণ বা দুর্গম পার্বত্য জনপদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরন এবং নতুন নতুন নিরাপত্তা হুমকি মোকাবেলার সার্মথ্য অর্জনে নিরাপত্তা বাহিনীর কারিগরী, সামরিক, প্রযু্ক্তি সহ সকল শক্তি বৃদ্ধি করা হবে। বেতন ভাতা সহ অন্যান্য সুয়োগ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। যাতে নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলার সক্ষমতা অর্জনের সাথে সাথে এটি একটি সম্মানজনক পেশায় পরিণত হয়।
- মো: সিরাজুল ইসলাম