“শেষ মুহূর্তে পরিবারের সদস্যদের অগ্রিম ক্ষমা করলেন বাইডেন”
খবরঃ
যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার শাসনামলের শেষ সময়ে একটি নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি তার ভাই-বোন এবং তাদের স্বামী-স্ত্রীদের জন্য অগ্রিম ক্ষমা ঘোষণা করেছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রদত্ত সাংবিধানিক ক্ষমতাবলে তিনি এ সিদ্ধান্ত নেন, যা তাদের ভবিষ্যতে কোনো অপরাধমূলক তদন্ত বা বিচারের হাত থেকে সুরক্ষা দেবে। (https://www.bd-pratidin.com/international-news/2025/01/21/1075730)
মন্তব্যঃ
পশ্চিমাদের রাজনৈতিক কাঠামোকে নিখুঁত হিসেবে উপস্থাপন করা রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবিরা এখন কি বলবেন? তারা যুক্তরাষ্ট্রের আলোকে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদকে সমাধান হিসেবে উপস্থাপন করছেন। অথচ তাদের সংবিধানও এই দ্বিচারিতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারেনি যেখানে একদিকে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ আর অন্যদিকে সংবিধানের নির্দিষ্ট অনুচ্ছেদ (যেমন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের আর্টিকেল-২) দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে সকল আইনের উর্ধ্বে রাখা হয়েছে। আমরা দেখেছি, ওবামা ক্ষমতা ছাড়ার আগে ১৭০৫ জন ফেডারেল অপরাধীকে ক্ষমা করেছিল। ট্রাম্প ২০২৫ এ ক্ষমতায় এসেই পনের শত এর উপরে ক্যাপিটল হিলে হামলাকারীদের ক্ষমা করে দিয়েছে। এরকম নজির যুক্তরাজ্যের সংবিধানেও প্রতীয়মান হয়। ২০১৬ সালে ডেভিড ক্যামেরন প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তার বাবা রাষ্ট্রের বাইরে অর্থ পাচারে লিপ্ত ছিল এবং ডেভিড ক্যামেরনও এর সাথে জড়িত ছিল। এরপরও ডেভিড ক্যামেরনকে শুধু পাচারকৃত অর্থের ট্যাক্স দেয়া লেগেছিল। আর কিছু না। সংবিধান তাকে সুরক্ষা দিয়েছিল। তবে বাইডেন সকল নজিরকে ছাড়িয়ে গিয়ে নিজের পরিবারের ভবিষ্যতে করা অপরাধের ক্ষমাও যোগাড় করে নিয়েছে। সুতরাং খুব সহজেই বোঝা যাচ্ছে, আইন বানানোর ক্ষমতা ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে কুক্ষিগত রেখে যত কক্ষবিশিষ্ট আইনসভাই করা হোক না কেন, ক্ষমতার ভারসাম্য কখনোই নিশ্চিত হয় না।
শুধুমাত্র ইসলামী শাসনব্যবস্থায় আছে বৈষম্যহীন আইন ও বিচারব্যবস্থা। কারণ আইন প্রণেতা একজনই। তিনি হলেন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের মালিক আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা, যিনি সকল পক্ষপাতিত্বের ঊর্ধ্বে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদের খলিফা থেকে শুরু করে সাধারণ প্রশাসনিক কর্মকর্তা প্রত্যেকের কাজ হচ্ছে, আল্লাহ্ ভীরুতার সাথে আল্লাহ্ প্রদত্ত আইন প্রয়োগ করা, প্রণয়ন করা নয়। যদি খলিফা ও শাসনের সাথে সম্পৃক্ত কারো দ্বারা এর ব্যত্যয় ঘটে, তাহলে জনগণের দায়িত্ব হচ্ছে তাকে জবাবদিহি করা। এর জন্য রাষ্ট্রের বিশেষ আদালত তথা মাহকামতুল মাযালিম আদালত রয়েছে। খলিফা উমর (রাঃ) এর সময়ে, যখন তিনি বিয়ের ক্ষেত্রে নারীদের দেনমোহর নির্দিষ্ট করে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নারীমহল থেকে তীব্র আপত্তি আসে এই হিসেবে যে, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা যা নারীদের অধিকার দিয়েছেন (চাহিদামত দেনমোহর চাওয়ার), তা উমর (রাঃ) কিভাবে নির্দিষ্ট করে!!! খলিফা উমর (রাঃ) নিমিষেই নিজের ভুল শুধরে নেন এবং এরকম সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে বিরত থাকেন। পশ্চিমাদের ত্রুটিযুক্ত শাসনব্যবস্থার প্রচারকারীদের মনে রাখা দরকার, পশ্চিমা সমাজের এধরণের চর্চা তাদের সভ্যতার পতনের ইঙ্গিত বহন করে। তাই আমাদের উচিৎ এককক্ষ-দ্বিকক্ষ, সংস্কার-নির্বাচন ইত্যাদি পশ্চিমা গণতান্ত্রিক ফ্রেমের ত্রুটিপূর্ণ তর্কে না গিয়ে ইসলামের ন্যায়ের শাসনের দিকে জাতিকে ধাবিত করা। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, “তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহকে এ কাজই ধ্বংস করেছে যে, যখন তাদের মধ্যে কোন সম্ভ্রান্ত লোক চুরি করত, তখন তারা বিনা সাজায় তাকে ছেড়ে দিত। অপরদিকে যখন কোন সহায়হীন দরিদ্র সাধারন লোক চুরি করত, তখন তার উপর হদ্ (হাতকাটা দণ্ডবিধি) প্রয়োগ করত। আল্লাহর কসম, যদি মুহাম্মদ এর কন্যা ফাতিমা চুরি করত (আল্লাহ তাকে হিফাযত করুন) তবে আমি তার হাত অবশ্যই কেটে ফেলতাম” (সহীহ্ বুখারী)।
- জাবির জোহান