১১ বছরের মেয়েটিকে কি ‘বাঁচতেও’ দেব না আমরা

 


খবরঃ 

অবশেষে পাওয়া গেছে ১১ বছরের মেয়েটিকে। …কিন্তু যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসংখ্য মানুষ তাকে নিরাপদে ফেরত পেতে উদ্‌গ্রীব ছিল, সেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই অনেক মানুষের আচরণ দেখে যে কারও মনে হতে পারে, মেয়েটিকে নিরাপদে বা জীবিত ফিরে এসেই বরং ‘অন্যায় করেছে। কারণ, মেয়েটি আসলে হারিয়ে যায়নি বরং পালিয়েছিল এক ছেলেবন্ধুর সঙ্গে, যাকে তার কথিত প্রেমিক বলে এখন পর্যন্ত আমরা জানতে পারছি। …‘বাচ্চাকে সময় দিন এবং কাদের সঙ্গে মেশে, কী পড়ে, কী দেখে, এগুলো খেয়াল রাখুন। বাচ্চাকে নিজের জীবনের সঙ্গে জড়িত রাখুন। খোলাখুলি কথা বলুন, গল্প করুন। খালি কোচিং, স্কুল, গৃহশিক্ষকের ওপর নির্ভর না করে নিজেও দু–একটা বিষয়ে পড়ান। ঘুরতে নিয়ে যান। বাচ্চাকে ভেবেচিন্তে কাজ করার ব্যাপারে ছোটবেলা থেকে উৎসাহিত করুন। [১১ বছরের মেয়েটিকে কি ‘বাঁচতেও’ দেব না আমরা | প্রথম আলো]

মন্তব্যঃ

১১ বছর বয়সী একটা মেয়ের বাসায় ভালো না লাগা, বাবা-মাকে না জানিয়ে টিকটকার প্রেমিকের সাথে নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া- ইত্যাদি সবকিছুই আপাতদৃষ্টিতে একটা অবাধ্য ও দায়িত্বজ্ঞানহীন মেয়ের ইচড়েপাকামো মনে হতে পারে। কিন্তু এটা মূলত একটা ফ্রিডম বেইজড সমাজের ফলাফল। মূলতঃ ফ্রিডমভিত্তিক সমাজে কোন বিধি-নিষেধ নেই। এখানে পর্ণ, পতিতাবৃত্তি, মদ, রিয়েলিটি ডান্স শো এর নামে অশ্লীলতা, মুভি সিরিয়ালের মাধ্যমে শেখা প্রেম-ভালোবাসা, ফ্রি-মিক্সিং, ড্রাগ সেবন ইত্যাদি সব থাকে। বাচ্চারাও তাদের স্বাধীনতা অনুযায়ী এগুলোকে অন্ধভাবে অনুকরণ করে। স্বাভাবিকভাবেই, বাচ্চারা এগুলোর মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে স্বার্থপর, অবাধ্য ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করে। “সুবা” নামক মেয়েটিও তার ব্যতিক্রম নয়। পশ্চিমা সমাজ- যারা এই ফ্রিডম বেইজড সমাজের সূতিকাগার, তাদের পরিসংখ্যানও কিন্তু এরকম একটা সমাজেরই প্রতিফলন দেখাচ্ছে। ২০২৩ সালের পিউ রিসার্চ অনুযায়ী আমেরিকার ৪০ শতাংশ হাইস্কুল যাওয়া ছেলে-মেয়ে (১৪-১৮ বছর বয়স) সেক্সুয়ালি একটিভ। NHS (2023) এর তথ্যমতে ব্রিটেনে এর সংখ্যা ৩৩ শতাংশ। কানাডায় ৩০ শতাংশ (পাবলিক হেলথ এজেন্সি, ২০২৩)। অস্ট্রেলিয়াতে ২৭ শতাংশ (AIHW, 2023)। ফ্রান্সে ২৫ শতাংশ (INSEE,2023)। বাংলাদেশও সেই পথে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হল- তাহলে কেন সন্তানের বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী সন্তানের এই আচরণ গ্রহণ করতে পারছেন না? কেন সমাজ সুবাকে একটা অপরাধীর মত করে তাকে উপস্থাপন করছে? সুশীলরা কেন সকল দায়ভার বাবা-মায়ের কাঁধে দিয়ে দিতে চাচ্ছে?

মূলতঃ বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম। একটা ফ্রিডমভিত্তিক সমাজে বাস করলেও তাদের মূল্যবোধের ভিত্তিপ্রস্তর ইসলাম। বাবা-মায়ের অবাধ্য না হওয়া, পরিবারের বিপদ-আপদে পাশে থাকা, দায়িত্বশীল আচরণ করা ইত্যাদি যে আশাগুলো সমাজের মানুষগুলো করছে এগুলো তারই প্রতিফলন। সুশীলরা এখানে ফ্রিডমভিত্তিক সমাজের দায়িত্বহীনতাকে এড়ানোর জন্য সকল দায়ভার বাবা-মায়ের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে ব্যস্ত। অথচ সন্তানের স্বাধীনতা উপভোগ করা তো সেক্যুলার সুশীলদের পছন্দ করার কথা!!! পশ্চিমা সমাজে সন্তানের স্বাধীনতায় বাবা-মা বিন্দুমাত্র হস্তক্ষেপ করলে, বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়। অথচ সেক্যুলার সুশীলেরা তা না করে একটা প্রতারণার খেলা খেলে। পর্ণ-ড্রাগ-মদ ইত্যাদি সমাজে চালু রেখে শুধু বাবা-মায়ের বিধি নিষেধের উপর ন্যাস্ত করে তারা ফ্রিডমভিত্তিক এই দায়িত্বজ্ঞানহীন সেক্যুলার সমাজকে টিকিয়ে রাখতে চায়।

বর্তমান সময়ে সমাজের অসহায় মুসলিমদের এটা বোঝা উচিৎ যে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র বিধি-নিষেধ অনুযায়ী যদি সমাজব্যবস্থা পরিচালিত না হয়, তাহলে আমাদের সন্তানেরাও কখনো দায়িত্বশীল হওয়া শিখবে না। কারণ পশ্চিমা বিশ্বাস থেকে আসা ফ্রিডম মানুষকে দায়িত্বজ্ঞানহীন হওয়া শিখায়, অন্যদিকে ইসলাম থেকে আসা খিলাফত ব্যবস্থা মানুষকে শেখায় দায়িত্বশীল হতে। একদিকে সমাজ থেকে পর্ণ-মদ-ফ্রি মিক্সিং কে নিষিদ্ধ করা হবে কারণ এগুলো আল্লাহর হুকুম পরিপন্থী। অন্যদিকে, প্রত্যেক ব্যক্তি দায়িত্ব পালনের একটা ব্যবস্থায় আবদ্ধ হয়ে যাবে এবং রাষ্ট্র এই বিষয়ের তদারকি করবে। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: "তোমাদের প্রত্যেকেই একজন দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। শাসক তার জনগণের দায়িত্বশীল এবং তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। একজন পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল এবং তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। একজন নারী তার স্বামীর গৃহ ও সন্তানদের দায়িত্বশীল এবং তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। একজন দাস তার মালিকের সম্পদের দায়িত্বশীল এবং তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। সাবধান! তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।"

    -    জাবির জোহান


Previous Post Next Post