খবরঃ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, গাজা উপত্যকা দখল ও পুনঃনির্মাণের জন্য ইসরায়েল প্রয়োজনীয় সবকিছু করবে এবং যুক্তরাষ্ট্র এই প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগ করবে। ...ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা অনুসারে, গাজা উপত্যকা পুনর্গঠনের সময় ফিলিস্তিনিদের মিসর ও জর্ডানে স্থানান্তর করা হবে। তবে কায়রো ও আম্মান আগেই এ পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছে। মিসর ও জর্ডান স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, তারা গাজার সংকটে সরাসরি জড়াতে চায় না এবং ফিলিস্তিনিদের তাদের নিজস্ব ভূমিতেই থাকার অধিকারকে সমর্থন করে।
৪ ফেব্রুয়ারি এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে গাজা পুনর্গঠনের পরিকল্পনা তুলে ধরেন ট্রাম্প। এতে গাজার ফিলিস্তিনিদের অন্য দেশে পুনর্বাসনের প্রস্তাবও ছিল। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করেছে, তবে ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই পরিকল্পনা খুব ভালোভাবে গৃহীত হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, মূলত যুক্তরাষ্ট্র এটিকে একটি রিয়েল এস্টেট লেনদেন হিসাবে দেখছে, যেখানে আমরা বিশ্বের এই অংশে বিনিয়োগকারী হব। তিনি আরও বলেন, আমাদের সেখানে সেনা মোতায়েন করার প্রয়োজন নেই। ইসরায়েল আমাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করবে। তাদের জন্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকবে। (www.kalbela.com/world/united-states/162549)
মন্তব্যঃ
ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমি মুসলিমদের রক্তে কেনা। হযরত ওমর (রা.) এটিকে বিজয় করেন, সালাহ্উদ্দীন আইয়ূবী এটিকে ক্রুসেডারদের হাত থেকে মুক্ত করেন, আর খলিফা আব্দুল হামিদ এটি সংরক্ষণ করেন। দুঃখজনকভাবে, আজ ক্রুসেডারদের মোড়ল আমেরিকা আজ পবিত্র এই ভূখন্ডের ভাগ্য নিয়ে কথা বলার দুঃসাহস দেখাচ্ছে, শুধুমাত্র মুসলিম বিশ্বের দালাল শাসকদের ফিলিস্তিন ইস্যুতে নিস্তব্ধতা ও নীরবতার কারণে। ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমি শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্রগুলো দ্বারা পরিবেষ্টিত হলেও, আজ সেই ভূখণ্ড নিরস্ত্র ও অসহায় জনগণের রক্তে রঞ্জিত। ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর মতো নেতারা গাজাকে দখলের দুঃসাহস দেখাচ্ছে; তারা নিশ্চিত যে, বর্তমান মুসলিম শাসকরা তাদের বিরুদ্ধে সামরিক প্রতিরোধ গড়ে তুলবে না। কারণ তারা প্রত্যক্ষ করেছে গত ১৫ মাসের গণহত্যায় তারা নীরব ভূমিকা পালন করেছে যেমনটি তারা পূর্বেও করেছিলো। মুসলিম দেশগুলোর বিশাল সামরিক বাহিনী ব্যারাকে বন্দী, আর মুসলিম জনগণকে জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে বিভক্ত করে রাখা হয়েছে। যেমন আমরা প্রত্যক্ষ করলাম, মিশর ও জর্ডান যতটুকু প্রতিবাদ জানিয়েছে তাও সেটা হচ্ছে, কেন তাদের উপর অন্য জাতিকে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে!
বাংলাদেশের রাজনীতি ও বুদ্ধিজীবী মহলের একটি অংশও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করেছে। তারা মার্কিন নীতির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে, ট্রাম্পের আমন্ত্রণ পেলে গর্ববোধ করে এবং পশ্চিমা শক্তির স্বার্থরক্ষায় সক্রিয় থাকে। এমন মানুষের কাছ থেকে বাংলাদেশের জনগণ কী আশা করতে পারে? যারা ফিলিস্তিনের গণহত্যাকারী ও জায়োনিস্ট আগ্রাসনের পৃষ্ঠপোষক মার্কিনীদের আনুগত্য করে, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ঈমানের দাবী। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেন, “সব মুসলিম একটি দেহের মতো, যদি তার চোখ অসুস্থ হয় তাহলে পুরো শরীর অসুস্থ হয়ে যায়; যদি তার মাথা অসুস্থ হয় তাহলে পুরো শরীর অসুস্থ হয়ে যায়” (সহীহ্ মুসলিম)। তাই, ফিলিস্তিন ইস্যুকে কোন জাতীয়তাবাদী চিন্তার আলোকে দেখার কোন সুযোগ নেই। পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের মুসলিম এক মুসলিম উম্মাহ্’র অংশ, যেকোন প্রান্তে সে আক্রান্ত হলে শরীরের বাকি অংশের দায়িত্ব হচ্ছে তাকে সারিয়ে তোলা। তাই ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মুসলিমদের পক্ষে দাঁড়ানো এবং উপনিবেশবাদী শক্তির আধিপত্য প্রত্যাখ্যান করা প্রত্যেক মুসলিমের ঈমানী দায়িত্ব। বাংলাদেশের জনগণকে ইসলামের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক বন্দোবস্তকে অস্বীকার করতে হবে। ইসলামের ভিত্তিতে রাজনৈতিক ঐক্য ও প্রতিরোধই ফিলিস্তিন-সহ মুসলিম উম্মাহ্-কে মুক্তির পথে নিয়ে যাবে।
- রাশিদ হাসান মাহাদি