খবরঃ
ছাত্ররা অন্তর্বর্তী সরকারে থেকে দল গঠন করলে জনগণ মানবে না বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করতে চায়, এতে আপত্তি নেই মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা চাই অন্তর্বর্তী সরকার সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। আমরা আপনাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) কাছে যেটা চাই, নিরপেক্ষ থাকবেন। সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকবেন। নির্বাচন এ দেশে অবশ্যই হবে, এ নির্বাচনটি হতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে।” (https://www.kalerkantho.com/online/Politics/2025/02/01/1475606)
মন্তব্যঃ
কিংস-পার্টি ‘ভাল’ না ‘মন্দ’ এই বিতর্কটি বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সমস্যা ও এর সমাধানে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক। কারণ এই বিতর্কে জনগণ ‘ভাল’র পক্ষে থাকুক কিংবা ‘মন্দ’র পক্ষে থাকুক দেশের একটি সমস্যারও সমাধান হবে না। বিএনপিগোষ্ঠীর বক্তব্য ‘সরকারে থেকে দল করলে সেটা সরকারী ক্ষমতার অপব্যবহার হয়’, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে নির্বাচন দিতে হবে’; অথবা, নাগরিক কমিটির বক্তব্য ‘বিএনপি নিজেই একটি কিংস-পার্টি’, ‘এই সরকার জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্খাকে ধারণ করে, ফলে এই আকাঙ্খার প্রতিফল হিসেবে যেকোন উদ্যোগে সরকার সহায়তা করবে’; কিংবা অন্তর্বর্তী সরকারের বক্তব্য ‘এই সরকার শুধুমাত্র তার স্টেইকহোল্ডারদের প্রতি নিরপেক্ষ’ এই সবগুলোর সারকথা হলো দেশের শাসনক্ষমতা হলো তাদের কাছে একটা ‘ট্রফি’ বা পুরষ্কার; এবং এই ‘ট্রফি’ জয় করে তা উপভোগ করতে যা করা বা বলা দরকার তারা তাই করতে বা বলতে প্রস্তুত। একটি পক্ষ জনমতের ভয়ে এখন পর্যন্ত ভদ্রতার মুখোশ পরে আছে, আরেক পক্ষ হাসিনার পতন পরবর্তী প্রাথমিক জনমত তাদের অনকূলে থাকায় ধরাকে-সরা জ্ঞান করছে। তাদের কারো দৃষ্টিতেই ‘শাসনক্ষমতা’ জনগণের দায়িত্ব ও অভিভাবকত্বের সুকঠিন বোঝা বা বার্ডেন নয়, যার জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের জবাবদিহিতার কোন ভয় তাদের রয়েছে।
কিংস-পার্টি ‘ভাল’ না ‘মন্দ’ এর পরিবর্তে আলোচনা বা বিতর্কটা হওয়া দরকার বিদ্যমান বা নতুন যেকোন রাজনৈতিক দলের আদর্শিক ভিত্তি নিয়ে। কারণ কোন রাজনৈতিক দলের ‘আদর্শিক ভিত্তি’ বা ‘আক্বীদাহ্’ বলে দেয় সেই দলটি জনগনের জন্য কল্যান নাকি অকল্যান বয়ে আনবে। আলোচনা হওয়া দরকার দলটি (নতুন বা পুরাতন) দেশে বিদ্যমান অর্থনৈতিক সমস্যাগুলোকে কিভাবে সমাধান করবে এবং মূল অর্থনৈতিক সমস্যা বলতে তারা কী বোঝে? কারণ, যে ডাক্তার রোগই নির্ণয় করতে পারে না, সে আবার কি চিকিত্সা করবে!! আলোচনা হওয়া দরকার দলটি দেশের বিদ্যমান রাজননৈতিক সংকট ও শূন্যতা কিভাবে দূর করবে? রাজনৈতিক পালাবদল বা ক্ষমতার দ্বন্দ নিরসনের জন্য তারা যে কর্মপন্থার অনুসরণ করার কথা বলছে তা কী পরীক্ষীত? নাকি তাদের এই কর্মপন্থাই হল ক্ষমতার দ্বন্দ্বকে চিরস্থায়ী করার মূল হাতিয়ার? আরো আলোচনা হওয়া দরকার কাফির-সাম্রাজ্যবাদী বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের নিয়ন্ত্রণ ও আগ্রাসন থেকে এই দলগুলো কিভাবে জনগণ ও দেশের কৌশলগত সম্পদসূহকে মুক্ত করবে? মূলত ‘ইনক্লুসিভ সেকুলারিজম’ বা অন্তর্ভূক্তিমূলক ধর্মনিরপেক্ষ আক্বীদাহ্’র ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো হল কাফির-সাম্রাজ্যবাদীদের এদেশীয় ফ্রেঞ্চাইজি ও তাদের নিয়ন্ত্রনের মূল হাতিয়ার।
ইসলামী খিলাফত শাসন ব্যবস্থার মধ্যে যেকেউ নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারে। দল গঠনের জন্য কোন অনুমতি বা নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই, তবে দলটির আদর্শিক ভিত্তি হতে হবে ইসলামী আক্বীদাহ্। দলসমূহের গঠনতন্ত্র, নীতিনির্ধারন ও কার্যক্রম সবকিছুই ইসলামী নীতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে ও আল্লাহ্’র ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে, যার ফলে ক্ষমতায় থেকে দল গঠন বা ক্ষমতার বাইরে থেকে দলগঠনের মধ্যে কোন বিশেষ সুবিধা বা অসুবিধা নেই। যেকোন রাজনৈতিক দলের একমাত্র লক্ষ্য হবে আল্লাহ্’র বিধান অনুসরণ করা (মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী নয়) সত্কাজের আদেশ ও অসত্কাজে বাধা প্রদান করা; যার মধ্যে তিনটি প্রধান বিষয়বস্তু হল জনগণের অর্থনৈতিক ও আর্থিক সমস্যাকেন্দ্রিক বিষয়বস্তু, রাজনৈতিক ঐক্য ও অভ্যন্তরীন স্থিতিশীলতা এবং কাফির-সাম্রাজ্যবাদীদেরকে মোকাবেলা ও বৈদেশিক দাওয়াহ সংক্রান্ত বিষয়বস্তু। ফলে, ‘ইনক্লুসিভ সেকুলারিজম’ বা অন্তর্ভূক্তিমূলক ধর্মনিরপেক্ষ আক্বীদাহর ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত কোন ক্ষমতালোভী গোষ্ঠী যখন জনগণের কাছে ফর্দ বিতরণ করে জানতে চায় জনগণ রাজনৈতিক দলের কাছে কী চায়, তা হল একটি ‘অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রতারণা’ যার মাধ্যমে তারা জনগণকে সম্পৃক্ত করার বাহানায় তাদের পূর্বনির্ধারিত কুফর এজেন্ডাকে বাস্তবায়ন করার ফন্দি করেছে।
- রিসাত আহমেদ