খবরঃ
শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন, নির্বাচন, সংস্কার, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবার, আহতদের পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।… (https://www.prothomalo.com/politics/xdh0r2saq3)
মন্তব্যঃ
জনগণের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ না করে, শুধুমাত্র ‘তিন শুণ্য’ স্লোগাণ দিয়ে কি জনগণের পেট ভরানো যায়? আর ক্ষমতার মধু দিয়ে নিজেরা পেট ভরে খেয়ে দেয়ে নাদুস-নুদুস হয়ে ক্ষুধার্ত মানুষদেরকে ঐক্যে ডাক দিলে কি ঐক্য তৈরি হয়? তার উপর বিশাল মুসলিম জনগোষ্ঠীর আক্বীদা বা বিশ্বাস ‘ইসলাম’কে পাশ কাটিয়ে ঐক্যের ভিত্তি বানানো হচ্ছে ৭১’ কিংবা ২৪’-এর চেতনা, বাংলাদেশী কিংবা বাঙালি জাতীয়তাবাদের মতো অকার্যকর কতিপয় চিন্তাগুলোকে। এসব চেতনা থেকে কি কোন জীবনব্যবস্থা উৎসারিত হয়? এসব চেতনার আবেগে ভুলিয়ে রেখে শাসন, বিচার, অর্থনীতিসহ সর্বক্ষেত্রে জনগণের উপর আবারো পূর্বের মতোই পশ্চিমাদের থেকে আমদানীকৃত ব্যর্থ পলিসিগুলোই বাস্তবায়ন করে জনগণের উপর জুলুম করা হচ্ছে। তারপর ন্যূনতম মৌলিক অধিকারগুলো আদায়ের ন্যায্য আন্দোলনে যখন দেশের মানুষ অংশগ্রহণ করছে, সেগুলোকে গোষ্ঠীস্বার্থে আন্দোলন বলে পরিহাস করে এ উপদেষ্টারা সমগ্র দেশের জনগণকেই শত্রু বানিয়ে ফেলছে!
‘সুদ ব্যবসা’ ও LGBTQ নিয়ে ডক্টর ইউনুসের পূর্বের অবস্থানের ব্যাপারে জনমনে সন্দেহ থাকলেও, জনগণ তার ব্যাপারে একটা আশা করেছিল যে, সে হয়তো তাদের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য ‘কিছু একটা’ করবে। কিন্তু সেই আশাও ভঙ্গ হয়ে গেল, যখন জনগণ দেখলো, সে তার নিজের প্রতিষ্ঠানের কর মওকুফ করে আই.এম.এফ এর চাপে জনগণের উপর সে করের বোঝা চাপিয়ে দিল। তার উপর জুলাই গণহত্যায় আহতদের চিকিৎসা, নিহতদের পারিবারিক সহায়তা, গণহত্যাকারী হাসিনার বিচার, দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি বন্ধ, মার্কিন ভারতের দাসত্ব থেকে বের হয়ে আসার মতো জনদাবীগুলো পূরণে সরকারের ব্যর্থতা তো জনমনে এই ধারণা তৈরি করেছে যে, এই সরকার তো আসলে তাদের না। তখন আগের সরকারগুলোর মতোই এই সরকারকেও সে তার প্রতিপক্ষ বলে মনে করছে। শত্রু মনে করছে। সরকারকে সে তার দাবি আদায়ের পথে বাধা মনে করছে, যখন সরকার তাদেরকে ‘গোষ্ঠীস্বার্থে আন্দোলনকারী’ আখ্যা দিয়ে দমনের পথ বেছে নিয়েছে। এসব আন্দোলনগুলোকে আবার বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বার্থন্বেষী গোষ্ঠী প্রভাবিত করার সুযোগ পাচ্ছে। সেটা টের পেয়ে সরকার সেগুলোকে আরো কঠোর হস্তে দমন করার চেষ্টা করছে। তখন তার আরো প্রতি ঘৃণা ও শত্রুতা তৈরি হচ্ছে। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে নিকৃষ্ট শাসক হচ্ছে সেই শাসক, যে তার জনগণকে ঘৃণা করে এবং জনগণও তাকে ঘৃণা করে…”। এমতাবস্থায়, দেশের এই ক্রান্তিকালীন সময়ে, সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য যখন শাসক এবং জনগণের মধ্যে ঐক্য সবচেয়ে বেশী দরকার, তখন পরস্পরের প্রতি এত ঘৃণা নিয়ে একটি দেশ কিভাবে তার সমস্যাগুলোর সমাধান করবে?
তাই সমস্যাসমূহ সমাধানে, প্রথমত, দরকার দেশের সকল মানুষের নিকট বোধগম্য ও তাদের ঈমান-আকিদা ও আবেগের বিষয়- ‘ইসলাম’ এর ভিত্তিতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধকরণ। দ্বিতীয়ত, দেশের সম্পদগুলোকে যথাযথ কাজে লাগিয়ে, আমদানী নির্ভরতা, ঋণ নির্ভরতা এবং পরনির্ভরশীলতা থেকে বের হয়ে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য ইসলাম অনুযায়ী যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া। তৃতীয়ত, মার্কিন-ভারতের দাসত্বের পররাষ্ট্র নীতি ও প্রতিরক্ষা নীতি থেকে বের হয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা ও ইসলামী আদর্শকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা। আর এই অবস্থায়, যদি এসকল পদক্ষেপগুলো নেয়া হয়, তাহলে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, জনগণ কখনোই শাসককে শত্রু মনে করবে না। তারা শাসকের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি নেতৃত্বশীল রাষ্ট্র গঠনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে উৎকৃষ্ট শাসক হচ্ছে সে শাসক, যিনি জনগণকে ভালোবাসেন, জনগণও তাকে ভালোবাসেন। যিনি তার জনগণের জন্য দোয়া করেন, এবং জনগণও তার জন্য দোয়া করেন”।
- মোঃ জহিরুল ইসলাম