খবরঃ
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, ‘তৌহিদি জনতা নামে আপনারা যারা নিজেদের পরিচয় দেন, তাদের আমি হুমকি দিইনি, সতর্ক করেছি।’ মঙ্গলবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে এ কথা বলেন তিনি। ফেসবুক পোস্টে মাহফুজ আলম আরও বলেন, ‘কেন করেছি? গত ১৫ বছর নিপীড়ন সহ্য করে এবং অভ্যুত্থানে ভূমিকা রেখে সব নাগরিকের মতোই আপনারা একটি জাতীয় সম্ভাবনা হাজির করেছেন, কিন্তু মব সংস্কৃতির কারণে তা ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে আপনাদেরই এ সম্ভাবনা রক্ষা করতে হবে।’ তিনি লেখেন, ‘আমার আপনাদের প্রতি ঘৃণা নেই, বরং বাংলাদেশের সব নাগরিকের মতোই আপনাদের প্রতি দরদ আছে। আলেমদের প্রতি সম্মান আছে। আমি নিজে বিশ্বাসী মুসলিম হিসেবে তৌহিদবাদী, কিন্তু কেউ তৌহিদের নামে উগ্রতা দেখালে সেটার আসন্ন পরিণতি সম্পর্কে সাবধান করাও সুনাগরিক ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে আমার কর্তব্য মনে করেছি।’ উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন স্থিতিশীলতা দরকার। বিপ্লবী জনতা আর খণ্ড খণ্ড মব আলাদা জিনিস। লক্ষ্যহীন, উদ্দেশ্যবিহীন এ মব সংস্কৃতির কারণে উপকৃত হচ্ছে আমাদের শত্রুরা। রাষ্ট্রের অখণ্ডতা, নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আমাদের কঠোর হতে হবে।’ উপদেষ্টা তার পোস্টে উল্লেখ করেন, ‘এ কঠোরতার হুঁশিয়ারি অপরাধীদের জন্য, যারা তৌহিদের কথা বলে নিপীড়ন করছে, নৈরাজ্য করছে। কিন্তু আগে যেভাবে ইসলাম ফোবিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সাধারণ মুসলিমদের নিপীড়ন করা হতো, যার শিকার আমিও হয়েছি তা কোনো মতেই আর পুনরাবৃত্ত হবে না।’ (samakal.com/bangladesh/article/280291/তৌহিদী-জনতাকে-হুমকি-নয়-সতর্ক-করেছি:-উপদেষ্টা%C2%A0মাহফুজ)
মন্তব্যঃ
মাত্র কিছু সময়ের মধ্যে ইসলামপ্রিয় জনগণকে “তৌহিদী জনতা” ট্যাগ দিয়ে হুমকিকে সতর্কতা হিসাবে ব্যাখ্যা করে উপদেষ্টা মাহফুজ কি শুভবুদ্ধির পরিচয় দিলেন নাকি এটা একটি সেকুলার প্রতারণা? সমাজে অন্যায় দেখলে তা বাধা দিতে সোচ্চার হওয়া শুধু জরুরীই নয় বরং একটি ইসলামি দায়িত্ব। হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, “যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ করে বলছি- তোমরা অবশ্যই সৎকাজে মানুষকে আদেশ দেবে এবং অবশ্যই অন্যায় থেকে নিষেধ করবে। যদি তা না করো তাহলে আল্লাহ্ তোমাদের উপর তাঁর পক্ষ থেকে শাস্তি প্রেরণ করবেন..” (তিরমিজি: ৪/৪০৬, নম্বর: ২১৬৯, ভা-২/৪০)। একুশে বই মেলায় সব্যসাচী প্রকাশনা কর্তৃক ইসলামবিদ্বেষী নিষিদ্ধ লেখিকা তসলিমা নাসরিনের বিকৃত রুচির বই বিক্রির প্রতিবাদ করে কিছু সংখ্যক তরুণ। রাষ্ট্র বা মাহফুজদের দায়িত্ব ছিল ইসলামিবিদ্বেষী এবং কুরুচীপূর্ণ এই লেখিকার বই বাজারজাতে বাধা দেয়া। সরকার তার এই দায়িত্ব পলন না করে, বরং প্রতিবাদ করা তরুণদের “মব” হিসাবে চিহ্নিত করে ঘৃণা ছড়াচ্ছে। এই তরুরাই যখন ছাত্র-জনতা অংশ হিসাবে জালিম হাসিনার অপসারণের দাবিতে রাস্তায় নেমে মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছিল, হাইকোর্টের বিচারকদের পদত্যোগর জন্য হাইকোর্ট ঘেরাও করেছিল, পূর্বের সরকারের আমলে নিয়োগকৃত কর্মচারীদের পদত্যাগে বাধ্য করেছিল, তখন তা ছিল বিপ্লব। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ ঘেরাও করে ‘বিচারপতিদের পদত্যাগে বাধ্য করা অন্যায় এবং বেআইনি’, ডিডাব্লিউ.কম, ১৬ অক্টোবর ২০২৪)। এরকম অসংখ্য ঘটনা উল্লেখ করা যাবে। উল্লেখ্য, এসকল আন্দোলনগুলোতে যাদের তৌহিদি জনতা বলে ট্যাগ দেয়া হচ্ছে তাদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। কিন্তু, সেই ঘটনাগুলোর বিষয়ে মাহফুজ, উপদেষ্টা পরিষোদ, বা তথাকথিত বিশিষ্ট নাগরিকদের কোন উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায় নাই। কিন্তু, ইসলাম বিদ্বেষী এবং কুরুচীপূর্ণ লেখিকার বই বিক্রয়েল প্রতিবাদ করায় ঐ তরুণদেরই হেয় করা হচ্ছে। অর্থাৎ, সেকুলারদের স্বার্থ আদায় হয় না এমন প্রতিবাদ করা শুধু অনুচিতই নয় বরং অন্যায় ও ট্যাবু। আবার, যখন সে দেখে মুসলিমরা তাকে প্রত্যাখান করছে তখন সে নিজেকে তৌহিদবাদী বিশ্বাসী মুসলিম হিসেবে দাবি করছে। যদিও তার রাজনৈতিক কর্মসূচী বা কর্মকান্ডে তৌহিদের কোন অবস্থান দৃশ্যমান নয়। ২১ আগষ্ট ২০২৪ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার হলে সে বলেছে, ‘সেকুলার রাজনীতিকে ইন্টেক রেখে দায় দরদের রাজনীতি হবে আগামী দিনের রাজনৈতিক বন্ধবস্ত।’ অর্থাৎ, সে এই দেশে অরাজনৈতিক ইসলামের বিভিন্ন রূপকে একত্রিত করে একটি সেকুলার রাজনীতি প্রচলন করতে চায় যা ইসলামের জীবনব্যবস্থার চিন্তার সাথে সাংঘর্ষিক। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এসকল মুসলিমরূপী সেকুলারদের বিষয়ে বলেন, “আর যখন তারা মুমিনদের সাথে মিলিত হয়, তখন বলে ‘আমরা ঈমান এনেছি’ এবং যখন তাদের শয়তানদের সাথে একান্তে মিলিত হয়, তখন বলে, ‘নিশ্চয় আমরা তোমাদের সাথে আছি। আমরা তো কেবল উপহাসকারী’। ” [আল বাকারা, আয়াত ১৪]।
মুসলিমদের উচিত পশ্চিমাদের অনুগত এই সকল প্রতারক সেকুলার রাজনীতিবিদদের এবং স্লোগাণ সর্বস্ব প্রতারণামূলক সেকুলার রাজনীতিকে প্রত্যাখান করা, কারণ এই রাজনৈতিক নেতারা মুসলিমদের ইসলামী আবেগকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দোলন করে কিন্তু ক্ষমতা পেলেই তারা তাদের পশ্চিমা প্রভুদের খুশি করার জন্য মুসলিমদের রাজনৈতিক আকাঙ্খাকে দমন করা শুরু করে। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে ২৪ এর আন্দোলন পর্যন্ত সকল আন্দোলনে জনগণকে আন্দোলনে নামানোর জন্য ইসলামকে ব্যবহার করা হলেও রাষ্ট্র পরিচালনায় ইসলামকে আসার কোন সুযোগ দেয়া হয় নাই। মুসলিমদের এই প্রতারণার চক্র থেকে বের হতে পরিপূর্ণ ইসলাম বাস্তবায়নের রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রকৃত মুমিন একই গর্ত থেকে দু’বার দংশিত হয় না।”
- মো: সিরাজুল ইসলাম