আইন ও সংবিধান মেনে চললে সেবা দেওয়া ছাড়া ডিসিদের আর কোনো কাজই নেই: আইন উপদেষ্টা

 


খবরঃ 

জেলা প্রশাসকদের আইন ও সংবিধান অনুযায়ী কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন আইন, নীতিমালা ও সংবিধানে যা আছে, সেটি মেনে চললে জনগণের সেবা আর কল্যাণ দেওয়া ছাড়া জেলা প্রশাসকদের আর কোনো কাজই নেই। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/fnfu6ipf2j)

মন্তব্যঃ

আমাদের সমাজে একটা চিন্তা প্রচলিত আছে যে মানুষ যদি আইন মেনে চলত, তাহলেই সমাজের অনাচার বা দুর্নীতিগুলো দূর হয়ে যেত। বিগত ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার কিংবা তারও আগের সরকারগুলো নিজের স্বার্থরক্ষা করার জন্য নিজেরাও আইন মানেনি এবং তাদের অধঃস্তন আমলা এবং দায়িত্বশীলদেরও তারা আইন ভংগ করতে বাধ্য করেছেন। এখানে প্রশ্ন চলে আসে যে বাংলাদেশের মত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রের মানুষ কেন আইন মানে না? পশ্চিমা সমাজে তো আমরা এরকম রাষ্ট্রীয় কাঠামোগত আইনভংগ করতে দেখি না। তাহলে তারা কেন আইন মানে? তবে কি বাংলাদেশের মত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রের মানুষগুলোর মাঝেই কোন সমস্যা? 

প্রকৃতপক্ষে, সমাজের মানুষের আইন মানা এবং না মানার পিছনে সেই সমাজের মানুষের বিশ্বাস এবং আবেগের একটা ভূমিকা আছে। যেমন পশ্চিমা সমাজে প্রত্যেকটা মানুষের স্বাধীনতা নিশ্চিত করাই তাদের বিশ্বাস এবং আবেগ। স্বেচ্ছাচারী জীবন (ব্যক্তিস্বাধীনতা), যেকোন কিছুকে স্রষ্টা বলে মানা কিংবা না মানা (বিশ্বাসের স্বাধীনতা), যেকোন কিছু নিয়ে ব্যবসা করা (মালিকানার স্বাধীনতা) এবং যেকোন ধরনের মতামত প্রকাশ করা (মত প্রকাশের স্বাধীনতা)- এই স্বাধীনতাগুলো নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়েই তারা তাদের আইন তৈরি করে এবং মানার চেষ্টা করে। এতে ফলাফল যাই আসুক না কেন (পারিবারিক ভাঙ্গন, এলজিবিটিকিউ, ধনী-গরীব ব্যবধান, ধর্ষণ বৃদ্ধি), এই স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আইন মানার বিষয়ে সমাজে একটা ঐকমত্য তৈরি হয়। অন্যদিকে, মুসলিম সমাজের মানুষদের বিশ্বাস এবং আবেগ কখনোই স্বাধীনতা নয়, বরং আল্লাহ্‌’র বিধিনিষেধ অনুযায়ী চলাই তাদের বিশ্বাস এবং আবেগ। কিন্তু ১৯২৪ সালে খিলাফত রাষ্ট্রের পতনের পর থেকে মুসলিমদের চালানো হচ্ছে পশ্চিমা ধর্মনিরপেক্ষ-পুঁজিবাদী ব্যবস্থার আইন দিয়ে, যা মুসলিমদের ঈমান ও আবেগের হতে উৎসারিত নয়। যার ফলে আইন না মানার একটা ভারসাম্যহীন অবস্থা তৈরি হচ্ছে। তাছাড়া, জনগণ এবং প্রশাসন যখন প্রত্যক্ষ করে শাসক নিজেই আইনের তোয়াক্কা করে না, বরং তার ও গোষ্ঠীর স্বার্থে আইনকে যাচ্ছেতাই ব্যবহার করে, তখন স্বাভাবিকভাবেই আইন মানার গুরুত্ব কমে যায়। যেমন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজের প্রতিষ্ঠানের ট্যাক্স মওকুফ করলেও জনগণের উপর ভ্যাট-ট্যাক্স এর আরো বোঝা চাপিয়েছে, নিজের নামে সব মামলা প্রত্যাহার করে নিলেও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মত কালো আইন প্রত্যাহারসহ হাসিনার আমলে মিথ্যা ও দমনমূলক মামলা প্রত্যাহার করেনি।

বাংলাদেশের মত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রে ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক মানবরচিত আইন মানুষকে মানানো কখনোই সম্ভব নয়, কারণ তাদের বিশ্বাস ও আবেগ থেকে ইসলামকে পুরোপুরি সরিয়ে ফেলা অসম্ভব। তাই, জনগণ ও প্রশাসনকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করতে হলে আল্লাহ্‌ প্রদত্ত বিধি-নিষেধকে আইন হিসেবে রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করতে হবে, তখন তারা এসব আইনের সাথে তার বিশ্বাসের যোগসূত্র পাবে এবং এটা মানাকে ইবাদত ও আল্লাহ্‌’র সন্তুষ্টি হিসেবে দেখবে। প্রায় ১০০ বছর ধরে ইসলামকে মুসলিমদের বিশ্বাস ও আবেগ থেকে সরানোর যাবতীয় ষড়যন্ত্রের পরও তা মুসলিমদের বিশ্বাস ও আবেগ থেকে একচুল পরিমাণ সরানো তো যায়ইনি, বরং তা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই সময় এসেছে মুসলিমদের বিশ্বাস ও আবেগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাষ্ট্রব্যবস্থা খিলাফত প্রতিষ্ঠা করার। যেই রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তি হবে তাকওয়া।

    -    জাবির জোহান


Previous Post Next Post