আলেপের বিরুদ্ধে বন্দির স্ত্রীকে ধর্ষণের সত্যতা পেয়েছে ট্রাইব্যুনাল



খবরঃ 

র‌্যাবের সাবেক কর্মকর্তা বরিশাল রেঞ্জের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) আলেপ উদ্দিনের বিরুদ্ধে এক আসামিকে গুম করে বন্দি রাখা অবস্থায় তার স্ত্রীকে ভয় দেখিয়ে রোজা ভাঙিয়ে ধর্ষণ করার প্রমাণ পেয়েছে প্রসিকিউশন। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ কথা জানান। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে জনৈক বন্দিকে গুম করে তার স্ত্রীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেন আলেপ। ভয়াবহভাবে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ভুক্তভোগী এর কিছুদিন পরই মৃত্যুবরণ করেন। গুম ও নির্যাতনসহ অমানবিক অপরাধের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসা ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি অন্যতম। জঘন্য কায়দায় বন্দিদের নির্যাতন, নারীবন্দিসহ গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের নারী সদস্যদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আছে। চিফ প্রসিকিউটর জানান, আলেপের বিরুদ্ধে নতুন করে বেশকিছু গুরুতর অভিযোগ আসার কারণে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। (https://www.bvnews24.com/crime/news/172212

মন্তব্যঃ 

জালিম হাসিনার সময় তথাকথিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেমন র‌্যাব, সিটিটিসি কর্তৃক ইসলামের রাজনৈতিক কর্মী ও ইসলামপ্রিয় মুসলিমদের নির্মম নির্যাতন ছিল একটি Open secret। জনগণ এই অন্যায়গুলোর প্রতিবাদ করতে চাইলেও সংবাদমাধ্যম বা তথাকথিত মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো এই অপরাধগুলো প্রকাশে ছিল নির্বিকার। জনগণ বুঝতে পেরেছিল জালিম হাসিনার পতন ছাড়া এই বিভৎস জুলুম থেকে মুক্তির আর কোন পথ নাই। ২৪-এর গণআন্দোলনে জনগণের বিশেষ করে ইসলামপ্রিয় জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের একটি বড় কারণ ছিল হাসিনা সরকারের ইসলামবিদ্বেষী নীতি ও কর্মকান্ড। জনগণের আকাঙ্খা ছিল গণআন্দোলন পরবর্তী বাংলাদেশ ২.০ তে এসকল কুখ্যাত বাহিনী, জড়িত ব্যক্তিরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যেমন পাবে তেমনি রাষ্ট্রের কোন স্তরে আর এধরণের বিভৎস নির্যাতনের কাঠামোই থাকবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, অপরাধী প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি এবং অপরাধের প্রমাণগুলো ডকুমেন্টেড করতেই সরকারের আন্তরিকতা দৃশ্যমান নয়। বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ আয়নাঘরের প্রমাণ মিলেছে, মুছে ফেলা হয়েছে আলামত : গুম কমিশন, কালের কন্ঠ, ০৩ অক্টোবর, ২০২৪)। শুধু কি তাই, সম্প্রতি সরকার অপরাধের অন্যতম অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান সিটিটিসির সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করার জন্য বন্দি নির্যাতনের উপায়গুলোর আবিষ্কারক ও প্রশিক্ষক, ইরাক-আফগানিস্তানের কুখ্যাত আবু গারিব, বাগ্রাম কারাগার পরিচালনাকারী মার্কিনীদের সাহায্য গ্রহণ করছে। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ সিটিটিসির সক্ষমতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে এফবিআই এর প্রতিনিধি দলের সিটিটিসি কার্যালয় পরিদর্শন, ডিএমপিনিউজ, জানুয়ারি ২২, ২০২৫)। উল্লেখ্য, ওয়ার অন টেরর প্রকল্পের অংশ হিসাবে আমেরিকা বাংলাদেশে র‌্যাব গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্যাতনের বিভিৎস পদ্ধতিগুলো শিক্ষা দিয়েছিল। বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ যেভাবে র‍্যাব গঠিত হয়, ইত্তেফাক, ১২ ডিসেম্বর ২০২১)। আমেরিকার র‌্যাব গঠনের পিছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে রাজনৈতিক ইসলাম বা খিলাফতের পুনঃপ্রতিষ্ঠাকে ঠেকানোর জন্য মুসলিমদের নির্যাতনের মাধ্যমে আতঙ্কিত করা। আয়নাঘরের অভ্যন্তরে অঙ্কিত দেয়াল লিখনগুলো তার খন্ডিত প্রমাণ মাত্র। 

প্রশ্ন হচ্ছে কেন আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা মুসলিম হওয়ার পরেও, মুসলিম নারী-পুরুষের উপর এরকম বর্বর নির্যাতন করছে? তারা কি ভুলে গেছে “যারা মু’মিন পুরুষ ও নারীদের প্রতি যুলম পীড়ন চালায় অতঃপর তাওবাহ করে না, তাদের জন্য আছে জাহান্নামের শাস্তি, আর আছে আগুনে দগ্ধ হওয়ার যন্ত্রণা” (আল-বুরুজ, আয়াত ১০)। এই সকল অন্যায়কারীরা অনেকসময় দাবি করে তারা চাকরি রক্ষার জন্য তাদের উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশ পালন করেছে। তাদের এই অজুহাত কি আল্লাহ্‌’র নিকট গ্রহণযোগ্য হবে? রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “পাপ কাজের আদেশ না করা পর্যন্ত ইমামের (দায়িত্বশীল) কথা শোনা ও তার আদেশ মান্য করা অপরিহার্য। তবে পাপ কাজের আদেশ করা হলে তা শোনা ও আনুগত্য করা যাবে না।” (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৯৫৫)। তাদের সুপ্রিম উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জালিম হাসিনা কি নিরাপদে দেশ থেকে পালানোর সময় তাদের কথা চিন্তা করেছে? না! অর্থাৎ, হাসিনার জুলুম টিকিয়ে রাখার হাতিয়ার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শুধুমাত্র আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির জন্য অপেক্ষা করছে না, বরং তাদের দুনিয়ার জীবনও ক্ষতিগ্রস্ত। 

আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা, আপনাদের জ্যাতার্থে একটি ঘটনা মনে করিয়ে দিতে চাই। ইকরামা ইবনে আবু জাহেল যে মক্কা বিজয় পর্যন্ত ইসলাম এবং মুসলিমদের ক্ষতিসাধনে ছিল অগ্রগামী। তার অপরাধের মাত্রা এতটাই ছিল মক্কা বিজয়ে মক্কাবাসীর জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হলেও কিছু সংখ্যক ব্যাক্তির নাম কাবার গিলাফের পিছনে লুকালেও তাদের হত্যা করার নির্দেশ ছিল। তিনি ছিলেন সেই ব্যাক্তিদের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু, সে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা পার্থনা করলে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) তাকে ক্ষমা করে দেন এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আল্লাহ্‌’র কাছে এ বলে প্রার্থনা করলেন যে, “হে প্রতিপালক, আমার বিরুদ্ধে যত শত্রুতা সে করেছে এবং তোমার আলোকে নিভিয়ে দেবার যত চেষ্টা সে করেছে, তার জন্য তাকে ক্ষমা করে দাও। আমার সামনে বা পেছনে আমার সম্মানহানীর জন্য যা কিছু সে বলেছে, তার জন্যও তাঁকে ক্ষমা করে দাও।”

ইকরিমার মুখ গভীর আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। তিনি বললেন, “আল্লাহর শপথ ইয়া রাসূলুল্লাহ্, আমি শপথ করছি, যা কিছু আমি আল্লাহর পথের শত্রুতার জন্য ব্যয় করেছি, তার দ্বিগুণ আমি ব্যয় করব আল্লাহর পথে, আর ইসলামের বিরুদ্ধে যত যুদ্ধ আমি করেছি তার দ্বিগুণ যুদ্ধ আমি আল্লাহর পথে করব।”  

পূর্বের ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে পরিপূর্ণ ইসলাম (খিলাফত) প্রতিষ্ঠায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে মুক্তির পথ অনুসন্ধান করা আপনাদের জন্য কল্যাণকর নয় কি?   

    -    মো: সিরাজুল ইসলাম


Previous Post Next Post