বাংলাদেশে গণতন্ত্রের উন্নয়নে ২৯ মিলিয়ন ডলার মার্কিন বরাদ্দ কারা পেয়েছে?

 


খবরঃ

বিগত কয়েক বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠা করতে। সে লক্ষ্যে জনগণের ভোটের অধিকার পুন:প্রতিষ্ঠা করতে দৌঁড়ঝাপ করেছে ঢাকায় কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূতরা। এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প খোলাসা করে দিয়েছেন যে, বাংলাদেশের রাজনীতি শক্তিশালী করতে একটি এনজিওকে ২৯ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশে এনজিও সেক্টর, বিশেষ করে বৈদেশিক অর্থায়নে পরিচালিত এনজিওগুলোর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে এত অর্থ কারা পেয়েছে এবং কিভাবে ব্যবহার হয়েছে? (https://dailyinqilab.com/national/article/735879

মন্তব্যঃ

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির দেউলিয়াত্ব প্রকাশ করে দিয়েছে। আর এই জন্যই এই দেশের মিডিয়া ও সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এই সংবাদকে এমনভাবে উপস্থাপন করছে যাতে মূল বিতর্ক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে না হয়ে কে বা কারা এই টাকা পেয়েছে এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। বলাবাহুল্য এই মিডিয়া ও প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো করেই জানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের মত দেশগুলো কর্তৃক এভাবে বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রের নামে তাদের স্বার্থ রক্ষায় অর্থ ব্যয় করা ওপেন সিক্রেট। বিভিন্ন দেশের এনজিও, রাজনৈতিক নেতা, সরকারী আমলা, সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি, মিডিয়া প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব অনেকেই নানাভাবে নানা প্রজেক্টের নামে, দেশ-বিদেশ ভ্রমণ, প্রশিক্ষণ, সচেতনতা বৃদ্ধি ইত্যাদি নানা কর্মকান্ডের মাধ্যমে এসব অর্থ পেয়ে থাকে।

ফলে এসব মিডিয়া, বর্তমান (এনজিও) সরকার ও তার প্রতিষ্ঠানগুলো এই বক্তব্যকে ক্ষেপাটে ট্রাম্পের বেপরোয়া রাজনৈতিক বক্তব্য বলে নিজেদের মুখ রক্ষার চেষ্টা করছে। মূলত ট্রাম্পের এই ইউএসএইড বন্ধ করা, ইলন মাস্ককে ডিফেক্টো প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করা, গাজায় রিসোর্ট করার পরিকল্পনা করা, গণতন্ত্র-সমকামিতা ইত্যাদির মত আদর্শিক সম্প্রসারণের তহবিল সংকোচন করা, মুক্ত বাজার অর্থনীতির নীতিকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে আমদানিতে উচ্চহারে ডিউটি আরোপ করা ইত্যাদি নীতি প্রমাণ করে যে বিশ্বজুড়ে আমেরিকার নব্য-ঔপনিবেশিক স্বার্থ আদায়ের প্রকল্পগুলোকে এখন আর গণতান্ত্রিক আদর্শের মোড়কে সুগার কোটেড করে রাখার মানে হয় না। কারণ গণতান্ত্রিক আদর্শ নিজেই পচে গেছে। বিশ্বের সফলতম গণতান্ত্রিক শাসক যেমন ট্রাম্প, মোদি ও নেতানিয়াহু এটা প্রমাণ করেছে যে গণতন্ত্র একটি ‘ডিভাইড এন্ড রুল’ ব্যবস্থা এবং এর সুবিধাভোগ করে কেবলমাত্র ক্ষুদ্র পুঁজিবাদী ও রাজনৈতিক গোষ্ঠী। পরস্পর প্রতিযোগীগোষ্ঠীর মাধ্যমে গণতন্ত্র দেশকে বিভক্ত করে ও ধীরে ধীরে অকার্যকর করে দেয়। তাই অত্যন্ত যুক্তিসংগতভাবেই ট্রাম্প ডেমোক্রেট প্রভাবিত ডিপ ষ্টেটকে তার রাজনৈতিক গোষ্ঠী রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য এবং দেশের ও বিশ্বের বাজারকে তার আশপাশের ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেয়ার জন্য এই নীতিসমূহ গ্রহণ করেছে।

হাসিনার বিদায়ের পরও এই পঁচে যাওয়া গণতান্ত্রিক আদর্শ রেখে দেয়ার কারণে আমরাও একটা অকার্যকর দেশে পরিণত হচ্ছি। অথচ আমাদের আছে ইসলামের মত একটি শক্তিশালী আদর্শ যা মানুষকে স্বার্থের বন্ধনে নয় বরং আবদ্ধ করে স্রষ্ট্রার সাথে তার সম্পর্কের বন্ধন দিয়ে। আমরা দেখি যে, ১৩০০ বছরের অধিক সময় জুড়ে ইসলামের ভিত্তিতে বিশ্বজুড়ে মানবজাতি শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করেছে। অথচ মাত্র ২৫০ বছরেই এই স্যেকুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিশ্বে উপহার দিয়েছে নিরন্তর দারিদ্র, যুদ্ধ-গণহত্যা, অসংখ্য গৃহহীন রিফিউজি, রাজনৈতিক বিভক্তি ও অস্থিরতা। ফলে হাসিনার বিদায়ের পর নতুন বাংলাদেশ গঠনের ক্ষেত্রে যারা বলছে গণতান্ত্রিক আদর্শের বাইরে কাউকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় আনা যাবে না তাদেরকে নেতৃত্বে রাখলেই বরং আমরা আরও বিভক্ত হবো দেশ আরও অকার্যকর হবে। ইসলামের আদর্শের রাজনৈতিক দলের হাতেই বরং নেতৃত্ব ছেড়ে দেয়া উচিত যাতে মদিনা রাষ্ট্রের মত একটি ইসলামি রাষ্ট্র গঠন করা যায় যা একের পর এক সকল মুসলিম দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করবে এবং পুরো মানবজাতিকে গণতন্ত্রের মত ধ্বংসাত্মক আদর্শের হাত থেকে মুক্ত করবে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “...তারপর জুলুমের শাসনের অবসান হবে, অতঃপর আবারও ফিরে আসবে খিলাফত- নব্যুয়তের আদলে” (মুসনাদে আহমদ)।  

    -    মোহাম্মদ তালহা হোসেন 


Previous Post Next Post