খবরঃ
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘আয়নাঘর’ হিসেব পরিচিত প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেল পরিদর্শন করেছেন। এছাড়া র্যাব-২ এর সিপিসি-৩ এর ভেতরের সেলগুলোও পরিদর্শন করেন তিনি। দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম কর্মী ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে নিয়ে এই পরিদর্শনে যান তিনি। শেখ হাসিনার শাসনকালে ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬০৫ জনকে গোপনে বন্দি করে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে ৪০ জন ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় ও ৬৬ জনকে সরকারি হেফাজতে গ্রেফতার অবস্থায় পাওয়া গেছে। প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে এসব ‘বিশেষ’ স্থানে রাখা হতো। (https://www.ittefaq.com.bd/719256/দেশি-বিদেশি-গণমাধ্যমকর্মীদের-নিয়ে-আয়নাঘর-পরিদর্শনে)
মন্তব্যঃ
হাসিনার পতনের পর জনগণ আশা করেছিল পিলখানা হত্যাকান্ড, শাপলা চত্ত্বরের হত্যাকান্ড, জুলাই আন্দোলন হত্যাকান্ড এবং গুম-খুন ও জঙ্গি নাটকের মাধ্যমে সংঘটিত সকল হত্যাকান্ডের বিচার হবে। কিন্তু বিগত ৬ মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করে জনগণের মধ্যে এই বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে যে, এই সরকার এসব হত্যাকান্ডের বিচার করার কোন সদিচ্ছা রাখে না। বিতর্কিত লোকদেরকে অন্তর্ভূক্ত করে গুম ও পিলখানা হত্যাকান্ড নিয়ে কমিশন গঠন, কমিশনে ভূক্তভোগী ও অভিযোগকারীদের হয়রানী ও ভয়ভীতি-হেনস্তার কারণে এসব হত্যাকান্ডের শিকার পরিবারগুলোও এখন আর বিশ্বাস করে না যে তারা সুবিচার পাবে। এই পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের আয়নাঘর পরিদর্শন তার সরকারের বিচারিক ব্যর্থতাকে আড়াল করার দুর্বল প্রচেষ্টা মাত্র। হাসিনার গুম-খুনের অনেক জল্লাদ এই সরকারের নাকের ডগা দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছে। তাদেরকে আটক ও বিচারে ব্যর্থ এই সরকার তার ইমেজ সংকট কাটাতে সেনানিবাসের মত জাতীয় নিরাপত্তার সাথে জড়িত একটি স্থাপনায় দেশি-বিদেশি সাংবাদিক’ নিয়ে হিরোগিরি দেখাতে গিয়ে দেশের সামরিক বাহিনীর কৌশলগত গভীরতাকে কমিয়ে দিয়েছে। এই ঘটনা প্রমাণ করে বিচারিক ও প্রশাসনিক অযোগ্যতার পাশাপাশি দেশের জাতীয় নিরাপত্তাকে সুরক্ষিত রাখার কোন যোগ্যতাও এই সরকারের নেই।
আয়নাঘর ও সরকারী বহিনীর গুম-খুন কোন মূল সমস্যা নয়, বরং মূল সমস্যার সামান্য উপসর্গ মাত্র। মূল সমস্যা হল ক্ষমতায় থাকার জন্য ভয়ভীতি দেখিয়ে জনগণের কন্ঠরোধ করার মানসিকতা। আর ‘ইনক্লুসিভ সেকুরারিজম’ একটি মানবরচিত শাসনব্যবস্থা হওয়ার কারণে এই ব্যবস্থার শাসকদের মধ্যে জনগণের কন্ঠরোধ করার মানসিকতা একটি অপরিহার্য বিষয়। কারণ এই শাসকরা তাদের বিদেশী প্রভুদের স্বার্থ রক্ষায় সদাব্যস্ত, যার বিরুদ্ধে জনগণ অবধারিতভাবেই কথা বলবে এবং জনগণের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক সমস্যার যথাযথ সমাধানে এই মানবরচিত ব্যবস্থা ও এর শাসকরা অপারগ, যার ফলে জনগন তার অধিকারের প্রশ্নে ও জুলুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে। ফলে, এই অন্তর্বর্তী সরকার আয়নাঘরকে জনগণের সামনে উন্মোচন করলেও এই সরকারের বিরোধীতাকারী ও সমালোচনাকারী মানেই হাসিনার দোসর বলে রাজনৈতিক ট্যাগিং ব্যবহার করে জনগণের কন্ঠরোধের অপচেষ্টা করছে। জনগণের কন্ঠরোধ করার অপচেষ্টার অংশ হিসেবেই এই সরকার ন্যায়নিষ্ঠ রাজনৈতিক দল হিযবুত তাহ্রীর-এর উপর যালিম হাসিনার অন্যায় নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছে এবং একাধিক সদস্যকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় বিনাবিচারে কারাগারে আটকে রেখেছে। তাছাড়া, ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করার কারণে নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী বহিস্কার প্রমাণ করে সরকার দেশে এখনো ভীতির পরিবেশ বজায় রাখতে ও জনগণের কন্ঠরোধ করে মানবরচিত ‘ইনক্লুসিভ সেকুরারিজম’কে টিকিয়ে রাখতে উদগ্রীব।
- রিসাত আহমেদ
