ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল চলতি মাসের শেষে



খবরঃ 

জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তথা এ দুই প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ে নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে নানান আলোচনা। কবে নাগাদ দলটি আত্মপ্রকাশে আসবে, দলের নাম কী হবে—এ নিয়ে মানুষের কৌতূহলও বাড়ছে। তবে ২০ ফেব্রুয়ারির পর নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা আসতে পারে বলে কালবেলাকে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিনসহ একাধিক নেতা। এর আগে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলেছিলেন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশে আসবে। কিন্তু সংগঠনের কাজ শেষ না হওয়ায় পিছিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে হতে পারে। বর্তমান সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে থেকে কয়েকজন নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দেবেন (https://www.kalbela.com/ajkerpatrika/firstpage/161835

মন্তব্যঃ 

যেকোন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার পিছনে সাধারণত দুই ধরনের উদ্দেশ্য কাজ করে। প্রথমতঃ বিদ্যমান আদর্শকে অপসারণ করে নতুন একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করা, আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, আদর্শিক রাষ্ট্রটি আদর্শ থেকে উৎসারিত বিধি-বিধান দ্বারা অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিকভাবে জনগণের সঠিক তত্ত্বাবধান করছে কিনা সে ব্যাপারে সরকারকে জবাবদিহি করা। তাহলে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বাধীন নতুন রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য কি হতে পারে? এ বিষয়ে, নাহিদ ইসলাম তার এক সাক্ষাৎকারে বলেছে, “তাছাড়া, ইসলামিক রাজনীতিতে জনগণের আস্থা নেই। এই রাজনীতির ভবিষ্যৎও নেই বাংলাদেশে”। কিন্তু তিনি কিভাবে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি।  তাছাড়া, বইমেলায়, তৌহিদী জনতা ইসলাম বিদ্বেষী লেখিকা তসলিমা নাসরিনের বইপ্রদর্শনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম তৌহিদী জনতাকে হুমকি দিয়ে বলেছে, “অভ্যুত্থানের পক্ষে হলে মব করা বন্ধ করেন, আর যদি মব করেন, তাইলে আপনাদেরও ডেভিল হিসাবে ট্রিট করা হবে।” অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা তার দৃষ্টিতে মব! যাহোক, তাদের এই বক্তব্য থেকে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে উপরে উল্লেখিত দুটি উদ্দেশ্যের কোনটিই যে নয় তা সম্পূর্ণই পরিষ্কার। অর্থাৎ, না তাদের রাজনৈতিক দল গঠনের পেছনে বর্তমান সেক্যুলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিপরীতে অন্যকোন রাজনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, না অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিকভাবে জনগণের বিষয়াদি দেখাশোনা করা। বরং সেক্যুলার রাজনীতিকে নতুন মোড়কে পুনঃপ্রতিষ্ঠাই তাদের রাজনৈতিক দল গঠনের মূল উদ্দেশ্যে, কেননা কোন রাজনৈতিক দল গঠন যদি জনগণের বিশ্বাসের ভিত্তিতে না হয় এবং জনগণের বিশ্বাস থেকে উৎসারিত জীবনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা কেন্দ্রিক না হয় তাহলে স্বভাবতই তা ব্যক্তিস্বার্থ, ক্ষুদ্র পুঁজিপতিদের স্বার্থ কিংবা বিদেশি কোন শক্তির স্বার্থ বাস্তবায়ন কেন্দ্রিক হয়। আর সেক্যুলার রাজনীতির কাজই হচ্ছে এসকল বিষয় নিশ্চিত করা। ছাত্রদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য যে তাই তা মার্কিন সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত অন্তর্বর্তীকাল সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মোঃ ইউনূসের বক্তব্যের মাধ্যমেই পরিষ্কার। যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশে ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সম্ভাবনা আছে, তারা এরমধ্যেই দেশজুড়ে প্রচার চালাচ্ছে, মানুষজনকে সংগঠিত করছে।” এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হচ্ছে, যারা এই দলের নেতৃত্বে থাকবে বলা হচ্ছে, তারা এখনও প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তী কালীন সরকারের উপদেষ্টা পদে রয়েছেন। যে রাজনৈতিক দলের নেতারা সরকারে অধিষ্ঠিত রয়েছে, তারা কিভাবে সরকারকে জবাবদিহি করবেন? আমরা দেখেছি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মার্কিন প্রশাসনের সাথে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় গ্যাসচুক্তি করেছে, এবং তা হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর প্রথম চুক্তি (দেখুনঃ “এলএনজি সরবরাহে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় চুক্তি”)। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আগ্রাসনের অংশ হিসেবে ভারতীয় বিএসএফ বাংলাদেশ বর্ডারে কাঁটাতারে বেড়া নির্মাণের চেষ্টা করলে সীমান্তবর্তী সাধারণ জনগণ তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তুললেও অন্তবর্তী কালীন সরকারের ছাত্র উপদেষ্টা যারা নতুন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য নেতা তারা কোন প্রতিবাদ করেনি। এছাড়া, মার্কিন প্রতিষ্ঠান আইএমএফ থেকে ঋণের নেয়ার শর্তে দেশের জনগন এবং শিল্পকারখানার উপর করের বোঝা চাপিয়ে আমাদের অর্থনীতির উপর নয়া মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ কায়েম করছে। যারা দেশের সার্বভৌমত্ব, জ্বালানী এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সম্পূর্নভাবে মার্কিন-ভারতের হাতে তুলে দিচ্ছে সেকল উপদেষ্টাদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল কিভাবে দেশের কল্যান সাধন করবে?  

সুতরাং পশ্চিমাদের চাপিয়ে দেওয়া ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি এবং এর ভিত্তিতে গঠিত কোন রাজনৈতিক দল জনগণের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন বয়ে আনবে না। এই রাজনীতির অপশাসনের বিরুদ্ধে জনগণ বিদ্রোহ করলে পশ্চিমারা শাসকের চেহারা পরিবর্তন করে অন্য রাজনৈতিক দলগঠন করে সেটিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসে। তাই দশকের পর দশক আমরা প্রত্যক্ষ করছি, আমাদের দেশে বার বার শাসকগোষ্ঠীর চেহারা পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু জনগণের জীবনযাত্রার মৌলিক কোন পরিবর্তন হয়নি। বরং ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যারাই ক্ষমতায় এসেছে, তারা তাদের আইন প্রণয়নের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ, কিছু পুঁজিপতিদের স্বার্থ এবং তাদের বিদেশি প্রভুদের স্বার্থ পূরণ করেছে। সুতরাং নতুন চেহারায় পতিত হাসিনার ফেলে যাওয়া ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতি জনগণের উপর নয়া জুলুম চাপিয়ে দেয়ার পথ সুগম করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, “আর যারা আল্লাহর বিধান দ্বারা শাসনকার্য পরিচালনা করে না তারাই জালেম” (সূরা মায়েদাঃ ৪৫)। 

    -    আবি আব্দুল্লাহ্‌ 


Previous Post Next Post