এরদোগানের একে পার্টিসহ তিন দেশের চার দলের আদলে নতুন দল করতে চান ছাত্ররা



খবরঃ 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের এক দফার পাশাপাশি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তারই অংশ হিসেবে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রনেতারা একটি রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেন।…দল গঠনের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন তরুণ নেতা জানান, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে এবং দেশের বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়ে তারা নতুন দল নিয়ে কাজ করছেন। সেই সঙ্গে একক কোনো ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলের আদর্শে নয়; বরং বিশ্বব্যাপী দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী বিভিন্ন দেশের সফল রাজনৈতিক দলগুলোর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চান। আপাতত তিন দেশের চারটি জনপ্রিয় দলকে নিয়ে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। সেগুলো হলো তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (একে) পার্টি ও দেশটির অনেক পুরনো দল জাস্টিস পার্টি, পাকিস্তানের দল ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) এবং ভারতের অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম-আদমি পার্টি। দলগুলোর গঠন ইতিহাস, আদর্শ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, মোটো বা স্লোগানসহ বিভিন্ন বিষয় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। (https://bonikbarta.com/bangladesh/kOdiNgSVDhcQsU7K)

মন্তব্যঃ

এই নতুন দল এমন চারটা দলকে রোলমডেল হিসেবে বেছে নিতে চাচ্ছে যারা এই মধ্যমপন্থা অনুসরণকারী হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এই চারটা ‘মধ্যমপন্থা’ দল কতটা সফল? যেমন ভারতের আম আদমি পার্টি ভারতের জাতীয় নির্বাচনে ২০১৪ সালে ২% এবং ২০১৯ সালে ০.৫% ভোট পেয়েছে। পাকিস্তানের তেহরিক-এ-ইনসাফ পার্টিও ২০১৮ সালে মাত্র ৩২ শতাংশ ভোট পেয়ে জোট সরকার গঠন করে ৩ বছর ৮ মাসের মাথায় ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। অন্যদিকে, তুরষ্কের জাস্টিস পার্টি ‘মধ্যমপন্থা’ ও প্রকাশ্য ‘মার্কিনপন্থা’ অবলম্বন করতে গিয়ে ক্ষমতাচ্যুত হয় এবং ১৯৮১ সালে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। মার্কিন পন্থী এরদোয়ানের একে পার্টি জনগণের ইসলামী আবেগকে ব্যবহার করে ক্ষমতাসীন হয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন ইস্যুতে মার্কিন স্বার্থ রক্ষাসহ বিশেষ করে গণহত্যাকারী অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের সাথে সাথে তার বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যচুক্তির কারণে সে এখন ব্যাপক বিতর্কিত।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের বোঝা উচিৎ, দিনশেষে ‘মধ্যমপন্থা’ বলতে সেকুলারিজমকেই বোঝায়। ইউরোপের অন্ধকার যুগে খৃষ্টান চার্চের সহায়তায় রাজাদের অত্যাচারী শাসনের বিরুদ্ধে যখন একটি শ্রেণী তা অস্বীকার করে বিদ্রোহ করে তখন দুই শ্রেণীর আপোষ হিসেবে মধ্যমপন্থা অর্থাৎ খৃষ্টান ধর্ম শুধু ব্যক্তিগত জীবনে থাকবে আর রাষ্ট্র-সমাজ চলবে মানুষের আইন দ্বারা- এই আপোষকামী মতাদর্শের উদ্ভব হয়, যা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ নামে পরিচিত। আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো এই মতাদর্শের ভিত্তিতে তাদের রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনা করছে এবং একটি পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। পশ্চিমা দেশসহ বিশ্বব্যাপী মানুষ এই বিশ্বব্যবস্থার নিষ্পেষনের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করছে। যালিম হাসিনাও এই সেকুলার মতাদর্শের দ্বারা দুঃশাসনের রাজত্ব কায়েম করে যার বিরুদ্ধে এই জুলাই গণআন্দোলন হলো। সুতরাং, নতুন বোতলে সেই একই পুরান মদ জাতির সামনে উপস্থাপনে ‘মধ্যমপন্থা’ নামক সুশোভিত শব্দমালা আনা জনগণের সাথে প্রতারণার শামিল। 

ইউরোপে খৃস্টান ধর্মের অভিজ্ঞতা ইসলামের উপর চাপিয়ে দেয়া একটি চিন্তাহীন আচরণ; কারণ একই সময়ে ইসলামী খিলাফত শাসনের অধীনে উসমানী সাম্রাজ্য উন্নতি ও উৎকর্ষে বিশ্বে নজির স্থাপন করেছিল, যা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। কারণ ইসলামী শাসনের মূলমন্ত্র হচ্ছে আইনের একমাত্র উৎস হচ্ছে কুর‘আন, সুন্নাহ্‌, ইজমা ও কিয়াস আর শাসক হিসেবে খলিফার কাজ ছিল শুধুমাত্র তা বাস্তবায়ন করা, আর অন্যদিকে খৃস্টান ধর্ম যেহেতু শুধুই ধর্ম, তাই চার্চ ও রাজা তাদের খেয়ালখুশী মত আইন-কানুন মানুষের উপর চাপিয়ে দিয়ে শোষন করতো। ছাত্র-জনতা জুলাই আন্দোলন করেছে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের যুলুমের বিরুদ্ধে, তাই নতুন কোন দলকে অবশ্যই সেই স্পিরিট ঠিক রেখে রাজনীতিতে আসতে হবে। এই দেশের অধিকাংশ মানুষের বিশ্বাস হচ্ছে ইসলাম, তাই স্বাভাবিকভাবেই এখানে ভিন্ন কিছু প্রত্যাখ্যাত হবে, যেভাবে এখানে ধর্মনিরপেক্ষতা, বামপন্থার রাজনীতি প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তাই, তথাকথিত ডানপন্থা, বামপন্থা কিংবা মধ্যম পন্থা নয়, বরং ইসলামপন্থার রাজনীতিই হতে হবে ভবিষ্যত বাংলাদেশের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। তবেই প্রকৃতপক্ষে বৈষম্যহীন ও মার্কিন-বৃটেন-ভারতের আধিপত্য মুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব। 

আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, আল্লাহ্‌ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি অবশ্যই তাদেরকে পৃথিবীতে শাসন ক্ষমতা দেবেন, যেমন তিনি তাদের পূর্ববর্তীদের দিয়েছিলেন” [সূরা নূরঃ ৫৫]

    -    জাবির জোহান


Previous Post Next Post