খবরঃ
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পিলখানায় বীর সেনা সদস্যদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর অনেকগুলো বছর ধরে জাতি হিসেবে আমাদের নানা বিভ্রান্তিতে রাখা হয়েছে। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এই নির্মমতার সুবিচার নিশ্চিত করতে দায়বদ্ধ। আজ মঙ্গলবার ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে এ কথা বলেন তিনি। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'শহীদ পরিবারের সদস্যরা একান্ত প্রিয়জন হারানোর এতগুলো বছর পরেও স্বজন হত্যার বিচার পেতে অপেক্ষা করে আছেন। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। সমব্যথী হয়ে দেশ ও জনগণ শহীদ পরিবার ও সকল নিপীড়িতের পাশে দাঁড়াবে, একইসঙ্গে সেই আশাবাদ রাখছি।' (https://bangla.thedailystar.net/news/bangladesh/news-653906)
মন্তব্যঃ
পিলখানা হত্যাকান্ড নিয়ে পতিত হাসিনা সরকার জনগণকে ‘ডাল-ভাত’ এর গল্প শুনিয়ে ও লোকদেখানো বিচার কার্যক্রম এর মাধ্যমে প্রতারণা করেছে। হাসিনার পলায়নের পর জনগণের অন্যতম প্রত্যাশা পিলখানা হত্যাকান্ডের বিচারে কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে, বরং অন্তর্বর্তী সরকারও এই হত্যাযজ্ঞের ক্ষতকে আপাত মলম দিতে ঢেকে রাখতে নামেমাত্র একটি ‘জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন’ গঠন এবং একটি দিবস ঘোষণা করেছে। এর পাশাপাশি আমরা দেখছি, যে ভারতের পরিকল্পনায় আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীর এত বড় ক্ষতি হয়ে গেল সেই ভারতের সাথে দেশবিরোধী কোন চুক্তিই ইউনুস সরকার বাতিল করেনি। পিলখানা হত্যাকান্ডে শহীদ সেনাঅফিসারদের স্ত্রী-পুত্র-কন্যারাও প্রায়ই বিভিন্ন ফোরামে বলে আসছেন যে, এই হত্যাকান্ডের পেছনে হাসিনা ও ভারতের প্রত্যক্ষ হাত রয়েছে। সর্বোপরী, বাংলাদেশের প্রথম যে রাজনৈতিক দল পিলখানা হত্যাকান্ডে হাসিনা ও ভারতের ষড়যন্ত্রের মুখোশ উন্মোচন করেছিল এবং যার ফলে হাসিনা সরকারের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছিল, এখন পর্যন্ত সেই সত্যনিষ্ট দল হিযবুত তাহ্রীর-এর উপর হাসিনার রেখে যাওয়া অন্যায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়নি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পিলখানা হত্যাকান্ডে কার স্বার্থ জড়িত এবং আমাদের দেশের মার্কিন-ভারতের দালালগোষ্ঠী কেন এর বিচারের ব্যাপারে নিশ্চুপ? এই হত্যাকান্ডের পিছনে শুধুমাত্র যে ভারতের সম্পৃক্ততা রয়েছে তা নয় বরং এখানে যুক্তরাষ্ট্রেরও স্বার্থ জড়িত। এই অঞ্চলে চীনের উত্থান ঠেকানো এবং ইসলামী রাষ্ট্র তথা খিলাফতের আবির্ভাবকে রুখে দেয়া - এই দুই উদ্দেশ্য নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে তার কার্যক্রম পরিচালনা করে। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে এখানে আঞ্চলিক চৌকিদার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। আর ভারত যাতে কোনরকম বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন না হয় এবং একাগ্র চিত্তে চীনের বিরোধীতা করতে পারে সেটার ব্যবস্থা হিসেবে এই অঞ্চলে ভারতের আধিপত্য বিস্তারে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি কাজ করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজি এর একটি উদাহরন। এমনই ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, ২০০৮ সালে মার্কিন-বৃটেন-ভারতের সমঝোতায় হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানোর পর বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে দূর্বল করতে এবং ভারতের সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনের পথে বাধা এসব মেধাবী ও চৌকষ সেনাঅফিসারদের হত্যা করা হয়। আর এই কারণেই আমরা দেখি যে, মার্কিন-ভারতের অনুগত গোষ্ঠী পিলখানা হত্যকান্ডের বিচারের ব্যাপারে নীরব থাকে। সুতরাং ভবিষ্যতে এই অনুগত গোষ্ঠী ক্ষমতায় আসলেও যে পিলখানা হত্যাকান্ডের কোন বিচার হবে না তা চোখ বুজেই বলে দেয়া যায়। এদের ব্যাপারে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “আর তোমাদের মধ্যে যে কেউ তাদের (কাফিরদের) সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে অবশ্যই তাদেরই একজন” [সুরা আল মায়িদাহ ৫১]।
বর্তমান সেকুলার-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যেই ক্ষমতায় আসুক না কেন তারা তাদের প্রভু মার্কিন-ভারতের বিরুদ্ধে যায় এমন কোন কার্যক্রম হাতে নিবে না। তাছাড়া, বৃটিশদের রেখে যাওয়া বিচার ব্যবস্থা অনুযায়ী একটি মামলা রায় হয়ে যাওয়ার পর, আপিল বিভাগে দোষীদের খালাস কিংবা শাস্তির মেয়াদ বাড়ানো ছাড়া আর কিছু করার সুযোগ নাই; পিলখানা হত্যা মামলায় যেহেতু ইতিমধ্যে বিডিআর সদস্যদের বিচার হয়ে গেছে, তাই হাসিনা ও তার দুর্বৃত্ত সহযোগীদের এখানে বিচারের আওতায় আনার সুযোগ নাই। তাই, বর্তমান সেকুলার-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কখনোই পিলখানা হত্যাকান্ডের বিচার করা সম্ভব নয়। একমাত্র খিলাফত রাষ্ট্রই পারবে ভারতের কার্যক্রমের কারণে একে শত্রুরাষ্ট্র ঘোষণা করতে এবং পিলখানা হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার সম্পাদন করতে। কুরআন-সুন্নাহ্’র ভিত্তিতে হিযবুত তাহ্রীর কর্তৃক প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৫ (খ) অনুযায়ী: “ইসলাম ও মুসলিমদের ক্ষতির সাথে সম্পর্কিত যা পুর্ববর্তী শাসক ও তাদের অনুসারীরা করেছিল, এধরণের মামলা পুনর্বিবেচনা করা খলীফার জন্য বৈধ।” খিলাফত রাষ্ট্র মার্কিন-ভারতের তাবেদার কোন রাষ্ট্র নয়, বরং ইসলামের পররাষ্ট্র নীতি অনুযায়ী ভারতকে শত্রুরাষ্ট্র ঘোষণা করবে এবং তার সাথে সম্পর্কের ধরণ নির্ধারণ করবে।
- মোঃ হাফিজুর রহমান
Tags:
জাতীয়