নটরডেম কলেজ শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী কন্ঠকে রোধ করতে নটরডেম কলেজ প্রশাসনকে চাপ দিয়েছে মার্কিন দূতাবাস

 



খবরঃ 

নটরডেম কলেজের ২ জন ছাত্রকে বহিষ্কার এবং ৩৩ জনকে সাসপেন্ড করা হয় আমেরিকা ও অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করায়। অনলাইনে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী এক শিক্ষার্থী তার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, “…ফাদাররা বলেন যে, আমেরিকান এম্ব্যাসি থেকে তাদেরকে ফোন দিয়ে চাপ প্রয়োগ করেছে কেন নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা আমেরিকার পতাকা পুড়িয়েছে। এম্ব্যাসি থেকে বলেছে যারা ছিলো তাদেরকে শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিতে।” (সূত্রঃ এনডিসি নিউজ নেটওয়ার্ক)

মন্তব্যঃ 

মার্কিন দূতাবাসের চাপে নটরডেম কলেজ কর্তৃপক্ষ ২ জন ছাত্রকে বহিষ্কার এবং ৩৩ জনকে সাসপেন্ড করার যে ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে তা সত্যিই অগ্রহণযোগ্য। কিছুদিন আগে মার্কিন সন্ত্রাসী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা দখলের হুমকির সাথে সাথে মুসলিম উম্মাহ্‌ক্ষোভে ফেটে পড়ে এর প্রতিবাদ জানায়। নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরাও তখন বাংলাদেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মত তাদের অবস্থান থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন ঔদ্ধত্যের প্রতিবাদ জানাতে রাজপথে নেমে আসে। কিন্তু, তাদের এমন প্রতিবাদের প্রশংসা না করে উল্টো নটরডেম কর্তৃপক্ষ আশ্চর্যজনকভাবে মার্কিন দূতাবাসের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার এবং সাসপেন্ড করে। স্পষ্ট জুলুম এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের এহেন প্রতিবাদে বাঁধা দিয়ে তবে কি নটরডেম কর্তৃপক্ষ অন্যকারো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে? যেখানে একটা দেশ সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম গুরদায়িত্ব শিক্ষার্থীদের অন্যায় এবং জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শিখানো। সেখানে তা না করে উল্টো শিক্ষার্থীদের শাস্তির পদক্ষেপ প্রমাণ করলো নটরডেম কলেজ শিক্ষাদানের আড়ালে মূলত পশ্চিমাদের মিশনারি এজেন্ডা বাস্তবায়নের কাজে নিবেদিত। ১৯৪৯ সালে কংগ্রিগেশন অব হলিক্রস (ফ্রান্সের লে ম্যানস্‌ থেকে পরিচালিত)-এর পাদ্রীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নটরডেম কলেজ মূলত ক্রিস্টিয়ান মিশনারীদের দ্বারা পরিচালিত। সুতরাং, শিক্ষার আড়ালে নটরডেম এর প্রকৃত এজেন্ডা বুঝতে হলে আমাদের বুঝা জরুরী ক্রিস্টিয়ান মিশনারীদের পরিচয় এবং কি এজেন্ডা নিয়ে তারা সারাবিশ্বে কাজ করছে বিশেষ করে মুসলিম ভূমিগুলোতে। এছাড়া, এটাও বুঝা জরুরী যুক্তরাষ্ট্র সহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলো কেন প্রতিবছর শুধুমাত্র মিশনারি এজেন্ডার পিছনে লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করছে। 

মূলত, ১৬ শতাব্দিতে খিলাফত রাষ্ট্র এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের নিমিত্তে পশ্চিমারা তাদের মিশনারি সংস্থাগুলোর মিশন শুরু করে। প্রথমে তারা বর্তমান লেবাননের বৈরুতে একটা মিশনারি সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে। পরে ১৮-১৯ শতাব্দির মধ্যে মালটা এবং আল-শামের মধ্যে আরও কিছু মিশনারি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে কার্যক্রম পরিচালনা করে। এসব মিশনারি সংস্থাগুলোর মুসলিম এবং খিলাফত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করার অন্যতম পদ্ধতি ছিলো (১) বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে স্কুল, কলেজ, বিশ্ব-বিদ্যালয়, বুক-পাবলিকেশন এবং সাইন্টিফিক সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে এগুলোর আড়ালে মুসলিম শিক্ষার্থীদের মাঝে তাদের পশ্চিমা ধ্যান-ধারণা প্রচার করা, (২) পশ্চিমা সভ্যতা এবং সংস্কৃতিকে মহামান্বিত করে মুসলিম শিক্ষার্থীদের চিন্তার উপর পশ্চিমা চিন্তার বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা যাতে মুসলিম শিক্ষার্থীরা জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে ইসলামের পরিবর্তে পশ্চিমা কুফর জীবনব্যবস্থাকে প্রাধান্য দেয়, (৩) মুসলিম শিক্ষার্থীদের মাঝে তাদের ইসলামি আকীদা সম্পর্কে সন্দেহ তৈরি করা বিশেষ করে ইসলামি আকীদাকে মানুষের জীবন, রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা থেকে আলাদা করে ফেলা যেন মুসলিমদের নতুন উঠতি জেনারেশন ইসলামকে আর রাষ্ট্র এবং সমাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে গ্রহণ না করে। এবং (৪) মুসলিমভূমিগুলোতে অবস্থিত ক্রিস্টিয়ানদের বিভিন্ন ধরনের আর্থিক এবং মানবিক সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের ষড়যন্ত্রে শামীল করা। এইকাজে তৎকালীন সময়ে অন্যান্য মিশনারিদের মধ্যে আমেরিকার কুখ্যাত মিশনারি এলি স্মিথ এবং তার স্ত্রী উল্লেখযোগ্যভাবে সক্রিয় ছিলো। এর ধারাবাহিকতায় ফ্রান্স মিশনারিরা বৈরুতে ১৮৬০ এর দিকে সেন্ট জোসেফ জেসুইট ইউনিভার্সিটি এবং আমেরিকান মিশনারিরা ১৮৬৬ সালে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব বৈরুত প্রতিষ্ঠা করে। মুসলিম শিক্ষার্থীদের মাঝে পশ্চিমা ধ্যান-ধারনার প্রতি সহানুভূতি এবং ইসলামের প্রতি বিদ্ধেষ ছড়াতে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অন্যতম ছিলো। এমনকি, ১৯২৪ সালের ৩রা মার্চ মুসলিমদের রক্ষা-কবচ খিলাফাহ্‌ রাষ্ট্র ধ্বংস হওয়ার পিছনে এসব মিশনারি সংস্থাগুলোর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য ছিলো। সুতরাং, বাংলাদেশেও নটরডেম, সেন্ট জোসেফ, হলিক্রস, সেন্ট জেভিয়ারস্‌, এবং সেন্ট গ্রেগরি'স এর মত প্রতিষ্ঠানগুলোকে মিশনারিদের ইসলাম বিদ্ধেষী মিশনের এজেন্ডার বাহিরে দেখার সুযোগ নেই। তাই স্বাভাবিকভাবে এসব প্রতিষ্ঠান মুসলিমদের বিরুদ্ধে শত বছর ধরে জুলুম, অত্যাচার এবং নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে বাঁধা তৈরি করবে এমনটাই স্বাভাবিক।  মূলত, এরা মুসলিমভূমিগুলোতে বর্তমান মুসলিম জেনারেশনের মধ্যে পুনরায় ইসলামের নেতৃত্বের উত্থানে ভীত-সন্ত্রস্ত। এদের তীল তীল করে গড়ে তোলা সাম্রাজ্যের অতিদ্রুত পতনের আশঙ্কায় পাগলপ্রায়। এমতাবস্থায়, মুসলিম শিক্ষার্থীদের এবং মুসলিম উম্মাহ্‌’র জোড়ালো আহবান হওয়া উচিত মুসলিম ভূমি থেকে এদের বিতাড়িত করা এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ খিলাফত রাষ্ট্রের অধীনে নেওয়ার। 

    -    আসাদুল্লাহ্‌ নাঈম


Previous Post Next Post