পুরনো চার বিভাগকে চারটি প্রদেশে ভাগ করার সুপারিশ

 



খবরঃ

পুরনো চার বিভাগকে চারটি প্রদেশে ভাগ করে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা চালু করার সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। সেই সঙ্গে পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদ শক্তিশালী করে জেলা পরিষদ বাতিলের প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিদ্যমান পদবি পরিবর্তন করার সুপারিশও করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন তুলে দেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী।…প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, দেশের পুরাতন চারটি বিভাগের সীমানাকে চারটি প্রদেশে বিভক্ত করে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব এসেছে। এর ফলে এককেন্দ্রিক সরকারের পক্ষে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার সুযোগ হ্রাস পাবে। পাশাপাশি রাজধানী ঢাকা শহরের ওপর চাপ হ্রাস পাবে। রাজধানী ঢাকা মহানগরীর জনসংখ্যা ও পরিষেবার ব্যাপ্তির কথা বিবেচনায় রেখে দিল্লির মতো ফেডারেল সরকার নিয়ন্ত্রিত ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট বা রাজধানী মেয়াদি মহানগর সরকার গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। অন্যান্য প্রদেশের মতো এখানেও নির্বাচিত আইনসভা ও স্থানীয় সরকার থাকবে। (ekattor.tv/national/74903/পুরনো-চার-বিভাগকে-চারটি-প্রদেশে-ভাগ-করার-সুপারিশ)

মন্তব্যঃ 

রাষ্ট্রীয় সেবা এবং ব্যবস্থাপনার সুবিধার জন্য প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। কিন্তু, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের নামে রাষ্ট্রকে স্বতন্ত্র প্রদেশে বিভক্তি রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে দুর্বল করে তুলতে পারে। প্রাদেশিক ব্যবস্থায় প্রত্যেকটি প্রদেশের পৃথক আইন সভা এবং শাসন ব্যবস্থা থাকে। প্রদেশগুলোতে আইন ও শাসনব্যবস্থায় পার্থক্য থাকে। প্রত্যেকটি প্রদেশ তার ব্যায় নির্বহ করার জন্য শুল্ক-কর ধার্য করতে পারে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া প্রদেশগুলো কেন্দ্র থেকে আর্থিক সহয়তা গ্রহণ করতে পারে না। তাই প্রাদেশিক ব্যবস্থায় প্রদেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বৈষম্য যেমন প্রকট হয় তেমনি রাষ্ট্র কাঠামোও হয় দুর্বল। প্রাকৃতিক সম্পদ এবং অর্থনৈতিক সুযোগের ভিন্নতার কারণে সম্পদের হিস্যা এবং বন্টন নিয়ে প্রদেশগুলোর জনগণের মধ্যে অসন্তোষ অস্বাভাবিক নয়। এই ব্যবস্থায় এক দেশের ভিতরে অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশ সৃষ্টি হয়, যা গোটা রাষ্ট্রকে দুর্বল এবং ভঙ্গুর করে রাখে। উদাহরণস্বরূপ, উত্তর ভারতের ৭টি রাজ্য যা সেভেন সিষ্টার নামে বেশী পরিচিত ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাচ্ছে তার অন্যতম কারণ হচ্ছে ভারতের কেন্দ্রীয় শাসকগোষ্ঠী এই অঞ্চল থেকে সুবিধা নিলেও এই অঞ্চলের জনগণের জীবনমান উন্নায়নের জন্য উল্লেখযোগ্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেনা। একই সমস্য ভারতের, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, পাকিস্তানের বেলুচিস্তানসহ সকল ফেডারেল রাষ্ট্রে বিদ্যমান। 

তাছাড়া, বাংলাদেশকে চারটি রাজ্যে বিভক্ত এর নিরাপত্তা ঝুঁকি বৃদ্ধি করবে। বিশেষ করে যখন, পার্বত্য চট্রগ্রাম, কক্সবাজারকে নিয়ে উপনিবেশবাদীদের ষড়যন্ত্রের কথা যখন আমাদের কারোই অজানা নয়। সংস্কার কমিটি কার স্বার্থে এই রকম আত্মঘাতী প্রস্তাব করছে? এবং বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থা ও দুর্নীতিগ্রস্ত সেকুলার রাজনীতিবিদদের বহাল রেখে শুধুমাত্র প্রাদেশিক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন জনগণের সেবা প্রাপ্তির পথ সুগম করবে না, কারণ এই ব্যবস্থায় জনগণের সেবা প্রাপ্তির অধিকার আইনসভার সিদ্ধান্ত ও শাসকগোষ্ঠীর খেয়াল খুশির উপর নির্ভরশীল। 

শক্তিশালী সরকার কাঠামোতে শাসন ব্যবস্থা থাকে কেন্দ্রীভূত কিন্তু প্রশাসন থাকে বিকেন্দ্রীভূত, যা একমাত্র আমরা ইসলামী শাসনব্যবস্থায় দেখতে পাই। ইসলামে ফেডারেল বা অটোনোমাস শাসন কাঠামোর কোন স্থান নাই। এখানে শাসন এককেন্দ্রিক ও অভিন্ন শারীআহ্‌ আইন দ্বারা পরিচালিত। জনগণ আল্লাহ্‌’র আইন দ্বারা শাসনের শর্তে শাসনভার খলিফার হাতে প্রদান করে, এবং খলিফা তার সহযোগী ও সহকারী শাসক এবং প্রশাসকদের মাধ্যমে সমগ্র ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিটি জনগণের সমান দেখভালের দায়িত্ব নেন। রাষ্ট্রের সকল স্থানে একই আইনের অধীনে পরিচালিত হয়। প্রশাসন বা উম্মাহ্‌’র স্থানীয় স্তরের বিষয়গুলো স্থানীয় প্রশাসকদের দ্বারা পরিচালিত হয় এবং স্থানীয় প্রশাসন খলিফার কাছে জবাবদিহিতা করে। রাষ্ট্রের জনগণের প্রয়োজনে খলিফার অনুমতিক্রমে রাষ্ট্রের যেকোন প্রান্তের সম্পদ ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। তাই এই প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রের শাসন হবে দক্ষ, জনবান্ধব এবং শক্তিশালী। খিলাফত ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রকৃত পুণঃর্গঠন কার্যক্রমে মনোনিবেশ করাই উচিত আমাদের মূল এজেন্ডা।

    -    মো: সিরাজুল ইসলাম


Previous Post Next Post