একসঙ্গে এত ব্যাংক লুট বিশ্বের কোথাও হয়নি



খবরঃ

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, “সব মিলিয়ে ব্যাংক খাত থেকে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে”। লুট হওয়া টাকা বিদেশে পাচার বিষয়ে তিনি বলেন, “তবে অর্থ পাচার যে পুরোপুরি বন্ধ হবে, সে আশা করি না। অর্থ কোথায় যায়? অর্থ যায় মালিকের কাছে। মালিক যদি বিদেশে থাকে, অর্থও সেখানেই যাবে”। ধুকতে থাকা ব্যাংকগুলো বাঁচানোর বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা বিদেশ থেকে মূলধন জোগানের জন্য তহবিল পাব বলে আশা করছি। ইতিমধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ১৫০ কোটি ডলার দিতে রাজি হয়েছে। বিশ্বব্যাংকও এ জন্য অর্থ দেবে”। (https://www.prothomalo.com/business/vl23lj8pmn )

মন্তব্যঃ

বিদেশ থেকে অর্থ ফিরিয়ে আনতে কি কি পদক্ষেপ নিবেন কিংবা দেশের পররাষ্ট্র ও বিচার ব্যবস্থাকে কিভাবে কাজে লাগাবেন এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপের কথা না বলে, বরং তিনি সেই পুরোনো গদবাধা বিদেশী সংস্থার ঋণের কথাই বলছেন। মুলত: বাস্তবতা হচ্ছে বর্তমান ফাইনেন্সিয়াল খাত এমনভাবে সাজানো যে আমাদের টাকা এমনিতেই ডলারের উপর নির্ভরশীল। মার্কিন ডলারের এই হেজিমনি রক্ষা করার জন্য মার্কিনীদেরই তৈরি করা প্রতিষ্ঠান আইএমএফ কাজ করে থাকে। ইতিমধ্যে আইএমএফের নানা নীতি যেমন কাঠামোগত সমন্বয় কর্মসূচী (SAP), Deregulation বা টাকাকে মুক্ত করে দেয়ার মত নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের ব্যাংকিং খাত তথা অর্থনীতি আমেরিকার হেজিমনিতে পড়ে গেছে। এরকম একটা পরাধীন অর্থনীতিকে উদ্ধার করতে হলে যেখানে স্বনির্ভরতার একটি শক্তিশালী প্রকল্পের প্রয়োজন ছিলো। সেখানে আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা আহসান এইচ মনসুরের এই পদক্ষেপ নিশ্চিতভাবে এতে দেশের ফাইনেন্সিয়াল খাতের পরাধীনতা আরও গভীর হবে, কারণ তার দেয়া এসব নীতি সমস্যার উৎস থেকেই নেয়া।

উপনিবেশবাদী অর্থনৈতিক হেজিমনি মার্কিন ডলারের পিছনে রয়েছে জাতিসংঘ, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ইত্যাদির মত নব্য ঔপনিবেশিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ও তাদের রাজনৈতিক, সামরিক শক্তি। তাদের হেজিমনি থেকে বাঁচতে গেলে পাল্টা একটা প্রকল্প থাকা জরুরী। ইসলাম তেমনই একটি প্রকল্প। ইসলাম একটি নেতৃত্বশীল আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি গঠন করতে পারে। ইসলাম সুদভিত্তিক অর্থনীতি বিলুপ্ত করে টাকাকে ডলারের প্যারীটি থেকে মুক্ত করে স্বর্ণ ও রৌপ্যের বিপরীতে মূল্যায়িত করবে। ইসলামে আইন যেহেতু মানুষ পাল্টাতে পারেনা সেহেতু এর বিচার ব্যবস্থাকে ক্ষমতাশীলদের পক্ষে প্রভাবিত করা কঠিন। এবং এর আছে মামলা নিষ্পত্তির একটি সহজ ও স্পষ্ট প্রমাণ বা evidence ব্যবস্থা ফলে বিভিন্ন আদালতে মামলা ঘুরতে থাকবে না, চুরি ও লূটপাটের তাৎক্ষণিক বিচার হবে। অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ মাজালিম আদালতের রায়ের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে মাল-আল-গুলুল হিসেবে বাইতুল মালে চলে যাবে। বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ এবং আমাদের দেশে থাকা ঐদেশের সম্পদের ব্যালেন্স করার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিকভাবে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার সহজতর হবে। খিলাফত রাষ্ট্র নিজে ন্যায়বিচার করার মাধ্যমে অন্য দেশের কনফিডেন্স আদায় নিশ্চিত করবে। আল্লাহ্‌ সুবাহানাহু অ তাআলা বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে। তোমরা যখন মানুষের মাঝে বিচার করবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে বিচার করবে…” (সুরা আন-নিসা ৫৮)।

    -    মোহাম্মদ তালহা হোসেন


Previous Post Next Post