গাজার ফিলিস্তিনিদের বিতাড়নঃ আরব দেশগুলোর বিরোধিতার পরও অটল ট্রাম্প

 



খবরঃ 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের মিসর ও জর্ডানে স্থানান্তরের বিতর্কিত প্রস্তাবটি আবারও সামনে এনেছেন। তিনি দাবি করেছেন, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ আল-সিসি এবং জর্ডানের রাজা  দ্বিতীয় আবদুল্লাহ এই পরিকল্পনায় সম্মত হবেন। …ট্রাম্প বলে, আমি চাই তারা এমন একটি এলাকায় বসবাস করুক, যেখানে তারা শান্তিপূর্ণভাবে থাকতে পারবে। গাজা উপত্যকা বহু বছর ধরে একটি নরকের মতো। (www.banglatribune.com/foreign/middle-east/883448/ গাজার-ফিলিস্তিনিদের-বিতাড়ন-আরব-দেশগুলোর-বিরোধিতার)

মন্তব্যঃ

আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পূর্বসূরীদের তুলনায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে শত্রুতায় শুধু প্রতিজ্ঞাবদ্ধই নয়, বরং অনেকাংশে অগ্রগামী। যেমন অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলে নিয়োগকৃত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি এর মতে, “…ইতিহাসে ইসরায়েলকে সমর্থনকারী ট্রাম্পের মত আর কোন প্রেসিডেন্ট নেই। জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে ঘোষণা, আমেরিকান এ্যাম্বাসি তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর, গোলান হাইটস্‌কে ইসরায়েলের বৈধ সম্পত্তি হিসেবে স্বীকৃতি দান এবং দ্বী-রাষ্ট্রের(Two-state) মত অবাস্তবিক সমাধানকে আর সামনে অগ্রসর না করার মত সবকিছুই তার অবদান”। সুতরাং, স্বাভাবিকভাবেই ক্ষমতায় আসীন হয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজার মুসলিমদের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগাটাই স্বাভাবিক। এটি আরও সুস্পষ্ট হয় যখন ক্ষমতায় বসার আগেই ট্রাম্প গাজার মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বলে, “‘All hell will break out’ if Gaza hostages aren’t released before my inauguration”। এবং, ক্ষমতা গ্রহণের পরে মুসলিমদেরকে পবিত্রভূমি আল-আকসা থেকে বিতাড়িত করার ঘোষণায়। 

মূলত, পবিত্রভূমি আল-আকসা থেকে মুসলিমদের বিতাড়িত করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের পিছনে রয়েছে পশ্চিমা কাফিরগোষ্ঠীর চরম ভয়। যে ভয় তারা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে লালন করে আসছে। আর এই ভয় হচ্ছে বিশ্ব পরাশক্তি হিসেবে আবারও খিলাফতের উত্থান, যা খুব স্পষ্টতই তাদের নিজস্ব বক্তব্যে প্রমাণিত। যেমন, ২০১৮ সালের নভেম্বরে ফ্রান্সে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ১০০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে অবৈধ ইহুদী রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলে, “ইসলামি জঙ্গিবাদ (খিলাফত) থেকে ইসরাইল হচ্ছে ইউরোপের ঢাল। সুতরাং ইউরোপের উচিত ইসরাইলের প্রতি নমনীয় হওয়া।” আমরা জানি, উসমানী খিলাফতের সময় ইউরোপের বর্ডারে সবসময় খিলাফতের সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি ছিল এবং তাদের ভীতির কারণ ছিল কখন খিলাফত রাষ্ট্র এটিকে তার অংশ করে নেয়। কিন্তু, প্রথম খিলাফত রাষ্ট্র ধ্বংস হলেও, এই ভয় পশ্চিমাদের আরো চরমভাবে গ্রাস করেছে যখন তারা মুসলিম ভূমিগুলোতে দ্বিতীয় খিলাফাহ্‌’র রাষ্ট্রের অবশ্যাম্ভাবী প্রত্যাবর্তণের সম্ভাবনার দেখতে পাচ্ছে। তাছাড়া, আমরা জানি, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) ভবিষ্যতবাণী অনুযায়ী এই বাস্তবতা অবশ্যম্ভাবী, “… অতঃপর আবারও ফিরে আসবে খিলাফত- নবুয়্যতের আদলে” (মুসনাদে আহমদ)। তাই পশ্চিমারা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে একটি শক্তিশালী ইহুদী রাষ্ট্র গঠন করতে চায়, যা তাদেরকে আসন্ন খিলাফত রাষ্ট্রের পদতলে পিষ্ট হওয়া থেকে ঠেকিয়ে রাখবে। সদ্য বিদায়ী আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কথাও যা উঠে আসে, “যদি কোন ‘ইসরাইল’ না থাকতো তাহলে আমরা একটা বানাতাম”। এই ভয়ের অংশ হিসেবেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পূরবর্তী মেয়াদকালে মুসলিম বিশ্বের দালাল শাসকদেরকে দিয়ে অবৈধ “ইসরাইল”কে স্বীকৃতি দিতে “আব্রাহাম একোর্ডস্‌” চালু করে। এবং এবারও যুদ্ধবিরতির সুযোগে তা চলমান রাখার আশ্বাস দেয় (‘EPIC’: Trump says he’ll use Gaza ceasefire’s momentum to expand Abraham Accords)। পাশাপাশি, ট্রাম্প গাজার মুসলিমদের বিতাড়িত করে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলকে আরো বড় ও শক্তিশালী করতে চাচ্ছে। এবং, তার নির্বাচনী প্রচারের সময় বলেছিলো, “যদি তুমি মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্রের দিকে তাকাও তাহলে দেখবা, বিশাল ভূমির বিপরীতে ইসরাইল একটা ক্ষুদ্র স্পট। আমি আসলে বলতে চাচ্ছি, “এটাকে বাড়ানোর কোন পথ আছে কিনা?”(স্কাই নিউজ ১৯/৮/২০২৪)। আর, তার এই প্রচেষ্টায় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে জর্ডানের বাদশা কিংবা মিশরের শাসকদের মত মুসলিম বিশ্বের দালাল বিশ্বাসঘাতক শাসকরা। যারা দিনের পর দিন অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলকে টিকিয়ে রেখেছে। মুখে ট্রাম্পের বিরোধীতা করলেও বাস্তবে এরা ট্রাম্পের গোলাম। অবৈধ ইসরাইলকে যেকোন মূল্যে টিকিয়ে রাখাই এদের মূল মিশন। যা অতিসত্তর নস্যাৎ হবে দ্বিতীয় খিলাফত রাষ্ট্রের প্রত্যাবর্তনে, ইনশা‘আল্লাহ্‌। 

    -    আসাদুল্লাহ্‌ নাঈম   

Previous Post Next Post