ট্রাম্পের শপথের পরেই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় গ্যাস চুক্তি বাংলাদেশের সঙ্গে





খবরঃ

তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান আর্জেন্ট এলএনজির সঙ্গে একটি নন-বাইন্ডিং চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে বছরে ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন তরল গ্যাস সরবরাহ করবে। লুজিয়ানার পোর্ট ফোরচনে আর্জেন্ট এলএনজির অবকাঠামো তৈরি সম্পন্ন হলে তারা লাদেশের পেট্রোবাংলার কাছে গ্যাসের কার্গো বিক্রি করা শুরু করতে পারবে। এদিকে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী রয়টার্সকে বলেন, ‘এই চুক্তি কেবল আমাদের গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করবে না, সেইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করবে। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই জ্বালানি চাহিদার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খুঁজছে। এক্ষেত্রে তরলীকৃত গ্যাসের দিকে ঝুঁকছে সরকার। (https://www.somoynews.tv/news/2025-01-25/uVLRTMT2)

মন্তব্যঃ

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, তেল-গ্যাসের মত খনিজ সম্পদ সংক্রান্ত স্বার্থের জন্য আমেরিকার মত সাম্রাজ্যবাদী লোলুপ শক্তিগুলো এহেন অপকর্ম নাই করেনা, আর তাদের সাথে এই চুক্তিকে সরকারের পক্ষ থেকে বিরাট সাফল্য হিসেবে দেখানো হচ্ছে! ২০০৩ সালে আমেরিকার বুশ আর ব্রিটেনের ব্লেয়ার মিলে যখন মিথ্যা কথা বলে ইরাক আক্রমণ করে; তখন লাখ লাখ নারী, শিশু, নিরপরাধ মানুষ হত্যা করে ইরাকের রাস্তা ঘাট, হাসপাতাল, মসজিদ ধ্বংস করলেও শুধুমাত্র তেলের খনি এবং এ সংক্রান্ত অফিসগুলোকে অক্ষত রাখা হয়। এছাড়াও ১৯৫৩ সালে যখন তৎকালীন ইরানের প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মাদ মোসাদ্দেক ইরানের তেল সম্পদ জাতীয়করণের সিদ্ধান্ত নেয়, তখন আমেরিকা ও ব্রিটেন সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ক্যু এর মাধ্যমে মুহাম্মাদ মোসাদ্দেককে খুন করায়, যা পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ডিক্লাসিফাইড সিআইএ-এর নথিপত্রে উল্লেখ পাওয়া যায়। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার বলে - "পারস্য উপসাগর অঞ্চলের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার যেকোনো বহিরাগত প্রচেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হবে”। অর্থাৎ, যেখানেই তেল-গ্যাস থাকবে সেটা যেন আমেরিকা বা ব্রিটেনেরই মালিকানা এটাই যেন অবধারিত। এজন্যেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জরিপ করা সংস্থার মতে বাংলাদেশের মাটির নিচে এখনো ২৮ টিসিএফ গ্যাস অনাবিষ্কৃত রয়েছে। (১৯৭১ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মাত্র ১৯ টিসিএফ গ্যাস উত্তোলিত হয়েছে) তাই বাংলাদেশ নিজের মাটির নিচে থাকা প্রাকৃতিক গ্যাস যেন নিজে উত্তোলন না করে শেভরনের মত আমেরিকান কোম্পানি উত্তোলন করতে পারে। আর সেই গ্যাস আহরণ করে আর্জেন্ট এলএনজি এর মত কোম্পানী প্রাকৃতিক গ্যাসকে লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাসে রূপান্তর করে আবার বাংলাদেশের কাছেই অতি উচ্চমূল্যে বিক্রি করবে। এভাবেই আমেরিকার মত সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো বাংলাদেশের মত সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাময় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিভিন্ন পুতুল সরকার নিয়োগ দিয়ে একটা অতি মাত্রায় পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করে। আর্জেন্ট-এর মত অখ্যাত কোম্পানী সাথে ইউনুস সরকারের চুক্তি আমেরিকার প্রতি তার পূর্ব নির্ধারিত অঙ্গীকারেরই বহিঃপ্রকাশ।

আমেরিকাকে প্রভু মেনে তার সব চুক্তি মেনে নেয়ার জন্য ছাত্র-জনতা জুলাই অভ্যুত্থানে জীবন দেয়নি, কারণ এই অভ্যুত্থানের অন্যতম স্পিরিট ছিল বিদেশী আধিপত্যমুক্ত দেশ। যালিম হাসিনাকে সরিয়েও জনমানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটল না, কারণ দেশ ভারতীয় আধিপত্য থেকে এখন ভারতের মদদদাতা মার্কিন আধিপত্যের কবলে পড়ছে। তাই ভারত-মার্কিনকে প্রভু হিসেবে গণ্য করা দালালগোষ্ঠীকে  সেই সত্যনিষ্ঠ ও ন্যায়পরায়ন শাসক দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে হবে যারা একমাত্র আল্লাহ্‌-কে পালনকর্তা ও বিধানদাতা হিসেবে মান্য করে; তবেই সম্ভব দেশকে সাম্রাজ্যবাদীদের কবল থেকে মুক্ত করা। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “আগুন, পানি, চারণভূমি- গণমালিকানাধীন সম্পদ”। অর্থাৎ, শরীয়াহ আইন অনুযায়ী তেল-গ্যাস ক্ষেত্র থেকে কোন বিদেশী কোম্পানি বা রাষ্ট্র তো দূরে থাক, এটি কোন ব্যক্তি মালিকানায়ও থাকবে না। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় ও তত্ত্বাবধায়নে তেল ও গ্যাস উত্তোলিত হবে। এতে করে যেমন শিল্প-কারখানা পর্যায়ে কাঁচামাল হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহৃত হবে, যা অনেক সাশ্রয়ী; তেমনি নাগরিকদের ঘরে ঘরে গ্যাসের লাইন দেয়া হবে। এতে করে জোর করে চাপিয়ে দেয়া এই এলএনজি ব্যবহারের হাত থেকে নাগরিক মুক্তি পাবে। কারখানা খরচ কমার কারণে দ্রব্যমূল্যের দামও কমে আসবে। 

    -    জাবির জোহান

 

Previous Post Next Post