খবরঃ
গত ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যদের অভূতপূর্ব ও অনাকাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতা ও তিক্ত পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। এরপর সমস্বরে সব স্তরের পুলিশ সদস্যরা একটি দাবি তুলেছিলেন। তা হলো, পুলিশ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে চায়। পুলিশ কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্বের আর তাঁবেদারি করতে চায় না। বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত ২ লাখ ১২ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্যের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে ভিন্ন মত-পথ থাকলেও এই ইস্যুতে তারা সবাই একমত হয়েছিলেন, তারা সবাই রাষ্ট্রের বাহিনী হিসেবে নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে চান। ৫ আগস্ট–পরবর্তী সময়ে পুলিশের সংস্কার নিয়ে ইউনিট পর্যায় থেকে আসা বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাবের প্রায় শতভাগ ইউনিটের প্রধান দাবি বা প্রস্তাব ছিল, বাংলাদেশ পুলিশকে পরিচালনার জন্য স্বাধীন একটি কমিশন গঠন করা হোক। (www.prothomalo.com/opinion/column/y4g8iljck4)
মন্তব্যঃ
ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থায় পুলিশকে ‘স্বাধীন কমিশনের’ তকমা দেয়া হোক বা না হোক, সে বরাবরই ‘উপরের নির্দেশ’ মানতে বাধ্য। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, সুইডেন এবং ইউরোপ আমেরিকার আরো বহু রাষ্ট্রের পুলিশ তথাকথিত স্বাধীন। কিন্তু এই স্বাধীন কমিশন পাওয়া পুলিশকে আমরা এসকল রাষ্ট্রে জনগণের বিরুদ্ধে বহুবার অবস্থান নিতে দেখেছি। ১৯৮৪-৮৫ সালে কয়লা শ্রমিকদের বিক্ষোভে যুক্তরাজ্যের পুলিশ লাঠিচার্জ, গণগ্রেপ্তার করে শ্রমিকদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। ২০২০ সালে আদিবাসীদের আন্দোলনে অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ নৃশংস ভূমিকা পালন করে। ২০২২ সালে কানাডাতে ট্রাকচালকদের ফ্রিডম কনভয় আন্দোলনও কানাডা পুলিশের রোষের মুখে পড়ে। ২০১৩ এবং ২০১৭ তে অভিবাসীদের আন্দোলন দমনে সুইডিশ পুলিশের ভূমিকা ছিল ন্যাক্কারজনক। তাহলে প্রশ্ন চলে আসে যে কেন এই সকল রাষ্ট্রের পুলিশ তথাকথিত “স্বাধীন কমিশন” হওয়া সত্ত্বেও জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেয়? কারণ তারা তাদের “উপরের নির্দেশ” তথা আইনপ্রণেতাদের আইন (Public Order Act (1986), Emergencies Act (1988), REVA(2009)) দ্বারা বাধ্য থাকে জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিতে। বর্তমান সময়ে পৃথিবীর প্রত্যেকটা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থা একই, হোক তা ‘স্বাধীন’ অথবা পরাধীন। বাংলাদেশের পুলিশও এই তথাকথিত “উপরের নির্দেশে”ই জুলাই অভ্যুত্থানের পর এখনো ধর্মপ্রাণ নিরীহ রোযাদার মুসলিমদের “খিলাফত শাসন চাওয়ার কারণে” এবং “ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনের মুসলিমদের গণহত্যার প্রতিবাদ করায়” যত্রতত্র লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং ধরপাকড় চালিয়ে যাচ্ছে।
মূলতঃ ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা একটা স্রষ্টাবিবর্জিত জীবনব্যবস্থা যেখানে “উপর মহল” বলতে এই ব্যবস্থার যালেম শাসকদের এবং তাদের ঔপনিবেশিক প্রভু আমেরিকা-ভারতকে বোঝানো হয়। যারা নিজেদের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখতে আইন বানায় এবং পুলিশ বাহিনীকে নিজেদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করে। পুলিশ বাহিনীরও একটা বড় অংশ এই যালেমের প্রতি আনুগত্যকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, “আল্লাহ্’র অবাধ্য হয়ে কোন আনুগত্য নেই, আনুগত্য শুধু হক্ব কাজে” [বুখারি ও মুসলিম]। তাই রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা যেন এটা ভুলে না যায় যে, প্রকৃত ‘উপরের মহল’ হচ্ছেন শুধুমাত্র আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা। আজকে হক এবং বাতিলের মধ্যে বাতিলকে বেছে নেয়ার যে আনুগত্য তারা করে আসছেন, সেটার কঠিন জবাবদিহি তাদেরকে অবশ্যই একদিন দিতে হবে। আল্লাহ্ চাইলে ইহকালেই হাসিনার সহযোগীদের মত তাদেরকে ইহকালেই লাঞ্ছিত করবেন, নয়তো নিশ্চিতভাবে হাশরের ময়দানে যাদেরকে ‘উপর মহল’ বলে তারা এখন মানছেন, তাদের রেফারেন্সই তাদের স্থায়ী শাস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তারা বলবে “হে আমাদের রব, আমরা আমাদের নেতৃবর্গ ও বিশিষ্ট লোকদের আনুগত্য করেছিলাম, তখন তারা আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল” [সূরা আহযাব-৬৭]। কিন্তু তখন তাদের কথিত “উপর মহল” তাদের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করবে, তখন তারা আফসোস করবে - “আর যারা (তাদের অর্থাৎ নেতৃবর্গের) অনুসরণ করত তারা বলবে, হায়! একবার যদি আমাদের (দুনিয়ায়) ফিরে যাওয়ার সুযোগ হত, তবে আমরাও তাদের (অর্থাৎ নেতৃবর্গের) সঙ্গে এভাবেই সম্পর্কহীনতা ঘোষণা করতাম, যেমন তারা আমাদের সঙ্গে সম্পর্কহীনতা ঘোষণা করেছে। এভাবে আল্লাহ্ তাদেরকে দেখাবেন যে, তাদের কার্যাবলী (আজ) তাদের জন্য সম্পূর্ণ মনস্তাপে পরিণত হয়েছে। আর তারা কোনও অবস্থায়ই জাহান্নাম থেকে বের হতে পারবে না [সূরা বাকারা- ১৬৭]। তাই প্রকৃত আনুগত্য প্রকৃত রব আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার কাছে করাই চিন্তাশীলতার লক্ষণ। তিনি ছাড়া আর কারো প্রতি আনুগত্য সাময়িক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের আশ্বাস দিলেও, ইহকাল ও পরকালের লা’নত থেকে রক্ষা করতে পারবে না।
- জাবির জোহান