আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যার বিচার ৭ দিনের মধ্যে শুরু হবে: আইন উপদেষ্টা



খবরঃ

মাগুরার ৮ বছর বয়সি শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচার আগামী সাত দিনের মধ্যে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। আসিফ নজরুল বলেন, আমরা আজকেই পোস্টমর্টেম প্রতিবেদন নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আছিয়ার মরদেহ দাফনের জন্য হেলিকপ্টারে মাগুরায় নিয়ে যাওয়া হবে। ডিএনএ স্যাম্পল কালেকশন করা হয়ে গেছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “আশা করি- আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে রিপোর্ট পেয়ে যাব। এরই মধ্যে ১২-১৩ জনের ১৬১ ধারায় (দণ্ডবিধি) স্টেটমেন্ট নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, আগামী সাত দিনের মধ্যে বিচার কাজ শুরু হবে। ফলে আমরা আশা করছি খুব দ্রুত সময়ে এই মামলার বিচার কাজ শেষ হবে। ইনশাআল্লাহ দোষী সাব্যস্ত হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।” (www.jugantor.com/law-justice/928501)

মন্তব্যঃ

সাগর-রুনির হত্যাকারীদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতার করার ঘোষণার কথা জনগণের এখনো মনে আছে। সেই ২৪ ঘন্টা এখনো শেষ হয়নি! পিলখানা হত্যাকান্ডের প্রকৃত বিচার নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের টালবাহানা জনগণ দেখছে। মেজর সিনহা হত্যার বিচারে রায় হলেও এখনো তা কার্যকর হয়নি। আবরার হত্যার রায় হয়েছে, অপরাধীরা এখনো শাস্তি পায়নি, বরং এক আসামী জেল থেকে পালিয়ে যাওয়ার ৫ মাস পর জনগণ জানতে পেরেছে সে পালিয়েছে, সরকার এখনো তাকে গ্রেফতার করেনি। এই হলো দেশের বিচারব্যবস্থার প্রকৃত চিত্র, যেখানে বিচার শুরু হয় কিন্তু শেষ হয়না। আছিয়া ধর্ষণ ও মৃত্যুর বিষয়টি জনমনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির কারণে এবং অপরাধীরা প্রভাবশালী না হওয়ায় বিচার শুরু ও রায় ঘোষণা হয়ত সরকার দ্রুতই করবে, কিন্তু সেই রায় কবে কার্যকর হবে কিংবা এই রায় ধর্ষনের মত জঘন্য অপরাধ প্রতিরোধে ‘দৃষ্টান্তমূলক’ ভূমিকা রাখতে পারবে কিনা তার নিশ্চয়তা দেওয়ার সাহস বা আত্মবিশ্বাস কি উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের আছে!? নেই। কারণ, পোস্টমর্টেম, ডিএনএ রিপোর্ট, ১৬১ ধারায় (দণ্ডবিধি) স্টেটমেন্ট বা জবানবন্দি, সাক্ষ্য গ্রহণ, রায় ঘোষণা, হাইকোর্টে রিভিউ, তারপর আপিল ও আপিল শুনানী, সর্বশেষ রাষ্ট্রপতির কাছে শাস্তি মওকুফের আবেদন ও সেই আবেদন নিষ্পত্তির যে চক্রকার গোলকধাঁধায় সেকুলার বিচারব্যবস্থা আটকে আছে সেখানে ‘ন্যায়বিচার’ শুধুমাত্র একটা রাজনৈতিক বুলি। আর এ কারণেই ক্ষমতার চেয়ারে বসে ‘justice hurried, justice buried’ এর মত ‍বুলি আওড়ে তারা দায় এড়ানোর ফন্দি করে।  

এই সেকুলার বিচারব্যবস্থায় ধর্ষণের সুষ্ঠু বিচার প্রাপ্তিতো দূরের কথা, ধর্ষনের অভিযোগ প্রমান করার পুরো প্রক্রিয়াটি আপাদমস্তক অমানবিক ও বর্বর। এই বিচারব্যবস্থায় ধর্ষণের সংজ্ঞাটিও একটি বিতর্কিত বিষয়; বছরের পর বছর লিভটুগেদার করে কোন কারণে মনোমালিণ্য বা বিরোধ দেখা দিলে “বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের” মত উদ্ভট মামলাও আদালত গ্রহণ করে! অথচ, এক্ষেত্রে আদালতের দায়িত্ব ছিল যিনাকারী হিসেবে উভয়ের শাস্তি নিশ্চিত করা। ছেলে-মেয়ের যৌথ সম্মতিতে বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক যেখানে কোন অপরাধ নয়, সেখানে এর extended version হিসেবে ‘একপক্ষের’ সম্মতিতে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক বা ধর্ষণ ঠেকানো অসম্ভব। ‘ব্যক্তিস্বাধীনতার আইনি সুরক্ষা’ এবং ‘নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা’ একই সাথে নিশ্চিত করার এক অসম্ভব ও অবাস্তব সমীকরণ মিলাতে গিয়ে সেকুলার ব্যবস্থা দেশ ও সমাজকে নারীর জন্য বিপদজনক বানিয়ে ফেলেছে। বাস্তবে, ‘ব্যক্তিস্বাধীনতার আইনি সুরক্ষা’ এবং ‘নারীর নিরাপত্তা ও মর্যাদা’ হল mutually exclusive; অর্থাৎ এই দুটি বিষয় কখনোই একসাথে co-exist করতে পারে না। যারা নিজেদেরকে ‘ধর্ষণ-বিরোধী’ বলে দাবি করেন, তাদেরকে অবশ্যই ‘ব্যক্তিস্বাধীনতা’ নামক অসভ্য ও বর্বর চিন্তাকে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে নির্মূল করার কাজে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে, অন্যথায় তাদের ‘ধর্ষণ-বিরোধীতা’ নিতান্তই বাকসর্বস্বতা ও ‘রাজনীতির চাল’ হিসেবে প্রমাণিত হবে। 

অনেকেই বলছেন, ধর্ষনের ঘটনায় ইসলামী শরিয়াহ্-র শাস্তি দিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এরকম দুইচারটা শাস্তি জনসম্মুখে দিলেই সমাজে আর ধর্ষণ থাকবে না। এটা নিতান্তই একটি ভুল ধারণা। কারণ— প্রথমত: সেকুলার রাষ্ট্র ও বিচারব্যবস্থা বহাল রেখে ইসলামী শাস্তি কিভাবে হবে!? দ্বিতীয়ত: ধর্ষণের কারণ হল জীবন সম্পর্কে ইন্দ্রীয়সুখ কেন্দ্রীক সেকুলার দৃষ্টিভঙ্গী এবং সেকুলার রাষ্ট্রব্যবস্থা দ্বারা এই দৃষ্টিভঙ্গিকে নিরাপত্তা প্রদান ও মহিমান্বিতকরণ করা। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় লাল-নীল-বেগুনী রঙের আলোআঁধারীতে তরুন-তরুনীদের বেহায়াপনা, রেড কার্পেটের স্টারডম ব্যবসার নামে বিনোদন জগতের নাটক-সিনেমা-ওটিটি কন্টেন্টের মাধ্যমে নারীর প্রতি অবমাননাকর দৃষ্টিভঙ্গি ও কার্যকলাপকে স্বাভাবিকীকরণ, যেকোন বিজ্ঞাপনে অতি অপ্রয়োজনীয়ভাবে নারীকে উপস্থাপন এগুলো বহাল রেখে ‘বডি কাউন্ট’ এর এই অসভ্য সমাজে শুধু দুইচারটা ইসলামী শাস্তি দিলেই সমাধান হয়ে যাবে না। সেকুলার পুঁজিবাদের ইন্দ্রীয়সুখ কেন্দ্রীক এই জীবনদর্শনকে ‘রাষ্ট্রীয়ভাবে’ চ্যালেঞ্জ করে দেশ থেকে ঝেটিয়ে বিদায় না করা পর্যন্ত নারীদের জন্য এই সমাজ কখনোই নিরাপদ হবে না। আর এর সাথে প্রয়োজন ইসলামী বিচারব্যবস্থা সহ জীবনের সকল বিষয়ে ইসলামের পরিপূর্ণ প্রয়োগ, যা হল খিলাফত রাষ্ট্রব্যবস্থা বাস্তবায়ন।

    -    রিসাত আহমেদ


Previous Post Next Post