খবরঃ
বেশির ভাগ মানুষ যখন ঈদের কেনাকাটা করছেন, বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন; শ্রমিক অঞ্চল, বিশেষত পোশাকশ্রমিকদের মধ্যে তখন ঈদের আগে বেতন–বোনাস পাওয়ায় অনিশ্চয়তা। ঈদের বোনাস তো পরের কথা, বেশ কিছু কারখানার শ্রমিক কয়েক মাস ধরে বেতনই পাচ্ছেন না। তাদের অনেকে রাস্তায় নেমে এসেছেন, বিজিএমইএ ভবন ও শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন; কিন্তু মালিকপক্ষ কিংবা শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সমাধান পাচ্ছেন না। (www.prothomalo.com/opinion/column/jivseqefxf)
মন্তব্যঃ
কেন কারখানা শ্রমিকদের বেতন বোনাস না দেয়া একটা চিরন্তন এবং অতি স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে? [এখনও ২৯৯টি পোশাক কারখানা ঈদ বোনাস দেয়নি] কেন এই বেতন বোনাস না দেয়ার কারণে মালিকপক্ষকে আমরা কারারুদ্ধ হতে দেখি না? অর্থনৈতিক মন্দা, স্থানীয় বাজারে ঋণ সংকট, বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি, ক্রয় আদেশ কমে যাওয়া ইত্যাদি নানা কারণ দেখিয়ে আর কিছু বন্ধ হোক বা না হোক শ্রমিকের বেতন বোনাস সবার আগে বন্ধ হয়। বিপরীতদিকে, এই মালিক পক্ষ যাদের বেতন বোনাস না দেয়ার অপরাধে শাস্তি পাওয়া উচিৎ ছিল, তাদেরকে ‘আসামীর’ নজরে না দেখে তাদেরকে বরাবরের মত ‘দুধভাত’ বলে ছেড়ে দেয়া হয়। শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টার মন্তব্যই তার জ্বলন্ত প্রমাণ- ‘২৫ মার্চের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শ্রমিকদের অসন্তোষ নিরসনে টিএনজেড গ্রুপের অ্যাপারেল ইকো লিমিটেডের গাড়ি বিক্রি করে শ্রমিকদের বেতন ও ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা এর আগে ঘটেছে কিনা, তা আমি জানি না। মালিক অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন’। যদিও তা পরে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়। [আসলেই কি গাড়ি বেচে বেতন হয়েছে?] একজন নির্দলীয় উপদেষ্টা যখন একটা ‘উচিৎ কাজ’ কে ‘মহান কাজ’ বলে উপস্থাপন করার প্রচেষ্টা করেন- তখন এটা আমাদের একটা বার্তা দেয়। আমাদেরকে বুঝতে সাহায্য করে যে কেন এই ধণিক শ্রেনীর প্রতি ফ্যাসিস্ট কিংবা সুশীল যেই সরকারে আসুক না কেন সেই অনেক কোমল। কেন বসুন্ধরা গ্রুপের মালিক ফ্যাসিস্ট হাসিনার খুনের প্রত্যক্ষ মদদদাতা ও হাজার হাজার মামলার আসামী হওয়া সত্ত্বেও তাকে গ্রেপ্তার না করে বরং তার সাথে খেলাপী ঋণের পুনঃতফসিল বিবেচনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সাহেবকে আলাদা মিটিং করতে হয়? [ঋণ পুনঃ তফসিলে বিশেষ সুবিধা চায় বসুন্ধরা গ্রুপ | প্রথম আলো] কেন নতুন তৈরি হওয়া রাজনৈতিক দল এনসিপি-কে বসুন্ধরা গ্রুপের কাছ থেকে ১৫০০ কোটি টাকার ডোনেশন পাওয়ার আলাপ জনগণকে শুনতে হয়? এতগুলো কেন এর উত্তর একটাই- পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শাসক বা সরকার মূলত পুঁজিপতি ধণিক শ্রেণীর আজ্ঞাবহ দোসর। তাদেরকে খুশি না করে ক্ষমতায় টেকা যায় না। তাই জনগণ বা শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায় করা তাদের ‘জব ডেসক্রিপশনের’ মধ্যে কখনো ছিল না।
অন্যদিকে, ইসলামী শাসনব্যবস্থা খিলাফতের শাসক খলিফার ‘জব ডেসক্রিপশনে’ প্রত্যেক নাগরিক হোক সে ‘মালিক’ কিংবা ‘শ্রমিক’ প্রত্যেকের জন্য ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, “মজুরকে তার গায়ের ঘাম শুকানোর আগেই মজুরি পরিশোধ করে দাও” (ইবনে মাজাহ)। তাই খলিফা পুঁজিপতিদের অজুহাত সম্বলিত কারণগুলোকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে শ্রমিকদের প্রাপ্য মজুরি আদায় নিশ্চিত করবেন। কুর‘আন-সুন্নাহ্’র ভিত্তিতে হিযবুত তাহ্রীর কর্তৃক প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫৪ অনুযায়ী: “ব্যক্তি বা কোম্পানি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীগণ রাষ্ট্রের কর্মচারীদের সমান অধিকার ও দায়িত্ব ভোগ করবে। প্রত্যেকেই, যিনি তার কাজের বিনিময় হিসাবে সম্মানী পান, তিনি কর্মচারী হিসেবে বিবেচিত হবেন, এক্ষেত্রে তার কাজের ধরন বিবেচিত হবে না। কর্মদাতা ও কর্মচারীর মধ্যে বেতনের মাত্রা নিয়ে কোন বিতর্ক হলে, বাজার দর অনুযায়ী বেতন মূল্যায়িত হবে। যদি অন্য কোন বিষয় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয় তবে শরীয়াহ হুকুম অনুযায়ী প্রণীত চাকরির চুক্তিনামা অনুযায়ী বিষয়টি মূল্যায়ন করা হবে”।
- জাবির জোহান