খবরঃ
ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে মানুষজন পায়ে হেঁটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হচ্ছেন। শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকাল ৩টায় সেখানে কেন্দ্রীয় সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই অংশগ্রহণকারীরা রওনা হন। এদিকে কারও হাতে আইএস বা জঙ্গি সংগঠনের সাদৃশ্যযুক্ত কালো পতাকা, টুপি কিংবা ব্যানার দেখা গেলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তা জব্দ করছেন।… কেউ কেউ কালেমা খচিত ফিতা মাথায় বেঁধেছেন।… এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া আমাদের ঈমানি দায়িত্ব। তাই পরিবারের বড় ভাই, বাবা, ছোট ভাইসহ এলাকার বন্ধুবান্ধব সবাই মিলে এসেছি।’ (https://www.banglatribune.com/others/893856/গাজার-পক্ষে-ঢাকায়-জনতার-স্রোত-নজরে-কালো-পতাকা)
মন্তব্যঃ
“আজকে আমি এমন এক ব্যক্তিকে (আলি (রা.)) রা‘য়া দিব যে কিনা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসে”- রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর মুখ নিঃসৃত এই রা‘য়া-ই হলো কালেমাখচিত সাদা রংয়ের পতাকা, যা ইসলামী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রধান ব্যক্তি বা খলিফা ব্যবহার করেন। আরেকটি পতাকা হচ্ছে ‘লিওয়া’ যেটি হলো কালেমাখচিত কালো রংয়ের পতাকা, যা যুদ্ধের সময় ব্যবহার করা হতো। এই পতাকা যতক্ষণ পর্যন্ত উঁচু করে রাখা হতো, ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ চলত। এই পবিত্র পতাকা উঁচু করে রাখার দায়িত্বকে সাহাবীগণ (রা.) সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে বহন করতেন। মুসাব (রা.) ওহুদ যুদ্ধে শহীদ হওয়ার আগ পর্যন্ত এই পতাকা সুউচ্চে ধরে রাখেন। এই যুদ্ধে শত্রুর আক্রমনে যখন মুসলিমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল, তখন তিনি একাই এই পতাকা তুলে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকলেন। তারপর শত্রুসেনা যখন তার এক হাত কেটে ফেলে, তখন তিনি (রা.) অন্য হাত দিয়ে তা (লিওয়া) ধরলেন। সে হাতও কেটে ফেললে তিনি তার বাহু দিয়ে তা বুকের উপর চেপে ধরলেন। অবশেষে তাকে যখন বর্শা দিয়ে আঘাত করা হলো, তখন মুসাব (রা.) শহীদ হওয়ার মাধ্যমে আগে ভূপাতিত হলেন, তারপর লিওয়াও পড়ে গেল। এভাবে কলেমার পতাকা উচু রাখতে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর যুগ থেকে শুরু থেকে বিভিন্ন যুদ্ধে কাতারে কাতারে সাহাবীগণ ও মুসলিমগণ শহীদ হয়েছেন। আর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-কে এই পতাকা বাদে অন্যকোন পতাকা বহন করতে দেখা যায়নি। তাই, এই পতাকা হলো একমাত্র পতাকা যা আমাদের মুসলিম জাতিসত্ত্বা এবং ঐক্যের প্রতীক বহন করে।
১৯২৪ সালের ৩রা মার্চ খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংসের পর পশ্চিমা কাফির শক্তি মুসলিমদের এক রাষ্ট্র ও এক পতাকাকে এটি ৫৭ ভাগে বিভক্ত করে আলাদা-আলাদা জাতিরাষ্ট্র ও পতাকা (বাংলাদেশী, পাকিস্তানী, ফিলিস্তিনী ইত্যাদি) তৈরি করে। তাই, মুসলিমদের ঐক্যের প্রতীক কালেমার পতাকা মার্কিন নেতৃত্বাধীন কুফর শক্তিগুলোর অন্তরে কাঁপন ধরিয়ে দেয়। সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ডের ভাষায়, “তারা উত্তর আমেরিকা থেকে দক্ষিণ এশিয়ার সরকারগুলো দখল করতে চায় এবং একটি খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চায়। তারা আশা করে একদিন তারা সকল মহাদেশ দখল করে নেবে এবং তারা একটি ম্যাপ ডিজাইন করেছে যেখানে জাতীয়তাবাদী সীমানাসমূহ মুছে ফেলা হয়েছে। এবং তারা এটিকে বৈশ্বিক একটি চরমপন্থী সরকার দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে চায়”। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন প্রধান গোয়েন্দা কর্মকর্তা তুলশী গ্যাবার্ডের বক্তব্য ও নিউইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধেও তা স্পষ্ট।
এমতাবস্থায় দুঃখজনক হলেও আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, পশ্চিমাদের প্রতিক্রিয়ার ভয়ে কতিপয় রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবী, এমনকি সুপরিচিত গুটিকয়েক আলেম এই কালেমা পতাকাকে নামিয়ে রাখার আহ্বান করেন। তাদের এই কর্মকান্ড স্বাভাবিকভাবেই এদেশের ইসলামপ্রিয় জনগণকে বিস্মিত ও ক্রোধান্বিত করেছে। কারণ ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমির পক্ষে এদেশের মুসলিমদের এই ‘মার্চ’ তাদের ঈমানী চেতনা থেকে উৎসারিত- যার শুরুটাই হয় এই কালেমা দিয়ে। গাজার মুসলিমদের জন্য আয়োজিত সমাবেশগুলোকে দল-মত নির্বিশেষে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ প্রমাণ করে ইসলাম দেশের বিভক্ত রাজনীতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম। তাই, ইসলামী শাসনের প্রতীক কালেমার পতাকা থেকে মুসলিম উম্মাহ্কে বিচ্ছিন্ন করার পশ্চিমা ষড়যন্ত্রকে রুখে দাঁড়ানো এবং এই কালেমার ভিত্তিতে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা আমাদের দায়িত্ব। যার অধীনে এই পতাকা ধারণকারী সেনাবাহিনীই ফিলিস্তিনসহ সকল নির্যাতিত ও দখলকৃত ভূমি মুক্ত করবে।
- মো: জহিরুল ইসলাম