খবরঃ
“পহেলা বৈশাখ মানি না”, “পহেলা বৈশাখ ইসলাম বিদ্বেষী কাজ”, “বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখ চলবে না” - দুজন যুবক একথা বলছে আর পুলিশ তাদেরকে গুলি করে মেরে ফেলছে। তারপর স্ট্রেচারে করে লাশ নিয়ে গেল। এই ছিল পহেলা বৈশাখের পুলিশের নিরাপত্তা মহড়ার মূল দৃশ্য। (https://web.facebook.com/rtvonline/videos/658123896974278/)
মন্তব্যঃ
রমনায় যে ইসলামবিদ্বেষী পুলিশী মহড়া সংঘটিত হলো তা মূলত পশ্চিমাদের বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ওয়ার অন টেরর’-এর নামে ‘ওয়ার অন ইসলাম’-এর যে চলমান ধারা বিদ্যমান তারই একটি বহিঃপ্রকাশ। এখানে বার্তা খুবই পরিষ্কার, মুসলিম অধ্যুষিত এই অঞ্চলের উপর সেক্যুলার মূল্যবোধ চাপিয়ে দেয়া। কেউ তা অস্বীকার করলে সেটা ‘ইসলামী সন্ত্রাসবাদ’ হিসেবে আখ্যায়িত করা এবং তাকে বিনাবিচারে ক্রসফায়ারে হত্যা করা বৈধ হিসেবে উপস্থাপন করা। আমরা জানি, নাইন-এলেভেন পরবর্তীতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ (জুনিয়র) বলেছিল, হয় আপনি আমাদের সাথে নতুবা আপনি টেরোরিস্টদের সাথে”। অর্থাৎ, পশ্চিমা সেক্যুলার পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে মেনে নিতে হবে ও ইসলামের হুকুম-আহ্কামকে সমাজ ও রাষ্ট্রজীবন হতে ত্যাগ করতে হবে, না হলে তাদের জঙ্গী-সন্ত্রাসী তকমা লাগানো হবে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “আর ইয়াহুদি ও নাসারারা আপনার প্রতি কখনো সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষন না আপনি তাদের মিল্লাতের অনুসরণ করেন” [আল-বাকারাঃ ১২০]।
৫ আগস্টের পরে দেশের জনগণের একটি অংশের কাছে মনে হয়েছিল, হাসিনার সময়ে যে ইসলামবিদ্বেষ বিদ্যমান ছিল তা হয়তো এবার পরিবর্তিত হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তা হয়নি। কারণ, আমরা দেখেছি জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশে বিদ্যমান পশ্চিমা সেক্যুলার-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কোনরকম পরিবর্তন-ই হয়নি। ফলে, যেহেতু সেই একই সেক্যুলার-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিদ্যমান সেহেতু ইসলাম পালনকারী মুসলিমদের জন্য তা সবসময়-ই প্রতিকূলতার সৃষ্টি করবে। সেটা হোক ‘মার্চ ফর খিলাফত’-এর শান্তিপূর্ণ সমাবেশে রোজাদার মুসলিমদের উপর বর্বর হামলা অথবা মার্চ ফর গাজা’তে কালিমার পতাকা কেড়ে নেয়া, দুষ্কৃতিকারীদের করা বিভিন্ন ঘটনার দায় ‘তৌহিদী জনতা’র উপর চাপিয়ে দেয়া, ইসলামের অনুসরণকারীদের ‘উগ্রবাদী’ ট্যাগ দেয়া - ইত্যাদি চলমান রয়েছে মার্কিন-ভারতসহ বর্তমান সরকার এবং দেশী-বিদেশী মিডিয়া সবদিক থেকেই।
সুতরাং দেশের বিভিন্ন ইসলামপন্থী দল বা ব্যক্তির এটা ভাবার কারণ নেই, পশ্চিমা ব্যবস্থা কিংবা পশ্চিমা দালাল শাসকগোষ্ঠীর সাথে কম্প্রোমাইজ করে তারা নিরাপদ থাকবে! বিষয়টা মোটেও এমন না। এরা ধীরে ধীরে সবাইকেই গ্রাস করবে। ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, লেবানন, লিবিয়া, বসনিয়া ইত্যাদি মুসলিম ভূমিতে যখন কাফিররা তাদের সামরিক আক্রমণ চালায় তখন তারা মুসলিমদের মধ্যে কোনরকম পার্থক্য করে না। কে সেক্যুলার, কে মডারেট আর কে মৌলবাদী এগুলো তখন তাদের কাছে বিবেচ্য নয়। তাদের কাছে একমাত্র বিবেচনার বিষয় সে মুসলিম কিনা। সুতরাং যারা ইসলামকে আকড়ে ধরেছে তাদের উপর সেক্যুলারদের চড়াও হওয়াকে আমাদের হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। যারা ইসলামের বিজয় দেখতে চান তাদের উচিত একত্রিত হওয়া এবং একযোগে ইসলামের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের এই যুদ্ধকে সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করা। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “আর তোমরা সকলে আল্লাহ্’র রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং বিভক্ত হয়ো না।” [আলি ইমরানঃ ১০৩]
- মোঃ হাফিজুর রহমান