খবরঃ
প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে হত্যার ঘটনায় এজাহারভুক্ত আরও একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতর নাম হৃদয় মিয়াজি (২৩)। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বনানী থানার যুগ্ম সদস্যসচিব। সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের মনাইরকান্দি গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।…এরআগে শনিবার বিকালে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ ওঠে জাহিদুল ইসলাম পারভেজের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে তর্কাতর্কি হয় একই বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর। একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে মীমাংসার জন্য বসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ২২৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী জাহিদুলকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। (www.dhakatimes24.com/2025/04/22/384014)
মন্তব্যঃ
প্রায়শঃই বিভিন্ন কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তুচ্ছ বিষয় নিয়ে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে ও প্রাণহানীর মত ঘটনা ঘটছে, যা অভিভাবক ও সচেতন নাগরিকদের বিচলিত করছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ একটু ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রাজনীতিবিমুখ রাখলেও সেখানে popular culture (প্রচলিত সংস্কৃতি) হিসেবে পশ্চিমা লিবারেল সংস্কৃতির চর্চার পরিবেশ প্রদান করে। পশ্চিমা সংস্কৃতির ছেলে-মেয়ের অবাধ মেলা-মেশা, ফ্রী মিক্সিং, জাষ্ট ফ্রেন্ড, prank (প্রাঙ্ক), টিজিং ইত্যাদি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংস্কৃতির মূল অনুসঙ্গ। পশ্চিমা নষ্ট-ভ্রষ্ট সংস্কৃতির by product হিসেবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা মাঝেমাঝে সংঘর্ষে জড়াতো বেশিরভাগ কারণগুলো কোন না কোনভাবে নারী শিক্ষার্থীদের সাথে সংশ্লিষ্ঠতা দেখা যেত। সাধারণত এই ঘটনাগুলো তর্কাতর্কি বা হাতাহাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতো। কিন্তু, জুলাই আন্দোলনের পর প্রশাসনের সহায়তায় ছাত্রদল, বৈষম্য বিরোধী/এনসিপি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতির নামে অনুপ্রবেশ করেছে। এসকল তথাকথিত ছাত্র সংগঠনগুলোর কাছে বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনীতির কোন প্রস্তাবন নাই যেমনঃ রাষ্ট্রকে নেতৃত্বশীল করার রূপরেখা/কৌশল, স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনীতি তৈরিতে অবদান, শত্রুরাষ্ট্র ভারতকে মোকাবেলার কৌশল, ফিলিস্তিনের মুসলিমদের মুক্তির রোডম্যাপ প্রদান ইত্যাদি, তাই তাদের রাজনীতি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মারামরি, মাস্তানি এবং চাঁদাবাজির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া এই ছাত্র সংগঠনগুলোর অনুপ্রবেশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর eco-systemকে নষ্টামীর নতুন মাত্রা দিয়েছে। এখন, বিশ্ববিদ্যায়লগুলোর অভ্যান্তরীণ ছোটখাটো সংঘর্ষগুলো ছাত্রদল-বৈষম্য বিরোধীদের সহায়তায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নিচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে এই সংকটের সমাধান কোন পথে? বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর পশ্চিমা সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়ার উপর্যপুরি ষড়যন্ত্রের পরেও, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মোটা দাগে ন্যায়নিষ্ট। ফিলিস্তিনি মুসলিমদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছিল অগ্রগামী। এমনকি, জুলাই আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণ আন্দোলনটিকে সফল করার গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক। এমতাবস্থায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল সম্ভাবনাময় ছাত্রদের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য প্রয়োজন দুর্নীতিগ্রস্ত প্রচলিত ছাত্ররাজনীতির বিকল্প বুদ্ধিবৃত্তিক আদর্শিক ছাত্র রাজনীতি। শিক্ষার্থীদের রাজনীতি হবে রাষ্ট্রের ভুল নীতির সমালোচনা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে বলিষ্ঠ ভূমিকা, পশ্চিমা আদর্শের হঠকারিতা নিয়ে প্রশ্ন করা, ইসলামের বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব নিয়ে আলোচনা করা, এবং নেতৃত্বশীল রাষ্ট্র তৈরির রূপরেখা প্রদান সহ গঠনমূলক আলোচনা করা। এটাই তো হওয়া উচিত ছাত্র রাজনীতির কর্তব্য। এই রাজনীতি শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ থেকে যেমন দূরে রাখবে তেমনকি শিক্ষার্থীদের আগামীর রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্য নেতৃত্ব হিসেবে তৈরি করবে। রাষ্ট্র এবং সমাজের দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মাঝে সঠিক রাজনৈতিক দর্শন জাগ্রত করা। সমাজের মানুষ কিভাবে তরুণদের উজ্জীবিত করতে পারে তার একটি উদাহরণ মনে করিয়ে দিতে চাই। আল-কুদস যখন দীর্ঘসময় ক্রুসেডারদের দখলে ছিল, মুসলিমদের অনৈক্য এবং যোগ্য নেতৃত্বের অনুপস্থিতিতে মুসলিমরা আল-আকসাকে মুক্ত করতে পারছিল না। সেই সময় দামেস্কের একজন কাঠমিস্ত্রি আল-আকসার জন্য একটি জাকজমকপূর্ণ কাঠের মিম্বর তৈরি করেছিলেন। যেই সময় আল-আকসা আবার মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে আসবে তা ছিল অকল্পনীয়। অনেক ধনী ব্যক্তি উচ্চমূল্যে ঐ মিম্বরটি কিনতে চাইলেও ঐ কাঠমিস্ত্রি কোন মূল্যের বিনিময় ঐ মিম্বরটি বিক্রয় করতে রাজি ছিলেন না। এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করে সেই সময়ের বালক সালাহ্উদ্দিন শপথ নিয়েছিলেন তিনি আল-আকসাকে জয় করার মাধ্যমে ঐ মিম্বরটি আল-আকসায় স্থাপন করবেন। আল্লাহ্ ইচ্ছায় সালাহ্উদ্দিন তার সেই শপথ বাস্তবায়ন করতে পেরেছিলেন।
- মো: সিরাজুল ইসলাম
