ইনভেস্টমেন্ট সামিটে বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে : বিডা প্রধান

 


খবরঃ 

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)- এর নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৫-এ বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সময়ই বলে দেবে ইনভেস্টমেন্ট সামিট সফল হয়েছে কিনা।’ চৌধুরী আশিক বলেন, ‘এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনে সরাসরি দুটি কোম্পানী হান্ডা ইন্ডাস্ট্রি ও শপআপ মিলে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ চুক্তি এবং ৬টি কোম্পানির সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে। এর বাইরে আরো ২০-২৫টি কোম্পানি বিনিয়োগ করার জন্য আমাদের সাথে ক্লোজলি যোগাযোগ করেছে।’ (https://www.bssnews.net/bangla/national/190838

মন্তব্যঃ

দেশে Foreign Direct Investment (FDI) বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে অনুষ্ঠিত এই বিনিয়োগ সামিটের সাফল্য নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন থাকলেও, উনারা অন্ধের মতো দাবী করেন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে এফডিআই-এর গুরুত্ব অপরিসীম। তারা বিদেশী বিনিয়োগকে পণ্য উদ্ভাবন, বৈশ্বিক বাজারে দেশের প্রতিযোগীতা সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং দক্ষতা উন্নয়নের জন্য অত্যাবশ্যক বলে দাবী করেন। বাস্তবতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মূলত তিনটি প্রেক্ষাপটে একটি দেশে এফডিআই আসে। প্রথমত, প্রাকৃতিক বা মানব সম্পদ লুট করার জন্য, যেমনঃ এই দেশে প্রাপ্য তেল-গ্যাস উত্তোলনে মার্কিন কোম্পানীর বিনিয়োগ। দ্বিতীয়ত, দেশটির অভ্যন্তরীণ বাজারকে দখল, যেমনঃ বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর নিকট ভোগ্য পণ্য বা টেলিকম সেবা বিক্রিতে বিদেশী বিনিয়োগ। তৃতীয়ত, এই দেশের মানব সম্পদ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করার মাধ্যমে তা বিদেশে রফতানি যেমনঃ তৈরি পোষাক শিল্প। অর্থাৎ, পুঁজিপতি বিদেশী বিনিয়োগকারীরা শুধুমাত্র তাদের মুনাফা বৃদ্ধি করতে কোন একটি দেশের প্রাপ্ত সম্পদ বা সুযোগ-সুবিধা লুট করতে বিনিয়োগ করে। তাই বিদেশী বিনিয়োগের ফলে কোন দেশের উন্নয়নের সাফল্যের তেমন একটা উদাহরণ দেখা যায় না। কিন্তু, বিদেশী বিনিয়োগ একটি রাষ্ট্রকে সংকটের মহাসাগরে ফেলার অনেক উদাহরণ রয়েছে। যেমনঃ কুখ্যাত এশিয়ান অর্থনৈতিক সংকট (১৯৯০) এর মূল কারণ ছিল আইএমএফসহ বিভিন্ন উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠানগুলোর Foreign Direct Investment (FDI) বৃদ্ধির সম্মিলিত ক্যাম্পেইন। এই প্রচারণার ফলে এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোতে হঠাৎ করে এফডিআই-এর অতিপ্রবৃদ্ধি ঘটে এবং উপনিবেশবাদী প্রতিষ্ঠানগুলোর ভুল প্রাক্কলন দেখে বিনিয়োগকারীদের হঠাৎ এফডিআই প্রত্যাহার। বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ https://en.wikipedia.org/wiki/1997_Asian_financial_crisis। এফডিআই কেন্দ্রিক এই সংকট এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনীতি ও রাজনীতিকে উলটপালট করে দেয় এমনকি ইন্দোনেশিয়ার সরকারের পতনও হয়। এফডিআই শুধুমাত্র অর্থনৈতিক বিষয় নয় বরং এটা একটি কৌশলগত টুলস যার মাধ্যমে উপনিবেশবাদীরা কোন একটি রাষ্ট্রের উপর তাদের আধিপত্য বিস্তার করে। 

ইসলাম মুসলিমদের উপর উপনিবেশবাদীদের আধিপত্য তৈরির বিদেশী বিনিয়োগের মত কৌশলগত বিষয়গুলোকে অনুমোদন দেয় না। “…এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ মু‘মিনদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্বের কোন পথ রাখবেন না” (সূরা আন-নিসা: ১৪১)। কারণ এই স্কিমগুলো মুসলিমদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্ব তৈরির সুযোগ সৃষ্টি করে, যা ব্যবহার করে পরবর্তীতে কাফিররা মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণ করে। কুরআন-সুন্নাহ্‌’র ভিত্তিতে হিযবুত তাহ্‌রীর কর্তৃক প্রণীত খিলাফত রাষ্ট্রের খসড়া সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৬৫ অনুযায়ী: “রাষ্ট্রে বিদেশী অর্থ এবং পুঁজির বিনিয়োগ নিষিদ্ধ। বিদেশীদের ফ্রাঞ্চাইজও নিষিদ্ধ”। ইসলামের অর্থনৈতিক উন্নয়নের নীতি হচ্ছে স্বনির্ভর অর্থনীতি। অর্থাৎ, খিলাফত রাষ্ট্র অর্থনীতির মূল লক্ষ্য হবে জনগণের প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা করা। জনগণের প্রয়োজনের উদ্বৃত্ত অংশ অন্যান্য দেশে বিক্রয় করা যেতে পারে। তাই খিলাফত রাষ্ট্রের অর্থনীতি থাকবে উপনিবেশিক শক্তিসমূহের প্রভাবের বাহিরে। খিলাফতের ১৩০০ বছরের ইতিহাসে মুসলিমরা ইসলামের অর্থনীতির মাধ্যমেই সমৃদ্ধ অর্থনীতি লাভ করেছিল। আসন্ন খিলাফতের ছায়াতলে ইসলামের নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে মুসলিমরা আবারও সেই সমৃদ্ধ অর্থনীতি প্রত্যক্ষ করবে, ইনশা’আল্লাহ্‌।

    -    মো: সিরাজুল ইসলাম


Previous Post Next Post