খবরঃ
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, কুয়েতের মতো কাতারও বাংলাদেশ থেকে সৈন্য নেবে। শফিকুল আলম বলেন, গালফ যুদ্ধের সময় থেকেই কুয়েতে আমাদের সৈন্যরা (বাংলাদেশের) দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি আরও বলেন, কাতারে একজন সৈন্যের প্রারম্ভিক বেতন আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকার মতো। আমরা আশা করি, দুই মাসের মধ্যে পাঠাতে পারবো।
(www.banglatribune.com/national/895289/)
মন্তব্যঃ
গত ২৭ ফেব্রুয়ারী পতিত হাসিনার মন্ত্রীসভা কাতারে ডেপুটেশনে সৈন্য পাঠানোর অনুমোদন দিয়ে রেখেছিল। অন্তর্বর্তী সরকার তারই বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু দেশের লক্ষ-লক্ষ মুসলিম রাস্তায় নেমে মুসলিমদের প্রথম কেবলার স্থান, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর ইসরা-মিরাজের স্থান ও জিয়ারতের নিয়তে ভ্রমনযোগ্য তিনটি স্থানের একটি ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিকে মুক্ত করতে সেনাবাহিনী প্রেরণের আহ্বান জানাচ্ছে। বলাবাহুল্য মুসলিমদের কাছে ফিলিস্তিন ইস্যু এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে তারা এই বিষয়ে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করতে চাচ্ছে। তারা আকুতি জানাচ্ছে, “O Muslim Armies! If you are afraid or less in number, Recruit us, Send us”! কিন্তু তা না করে হাসিনা কিংবা ইউনুসের মতো মুসলিম শাসকরা মুসলিম সেনাসদস্যদের ইসলাম প্রদত্ত পবিত্র দায়িত্ব থেকে দূরে রেখে তাদের রক্ত-শ্রমের বিনিময়ে দেশের রেমিটেন্স বাড়াতে চাচ্ছে! জনগণের কষ্টার্জিত টাকায় বহিঃশত্রুর আক্রমণ হতে রক্ষায় গড়ে উঠা সামরিক বাহিনীকে তারা নিছক পণ্যে পরিণত করতে চাচ্ছে। সশস্ত্র বাহিনীকে তারা দায়িত্ব পালনের বাহিনীর পরিবর্তে টাকা কামানোর একটি ভাড়াটে বাহিনী হিসেবে পরিণত করতে চাচ্ছে।
হাসিনার মত কর্তৃত্ববাদী কিংবা ইউনুসের মত লিবারেল অথবা এরদোগানের মত তথাকথিত ইসলামিক, ব্যক্তি হিসেবে এদের সবার একই ভিত্তি। আর তা হচ্ছে সেক্যুলারিজম। সেক্যুলারিজমে কোন কাজ বা সিদ্ধান্ত নেয়ার অন্যতম মাপকাঠি হচ্ছে, টাকার জন্য বা লাভের জন্য যেকোন কিছুই বিক্রি করা যেতে পারে! তাই সেক্যুলার শাসকরা শক্তি ও স্বার্থের তুলনামূলক লাভ বিচার করতে গিয়ে নিজের ভাইয়ের রক্তকে বিক্রি করে দিতেও কুন্ঠাবোধ করে না। তারা জানে ইসরায়েল-আমেরিকা কিভাবে ফিলিস্তিনে গণহত্যা চালাচ্ছে। অথচ তারা আমাদের নৌবাহিনীকে ইসরায়েলের সুরক্ষায় নিয়োজিত করে জাতিসংঘ মিশনে লেবানন সীমান্তে পাঠিয়েছে। এই ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তা এতটাই নিকৃষ্ট যে তারা শুধু ইসলামের ক্ষেত্রেই আপোষ করে তা নয় বরং লাভ-ক্ষতির ভয় দেখিয়ে তারা দেশের সার্বভৌমত্ব জলাঞ্জলী দেয়। যেমন, তারা দেশকে আমেরিকার ইন্দোপ্যাসিফিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মিকে সহায়তাসহ এই অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থ রক্ষার ঘুটি হিসেবে ব্যবহার করতে চাচ্ছে।
একজন সামরিক সদস্যের পেশাগত দায়িত্ব অন্যান্য পেশা হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এটাকে শুধুমাত্র শ্রমের বিনিময়ে টাকা কামানোর মেশিন মনে করলে তা হবে বিশাল ভুল। এই পেশায় যারা যান তারা জীবন দিয়ে হলেও দেশ ও জনগণকে রক্ষায় শপথ নিয়ে যান। তাই এধরণের বাহিনীকে ভাড়াটে বাহিনীতে পরিণত করা হচ্ছে দেশের স্বার্বভৌমত্বকে দুর্বল করার নীল নকশা, যা দেশের দুরদর্শীহীন শাসকরা বাস্তবায়ন করে চলেছে। ফলে জনগণ ও মুসলিম সেনাবাহিনীকে অবশ্যই এই সেক্যুলার চিন্তা থেকে রাষ্ট্র ও সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডকে আলাদা করতে হবে। এর নিরাপদ, বিশ্বস্ত ও উপযুক্ত হকদার হচ্ছে ইসলামী আদর্শের নেতৃত্ব খলিফার। খলিফা কখনও বাস্তবতা কিংবা লাভ-ক্ষতির অযুহাতে আল্লাহ্ নির্দেশিত দায়িত্বকে পরিবর্তন করতে পারবেন না। ইসলাম সালাহ্উদ্দীন আইয়্যুবী, মোহাম্মদ আল-ফাতেহ্র মতো আল্লাহ্ভীরু সামরিক সদস্যদের উত্থান ঘটায়, যারা তুচ্ছ দুনিয়াবী স্বার্থে নয় বরং পরকালে আল্লাহ্’র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মহান বিজয় নিয়ে এসেছেন। ইসলাম শুধুমাত্র শক্তিশালী সামরিক বাহিনীই গড়ে তুলবে না বরং প্রাপ্ত বয়স্ক প্রতিটি যুবককে বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাসহ দাওয়াহ্ ও জি/হা/দের মাধ্যমে ইসলামের ন্যায়ের শাসনকে পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে দিবেন।
- মোহাম্মদ তালহা হোসেন