খবর:
বান্দরবানের থানচির রেমাক্রি ইউনিয়নের ঝিরিমুখ এলাকায় জলকেলি উৎসব করেছে আরাকান আর্মির সদস্যরা। এ সময় অনুষ্ঠানে বিজিবি সদস্যদেরও নির্বিকার থাকতে দেখা গেছে। এর কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, বান্দরবান সীমান্তের ১০ কিলোমিটার ভেতরে আরাকান আর্মির সদস্যরা অনুপ্রবেশ করে। পরে তারা থানচি উপজেলার তিন্দু ইউনিয়নের রেমাক্রি ঝিরিমুখ এলাকায় স্থানীয় পাহাড়িদের নিয়ে গত ১৬ ও ১৭ এপ্রিল জলকেলি উৎসবে অংশ নেন। উৎসব শেষে আরাকান আর্মির সদস্যরা সামাজিক মাধ্যমে এটি শেয়ার করে। তারা আরও জানান, বান্দরবানের থানচির রেমাক্রি মুখ এলাকায় মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও তাদের রাজনৈতিক শাখা ইউনাইটেড লীগ অফ আরাকানের (ইউএলএ) অর্থায়ন ও তত্ত্বাবধানে আরাকান ওয়াটার ফেস্টিভ্যাল নামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। (www.banglatribune.com/country/chitagong/895115)
মন্তব্যঃ
গত ৭মার্চ ‘মার্চ ফর খিলাফত’ র্যালী ভন্ডুল করতে কিংবা এপ্রিলের ‘মার্চ ফর গাজা’তে কালিমার পতাকা উড়তে বাধা দেয়ার ব্যাপারে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার তার সকল শক্তি (পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা) নিয়ে মাঠে থাকলেও এর উল্টো চিত্র দেখতে পাচ্ছি আরাকান আর্মির জলকেলি উৎসবে! আমরা দেখেছি বহিরাগতদের এই অনুষ্ঠান চলাকালে বিজিবি সদস্যরা নির্বিকার দাড়িয়ে ছিল। যে আরাকান আর্মি ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা মুসলিম নিধনে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সহযোগী ছিল এবং সাম্প্রতিক সময়ে আবারও যারা তাদের নিয়ন্ত্রিত রাখাইনের বিভিন্ন গ্রাম হতে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীকে বিতাড়িত করে দিচ্ছে, তাদের প্রতি অন্তর্বর্তী রকারের এমন সদয় আচরণ মুসলিমদের আবেগ-অনুভুতি প্রতি নির্দয়তার প্রতিফলন। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের সীমান্তের ১০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে এসে অন্য একটি দেশের বিদ্রোহীগোষ্ঠী নিজেদের অর্থায়ন ও তত্ত্বাবধানে জলকেলি উৎসব করে যাওয়ার পর, অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তাদেরকে জামাই হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। জাতীয় নিরাপত্তার জন্য নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত উপদেষ্টা জনাব খলিলুর রহমান এখানে জাতীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘন দেখছেন না। বরং, বৌদ্ধ সন্ত্রাসী ও মুসলিম নিধনকারী আরাকান আর্মির রসদ সরবরাহের জন্য বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে রাখাইন রাজ্যে ‘মানবিক করিডোর’ খোলার সিদ্ধান্তও গ্রহন করা হয়েছে। এসব ঘটনা থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, অন্তর্বর্তী সরকার মার্কিন বদান্যতা লাভের আশায় দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা বিকিয়ে দিতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
তবে সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের দালালী করে নিজের দেশের সার্বভৌমত্বকে অরক্ষিত করার ব্যাপারে হাসিনা সরকার বেশ পারদর্শী ছিল। বৃটিশ দালাল হাসিনা আরেক বৃটিশ দালাল জান্তা বাহিনী যখন বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছিল তখন তাদেরকে জেলে না ঢুকিয়ে জামাই-আদর এবং চিকিৎসা করিয়ে মিয়ানমারে ফেরত পাঠিয়েছিল। যদিও বাস্তবতা হচ্ছে এই জান্তা বাহিনী কিংবা আরাকান আর্মি উভয়ের হাতেই রোহিঙ্গা মুসলিমদের রক্ত লেগে আছে। কিন্তু বিপর্যস্ত রোহিঙ্গা মুসলিমদের ব্যাপারে পূর্ববর্তী কিংবা বর্তমান সব সরকারের নীতি সম্পূর্ণ প্রতিকূল। তাদেরকে পুশব্যাক করা, সমুদ্রে জাহাজকে ফিরিয়ে দেয়া, কাটাতারের ক্যাম্পে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য করা; কিন্তু জান্তা বাহিনী কিংবা আরাকান আর্মির প্রতি তাদের আচরণ প্রমাণ করে আমাদের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব’র ব্যাপারে আমাদের কোন স্বাধীনতা নেই। এসব নতজানু শাসকগোষ্ঠী আমাদেরকে সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা কিংবা বৃটেনের উপর নির্ভরশীল করে রেখেছে।
পশ্চিমাদের চাপিয়ে দেয়া বিশ্বব্যবস্থার অংশ হিসেবে যতদিন আমরা থাকব ততদিন আমাদের কোন স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব থাকবে না, আমরা সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রসমূহের ভূ-রাজনৈতিক পরিকল্পনার গুটি হিসেবে কাজ করতে থাকব, আর আমাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়তে থাকবে। সুতরাং এই দালাল শাসকগোষ্ঠীকে ক্ষমতায় রেখে আর পশ্চিমাদের চাপিয়ে দেয়া সেক্যুলার-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হবে না। সুতরাং আমাদেরকে অবশ্যই মার্কিন-বৃটিশ-ভারত এর দালালগোষ্ঠীকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করে সেক্যুলার-গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তে আমাদের আক্বীদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ইসলামী ব্যবস্থা তথা খিলাফত রাষ্ট্র বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে। আমরা দেখেছি, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) ইসলামী রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে কতটা তৎপর ছিলেন। হিজরী ৯ম সনে (৬৩০ খ্রিস্টাব্দ) যখন খবর পাওয়া গেল যে বাইজেন্টাইনরা মুসলিমদের আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন তিনি (সাঃ) তাবুক যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। আমরা খিলাফত শাসনের ১৪শত বছরের ইতিহাসে দেখেছি কিভাবে ক্রুসেডার পশ্চিমাদেরকে মুসলিম ভূমিসমূহ ব্যবহারের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ছিল, ফলে পর্তুগীজদেরকে দীর্ঘ সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে ভারতবর্ষে আসার রাস্তা বের করতে হয়েছিল। সুতরাং একমাত্র খিলাফত রাষ্ট্রই পারবে বাংলাদেশ ও অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখতে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “এবং কিছুতেই আল্লাহ্ মু‘মিনদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্ব মেনে নিবেন না” [সুরা আন-নিসা : ১৪১]
- মোঃ হাফিজুর রহমান