রাষ্ট্র সংস্কারের যে উদ্যোগ এটি বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা ফল: আলী রিয়াজ

 


খবরঃ 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, রাষ্ট্র সংস্কারের যে উদ্যোগ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে, তা কেবলমাত্র সরকারের উদ্যোগ নয়। এটি বাংলাদেশের জনগণের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষার ফল। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র সংস্কারের তাগিদ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে এসেছে, ছাত্রসমাজের কাছ থেকে এসেছে এবং সর্বোপরি দেশের সব স্তরের মানুষের কাছ থেকে এসেছে।… (https://www.banglatribune.com/politics/jamat-e-islam/895860/ রাষ্ট্র-সংস্কারের-উদ্যোগ-জনগণের-দীর্ঘদিনের)

মন্তব্যঃ

বাংলাদেশের মানুষ বর্তমান দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার চায়, এটা যেমন সত্য, তেমনি এটাও সত্য যে তারা সংস্কারের নামে জীবন ও সমাজ থেকে ইসলামের পৃথকীকরণ চায়না। তারা বরং ইসলামী শরীয়াহ্‌ দিয়ে শাসিত হতে চায়। এটা এই নিউজের আলোচক আলী রিয়াজের নিজস্ব গবেষণা থেকেই প্রমাণিত। (পড়ুন, গণতন্ত্র ও শরিয়াহ আইন: জনমত দুটিরই পক্ষে) (যদিও আলোচ্য গবেষণাটিতে গণতন্ত্রের অন্তর্নিহিত অর্থ, যেটা হলো স্রষ্টাকে বাদ দিয়ে মানুষের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস, সেটা লুকিয়ে শুধুমাত্র শাসক নির্বাচনের বিষয়টিকেই হাইলাইট করা হয়েছে)। অথচ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যতগুলো সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে তার কোনটাই শরীয়াহ থেকে নেয়া হয়নি। যার সর্বনিকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে, বর্তমানে সমালোচিত নারী সংস্কার বিষয়ক প্রস্তাবনাগুলো। তারপর সংবিধান সংস্কারের ক্ষেত্রে বর্তমান সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বাদ দিলেও অত্যন্ত সুকৌশলে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ থেকে উৎসারিত সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র নামক পশ্চিমা মূল্যবোধগুলো মূলনীতি হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে। এই শব্দগুলো আপাতদৃষ্টিতে চটকদার বলে মনে হলেও প্রত্যেকটির অন্তর্নিহিত ব্যাখ্যা ও পশ্চিমা সমাজে এগুলো চর্চার প্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ইসলামবিরোধী। যেমন, ‘বহুত্ববাদ’ নামক মূল্যবোধের অধীনে পশ্চিমা সমাজসহ পুরো পৃথিবীতে সমকামিতাকে বৈধতা প্রদান করা হচ্ছে। সংস্কারবাদীদের কর্মকান্ড থেকে এটা স্পষ্ট যে, তারা সংস্কার-সংস্কার খেলার এই সুযোগে আরো বেশী সেক্যুলারাইজেশনের দিকে আমাদেরকে ঠেলে দিচ্ছে। বলা হচ্ছে, ‘ফ্যাসিবাদ’ বা ‘স্বৈরাচার’ এর পুনরুত্থান ঠেকানোর জন্যই বর্তমানের এই সংস্কারগুলো প্রস্তাব করা হয়েছে’, তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, আগের সংস্কারগুলোর মতই ইসলামকে বাদ দিয়ে সেক্যুলারিজমকে আঁকড়ে ধরলে কি ফ্যাসিজমের উত্থান ঠেকানো যাবে? তাহলে কেন দেশের মানুষের আবেগ অনুভূতিকে পাশ কাটিয়ে সংস্কারের নামে পশ্চিমা সেক্যুলারিজম থেকে উদ্ভূত দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধগুলোকে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে? আমরা বাস্তবে দেখি, সেক্যুলারিজম হচ্ছে সেই গাছ, যার গণতন্ত্র নামক ফলটি পেঁকে গেলে ফ্যাসিবাদে পরিণত হয়। কারণ, যেহেতু গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাটি স্রষ্টা বিবর্জিত ‘সেক্যুলারিজম’ নামক বিশ্বাস থেকে উদ্ভুত, সেহেতু এখানে রাজনীতিবিদ ও শাসকরা কারও নিকট থেকে কোন জবাবদিহিতাকে পরোয়া করে না। আর বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের যেসব দেশগুলোতে মূলত বিদেশী শক্তির প্রভাব বেশী, সেসব দেশগুলোতে গণতান্ত্রিক শাসকগুলো বিদেশী শক্তিগুলোকে ম্যানেজ করে ক্ষমতায় টিকে গেলেই ‘স্বৈরাচারী’ বা ‘ফ্যাসিবাদী’ শাসকে পরিণত হয়। 

তাই সেক্যুলারিজমকে অক্ষত রেখে, ফ্যাসিবাদের পুনরুত্থান ঠেকানোর জন্য বর্তমান যে সংস্কারগুলো প্রস্তাব করা হচ্ছে, সেগুলো কখনোই ফ্যাসিবাদের উত্থান ঠেকাতে পারবে না। ফ্যাসিবাদের উত্থান ঠেকানোর জন্য আমাদের এমন শাসনব্যবস্থা দরকার, যা পশ্চিমা প্রভাবমুক্ত, যেখানে জনগণের নিকট শাসকদের রয়েছে শক্তিশালী জবাবদিহিতা, রাষ্ট্রীয় কাঠামোগত জবাবদিহিতা এবং সর্বোপরি স্রষ্টার নিকট জবাবদিহিতা। যার সব কটিই ইসলামী শাসনব্যবস্থা খিলাফতের মধ্যে বিদ্যমান। এখানে রয়েছে মাযালিম নামক আদালত যা কোন একজন নাগরিকেরও অধিকার ভুলুন্ঠিত হলে শাসকদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। তাই সংস্কারটি হতে হবে আমূল যা আমাদের খিলাফতের শাসনব্যবস্থার দিকে নিয়ে যাবে।

    -    মোঃ জহিরুল ইসলাম


Previous Post Next Post