খবরঃ
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের কয়েকটি প্রস্তাব নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।…নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ নিয়েও আলোচনা চলছে। বৈবাহিক ধর্ষণ বা স্বামী-স্ত্রী ধর্ষণ হলো- সম্মতি ব্যতীত স্ত্রীর সঙ্গে যৌন মিলনের কাজ।… (https://www.jugantor.com/islam-life/946899)
মন্তব্যঃ
পর্ণোগ্রাফী, পরোকীয়া, যৌনতা নির্ভর পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাবে মুসলিম দেশসমূহে পরিবার নামক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটি আজ নানাভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। নারী-পুরুষের বৈবাহিক সম্পর্ককে নিছক যৌনতুষ্টি ও সম্পদ প্রাপ্তি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। ফলে পারস্পরিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে স্নেহ, প্রশান্তি, দয়া ও ভালবাসা অর্জনের মহামূল্যবান মাধ্যম এই পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানটি হয়ে উঠেছে ঘৃণা ও সহিংসতায় পরিপূর্ণ এক টুকরো জাহান্নাম। এই জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে অনেককেই দেখা যাচ্ছে আত্মহত্যার পথও বেছে নিতে। আবার পুরুষের তুলনায় অপেক্ষাকৃত শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়ায় সাধারণত নারীরা এই সহিংসতার বেশী শিকার হচ্ছে। যাইহোক, নারীর প্রতি এই সহিংসতার সমাধানের জন্য বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা এই সমস্যার মূলে না গিয়ে (যেটা হচ্ছে পরিবারের মাধ্যমে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করা) ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ সহ বিভিন্ন উদ্ভট ধারণার অবতারণা করেছে। যেখানে নারীকে পুরুষের ‘সহযোগী’ হওয়ার পরিবর্তে ‘পরিবারে ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী’ বানানো হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন, জাতিসংঘের মাধ্যমে এটাকে ব্যাপকভাবে প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে জাতিসংঘের নেয়া একটা পদক্ষেপ হচ্ছে CEDAW কনভেনশন, যেখানে বাংলাদেশসহ ১৮৯টি দেশ স্বাক্ষর করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ এর সর্বশেষ সংযোজন হচ্ছে নারী সংস্কারবাদী গ্যাং কর্তৃক স্ত্রীর অসম্মতিতে মিলিত হওয়াকে (যেটাকে তারা ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ নাম দিয়েছে) অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাবনা করা। পর্নোগ্রাফি নির্মূল না করে এটি দ্বারা প্ররোচিত বিভিন্ন বিকৃত যৌন সহিংসতাকে এই উদ্ভট সংস্কার প্রস্তাবনার গ্রাউন্ড হিসেবে দেখানো হচ্ছে। সেই সাথে যৌন পেশাকে বৈধতা দেওয়ার (নারী যৌনকর্মীদের ক্ষমতায়ন) মাধ্যমে যৌনকর্মীদের নিকট গমন করাকে সহজ করে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে বাংলাদেশের মতো মুসলিম দেশগুলোতে ‘বিয়ে’র মাধ্যমে পরিবার গঠনকে কঠিন করে দেওয়া হচ্ছে।
এগুলো সবই ‘জুয়ামার’ নামক মিশনারির ষড়যন্ত্রের বাস্তব প্রতিফলন। যে বলেছিল, ‘একজন মুসলিম নারীকে তার ঘর থেকে বের করে দেয়া (নারীর ক্ষমতায়ন) হলো আমাদের মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের প্রথম ধাপ’। এভাবে পশ্চিমারা ও তাদের এদেশীয় অনুসারীরা আমাদের বিরুদ্ধে (আমাদের ঈমান রক্ষার শেষ দুর্গ-পরিবার ধ্বংসের মাধ্যমে) তাদের সাংস্কৃতিক ক্রুসেড পরিচালনা করছে। তাই এই সকল ক্রুসেডের বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে হলে আমাদের পরিবার সম্পর্কে আল্লাহ্’র রাসূল (সাঃ) নির্দেশিত দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণ করতে হবে। যিনি মু‘মিন নারী-পুরুষকে মৌমাছির সাথে তুলনা করেছেন। তিনি (সাঃ) বলেছেন, “মু‘মিনের উদাহরণ হচ্ছে মৌমাছির মতো, সে পবিত্র বস্তু ভক্ষণ করে, পবিত্র বস্তু নির্গত করে এবং সে যে ফুলের উপর বসে তা ভেঙ্গে ফেলে না, নষ্টও করে না…” (মুসনাদে আহমদ)। মৌমাছি যেমন একত্রিতভাবে ফুল থেকে মধু আহরন করে, ফুলকে নষ্ট না করে পরাগায়ন ঘটায়, তারপর উপকারী মধু উৎপন্ন করে, তেমনি মু‘মিন নারী (সন্তান প্রসব, লালন পালন, সুশিক্ষা প্রদান ইত্যাদি) এবং পুরুষরা (ভরণপোষণ) একে অপরের সহযোগী হয়ে তাদের ফুলের ন্যায় পরিবারের জন্য পরিশ্রম করার মাধ্যমে পরস্পরের প্রতি ভালবাসা, দয়া ও স্নেহ দেখাবে, পরিবারের সদস্যদের কোন ক্ষতি না করেই (ফুল না ভেঙ্গেই) এর মাধ্যমে প্রশান্তি, সালাউদ্দিন আইয়ুবী, মোহাম্মাদ আল ফাতিহ প্রমুখদের মত সু-সন্তান (যেমন, মৌমাছি কর্তৃক পরাগায়নের মাধ্যমে ফল ও ফসল প্রাপ্তি) এবং আল্লাহ্’র সন্তুষ্টি লাভ করবে।
- মোঃ জহিরুল ইসলাম