খবরঃ
প্রয়োজনে আইএমএফ থেকে সরকার বের হয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড.আনিসুজ্জামান চৌধুরী। ..বেশি চাপাচাপি করলে, মোটামুটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা আইএমএফ থেকে বের হয়ে আসবো। ড. আনিসুজ্জামান বলেন, আইএমএফ থেকে ঋণ নেওয়ার অর্থই হচ্ছে আইসিইউতে যাওয়ার মতো অবস্থা। আইসিওতে যাওয়ার মতো অবস্থা কে তৈরি করেছে? কারা দেশের অর্থনীতিকে রুগ্ণ করেছে? এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার দেশের অর্থনীতির সে সংকটাপন্ন কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। এখন কেন আমরা কেন আইসিইউতে থাকবো? এখন যদি বেশি চাপাচাপি করে তাহলে আমরা আইএমএফের ঋণের শর্ত থেকে বের হয়ে আসবো। (https://www.dailyamardesh.com/business/amdxzhn2nzcxx)
মন্তব্যঃ
নিঃসন্দেহে আইএমএফ থেকে বের হয়ে আসার বক্তব্য সাধুবাদ পাওয়ার মত। কিন্তু, হায়, যদি তা প্রকৃত অর্থেই বলা হত! আমরা দেখছি, অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুততার সাথে আইএমএফের শর্তগুলো পূরণের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেশকে আইএমএফের প্রেসক্রিপসনে চলার মত করে প্রস্তুত করছে। আইএমএফ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৪৪ সালে। আর ১৯৮০ এবং ৯০ এর দশকে আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব ট্রেজারি মিলে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অর্থনৈতিক ক্রাইসিস থেকে বের হওয়ার ১০টি প্রেসক্রিপসন নিয়ে আসে যা “ওয়াশিংটন কনসেনসাস” নামে পরিচিত। উন্নয়নশীল দেশগুলো যারা আইএমএফ-এর ঋণ গ্রহণ করে তাদেরকে মৌলিকভাবে এই ১০টি প্রেসক্রিপসন তথা শর্ত পূরণ করতে হয়। সুতরাং, স্বজ্ঞানে আইএমএফকে বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর আধিপত্য বিস্তার করতে দিয়ে এখন এই ধরনের ফাকা বুলির কারণ হচ্ছে জনগণকে এক ধরণের বুঝ দেয়া যে তারা এই শর্ত মানতে বাধ্য হচ্ছেন। আইএমএফ-এর ১০টি প্রেস্কিপসনের অন্যতম দুটি হচ্ছে: দেশে “ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট বাড়াতে হবে” এবং “ফরেন কোম্পানীদের সম্পূর্ণ স্বাধীন ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ দেয়ার শর্তে দেশের অর্থনৈতিক পলিসি ডি-রেগুলেট করতে হবে”। কিছুদিন আগে ড. ইউনুসের ইনভেস্টমেন্ট সামিট করার উদ্দেশ্য এবং প্রস্তাবনাতে এটিই প্রমাণিত হয়। একটি দেশে ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট বাড়ার অর্থ হচ্ছে, এর শিল্পখাত বিদেশী কোম্পানীর নিয়ন্ত্রণে তুলে দেয়া। এছাড়া, আইএমএফ এর শর্তানুসারে “রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দেশীয় কিংবা বিদেশী প্রাইভেট কোম্পানীর হাতে তুলে দিতে হবে”। কিছুদিন আগে প্রকাশিত চট্রগ্রাম বন্দরের স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং সর্বোচ্চ রাজস্ব আহরণকারী নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এন.সি.টি)-কে মার্কিন প্রভাবাধীন দুবাই ভিত্তিক অপারেটর কোম্পানী ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দেয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্তকরণের খবর তারই প্রমাণ।
বর্তমানে আইএমএফের আরেক শর্তানুযায়ী কারেন্সি ডি-ভ্যালুয়েশন প্রক্রিয়ায় টাকার বিপরীতে ডলার রেটকে ফিক্সড করার পরিবর্তে ফ্লোটিং করার অর্থাৎ পুরোপুরি বাজারের উপর ছেড়ে দেয়ার আলোচনা চলছে। আইএমএফ শর্তানুসারে ইতিপূর্বে শ্রীলংকায় ডলার ৪০০ রুপিতে এবং পাকিস্তানে ৩৬০ রুপি পর্যন্ত পৌঁছেছিল। বাংলাদেশেও এমনটা হলে টাকার মান চরমভাবে কমে আসবে ফলে সার্বিকভাবে দেশ ভয়াবহ মূলস্ফীতিতে ডুবে থাকবে এবং আইএমএফ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ইচ্ছেমত ম্যানুপুলেট করতে পারবে। এসব প্রমাণ করে ড. ইউনুসের বিশেষ সহকারীর এমন বক্তব্য মূলত জনগণকে ধোঁকা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই উচ্চারিত। প্রকৃত অর্থে নয়।
প্রকৃতঅর্থে, আইএমএফের ফাঁদ থেকে বের হতে হলে দরকার ডলারভিত্তিক মুদ্রাব্যবস্থা বিপরীতে সম্পূর্ণ ভিন্ন মুদ্রাব্যবস্থা। কেননা, ইতিমধ্যে আইএমএফের শর্তানুসারে বিগত সরকারগুলো যে ধরণের অর্থনৈতিক অবকাঠামো পরিবর্তন করেছে তা থেকে বের হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থনৈতিক অবকাঠামো গ্রহণ করা ছাড়া কোন উপায় নাই। এক্ষেত্রে একমাত্র কার্যকর ইসলামের স্বর্ণ ও রৌপ্য ভিত্তিক মুদ্রাব্যবস্থা। কেননা, বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিপরীতে ইসলামের রয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন নেতৃত্বশীল অর্থব্যবস্থা। যার অন্যতম মূলকথা কাফিরদের কর্তৃত্ব থেকে জনগণকে মুক্ত রাখা এবং স্বনির্ভরশীল অর্থনীতি তৈরি করা। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “...এবং কিছুতেই আল্লাহ্ মু’মিনদের উপর কাফিরদের কর্তৃত্ব মেনে নিবেন না” (সূরাঃ আন-নিসা: ১৪১)।
- আসাদুল্লাহ্ নাঈম