নারীর জন্য ৩০০ সংরক্ষিত আসন, উত্তরাধিকারে সমান অধিকার দেওয়ার সুপারিশ

 

খবরঃ

অভিন্ন পারিবারিক আইনের মাধ্যমে সব ধর্মের নারীদের জন্য বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য অধ্যাদেশ জারি করার সুপারিশ করেছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। অন্তত আইনটি তৈরিতে এখনই উদ্যোগ নিয়ে সব সম্প্রদায়ের জন্য ঐচ্ছিকভাবে তা প্রয়োগ করতে বলা হয়েছে। সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে সংসদীয় আসন বাড়িয়ে ৬০০ করে সেই আসন থেকে ৩০০ আসন নারীর জন্য সংরক্ষিত রেখে সরাসরি নির্বাচনের সুপারিশ করা হয়েছে। ‘সর্বক্ষেত্রে সর্বস্তরে নারীর প্রতি বৈষম্য বিলুপ্তি এবং নারী–পুরুষের সমতা অর্জনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ চিহ্নিতকরণ’ শিরোনামের প্রতিবেদনে এই সুপারিশ করা হয়েছে। (https://www.prothomalo.com/bangladesh/2is7rc4bio)

মন্তব্যঃ

‘ইসলাম ধর্মের নীতি অনুসরণের কারণে নারীদের অধিকার হরণ হচ্ছে ও নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে’ এই ধারণার ভিত্তিতে প্রণীত নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের এই সুপারিশ নি:সন্দেহে ইসলামের ব্যাপারে চরম অজ্ঞতা ও বিদ্বেষ থেকে প্রস্তত করা হয়েছে। মুসলিম মহিয়সী নারী ফাতিমা আল-ফিহরী ‘ইসলামী মিরাস’ বা উত্তরাধীকার আইন মেনে তার পিতা মুহাম্মাদ আল-ফিহরীর কাছ থেকে এত বিশাল সম্পদের মালিক হয়েছিলেন যে তা তার নিজের জীবনধারণের পরও একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য যথেষ্ঠ ছিল, যা শতশত বছর ধরে মুসলিম-আফ্রিকার জ্ঞান-বিজ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার প্রধান কেন্দ্র ছিল এবং ইউনেস্কোর মতে বর্তমানে এটি বিশ্বের oldest continuously existing university যা আজ অবধি চালু আছে। ফাতিমা আল-ফিহরী মরক্কোর ফেজ শহরের প্রাণকেন্দ্রে উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করে উচ্চমূল্যে জমি ক্রয় করে ৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন, এবং তার স্বামী ও পুত্ররা তার এই কাজে বাঁধাও দেয়নি কিংবা তার সম্পত্তি কেড়েও নেয়নি।

উত্তরাধিকার থেকে সমান অধিকার দাবীদার সেকুলাররা দেখাক যে সমানাধিকার প্রাপ্ত হয়ে কে কখন কোথায় এমন যুগান্তকারী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে!? মূলত: নারীর ‘সমানাধিকার’ হল একটি ‘মিষ্টি আবরণ’ যা দিয়ে ‘ইসলাম বিদ্বেষকে’ আবৃত করে ইসলামী জীবনব্যবস্থার আল্লাহ্‌প্রদত্ত বিধিবিধানগুলোকে ক্রমাগত আক্রমণের মুখে রাখা হচ্ছে এবং পিতা-ভাই-স্বামীর নিরাপত্তা বলয় থেকে নারীকে বের করে সেকুলার-পুঁজিবাদের নোংরা বেহায়াপনার রসদ হিসেবে ব্যবহার করার পায়তারা করছে।

বাস্তবতা হল: পশ্চিমা সেকুলারিজমের কারণে নারীরা বর্তমানে বৈষম্যের শিকার ও অধিকার ‍বঞ্চিত হচ্ছে। পশ্চিমা পুঁজিবাদী সমাজে এই সেদিনও নারীর সমানাধিকার দূরে থাক, সম্পদের মালিকানাই তাদের ছিল না। ধীরে ধীরে সমাজের এলিট নারীরা সম্পদের মালিকানা পেতে শুরু করলেও এই সম্পদ তাদের পছন্দমত ব্যবহার বা খরচ করার অধিকার পেতে তাদেরকে আরো অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। ইউরোপ-আমেরিকায় নারীকে আলাদা মানুষ সত্তা হিসেবেই গণ্য করা হত না, তাদের কোন ভোটাধিকারও ছিল না। কালের পরিক্রমায় পুঁজিবাদ আরো বিকশিত হলে পুঁজিবাদী ইন্দ্রীয়সুখ কেন্দ্রীক লাইফস্টাইলকে ছড়িয়ে দেওয়ার বাহন হিসেবে ব্যবহারের জন্য নারীকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়। এর ফলাফল হয়েছে আরো ভয়াবহ। নারীর প্রতি অবিচার, জুলুম, সহিংসতা চরমহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পশ্চিমা সেকুলারিজমের এই মডেল অনুসরণ করেই আমাদের দেশের একশ্রেণীর সেকুলার (যারা কিনা আবার সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা উপভোগ করে) নারীর সমানাধিকারের নামে নারীকে আরো সহজলভ্য ও সস্তা বানানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত। এই সেকুলারদের আবির্ভাবের আগে ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থার অধীনে আমাদের পূর্বের জেনারেশনের নারীদের সম্পদের অধিকার, প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা, সুউচ্চ সম্মান, আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা সবই ছিল, যার ফলে সমাজ ছিল এখনকার তুলানায় হাজারগুণ অগ্রসর ও পরিবার ছিল অনাবিল প্রশান্তির উৎস।

    -    রিসাত আহমেদ


Previous Post Next Post