খবরঃ
গাজার পর বিশ্বের আরেক উন্মুক্ত কারাগার ভারত শাসিত কাশ্মীর। যেখানে স্বাধীনতার অর্থ শুধুই একটি শব্দ মাত্র। বাস্তবতা নেই। সীমাহীন সেনা চৌকি, কঠোর কারফিউ এবং মতপ্রকাশের অধিকারহীনতায় ঘেরা কাশ্মীরের মানুষের জীবন। ... ২০১৯ সালের আগস্টে বিজিপি সরকারের নির্দেশে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা (স্বায়ত্তশাসন) বাতিলের পর আরও গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় কাশ্মীর। সেখানে কোনো স্বাধীনতা নেই। প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর নেই। আছে শুধু সৌন্দর্যে ঘেরা ভূমি এরই প্রেক্ষাপটে কাশ্মীরকে ‘দ্বিতীয় গাজা’ বলা যেন কোনো অতিশয়োক্তি নয়, বরং বাস্তবতার নির্মম প্রতিচ্ছবি। এ বিষয়ে একই অভিমত প্রকাশ করেছেন কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিও। বলেছেন, কাশ্মীর একটি উন্মুক্ত কারাগারের মতো, যেখানে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং নজরদারিতে রাখা হয়। (https://dailyinqilab.com/international/news/755971)
মন্তব্যঃ
কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক হামলা এবং তৎপরবর্তী ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা আবারও আমাদের এমন একটি অধিকৃত মুসলিম ভূমির কথা মনে করিয়ে দেয় যা ফিলিস্তিনের মতো পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে এবং উম্মাহ্ সমর্থনের অপেক্ষায় রয়েছে। কাশ্মীর একটি ইসলামী ভূমি, যা মুসলিমরা জয় করে এবং আব্বাসীয় খলীফা মু‘তাসিম বিল্লাহ্’র শাসনকালে (৮৩৩-৮৩৯ খ্রিস্টাব্দ) কাশ্মীরে ইসলাম প্রবেশ করে। বৃটিশ উপনিবেশবাদীদের আগমনের পূর্ব পর্যন্ত কাশ্মীরসহ গোটা ভারতীয় উপমহাদেশ ধারাবাহিকভাবে ইসলামী শাসনের অধীনে ছিল। ১৯৪৭ সালে ভারতের বিভাজনের সময় হিন্দু শাসক এবং ব্রিটিশদের সহায়তায় ভারতীয় সেনাবাহিনী এই ভূখণ্ডের দুই-তৃতীয়াংশ দখল করে নেয়। ফলশ্রুতিতে গত কয়েক দশক ধরে কাশ্মীরের মুসলিমরা গণহত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া সহ ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। ভারতের হিন্দুত্ববাদী মোদী সরকার ২০১৯ সালে তাদের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেয়। কাশ্মীরে মুসলিমদের জীবন, সম্পত্তি এবং নিরাপত্তা সম্পূর্ণরূপে অরক্ষিত। বর্তমানে ভারত সেখানে প্রায় ৫ লক্ষ সৈন্য মোতায়েন করেছে, যা একে বিশ্বের বৃহৎ কারাগারে পরিণত করেছে।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে পাকিস্তান, বাংলাদেশ সহ অন্যান্য মুসলিম ভুখন্ডের বিশ্বাসঘাতক দালাল শাসকরা ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমির মতই মুসলিমদের আরেক ভূমি কাশ্মীরকে পরিত্যাগ করেছে এবং ভারতের কাছে সমর্পণ করেছে। বিজেপি সরকারের উত্থানের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতকে আঞ্চলিক প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা করে তখন থেকেই পাকিস্তানের সামরিক ও রাজনৈতিক শাসকগোষ্ঠী আমেরিকার পরামর্শে ২০১৯ সালে অধিকৃত কাশ্মীরকে ত্যাগ করে হিন্দুত্ববাদী ভারতের হাতে তুলে দেয়। এরপর পাকিস্তানের শাসকরা ২০২১ সালের কাশ্মীর সীমান্তরেখায় ভারতকে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি উপহার দেয়! সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনাও কাশ্মিরকে মুক্ত করার জন্য নয়, বরং জনপ্রিয়তায় তলানীতে থাকা দুইদেশে মার্কিন দালাল শাসকগোষ্ঠী তথা পাকিস্তানের সামরিক-রাজনৈতিক শাসকগোষ্ঠী এবং ভারতের মোদী সরকারের জনপ্রিয়তার বাতাসে দোল দিতে করা হয়েছে, তাইতো আমরা প্রত্যক্ষ করলাম তাদের মনিব ট্রাম্প ফোন দেয়ার সাথে সাথে তারা উভয় পক্ষ শান্ত হয়ে গেল। আমরা জানি, মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় দেশগুলো ভারতের সাথে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে ভাতের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে চলেছে। গত ১২ বছরে উপসাগরীয় দেশগুলোর ভারতে বিনিয়োগ প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলারে পৌছেছে। ভারতে ব্যবহৃত ৪৫% অপরিশোধিত তেল মুসলিম দেশ: ইরাক, সৌদি আরব, ইউএই ও কুয়েত থেকে আসে। কাতার একাই ভারতকে ৭০% এলএনজি সরবরাহ করে। একইভাবে, বাংলাদেশের বর্তমান অন্তবর্তী সরকার ভারত বৈরিতার মুখোশ পড়লেও পতিত হাসিনার মতই ভারতের সাথে সকল প্রকার সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে। সরকার নির্লজ্জভাবে রাখাইনে মানবিক করিডোরের নামে আমেরিকার প্রক্সি যুদ্ধে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অথচ গাজা কিংবা কাশ্মীরের ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছে।
কাশ্মীর হোক বা ফিলিস্তিন, এগুলো মুসলিমদের ভূমি। এই দখলকৃত ভূমিগুলো মুক্ত করার দায়িত্ব শুধুমাত্র পাকিস্তানের নয় বরং এই দায়িত্ব সমগ্র উম্মাহ্’র উপর বর্তায়। আর দখলকৃত ভূমির ক্ষেত্রে একমাত্র শরীয়তসম্মত সমাধান হলো সামরিক অভিযানের মাধ্যমে সেগুলোকে মুক্ত করা। কিন্তু কর্তব্য পালনের পথে বাধা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে মুসলিম বিশ্বের দালাল শাসকেরা, যারা তাদের পশ্চিমা প্রভুদের স্বার্থে মুসলিম সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করে, আর মুসলিমদের বিষয়ে তাদেরকে ব্যারাকে বন্দি রাখে। মুসলিম সামরিক বাহিনীর দক্ষতা ও সক্ষমতা কেমন তা পাকিস্তানের অকুতোভয় ও মেধাবী সামরিক বাহিনী মাত্র দুইদিনেই বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে, তারা শুধু সঠিক নেতৃত্বের অভাবে রয়েছে। তাই, কাশ্মির, ফিলিস্তিন, আরাকানকে মুক্ত করতে আমাদেরকে পশ্চিমা দালাল শাসকমুক্ত হতে হবে এবং মুসলিমদের প্রকৃত অভিভাবক খলিফার হাতে আমাদের শাসনের দায়িত্বভার অর্পণ করতে হবে। একমাত্র খিলাফত রাষ্ট্রের খলীফাই হচ্ছেন সেই উপযুক্ত নেতৃত্ব যিনি মুসলিম সামরিকবাহিনীকে কাশ্মীর, ফিলিস্তিন, আরাকান এবং অন্যান্য অধিকৃত মুসলিম ভূমিকে মুক্ত করার জন্য পূর্ণ সামরিক ক্ষমতাকে ব্যবহার করবেন। এবং কাশ্মীরসহ সমগ্র ভারতবর্ষকে ইসলামী শাসনের অধীনে ফিরিয়ে এনে এই কাজের অগ্রপথিকদেরকে আল্লাহ্ প্রদত্ত সম্মান ও প্রতিদান অর্জনের দিকে পরিচালিত করবেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, “আমার উম্মতের মধ্যে দুটি দল আছে যাদেরকে আল্লাহ্ জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করেছেন। একটি দল যারা হিন্দ বিজয় করবে এবং আরেকটি দল যারা ঈসা ইবনে মারিয়ামের (আঃ) সাথে থাকবে” (মুসনাদে আহমাদ)
- কাজী তাহসিন রশীদ