খবরঃ
সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলো রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। অর্থাৎ এই নামে বাংলাদেশে আর রাজনীতি করা যাবে না। সোমবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে শনিবার রাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুসারে-আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনে দলটির বিচার হবে। এই বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে। (https://www.jugantor.com/politics/952229)
মন্তব্যঃ
জুলাই আন্দোলনের দশ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের এই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এলেও, মুলতঃ বিগত পনের বছরের দুঃশাসন, বিদেশী তাবেদারী ও ইসলাম বিদ্বেষের কারণে আওয়ামী লীগ বহু আগেই জনগণের নিকট নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশে সেকুলার রাজনীতির অগ্রদূত এই দলটি ও তার সরকার সারাদেশে গুম-খুন-ধর্ষণ-চাঁদাবাজি করেছে, চালিয়েছে মেগা দুর্নীতি, আর মেগা লুটপাটের মহাউৎসব। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া থেকে শুরু করে সামান্য চায়ের দোকানেও এগুলোর সমালোচনা করলে যেতে হত জেলে। সারা বাংলাদেশকে যেন পরিণত করা হয়েছিল একটি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে।
দেশের বেশীরভাগ রাজনৈতিক দলই আওয়ামী সরকারের দমন-নিপীড়নের শিকার হয়েছে, কিন্তু তাদের মধ্যে অন্যতম ভূক্তভোগী হচ্ছে হি*যবুত তা/হ্রীর। ২০০৮ সালে মার্কিন-বৃটেন-ভারতের সমঝোতায় ক্ষমতায় আসার পর, আওয়ামী সরকার তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে ইসলামের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের যুদ্ধে যোগ দেয় এবং মার্কিনীদের আঞ্চলিক চৌকিদার ভারতের নিকট দেশকে অধীনস্ত করার পথে প্রধান বাধা মেধাবী সেনাঅফিসারদের হত্যা করতে পিলখানা হত্যাকান্ডে ভারতকে সহযোগীতা করে। হি*যবুত তা/হ্রীর সর্বপ্রথম দল যারা পিলখানা হত্যাকান্ডে হাসিনা ও ভারতের সম্পৃক্ততার মুখোশ উন্মোচন করে। যার ফলশ্রুতিতে, ২০০৯ সালে মার্কিন-ভারতের নির্দেশে অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এমতাবস্থায়, আওয়ামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলেও আওয়ামী সরকারের রেখে যাওয়া অন্যায় নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল রাখা খুবই দুঃখজনক। আওয়ামী লীগের অন্যায় আদেশগুলো বহাল রেখে তার ফায়দা তোলার চেষ্টা নিঃসন্দেহে একটি প্রতারণা। আমরা জানি, আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী পশ্চিমাদের খুশি করতে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে কুখ্যাত সন্ত্রাস বিরোধী আইন প্রণয়ন করেছিল, মার্কিন প্রেসক্রিপশনে গঠিত সিটিটিসি (কাউন্টার টেরোরিজম এণ্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম) দ্বারা ইসলামপন্থী রাজনীতিবিদদের গ্রেফতার-নির্যাতন করেছিল। কিন্তু দুঃজনকভাবে এখন আমরা দেখছি, সেই একই হাতিয়ারগুলোকে অন্তর্বর্তী সরকার ইসলামী রাজনীতির বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে।
পরিশেষে, বাংলাদেশে আওয়ামী রাজনীতির অবসান দেশের সকল সেকুলার ও পশ্চিমা নির্ভর রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি সতর্কবার্তা। যদি কোন দল ইসলাম ও মুসলিমের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় কিংবা লোভী পুঁজিপতিগোষ্ঠী ও নিজেদের গোষ্ঠীগত স্বার্থ হাসিলে জনগণের বিরুদ্ধে দুঃশাসনে লিপ্ত হয় কিংবা বিদেশী শক্তিদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে তাহলে এদেশের জনগণ তাদেরকেও ইতিহাসের ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করবে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সতর্ক করে বলেন, ‘‘যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ্ তাদের অভিভাবক, তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন। আর যারা কুফরী করে, তাদের অভিভাবক হল তাগূত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারে নিয়ে যায়’’ [আল-বাকারাঃ ২৫৭]।
- মোঃ হাফিজুর রহমান