খবরঃ
নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে ২ থেকে ৩ বছর সময় লাগতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। এ সময়ে ১৯৭২ সালের সংবিধানে কিছু সংশোধনী আসবে বলেও জানান তিনি। ‘সংবিধান সংস্কারে নাগরিক জোটের সাত প্রস্তাব’ নিয়ে রোববার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। আইন উপদেষ্টা বলেন, গণপরিষদ নতুন সংবিধান প্রণয়নের কাজ করবে। এটা করতে আমার ধারণা ২-৩ বছর লাগতে পারে। এই ২-৩ বছর কি ৭২-এর সংবিধান বহন করব। এই ২-৩ বছর যারা জাতীয় সংসদ হিসাবে কাজ করবেন, তখন তারা কিছু ফান্ডামেন্টাল অ্যামেন্ডমেন্ট আনবেন। যেমন: প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা, ৭০ অনুচ্ছেদ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা-এ সংক্রান্ত কিছু ফান্ডামেন্টাল জিনিস নিয়ে সমাজে বহু বছর ধরে ঐক্য আছে। নতুন সংবিধান প্রণয়ন কবে হবে-এজন্য আমি এই ৭২-এর বোঝা কেন বহন করব। [প্রধানমন্ত্রীর দুই মেয়াদ সমাধান নয়, ক্ষমতা কমানো জরুরি]
মন্তব্যঃ
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানো জরুরী, নাকি আলোচনার বিষয় হওয়া উচিত, কেন প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা পাওয়ার পর স্বৈরাচারী হয়ে উঠেন? দেশের শাসনব্যবস্থাকে সব আলোচনার ঊর্ধ্বে রেখে এর শাখা-প্রশাখা নিয়ে আলোচনা কখনো জাতির জন্য কল্যান বয়ে আনবে না। স্রষ্টাবিবর্জিত ধর্মনিরপেক্ষ জীবনব্যবস্থায় মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য থাকে ভোগবাদি ও ইন্দ্রিয়সুখের জীবনযাপন। আর অর্থ ও ক্ষমতাই দিতে পারে মানুষকে সর্বোচ্চ ভোগ ও ইন্দ্রিয়সুখের জীবনযাপনের পরিপূর্ণ সুযোগ। এই পরিপূর্ণ সুযোগ পাওয়ার সবচেয়ে শর্টকাট হচ্ছে শাসক হয়ে আইন বানানোর ক্ষমতা লাভ করা। কারণ মানুষ যখন নিজেই আইন প্রণেতা হয়, তখন সে নিজের অথবা কাছের মানুষের অথবা তার চেয়েও ক্ষমতাসীন কোন সত্তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট আইন-কানুনই তৈরি করে। বাংলাদেশের মত রাষ্ট্রগুলো যেহেতু পরাশক্তি না, তাই এসব শাসকরা সাম্রাজ্যবাদীদের চাওয়া-পাওয়াকে প্রায়োরিটি দিয়ে ক্ষমতার মসনদে বসে। তাই সমাজের সবচেয়ে অর্থলোলুপ ও ক্ষমতালোভী মানুষগুলোই গণতান্ত্রিক রাজনীতির হাত ধরে ক্ষমতায় আসতে বদ্ধপরিকর থাকে। যার ফলে জন্ম নিতে থাকে একের পর এক স্বৈরাচারী ও স্বেচ্ছাচারী শাসক।
দুঃখজনক বিষয় হল- বাংলাদেশের তথাকথিত সুশীল ও বুদ্ধিজীবিরা বরাবরের মতই সেক্যুলার জীবনব্যবস্থার এই দূষিত চিন্তাকে ভিত্তি হিসাবে প্রত্যাখ্যান না করে কিভাবে একাধিক লোভীদের মধ্যে ক্ষমতা বন্টন করলে তা থেকে যেন অপেক্ষাকৃত কম স্বৈরাচার তৈরি হয়, তা নিয়ে মশগুল। তারা আড়াল করতে চায় যে দুইবারের বেশি ক্ষমতায় থাকতে না পারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রেসিডেন্টরা এমন সব আইনই প্রণয়ন করে (ধণীদের করছাড়, বেইল আউট প্যাকেজ, লবিস্ট প্রভাব) যা শুধুমাত্র বৈষম্যই তৈরি করে। এছাড়াও নিজের পছন্দমত অপরাধীদের ক্ষমা করা, পরিবার সদস্যদের অগ্রিম ক্ষমা প্রদান ইত্যাদি নানা ঘটনা উল্লেখযোগ্য যা মূলত স্বৈরাচারেরই নামান্তর। মানুষের হাতে আইন বানানোর ক্ষমতা থাকলে তা আইন মেনে কিংবা আইন ভেংগে দিনশেষে তা ফ্যাসিবাদেই রূপ নেবে। এটাই ধর্মনিরপেক্ষ জীবনব্যবস্থার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি।
সমাজের নিষ্ঠাবান ও সচেতন রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবিদের এটা অনুধাবন করা উচিৎ, মানুষ এমন একটা অপূর্ণ সত্তা যার পক্ষে কখনো নিরপেক্ষ, ন্যায়সংগত বিধান নিজের জন্য বানানো সম্ভব না। শুধুমাত্র সেই অসীম সত্তার পক্ষেই আইন প্রণয়ন সম্ভব যিনি মানুষের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে অবগত এবং তার থেকে উত্তরণের দিকনির্দেশনাও দিতে সক্ষম। তিনিই আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা, যিনি বলেন, “…মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে দুর্বল করে” [সূরা নিসাঃ ২৮] এবং আরো বলেন, “এই কুরআন এমন এক পথ প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক সরল…”[সূরা আল-ইসরাঃ ৯]। এই দিকনির্দেশনা অনুসরণ করেই ইসলামী শাসনব্যবস্থার শাসক খলিফা আল্লাহ্ প্রদত্ত হারাম ও হালালের সীমানা মেনে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন, যা স্বৈরাচার ও ফ্যাসিজমকে সমূলে উৎপাটন করবে। আল্লাহ্ চিন্তাশীলদের উদ্দেশ্য করে বলেন,
“আমি মানুষের জন্য কুর‘আন-এ সবধরনের দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছি, যেন তারা চিন্তা করে" [সূরা যুমার ৩৯:২৭]। তাই সুশীল ও বুদ্ধিজীবিদের উচিৎ ইসলামকে জীবনব্যবস্থা হিসেবে সকলের সামনে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে উপস্থাপন করা।
- জাবির জোহান