বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ইউনুস বিশেষ সুবিধা নিয়ে সমালোচনার ঝড়



খবরঃ

নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস, যিনি তার মাইক্রোক্রেডিট এবং অন্যান্য কাজের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। ছাত্র-জনতার অন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আগস্ট ৮, ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ সংস্থাগুলো সরকারি অনুমোদন এবং অন্যান্য সুবিধাগুলো পাচ্ছেন যা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা করা হচ্ছে। ইউনুস প্রতিষ্ঠিত সংস্থাগুলো, ব্যবসা বা উদ্যোগগুলোর মধ্যে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি ডিজিটাল ওয়ালেট সার্ভিস, জনশক্তি রপ্তানির লাইসেন্স, গ্রামীণ ব্যাংকের পাঁচ বছরের জন্য কর অব্যাহতিপ্রাপ্তি পুনঃস্থাপন, এবং সরকারের গ্রামীণ ব্যাংকে শেয়ার হ্রাস করা অন্তর্ভুক্ত, যা ২৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। এই অনুমোদনগুলোর পাশাপাশি, ইউনুস এবং তার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে বিচারাধীন মামলাসমূহ বাতিল করা হয়। (অনুবাদকৃত) (www.newagebd.net/post/country/264412/bangladesh-interim-govt-chief-yunus-under-criticism-over-privileges

মন্তব্যঃ 

ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত জুলাই আন্দোলনের পরে জনগণের আকাঙ্খা ছিল হাসিনার যুলুম এবং লুটপাটের ধারার পরিবর্তন। বিশেষ করে, ড. ইউনুস যিনি সুশাসন ও ন্যায়বিচারের কথা বলেন, তার কাছ থেকে জনগণের প্রত্যাশা ছিল তিনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অপব্যবহারের অপসংস্কৃতি পরিবর্তন করবেন। কিন্তু, জনগণকে হতাশ করে তিনি তার এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাষ্ট্রের বিশেষ বিশেষ সুযোগ সুবিধা প্রদানে হাসিনার পদাঙ্ক অনুসরণ করা শুরু করলেন। এমনকি তার এবং তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে আদালতে বিচারাধীন মামলাগুলোকে নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে বাতিল করলেন। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দুদকের অর্থপাচার মামলা বাতিল, আমার দেশ, ২৩ এপ্রিল ২০২৫)। কিছু কিছু ব্যক্তি বলার চেষ্টা করছেন, ইউনুস তার ব্যক্তিগত লাভের জন্য রাষ্ট্রের সুবিধা নিচ্ছে না বরং তিনি প্রতিষ্ঠানের জন্য সুবিধা নিচ্ছে। কিন্তু, শেখ হাসিনা কি শুধু একা লুটপাট করতো নাকি সে শেখ পরিবার, তার দোসর কতিপয় পুঁজিপতিসহ তাদের ঘনিষ্ঠ শ্রেণীকে সাথে নিয়ে লুটপাট করতো? হাসিনার সাথে ইউনুসের পার্থক্য হচ্ছে হাসিনা শেখ পরিবারের বাহিরে দেশীয় কিছু কর্পোরেটকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে লুটপাট করতো আর ইউনুস বিদেশী কর্পোরেটর মাধ্যমে লুটপাট চালাচ্ছে। কারণ বিদেশীদের সাথে তার যোগাযোগ যেমন নিবিড় তেমনি বিদেশী কোম্পানীর মাধ্যমে লুটপাটের প্রক্রিয়ার সাথে জনগণ অপরিচিত। তাই বিদেশীদের কাছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সম্পদ হস্তান্তরে ইউনুস গং শুধু অতিউৎসাহী নয় বরং তারা আবোল-তাবোল যুক্তি দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ https://www.youtube.com/watch?v=U-iG-Wog3LA )। জনগণকে বিভ্রান্ত করে শাসন কর্তৃত্বকে ব্যবহার করে লুটপাট শুধু বাংলাদেশের সেকুলার শাসকগোষ্ঠীর চরিত্র নয়। বরং, তথাকথিত ভালো গণতান্ত্রিক দেশেও একই চিত্র দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেন কর ফাঁকি এবং বন্দুক সংক্রান্ত মামলায় ৪২ বছর সাজাপ্রাপ্ত তার ছেলেকে নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে ক্ষমা করে দেয়। (বিস্তারিত জানতে দেখুনঃ ছেলেকে ক্ষমা করলেন বাইডেন, ডেইলিস্টার, ডিসেম্বর ২, ২০২৪)। এই রকম আরও ভুরিভুরি ঘটনা তথাকথিত উন্নত এবং অনুন্নত গণতন্ত্রের দেশগুলোতে দেখা যায়। অর্থাৎ, শাসকগোষ্ঠীর নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে রাষ্ট্রের সুবিধা লুটপাট সেকুলার গণতান্ত্রিক শাসকদের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। এর মূল কারণ, সেকুলার ব্যবস্থায় স্রষ্টার বিধানকে রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন রেখে, শাসকগোষ্ঠী জনগণের নাম করে নিজেরাই স্রষ্টার স্থানে বসে এবং তাদের খেয়াল-খুশি অনুযায়ী আইন প্রণয়ন করে দানবে পরিণত হয়। এই দানবীয় নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে তারা তাদের ইচ্ছামত জনগণের সম্পদ লুটপাট করে।

ইসলামে শাসনকর্তৃত্ব আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা’র। “..হুকুম (বিধান) দেয়ার অধিকার শুধু আল্লাহ্‌’র..” (সূরা ইউসুফ, আয়াত ৪০)। শাসকের দায়িত্ব জনগণের পক্ষ থেকে আল্লাহ্‌’র আইনের মাধ্যমে জনগণের বিষয়গুলো দেখাশুনা করা। শাসক বা তার ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে বিশেষ সুবিধা পাওয়ার কোন সুযোগ নাই। খিলাফতের ইতিহাসে মুসলিম শাসকরা রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধা ব্যক্তিগত প্রাপ্তির জন্য ব্যবহারকে অপচ্ছন্দ করতেন। ইসলামী শাসনের ইতিহাসে এরকম অসংখ্য ঘটনা আছে। এখানে এগুলোর মধ্যে মাত্র দুইটি ঘটনা উল্লেখ করছি। প্রথম ঘটনাঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর সময় আরবের সম্ভ্রান্ত বনু মাখযূম গোত্রের জনৈক মহিলা চুরির ঘটনায় ধৃত হলে কুরাইশদের বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ সাজা (হাত কাটা) মাওকুফের সুপারিশ করলে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেন, “আল্লাহর কসম, যদি মুহাম্মদ-এর কন্যা ফাতিমা চুরি করত (আল্লাহ্‌ তাকে হিফাজত করুন) তবে অবশ্যই আমি তার হাতও কেটে ফেলার হুকুম দিতাম”, দ্বিতীয় ঘটনাঃ হযরত উমর (রা.) একদিন মোমের আলোয় কাজ করছিলেন। এমন সময় সেখানে আসলেন তার দুই আত্মীয়। খলিফা তাড়াতাড়ি ফুঁ দিয়ে মোমবাতিটি নিভিয়ে দিলেন। অন্য আরেকটি মোমবাতি ধরিয়ে অতিথিদের বসতে দিয়ে তাদের খোঁজখবর নিলেন। কৌতুহল চাপতে না পেরে একজন জানতে চাইলেন, আমাদের দেখে কেন আপনি আগের মোমবাতি নেভালেন আর নতুন একটি জ্বালালেন? খলিফা জবাব দিলেন: “আগের মোমবাতি ছিল রাষ্ট্রের সম্পত্তি থেকে কেনা। তোমরা যেহেতু আমার আত্মীয়, তাই তোমাদের সাথে আমার ব্যক্তিগত অনেক আলাপ হবে। আমার নিজের কাজে জনগণের আমানত থেকে আমি কিছু খরচ করতে পারি না। তাহলে আল্লাহ্‌’র দরবারে আমাকে জবাবদিহি করতে হবে। তাই নিজের টাকায় কেনা মোমবাতিটি তোমাদের দেখে জ্বালালাম”। সুতরাং, দুর্নীতিমুক্ত সমাজের আকাঙ্খা পূরণের জন্য ইসলামী শাসন (খিলাফত) প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নাই। 

    -    মো: সিরাজুল ইসলাম


Previous Post Next Post